somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

লক্ষণ ভান্ডারী
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন

ভালবাসা শুধু ভালবাসা (অষ্টম পর্ব)

১৪ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ভালবাসা শুধু ভালবাসা (অষ্টম পর্ব)





রক্তে রাঙা সিঁথি
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

বিয়ের সানাই বাজছে। শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনিতে সারা বিয়েবাড়ি মুখরিত। চারদিকে আলো আর আলো। বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও আমন্ত্রিত অতিথিদের ভিড়। হঠাত্ সরগোল উঠল- “বর এসেছে বর এসেছে।” বরকে বরণ করে ছাঁদনাতলায় আনা হল। সাথে সাথে বরযাত্রীরাও এসে দাঁড়ালেন। বরাসনে বরকে বসিয়ে সবাই শাঁখ বাজাতে লাগল, উলুধ্বনি দিতে থাকল।

পুরোহিত নান্দীমুখ সারিয়ে, কন্যাকে আনার আদেশ দিলেন। এবার হস্তবন্ধন, মালা-বদল ও সিঁদুর দান হলেই তার দায়িত্ব শেষ। এদিকে লগ্ন পার হয়ে যায়। বরের বাবা নিজেই বরকর্তা। তিনি বললেন- “পণের বাকী টাকা না পেলে এ বিয়ে হবে না। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত কেউ বরযাত্রীরা ভোজন করবে না।”
কিন্তু একি হল! সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও নীলাঞ্জনাকে পাওয়া গেল না। সব কিছু দেখে শুনে নীলাঞ্জনার বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। নীলাঞ্জনার মা কাঁদতে কাঁদতে এসে বললো- “ওপরের দোতালা ঘরের একটা রুমে সিলিং ফ্যানে গলায় ফাঁস লাগিয়ে নীলাঞ্জনা আত্মহত্যা করেছে।”
বরযাত্রীরা সবাই বরকে নিয়ে বাসে উঠলেন। বরকর্তা বললেন - “কাজটা আপনি ভাল করলেন না বেয়াই মশাই। পণের অগ্রিম টাকা বাড়িতে এসে ফেরত্ নিয়ে যাবেন।”

বিয়ের সানাই বন্ধ হয়ে গেল। এক এক করে সব আলো নিভে গেল। বাড়ির সবাই এসে নীলাঞ্জনার প্রাণহীন নিথর দেহটাকে মাটিতে নামিয়ে রাখল। অঞ্জনের চোখে জল। সে কাঁদছে। নীলাঞ্জনার সাথে তার ভালবাসারও পরিসমাপ্তি ঘটল।

এই তো জীবন। জীবন বড় ছোট। নীলার জীবনে অঞ্জন কেমন করে এল আর কেমন করে তাকে না জানিয়ে এত বড় ভুলটা করা হল তা সবাই না জানলেও অঞ্জন জানে। নীলা তাকে বলেছিল- “আগামী 26শে ফাল্গুন আমার বিয়ে। তুমি অবশ্যই এসো।” অঞ্জন নীলার কথা রেখেছে। সে এসেছিল তার বিয়েবাসরে। কিন্তু নীলা যে এভাবে চলে যাবে তা সে কোনদিনই কল্পনা করতে পারে নি।

জীবনে চলার পথে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে, ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অঞ্জন জীবনের পথে চলতে শিখেছে। পরের জন্য সে যুদ্ধ করেছে অনেক। এবার তার নিজের জন্য যুদ্ধ করতে হবে। এর নাম জীবনযুদ্ধ। জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে সে পারে নি। পারে নি কোনরকম প্রতিবাদ করতে। তাই পরাজয়ের কালিমা মুছে ফেলতে সবার সামনে ছুরিটা তার নিজের বুকে আমূল বসিয়ে দিয়ে বললো- “নীলা তোমার আমার চলার পথে বাধা অনেক। তাই সব বাধা অতিক্রম করে আমি তোমার পথেই পা রাখছি। যাবার আগে আমি আমার বুকের রক্ত দিয়ে তোমার সিঁথি রাঙিয়ে দিলাম।”

অঞ্জনের লাশটাকে নীলাঞ্জনার পাশে যখন শুইয়ে দেওয়া হলো, তখন ভোরের আকাশে রক্তিম সূর্যটা উঁকি দিচ্ছে।

গল্প এখানেই শেষ নয়। সব কিছুর শেষ হয় শ্মশানঘাটে। শ্মশান মানে নির্জন, শ্মশান মানে অবিচারের আদালত। শ্মশান মানে প্রায়শ্চিত্তের জেলখানা। প্রাণহীন দুটো দেহকে পাশাপাশি জ্বালিয়ে দেওয়া হল। সেই চিতার আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছে অঞ্জন আর নীলাঞ্জনার নীরব অভিমান আর তাদের বুকভরা ভালবাসা, যে চিতার আগুনে পুড়ে ছাই হয় পার্থিব কামনা, বাসনা আর অহংকারের সুরম্য রাজপ্রাসাদ। শ্মশানের চিতা জ্বলছে। তারপর কোন একসময়ে দুটো চিতার আগুন একসাথে নিভে যায়।

(চলবে)

আগামী দিনে ভালবাসা শুধু ভালবাসা নবম পর্ব প্রকাশিত হবে। আক্রমনাত্মক বা কড়া সমালোচনামূলক মন্তব্য করবেন না। কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততার জন্য সময়ের অভাবে অথবা প্রয়োজনবোধে লেখক প্রতিটি মন্তব্যের প্রত্যুত্তর নাও দিতে পারেন।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু!

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৩:২৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×