somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২০১৩-কেওকেড়াডং থেকে সাকাহাফং পথচলার এক বছর

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আরেকটি বছর শেষ হতে চলেছে । প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির হিসেব তো থাকবে । অনেক ঘটনাময় আরেকটি বছর অতিক্রম করলাম । আমার কাছে এই বছর একটু অন্যরকম । এই বছরের প্রাপ্তি ঝুলিতে আছে কেওকেড়াডং ,তাজিংডং এবং দেশের সর্বোচ্চ চূড়া সাকাহাফং

জয়ের মত ঘটনাও ছিল । সবকিছু পরিকল্পিত ছিল না ।
বান্দরবানে গিয়েছিলাম ফেব্রুয়ারিতে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে অনুষ্টিত বই মেলায় সংগঠনের বুক স্টল নিয়ে । বই মেলা শেষ করে,ভাবলাম কোথা্‌ও ঘুরে আসা । প্রথমে ভাবলাম সেন্টমার্টিন যাব । কিন্তু হঠ্যাৎ সিন্ধান্ত নিলাম তাজিংডং ই যাব । ফোন দিলাম থানচির ছোট ভাই জয় মারমাকে । পরদিন দুপুরে'র বাসে করে রওনা দিলাম থানচি'র পথে । দ্বিতীয়বার এই পথে যাত্রা । তখন প্রায় শেষের দিকে শীতের আমেজ,হালকা কুয়াশার চাদর বেধ করে চলেছে আমাদের বাস । পথে পথে প্রায় ন্যাড়া পাহাড় । দূরের পাহাড়ে উকি দিয়ে, সূর্য নেমে যায় দূর অজানায় । পাহাড়ের খাদে সূর্যের লাল আভায় ভরপুর । বলিপাড়া পৌছাতে রাত নেমে আসে পাহাড় জুড়ে । থানচি বীজ্রের ওপারে গিয়ে থামল বাস । রাতের খাবারে সাঙ্গু নদীর কাতাল মাছের স্বাদ যেনো আজো আছে । রাতে জয়দের বাসায় রাত্রিযাপন । সকাল ৭ টা ২৬ মিনিটে তাজিংডং এর উদ্দ্যেশে রওনা হলাম থানচি বাজার থেকে । কেমন হবে চলার পথ?এত যে বন্ধুর পথ ভাবতেই পারিনি । যাহোক আমরা শুরতেই টার্গেট করলাম দিনে দিনে তাজিংডং থেকে ফিরব ,অনভিজ্ঞ ট্রেকার হিসেবে যা ভাবা আরকি ! যাহোক শেরকর পাড়ায় পৌছায় তখন প্রায় দুপুর ১২ টা ,দীর্ঘ বিরতি না নিয়ে পিকের দিকের রওনা হলাম,পিকের চারপাশে তেমন সবুজ নেই । যাহোক তাজিংডং থেকে শেরকর পাড়ায় ফিরে আসি তখন পড়ন্ত বিকেল । তাজিংডং উঠার তৃপ্তির ঢেকুর গিলতে গিলতে রাতের খাবার আয়োজন চলতে থাকে শেরকর পাড়ায় । শেরকর পাড়া থেকে খুব সকালেই রওনা হয়েছি থানচির পথে ,আসার পথটা সহজ মনে হয়েছে,থানচি পৌছেয় তখন দুপুর গাড়িতে চেপে রওনা হলাম বান্দরবানের পথে । ফেব্রুয়ারিতে তাজিংডং জয়টা প্রেরণা হয়ে রইল । কেটে গেল কয়েকমাস, কয়েকবার বান্দরবান গেলেও বেড়ানো'র সুযোগ হয়নি ।


জুন মাসে কোন একদিন রওনা হলাম বগালেক আর কেওকেড়াডং এর পথে ,তীব্র খরা রোদ আর রাতে জুমবৃষ্টি ছিল এই ট্রিপটা'র অ্প্রত্যাশিত সঙ্গী । যাহোক বগালেকের নীলপানি নিজেদের করে নিতে খুব বেশি দেরি হয়নি । লেকে'র পাড়ে সবজু পাহাড়ে বাতাসে তীব্র ধ্বনি আজো শুনতে পাই ।রাতে একতালা জ্যোন্সার সাথে সহবাস । অদুরে পাহাড়ের গায়ে হেলে পড়া গোল চাঁদ সবকিছুই আমাদের । সকালে ঘুম ভাঙ্গল বৃষ্টি'র শব্দে । যখনই কেওকেড়াডংয়ের রওনা হব তখনই ব্যাপক বৃষ্টি ,দীর্ঘ অপেক্ষাও বৃষ্টি কমেনি । বৃষ্টিকে সঙ্গীকে কেওকেড়াডং এর পথে । চিংডি ঝর্ণা'র সাদা পানিতে হালকা গোসল । সবাই কাকভেঁজা । দাজেলিং পাড়া,সবুজ পাহাড়ে ভেদ করতে একসময় পৌছে যায় কেওকেড়াডং । বৃষ্টি নেই কিন্তু মেঘের হাতজানি । কেওকেড়াডং চারপাশটা ঢেকে যায় ক্ষণস্থায়ী মেঘে । সামান্য দুরত্বে দৃষ্টি সীমানা আটকে যায় । কিছুই দেখা যায় না । বেশিক্ষণ চুড়ায় থাকতে পারিনি, তীব্র বাতাস আর প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে । বিকেলে'র আগে ফিরে আসলাম বগালেকের পাড়ে । লেকের পানিতে দীর্ঘ গোসল,সাঁতার কাটা আর রাতে'র আড্ডায় ২য় দিন কাটিয়ে ফিরে আসলাম বান্দরবান ।



আগষ্টের ট্যুরটা ছিল সাজেক আর লংগদুতে । দুটো ট্রিপ ছিল মোটর বাইকে । সকালে রওনা হই কংলাংক এর পথে মোটর বাইকে । দিঘীনালা থেকে দীর্ঘ ৩ ঘন্টা জার্নির পর । পাহাড় খাঁচ দিয়ে এগিয়ে চলেছে বন্ধুর পথের প্রিয় যান । সাজেকের খুব উচু খাড়া রাস্তা মোটরবাইকে আরোহণের আনন্দ ভয়ংকর। রুইলুই পাড়া’র লুসাই আর পাংখোয়া পল্লীর আতিয়েথা ছিল মনে রাখার মত । সাজেকের পাহাড়ে লেগে খাকা মেঘগুলো আকর্ষণ অন্যন্য । সাজেক ট্রিপ টা দিনে দিনেই শেষ হয় ।

ঢাকা-রামপাল ৫ দিনের লংমার্চটাও ছিল নানা দিকে অভিজ্ঞতায় ভরপুর ।

শরতের এক সকালে রওনা হলাম বিলা্ইছড়ি পথে,কাপ্তাই জেটি থেকে ২ ঘন্টার পথ । লেকের আর্শ্চয সৌর্ন্দয্য আকর্ষণেই এই যাত্রা । এটাও একদিনে ট্রিপ ।
আর সাকাহাফং গল্পটা তো এখনো তরতাজা এবং এই বছরের সেরা ট্রিপ এন্ড ট্রেক ।জয়ের পথে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়ায় সাকাহাফং । পৌছায়।বৃষ্টি,জঙ্গলের দুর্গম পথ, সুউচ্চ পাহাড় ,শিকারী জোক আর সকল অনিশ্চিয়তা অবসান ঘটিয়ে দেশের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া আরোহন করছি ২২ অক্টোবর ২০১৩, সোমবার দুপুর ২টা ২২ মিনিটে । আমাদের ট্রেকিং টিমে সকল সাহসী বন্ধুদের এই অর্জন আমাদের কাছে প্রেরণা আরো দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার । অর্জনটা কেবল চূড়া আরোহরণই নয় ,পথে পথে শেরকর পাড়া,তান্দুই পাড়ার মেঘের জঙ্গল,রেমাক্রি খালে পাশেই হাঁজরাই পাড়া এবং দেশের শেষপ্রান্তের পাড়া নেপিউ ্ এবং নেপিউ জঙ্গলের পথটাও কম কি? তাছাড়া ৭ দিনের এই ট্রেকটা আমাদের দেখল বর্ষায় বান্দরবান কেমন? তার আশ্চর্য সৌর্ন্দয্যে মোড়ন ।
দুই হাজার তের সালটা ট্রেকিংময় একটি বছর । বেশীরভাগ ট্রিপে যে কথাটি অনুপ্রেরণা দেয়…‘অনেকবার পাহাড়ে উঠতে গিয়ে মাঝপথে তুষার ঝড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করেছি এবারই শেষ ,পাহাড়ে উঠা ছেড়ে দেব । কিন্তু তারপর বাড়িতে ফিরে বিছানায় যখন শুয়েছি আমার জানালায় আবার ভেসে উঠেছে দূরের হিমালয়ের ঐ চূড়া । মনে হয়েছে চূড়া যেমন আমায় ডাকছে । আমার মন আনচান করে উঠেছে । আবার দড়িদড়া নিয়ে ছুটে গেছি ঝড়ের মধ্যে । এভারেষ্ট বিজয়ের আগে একদিন এমনই বলেছিলেন শেরপা তেনজিং । পাহাড়ের ট্রেকিংয়ে যখন প্রচন্ড বৃষ্টি হয়,শিকারী জোক যখন গর্ত করে শরীর,রাতের অন্ধকারের যখন পাড়ি দিতে হয় অনিশ্চিয়তায়,বুক সমান পানিতে যখন পাড়ি দিতে হয় নাফাক্কুমে পথ,রাতে’র বৃষ্টির মধ্যে রাত ১১ টায় যখন নাফাক্কুম থেকে রেমাক্রি বাজার আসি। তখন কি এমনই মনে হয় না ? তবে পাহাড় থেকে ফিরলে তেনজিং এর মত এমনই মনে হয়।
আগামী বছর কেমন হবে জানি না ,তবে এই সংগৃহীত গল্পটা প্রাসঙ্গিক হতে পারে …বছরের শেষ দিন। সাইবেরিয়ায় প্রচণ্ড তুষারঝড় হচ্ছে। বাড়ির বাইরে শুভ্র তুষারে ঢেকে আছে চারদিক। ঘরের ভেতর কাঠের আগুন জ্বালিয়ে ওম নিচ্ছে পুরো পরিবার। নাতি বলছে, ‘দাদু, একটা গল্প বলো।’ দাদু বলেন, ‘বুঝলি ইভান, আমাদের সবার বুকের ভেতর একটা চিড়িয়াখানা আছে। কাল নতুন বছরের প্রথম সূর্য উঠলেই সেই চিড়িয়াখানায় দুটো নেকড়ে আসবে। একটা নেকড়ে ভালো, সবার মঙ্গল চায়, বিশ্বাসী; আর অন্যটি মন্দ, হিংস্র, স্বার্থপর। সারা বছর ওই দুটোতে লড়াই করবে বুকের মধ্যে। বছর শেষে জিতবে একটি।’ নাতি বলে, ‘কোনটি জিতবে, দাদু?’ দাদু উত্তর দেন, ‘যেটিকে তুই বেশি খেতে দিবি।’(চিরকুট) নতুন দিন আসুক আরো বেশী কিছু প্রত্যাশায় । সহযাত্রী হব হয়ত আরো দুর্গম কোন পথের,মেঘের পথে হাঁটা যেনো আরো বিস্তৃতি হয়,বৃষ্টি কিংবা কুয়াশা লাগা পাতার পানিতে তৃষ্ণা মিটুক ।



সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০২
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×