somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

লক্ষণ ভান্ডারী
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন

ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড তৃতীয় পর্ব

২২ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ভালবাসা শুধু ভালবাসা
দ্বিতীয় খণ্ড তৃতীয় পর্ব


বিয়ে নয় সিঁদুর খেলা
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

“মেয়েটি তোমার তো বেশ বড়সড় হয়েছে হে চাটুজ্যে! এবার একটা দেখেশুনে পাত্র যোগাড় করে মেয়ের বিয়েটা দিয়ে দাও। নইলে হিতে বিপরীত হবে। যা দিনকাল পড়েছে!” ভবতোষ হালদারের কথায় স্কুলমাস্টার প্রিয়ব্রত চ্যাটার্জীর মনে পড়ে আজ দশ তারিখ। এ মাসের বাড়িভাড়া ভবতোষবাবুকে দেওয়া হয় নি। তবুও মনে মনে লজ্জিত হয়ে তার কথায় সায় দেয়। বলে- “তা যা বলেছো ভায়া। দিনকাল খুবই খারাপ। সময়মতো মেয়েদের বিয়ে দিতে না পারলে…..”

ভবতোষ হালদার এবার চড়া গলায় বলে ওঠে- চাটুজ্যে! আগামী মাসে ঘর খালি করে তুমি চলে যাবে। মানে তোমার মত ভাড়াটিয়াকে আমি আর রাখবো না।

ভবতোষ হালদার লোকটা খুব একটা ভালো লোক নয়। তাই তার মতো লোক না হলে তাকে চেনা ভারি মুশকিল। সময়ে অসময়ে পাড়া প্রতিবেশীদের টাকা ধার দেয়। কিন্তু উসুল করে দ্বিগুণ। সুদের কারবারে তিনি আখের গুছিয়ে নিয়েছেন। বাড়ি ভাড়ার টাকায় তার সংসার চলে।

প্রিয়ব্রত বলে- “দেখ ভায়া এই মাসে পেনশনটা পাই নি। তাছাড়া ঘরে চাল নেই। উপোষ করে দিন কাটছে। আগামী মাসে সুদ সমেত টাকাটা আমি মিটিয়ে দেব”।

“তোমার ছেলেটা মশাই একটা গাধা! বি.এ. পাশ করে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদিকে তোমার স্কুলের চাকরিটাও গেল। আরে মশাই- গোটা কতক টিউশানি করতে বলছো না কেন?”

অভাবী মা-বাবার একমাত্র সন্তান বিকাশ। অনার্স সহ বি.এ. পাশ করেও তার চাকরি হয় নি। বোন সুজাতাকে পাত্রস্থ করতে হবে, বাবার পেনশনের টাকায় তাদের সংসার চলে না। চারদিকে শুধু দেনা আর দেনা। বিকাশ ভাবতে পারে না।

অভাবের তাড়নায় বিকাশ বদলে যায়। সৎ ভাবে বাঁচতে সে চেয়েছিল। কিন্তু সমাজ, এই সমাজ তাকে বাঁচতে দেয় নি। তাই বাধ্য হয়ে বিকাশ রাজুয়া গুণ্ডার দলে নাম লিখিয়ে ছিল। রাজুয়া তাকে বলেছিল- “তাহলে বিকাশ! সত্যিই তুমি কাজ করতে চাও আমার দলে। তাহলে এসো। আমি তোমাকে শিখিয়ে দেব কেমন করে পিস্তল ধরতে হয়, আর কেমন করে চালাতে হয়। দিনে দিনে তোমার শিক্ষা চলবে। তারপর একদিন তুমি হবে পাক্কা গুণ্ডা। তোমার নিশানা হবে অব্যর্থ।”

বি.এ. পাশের সার্টিফিকেট খানা বিকাশের কোন কাজেই লাগে নি। আজ রাজুয়া গুণ্ডার দলের সর্দার সে নিজে। মানুষ খুন করা আজ তার পেশা। বিকাশ আজ ভালভাবেই জানে যে এটা অনেস্টির যুগ নয়। সহজ সরলভাবে বাঁচতে চাওয়া কি অন্যায়। দেশে যদি ভালো মানুষের থাকার জায়গা না থাকে, তাহলে কি হবে সেই দেশ কে নিয়ে। মিথ্যা আর প্রবঞ্চনার শিকার হয়ে আজ তাকে বাঁচতে হবে।

সুজাতার হাত ধরে প্রিয়ব্রত সেদিন বাড়ি খালি করে রাস্তায় এসে দাঁড়াল। সারাজীবন শিক্ষকতা করার পর এটাই তার প্রাপ্তি। মাথার উপর ছাদ নেই, পরণে বস্ত্র নেই। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে প্রিয়ব্রত সেদিন ঈশ্বরকে বলেছিল। “হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর! দুঃখ যত পারো দাও, কিন্তু দুঃখকে ভোলবার আর যন্ত্রণাকে সইবার মতো শক্তি আমায় দিও ঠাকুর।”

বাটি হাতে মেয়ের হাত ধরে এবার পথে দাঁড়ায় প্রিয়ব্রত। বাবুদের কৃপাপাত্র হয়ে হাত পেতে ভিক্ষা চাইতে ওর বিবেকে বাঁধে। কিন্তু আজ বাধ্য হয়ে তাকে ভিক্ষার পাত্র হাতে তুলে নিতে হলো।

বিবাহযোগ্যা মেয়েটাকে সে পাত্রস্থ করতে পারে নি, এটা তার জীবনের পরম ব্যর্থতা। ছেলেটাকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করেও কুশিক্ষা তার কাছ থেকে তাকে জোর করে কেড়ে নিয়েছে। এটা তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। জীবনের শেষ সাঁঝের বেলায় আজ প্রিয়ব্রতর চোখে ভেসে ওঠে মানসীর মুখটা। অভিমান নিয়ে সে এই সংসার ছেড়ে চলে গেছে অন্য একজনের হাত ধরে। প্রিয়ব্রতের মনে হয় জীবনটা তার স্বপ্ন।

মানসী তাকে বলেছিল, তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে হয় নি। যা হয়েছিল সেটা শুধুমাত্র সিঁদুর খেলা ছাড়া আর কিছু নয়। আমি তোমার ছেলেমেয়ের দায়িত্ব নিতে পারবো না।
হাসতে হাসতে নিজের এটাচি গুছিয়ে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল মানসী।

তারপর অনেক বছর কেটে গেছে। সুজাতা বড়ো হয়েছে। বিকাশ বড়ো হয়ে আদর্শ সন্তান হয়ে উঠেছে। প্রিয়ব্রতর সব ইচ্ছাই পূর্ণ হয়েছে। তার অন্তিম ইচ্ছা আজ যদি মানসী তার কাছে থাকতো তাহলে তার সংসারটা সুখের হতো। মানসী থাকলে মেয়েটারও বিয়ে হতো, সংসার হতো। ছেলেটাও অমানুষ হতো না।

প্রিয়ব্রতর চোখ দুটো জলে ঝাপসা হয়ে যায়।

সুজাতা বলে—“বাবা তুমি কাঁদছো? কেঁদো না বাবা। দেখবে মা একদিন আবার আমাদের কাছেই ফিরে আসবে।”

টপ টপ করে দু’ফোটা অশ্রু আবার ঝরে পরে প্রিয়ব্রতর গাল বেয়ে।



(চলবে)

আগামী দিনে ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড -চতুর্থ পর্ব প্রকাশিত হবে। আক্রমনাত্মক বা কড়া সমালোচনামূলক মন্তব্য করবেন না। কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততার জন্য সময়ের অভাবে অথবা প্রয়োজনবোধে লেখক প্রতিটি মন্তব্যের প্রত্যুত্তর নাও দিতে পারেন।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:০৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×