হরতালে জমে উঠেছে কর্মী সাপ্লাই ব্যবসা। দেওয়া হচ্ছে অস্ত্র ভাড়াও। আর এসবের বিনিময়ে মোটা অংকের অর্থ কামাচ্ছেন কমিশনভোগী সাপ্লাইয়াররা। রাজধানী ঢাকা তো বটেই, দেশের বিভিন্ন শহরে, এমনকি দেশের বাইরেও নগদ লোক ভাড়া করে জমিয়ে তোলা হচ্ছে হরতাল, বিক্ষোভ, মিছিল আর মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি।
রাজধানীতে ভাড়ায় নাশকতামূলক তৎপরতা চালায় এমন এক গ্রুপের প্রধান কুদরত শাহ (ছদ্দনাম) জানান, গাড়ি পোড়াতে হলে ১৫ হাজার টাকা লাগে। ভাঙচুর হয় ৫ হাজারে। আর ঝটিকা মিছিলের জন্য দেওয়া হয় জনপ্রতি ১শ’ টাকা করে। এসবের বাইরে কোন অস্ত্র নিয়ে কোন কর্মসূচিতে অংশ নিলে প্রতিটির জন্যই আছে নির্ধারিত ভাড়া।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রতিটি আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে। এ শহরের মিছিলগুলোতে প্রায়শই যে তলোয়ার দেখা যায়, সেগুলোর জন্য ভাড়া দেওয়া হয় দু’হাজার টাকা করে।
লোক ও অস্ত্র ভাড়া করার এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্প্রতি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশেও। জানা গেছে সম্প্রতি ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে আড়াইশ’ থেকে পৌনে তিনশ’ ডলারে লোক ভাড়া করা হয়েছে।
রামপুরা এলাকার এক গলিতে দাঁড়িয়ে গাড়ি পোড়াও-ভাঙচুর চক্রের নেতা কুদরত জানান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় আয় রোজকার বেশ ভালই হচ্ছে তার। এ ব্যবসায় বাকি কোন কারবার নেই। আগাম টাকা পেলে তবেই অপারেশনে যান তিনি ও তার গ্রুপ। তবে চুক্তি বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হলে ওই দিনই টাকা ফেরৎ দেন তিনি। ব্যবসা দু’নম্বর হলেও কথায় তিনি এক নম্বরই বটে।
৩৫ বছর বয়সী এই যুবক বিগত বিএনপি সরকারের সময়ে এ পেশায় নাম লেখান। এটাই নাকি তার এখন অন্যতম ব্যবসা। দীর্ঘদিন ধরে এ লাইনে থাকলেও কখনই ধরা পড়েন নি। এমনকি কোন মামলা হয় নি তার নামে।
বজ্জাত জানান, এ লাইনে যখন আসেন তখন তিনি ছিলেন ছাত্রদল কর্মী। দলীয় পদের জন্য লবিং করে ব্যর্থ হয়ে দল ছাড়েন।
রাজধানীর বনশ্রী এলাকার থাকেন তিনি। তবে তার নেটওয়ার্ট পুরো রাজধানী জুড়ে। হরতালের আগের দিন রোববারও(গতকাল)একটি গাড়ি পুড়িয়েছেন পল্টন এলাকায়।
এর টাকা কে দিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বড় ভাই দিয়েছে। নাম বলাটা ঝুঁকিপূর্ণ। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সে নাম প্রকাশ করবো না। ভবিষ্যতেও করবো না। কারণ দু’নম্বর ব্যবসায়, কথা এক নম্বর না হলে চলে না।”
কিভাবে গাড়ি পোড়ান এমন প্রশ্নের জবাবে কুদরত জানান, “আমরা সর্বোচ্চ ৬ জনের একটি গ্রুপ থাকি। সব সময় আমি নিজে স্পটে থাকি না। কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থান করি। ওরা যাত্রী বেশে গাড়িতে উঠার জন্য হাত দেখিয়ে গাড়িটি থামায়। গাড়ি থামার পর দ্রুত উঠে আগুন দিয়ে নেমে পড়ে। এ ক্ষেত্রে বোতলে করে পেট্রোল বহন করা হয়। যাতে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।”
তিনি জানান, কিছু কিছু ক্ষেত্রে গাড়ির হেলপারের সঙ্গে আগেই যোগাযোগ থাকে। এ জন্য তাকেও টাকা দিতে হয় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। আর মামলা হলেও তিনিই মামলা খরচ বহন করেন।
তবে ভাঙচুরের জন্য সাধারণত হেলপারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় না। তাদের রয়েছে সুদক্ষ কর্মী বাহিনী। যারা দ্রুত গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দিতে পারে।
এ ছাড়া ঝটিকা মিছিলের জন্য মাথাপিছু ১শ’ টাকা করে পান তিনি। ৩০ টাকা কমিশন রেখে কর্মীদের দেন ৭০ টাকা করে।
অভিযানের জন্য নির্দিষ্ট কোন এলাকা নেই। যখন যেখানে সুযোগ হয় সেখানেই মিশন পরিচালনা করেন। তবে বড় ভাইদের চাহিদাকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে মিশন পরিচালনা করা হয় বলেও জানান কুদরত।
রাজধানীতে তার গ্রুপের মতো আরও অনেক গ্রুপ রয়েছে বলেও জানান কুদরত শাহ।
কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দিতে খারাপ লাগে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কে সৎপথে বড়লোক হয়েছে! যারা গরীব মেরে বড়ালোক হয়েছে তাদের সম্পদ পোড়ালে দু:খ হবে কেন! বরং ভালই লাগে।”
তবে “মানুষ আহত হওয়ার কথা শুনলে খারাপ লাগে” জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার কাছে দল কোন বিষয় নয়। যে আসে তারই কাজ করি।”
তথ্যসূত্রঃ বাংলা নিউজ ২৪.কম