somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

লক্ষণ ভান্ডারী
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন

ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় পর্ব

২১ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ভালবাসা শুধু ভালবাসা
দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় পর্ব



সিঁদুর দিয়ে কেনা ভালবাসা
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

“সিঁদুর দিয়ে আমি তোমার ভালবাসা কিনে নিলাম নন্দিনী। আজ থেকে তুমি আমার। যুগ যুগ ধরে আমি তোমারই থাকবো। তোমাকে কেউ আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না।” --- কিশোর সোহাগভরা কণ্ঠে বলে। নন্দিনীর সিঁথি সিঁদুর দিয়ে রাঙিয়ে দেয় কিশোর। মন্দিরের পুরোহিত মন্ত্রপাঠ করে দুটো হাত এক করে দেয়। মালা বদল হয়ে গেল। উভয়ে পুরোহিতকে প্রণাম করে।

আনুষ্ঠানিক বিয়ে ওদের হয় নি। তাই বলে হৃদয়ের আবেদন ব্যর্থ হবার নয়। এরপর সবাই যখন জানবে ওরা ভালবাসা করে মন্দিরে বিয়ে করেছে- ওদের মা-বাবা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, আত্মীয়স্বজন, পাড়ার জ্ঞাতি কুটুম্বজন সবাই কি এদের বিয়ে মেনে নেবে….???

নন্দিনীর বাবা স্থানীয় থানায় এফআইআর করলেন- তাঁর অষ্টাদশ বর্ষীয়া নন্দিনী নিরুদ্দেশ। স্থানীয় পুলিশ কর্তব্য পরায়ণে তত্পর হয়ে উঠেন। যেমন করেই হোক তারা খুঁজে বের করবেন নন্দিনীকে। উপযুক্ত তদন্ত করে অপহরণকারীকে উপযুক্ত শাস্তি দেবেন- তারা কথা দিয়েছেন নন্দিনীর বাবাকে।

দিন যায় রাত আসে। রাত কেটে ভোর হয়ে আসে। নতুন সূর্য ওঠে। অজয়ের ঘাটে ঘাটে তরী এসে ঠেকে। দিনের শেষে মাঝি ঘরে যায়। এমনি করে কেটে যায় পুরো একটি মাস। নন্দিনীর কোন হদিশ পায় না পুলিশ।

অজয় নদীর বাঁকে শাল পলাশের বন। দূরে আদিবাসী পাড়ায় মাদল বাজছে। রাতের আঁধারে নবদম্পতি কিশোর ও নন্দিনী সকলের চোখে ধূলো দিয়ে মহুল বনে পেতেছে ভালবাসার খেলাঘর। রাতে পূর্ণিমার চাঁদ ওঠে। বাঁশির সুরে মাদল বাজে। নাচ গানের আসর জমে ওঠে। হাড়িয়া আর চোলাই মদ খেয়ে আদিবাসী মহিলা পুরুষ যখন মাতাল হয়ে চোখে সর্ষে ফুল দেখে, তখন কিশোর আর নন্দিনী একে অপরকে গভীর আবেগে জড়িয়ে ধরে আর গুন গুন করে গেয়ে ওঠে – এই রাত যেন না শেষ হয়।

আদিবাসী রমণীরা সবাই ওদের দুজনকে সম্মান করে। ওরা বলে তারা নাকি জীবন্ত বন-দেবতা, ও বনবিবি। সবাই তাদের উদ্দেশ্যে মানত করে। পাঁঠা বলি দেয়। তারপর আবার পূজার নামে আনন্দের ধূম পড়ে যায় সারা আদিবাসী পাড়ায়।

এমনি ভাবেই দিনগুলো তাদের ভালোই কাটছিল আদিবাসী জঙ্গল মহলে। এই কয়দিনে আদিবাসী পুরুষ রমণীদের সবাই তাদের আপন হয়ে উঠেছে। ভাবতে অবাক লাগে –কত সহজ সরল এদের মন। এরা সকলকেই বিশ্বাস করে। আর এই ভুলের খেসারত দিতে হয় ওদের যুগ যুগ ধরে।

জোতদার জমিদার মহাজনরা ওদের ঠকাচ্ছে। কেড়ে নিচ্ছে ওদের জমি। চুরি করছে ওদের খেতের ফসল। পাঁচ টাকা ধার নিলে মহাজনরা মিছামিছি দশ টাকা লিখে রাখে। অথচ ওরা সরল বিশ্বাসে মহাজনের সমস্ত দেনা শোধ করে। জোতদার, জমিদারদের আজও ওরা প্রণাম করে, পায়ের ধূলো মাথায় নেয়।

যুগ পাল্টাচ্ছে। প্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে দেশ। কিন্তু এদের জীবন অন্ধকারময় জঙ্গলেই পড়ে আছে। এর নাম দেশ শাসন নয়, শাসনের নামে এদের শোষণ করা হচ্ছে। শোষিত জনগণ মুখ বুজে সব সইতে পারে।


কিশোর আর নন্দিনী আদিবাসীপাড়ায় স্কুল খুলে দিয়েছে। আদিবাসীদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ওরা বিনা পয়সার পড়ায়। বিনা পয়সায় ওদের দান করে বই, খাতা, স্লেট পেনসিল ইত্যাদি। ওদের পোশাক কিনে দেয়। রাতে অবৈতনিক বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রে আদিবাসী পুরুষ মহিলা একসাথে লেখাপড়া শেখে। নন্দিনী আদিবাসী পাড়ায় খুলেছে একটা সেলাই স্কুল। সব আদিবাসী রমণীরাই এখানে সেলাই শিখতে আসে।

তারপর হঠাৎ একদিন জঙ্গল মহল তোলপাড় করে ছুটে আসে একটা সাদা ট্যাক্সি। ট্যাক্সি থেকে বন্দুক হাতে নেমে আসে নন্দিনীর বাবা। দূর থেকে কিশোরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। আর সেই গুলিতেই কিশোরের দেহটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

নন্দিনী কিশোরের নিষ্প্রাণ দেহটার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বলে- এ তুমি কি করলে বাবা। তুমি নিজের হাতে আমার সিঁথির সিঁদুর মুছে দিলে। আজ থেকে একমাস আগে আমরা মন্দিরে গিয়ে মালা বদল করেছিলাম।

পিছনেই তীব্রগতিতে ছুটে আসে পুলিশের ভ্যান। নন্দিনীর বাবার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেয় পুলিশ অফিসার। বলে –“আইনকে কেন আপনি নিজের হাতে তুলে নিলেন। কিশোরকে হত্যা করার অপরাধে আপনাকে গ্রেপ্তার করা হলো।”

বন-দেবতার মৃত্যুতে আদিবাসীরা আজ সবাই শোক প্রকাশ করবে। বাঁশের বাঁশি আজ আর বাজবে না। মাদলে আজ আর কাঠি পড়বে না। হাড়িয়া আর চোলাই মদ খাওয়া আজ নিষিদ্ধ। পাড়ার সবাই মিলে লাশটাকে অজয়ের শ্মশান ঘাটে নিয়ে গিয়ে জ্বালিয়ে দিল। নন্দিনী শ্মশানে জ্বলন্ত চিতার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
(চলবে)



আগামী দিনে ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড -তৃতীয় পর্ব প্রকাশিত হবে। আক্রমনাত্মক বা কড়া সমালোচনামূলক মন্তব্য করবেন না। কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততার জন্য সময়ের অভাবে অথবা প্রয়োজনবোধে লেখক প্রতিটি মন্তব্যের প্রত্যুত্তর নাও দিতে পারেন।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×