somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

লক্ষণ ভান্ডারী
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন

ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড চতুর্থ পর্ব

২৩ শে মে, ২০১৯ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ভালবাসা শুধু ভালবাসা
দ্বিতীয় খণ্ড চতুর্থ পর্ব।



ভালবাসার হাটে কান্না
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

প্রেম প্রীতি ভালবাসা সবই ভালবাসার হাটে বিক্রি হয়। কিন্তু সেই ভালবাসার হাটে যদি কান্না নেমে আসে। আসুন, আজ আমরা আপনাকে নিয়ে যাব সেই ভালবাসার হাটে, যেখানে নুপুরের নিক্কণে বেজে ওঠে বিষাদের করুণগীতি।

প্রিয় যাই যাই বলো না….. সুরের ঝংকারে, তবলার তালে তালে নেচে ওঠে নর্তকী প্রিয়াবাঈ। বেলোয়াড়ি ঝাড় লণ্ঠনের বাতিগুলো স্বাগত জানায় নতুন নতুন খদ্দেরদের। ঠোঁটের কোণে একরাশ লিপিস্টিক লাগিয়ে দেহবিলাসিনী কাঞ্চনকন্যারা এই ভালবাসার হাটে নাচে, গায় আর নতুন খদ্দেরদের ধরে ধরে নিজের ঘরে নিয়ে যায়।

প্রিয়াবাঈ যেদিন প্রথম এই ভালবাসার হাটে এসেছিল সে প্রশ্ন করেছিল আজকের ঘুন ধরা সমাজটাকে “ওগো আমার দেশের উঁচুতলার মানুষের দল, তোমরা সুসভ্য দেশের মানুষ। তোমরা কেন এই ভালবাসার হাটে, ভালবাসার গ্লাসে চুমুক দিয়ে, কচি কচি মেয়েদের আর দেহবিলাসিনী কাঞ্চনকন্যাদের অবচেতন দেহে আর মনে জ্বেলে দাও কামনার আগুন। ওরাও তো এই সতী সাবিত্রী দেশের মেয়ে।”

প্রিয়ার কথা সেদিন কেউ শুনে নি, বা ইচ্ছে করেই শুনতে চায় নি। কারণ ওরা জানে এই ভালবাসার হাটে ভালবাসা বিক্রি হয় অর্থের মূল্যে। এই জগতে যে যত ধনী তার কদর তত বেশি।

প্রিয়া অতীতকে ভুলে গেছে। ভুলে গেছে তার মা বাবাকে। তার বেশ মনে পড়ে সে তখন ক্লাস নাইনে পড়ত। ইস্কুল ছুটির পরে রাস্তায় একা পেয়ে একদল গুণ্ডা বদমাস তাকে জোর করে গাড়িতে বসায়। গাড়ি এসে যখন ভালবাসার হাটে পৌঁছালো তখন রাত বারোটা। মাসী শান্তাবাঈ তাকে নিয়ে গেল ওপরের মেক-আপ রুমে। সাজিয়ে দিল তাকে নর্তকীর বেশে। সুরের ঝংকারে মেতে ওঠে নাচের আসর। সেদিনের প্রিয়া আজকের দিনে নর্তকী প্রিয়াবাঈ।

সুখ, শান্তি আর ভালবাসা সবই এক এক করে প্রিয়াবাঈ-এর জীবন থেকে দূরে সরে গেছে। আপনজন সবাই একে একে পর হয়ে গেছে। মানুষকে এখানে চেনা হয় অর্থের মাপকাঠিতে। এই তো জীবন। জীবনে চলার পথে যে এত কাঁটা বিছানো থাকে তা কি প্রিয়াবাঈ কভু জানতো। জীবন শুরু হবার আগেই ফুলের মত একটা জীবন কীটের বিষাক্ত দংশনে ক্ষতবিক্ষত। ঝরে না পড়লেও পাপড়িগুলো তার আজ আর অক্ষত নেই। জীবনকে চিনতে ভুল করে নি প্রিয়াবাঈ। তাই তো সবার অজান্তে সে তার অনাবৃত দেহকে আবৃত করেছে নর্তকীর ঝলমলে পোশাকে।

সবুজ পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে কেটে যায় রাতের পর রাত। প্রিয়াবাঈ-এর চোখে ঘুম নেই।

অথচ এই প্রিয়াবাঈ-এর চোখে ছিল সোনালী স্বপ্ন। তার বিয়ে হবে, স্বামী থাকবে, পুত্র হবে, সংসার বাঁধবে। কিছুই পেল না সে। জীবনের উষালগ্নে তার জীবনে নেমে এলো আঁধার কালো যবনিকা। যে ফুল না ফুটিতে…………….. ?

জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করতে করতে প্রিয়া আজ হেরে গেছে। ভালবাসার হাটে হৃদয়ের ব্যবসা করতে করতে সে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে অন্ধকারের অতল তলে। প্রিয়া আলো চাই – আলো চাই বলে চিত্কার করে। রাতের অন্ধকারে কে বা কারা তার নরম দেহটাকে খুবলে খুবলে খায় শকুনের মতো। লজ্জা আর ঘেন্নায় প্রিয়াবাঈ-এর চোখ বুজে আসে।

প্রিয়াবাঈ ভাবে- এভাবে বাঁচা যায় না, এভাবে সে বেঁচে থাকতে পারে না। মুক্তি পেতে চায় সে। কিন্ত কোথায় পথ? তার চোখের সামনে আজ কোন পথই খোলা নেই।

কি আশ্চর্য এই ভালবাসার হাট! এখানে ঢোকার পথ খুবই সোজা। কিন্তু বেরোবার পথ চিরদিনের মত বন্ধ। যে বা যারা এই ভালবাসার হাট থেকে বেরিয়ে যেতে চাইবে বাবুদের শুধুমাত্র বন্দুকের একটি গুলিতে তার জীবনটা এই ভালবাসার হাটে চিরদিনের মত ঘুমিয়ে পড়বে। যে ঘুম কোনদিনই ভাঙবে না।

রাত তখন দুটো। প্রিয়াবাঈ নাচের জলসাঘর থেকে সবেমাত্র ঘরে এসে ঢুকেছে। সারা শরীর আজ নেশার ঘোরে ক্লান্ত। প্রিয়াবাঈ ক্লান্ত শরীরটাকে বিছানায় এলিয়ে দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে।

এত রাতেও তার চোখে ঘুম নেই। মাথার উপরে সিলিং ফ্যানটা প্রচণ্ড গতিতে বন বন করে ঘুরছে। তবুও তার শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে। চকিতেই দরজায় মৃদু টোকা। ঠক্ ঠক্ ঠক্। এত রাতে তার ঘরে আবার কে এল। ক্লান্তপদে সে দরজা খুলতে এগিয়ে যায়। খটাস্ করে ছিটকানি খুলে দেখে সর্বাঙ্গ কালো পোশাকে ঢাকা এক আগন্তুককে। চোখে সোনালি ফ্রেমের কালো চশমা। মাথায় কালো হ্যাট।

প্রিয়াবাঈ বলে- “কে তুমি? কি চাও এখানে?”

“আমি আঁধারের মুসাফির। দিনভর মদ খাই, জুয়া খেলি। আর রাতের বেলায় ভালবাসার হাটে একটা মনের মানুষের সন্ধান করি।”

“কি চাও তুমি?” প্রিয়া চিত্কার করে ওঠে।

“আমি চাই সুখ, শান্তি, প্রেম, প্রীতি আর ভালবাসা। জীবনযুদ্ধে আমি এক পরাজিত সৈনিক। সুখ দুঃখে ভরা পৃথিবীতে আমার ভালবাসা চিরদিনের মত হারিয়ে গেছে। পারবে তুমি আমার সেদিনের ভালবাসাকে আবার ফিরিয়ে দিতে?”

চকিতেই আগন্তুক চোখের কালো চশমা খুলে ফেলে। মুখের কালো চাদর সরিয়ে ফেলে। প্রিয়ার চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটা অতি পরিচিত মুখ। আগন্তুক আর কেউ নয় তার মনের মানুষ, মনের আয়নায় যার ছবি সে এঁকে রেখেছে। আজ একটা বছর ধরে তাকে সে ভুলতে চেয়েছে কিন্তু পারে নি। আজ সেই প্রকাশ তার সামনে দাঁড়িয়ে।

প্রকাশ বলে – “আমি আজও তোমায় ভুলি নি প্রিয়া। আর তাই একটা বছর ধরে আমি তোমার সন্ধান করেছি বহু গ্রাম, নগর, শহর, বন্দরে, নির্জন শহরের অলিতে গলিতে। তারপর একদিন এক জনপ্রিয় সংবাদপত্রে দেখলাম তোমার ছবি। নর্তকীর বেশে। শিরোনামটি ছিল “ভালবাসার হাটে নতুন নর্তকী” রঙিন ছবিতে তোমাকে চিনতে না পারলেও তোমার টানা টানা চোখদুটিই আমাকে বলে দিয়েছিল তুমি কেউ নয় আমার প্রিয়া” প্রকাশ সুখের আবেশে একটা সিগারেট ধরায়। জ্বলন্ত সিগারেটের ধোঁয়ায় সারা ঘরটা ধোঁয়াময় হয়ে ওঠে।

প্রকাশ বলে- “আমি তোমায় আগের জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি প্রিয়া। তোমাকে আবার সেই আগের জীবনে ফিরে যেতে হবে।”

“না প্রকাশ! আর তা হয় না প্রকাশ। আমি আর শুচি নেই প্রকাশ আমার দেহটা অপবিত্র হয়ে গেছে। ভালবাসার হাটে ভালবাসার অভিনয় করতে করতে আমি বিলিয়ে গেছি প্রকাশ। আমার সতীত্ব বিলিয়ে আমি ভালবাসার হাটে দেউলিয়া হয়ে গেছি।” টপ টপ করে শ্রাবণের অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ে প্রিয়ার দুচোখ বেয়ে।

প্রকাশ প্রিয়ার দুচোখের জল মুছিয়ে বলে- “সমাজের চোখে তুমি অসতী হলেও আমার চোখে তুমি আজও পবিত্র নিষ্পাপ গোলাপ। আমি তোমায় জীবন সঙ্গিনী করে তোমার হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন একটা একটা করে সব পূরণ করবো। তোমায় আমার ভালবাসার বাঁধা খেলাঘরে হৃদয়ের রাণী করে রাখবো। এসো প্রিয়া, আমরা সকলের চোখে ধূলো দিয়ে রাতের অন্ধকারেই এই ভালবাসার হাট থেকে পালিয়ে নতুন জীবন শুরু করি।”

দিনের আলো ফোটার আগেই ওরা এই মধুচক্র থেকে বেরিয়ে পড়ল শহরের পথে।
পূর্ব দিগন্তে সূর্য ওঠার আগেই ভোরের ঊষালগ্নে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে নতুন সকালের প্রত্যাশায়।



(চলবে)
আগামী দিনে ভালবাসা শুধু ভালবাসা দ্বিতীয় খণ্ড -পঞ্চম পর্ব প্রকাশিত হবে। আক্রমনাত্মক বা কড়া সমালোচনামূলক মন্তব্য করবেন না। কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততার জন্য সময়ের অভাবে অথবা প্রয়োজনবোধে লেখক প্রতিটি মন্তব্যের প্রত্যুত্তর নাও দিতে পারেন।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৯ সকাল ১১:১৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×