আগে, রূপকথার গল্প দিয়ে নিজেদের ব্যাখ্যা দিতাম
কিন্তু কিভাবে বলি ঘৃণা, এখন আমরা যা হয়ে উঠলাম
যেভাবে নিজেদেরকে ভাঙি, হেতুহীন ঝামেলা বাড়াই
তবু আমরা আজো থেকে গেছি সেই পুরনো রূপকথাই
আমরা এখনো আটকে আছি নায়ক ও দুর্ভাগ্যের মাঝখান
এখনো আমরা দেবরূপী তাই সেইসাথে অনেক শয়তান
কিন্তু ভুলে যাই যে, আমরা আসলে বস্তুগত অঙ্কের অধিক
খোলা আকাশের নিচে ঐ বুড়োটা বাঁচে রিক্ত অবান্ধবিক
তরুণটা থুতু ফেলে, ভেতরে নরম আর বাইরে কাঠখোট্টা
আমার মনে হয়, এরাই তো আমাদের নায়ক এই সবকটা
এরাই আমাদের কালপুরুষ, যে মুখটা না দেখে পথ হাঁটো
যে মুখ তোমাকে দেখে না, সে গল্পগুলো নয় এতই ছোট
বাজারের থলি হাতে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সাথে এসব জনতা
বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে সেই প্রতিবেশীর ভেঙে যাওয়া ছাতা
প্রত্যেকের ভেতরে আছে বিধেয় আর উদ্দেশ্য জ্বলমান
আবার তাকাও, দেখ প্রচলিত দৃষ্টিতে মারা খায় পরিত্রাণ
লক্ষকোটি চরিত্র নিজস্ব উপকথা নিয়ে হৃদয়ের গান গায়
ভাবে ভগবান হবে, যতক্ষণ শ্রোতারা অসুর না হয়ে যায়
তবু এসব শহরের লোকগাঁথা কিভাবে মানুষের ভূগোলে
সর্বদাই বলেছে এককথা: ন্যায়-অন্যায় মানবে সকলে
একটাই তো আদিম চাওয়া, সবাই কিন্তু প্রেমের সমর্থক
কোন পক্ষের কে দেখে নেওয়া, সবাই চায় কষ্ট বন্ধ হোক
না, ঠিকই আছে, এখানে আর কোন দৈত্য নেই বাকি,
নেই কোন ডাইনীর অভিশাপমালা হয়ে রাজ্য-বন্ধকী
আছে শুধু নর্দমার বর্ষা, আরো আছে বেশকিছু ছাগল
এখানে আমরা দেখছি রূপকথার এক নতুন ভূগোল
যে ভাইরা সমাজ বদলে অন্যের দোকানে দেখছে নেশা
যাদের বাপগুলো অতি ও অল্প শ্রেণীতে আনছে পেশা
আমাদের অভিজ্ঞান আর নীতিবোধ এসব শহরেই হয়
যেখানে ক্ষুব্ধতার বিপরীতে নীরবতার অনেক প্রশ্রয়
হ্যাঁ, আমাদেরও দলবদল, রঙচটা যুদ্ধেই আটকে থাকে
এখনো দেবতাসম আমাদেরকে যেন নাম ধরেই ডাকে
আমরা উত্থিত কারণ আমরাই অবনত, ধরে রাখো আশ
রাখো অস্থিরতা, যখন খুঁড়ে বের করবে আধুনিক আবাস
খুঁজে পাবে আমাদের, নব্যতম প্রাচীন এই মুহুর্তটার শব
এগুলোর সমষ্টিই ছিল আদি থেকে পৃথিবীর একমাত্র অবয়ব
আমাদেরও আছে হিংসা, কোমলতা, গালি আর উপহার
কিন্তু রূপকথা ভুলে যাওয়া মানুষের ইতিহাসে হচ্ছে আবার
এখন ভাবো, যাকিছু অবশিষ্ট তা কেবল বেদনাবোধের দিন
গ্লানি আর একাকীত্বের অমৃত যেকোন কণ্ঠস্বরেই অসমৃণ
জীবনের ধমনীতে তোমার অলৌকিকরাই চলাচল করে
তুমিই মহান এই বিশ্বাস তুমি লিখে রাখো সবকিছুর উপরে
আগাগোড়া নায়ক তো ছিলই, খলনায়কও আসবে আর যাবে
বাজি পাল্টালেও গল্প অনড় থাকে মানুষের নিজস্বস্বভাবে
পৃথিবীতে সবসময়ই লোভ, উচ্চাকাঙ্খা, সাহস, মনের অমিল
ভালোবাসা, জোচ্চুরী, প্রায়শ্চিত্ত; এটুকুই জীবনের তহবিল
আমরা এ প্রজাতির শুরু থেকেই বেঁচে থাকার একই উদাহরণ
ক্রোধ, নষ্টামি, আর ঝগড়া; এগুলোই প্রতিদিনের রামায়ণ
আমাদের স্বপ্ন আছে, সিদ্ধান্তও; গাঁথাগুলো এখানের বর্ণণা
যদি পড়ো তুমিও এখানে আছো যা তোমার নিজেরই অজানা
তুমিই গল্পের নায়ক, তোমার চাওয়াটাই ইতিহাসের ভাষা
আজো তোমার ভয়, তোমার মোহ ও দেহরক্ষায় রক্তের দুরাশা
সবগুলো আল্লাই এখানে, কারণ স্রষ্টাতো নিজেরই ভেতর
শালা, এরা সব জুয়ার টেবিলে, ওরা লুটপাট করে পরস্পর্
এই ঈশ্বররা তামাক খায়, এসব ভগ্বানগুলো রাতের আধারে
এরা কাজেকামে অফিসে যায়, বা কখনো হেঁটে বাড়ি ফেরে
এরা সামাজিক পোকা, এদের উঠাবসা চরিত্রের গলিত অধ্যায়ে
এই আল্লাগুলো ধর্ম আর রাষ্ট্রের অত্যাচারে আগুন দেয় গায়ে
এরা সব সত্যি বলতে চায়, কিন্তু সত্য এক আজব মরীচিকা
আল্লারা জন্মায় আর মরে, মাঝের কালটা মানুষ নামে ডাকা
এরা কোন এক রাস্তার ভিড়ে, ওরা শীতার্ত, ঘায়েল কিবা রোগ
ভাবতেই পারে, জীবনের মানে অবশ্যই আরো কিছুটা ভাগযোগ
এসব আল্লা'র কোন নবী বা অবতার নেই, অবতরণই কেবল
এরা সামাজিক কীট, তাই জানে না কখনোই প্রকৃত ফলাফল
এসব লড়াই শুধু শ্বাস ও খাদ্যনালীতেই থাকে, পায়ুপথও হয়তো
এরাই সেই নব্যতর প্রাচীন, মহাকাল যাদের বানাবে খননরত...
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৩২