বর্তমানে আমাদের দেশে ইসলাম নিয়ে চর্চা নিঃসন্দেহে আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। চর্চা বলতে আমি যেটা বুঝাতে চেয়েছি সেটা হলো ব্যক্তিগত উদ্যোগে হাদিস কোরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষন। স্যাটালাইটের এই যুগে যেহেতু তথ্য আদান প্রদান খুবই সহজ একটি বিষয়, তাই অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ধর্ম সংক্রান্ত অনেক তথ্যই খুব সহজেই আমরা পেয়ে যাই। এছাড়া রেডিও টেলিভিশনে হুজুরদের উপস্থিতিও বেড়েছে শতগুন। আগে ছবি তোলা নিয়ে হুজুরদের মধ্যে যে আপত্তি কাজ করতো, এখন সেটা আর অনেকাংশেই কাজ করে না। সুতরাং হাদিস কোরআন নিয়েই তাঁরা ক্যামেরার সামনে চলে আসেন। সুতরাং এই নেটের যুগে গুগলের যুগে, নিজে নিজে জ্ঞ্যান চর্চা করা বেশ সহজ।
এই ধরণের স্যাটেলাইট ভিত্তিক জ্ঞ্যন চর্চার একটি নেগেটিভ দিক হলো - বিভক্তি। অর্থাৎ কোন হুজুর বলেন এটা করা যাবে, কোন হুজুর বলেন ওটা করা যাবে না। যেমন উদাহরণ স্বরুপ বলছি- কোন হুজুর বলেন তারাবিহ ২০ রাকাত, কোন হুজুর বলেন ৮ রাকাত, কেউ বলেন আমিন জোরে বলতে হবে, কেউ বলেন আমিন আস্তে বলতে হবে- এমন বহু বিষয়ে বাংলার মোমিন মুসলমান আজ তথ্য বিভ্রান্তির বেড়া জালে আবদ্ধ।
লক্ষ্য করুন আজ থেকে ১৫ বছর আগেও কিন্তু এমন সব বিষয় নিয়ে আমাদের মতো সাধারণ মোমেন মুসলমান ইমাম বা খতিবগনের মধ্যে কোন রুপ বিরোধ বিভক্তি ছিলো না। আজকে সমাজে যে বিদাত আর শিরিক এর লিষ্ট এতো বেশী লম্বা হয়েছে, যে ঈমান আমল কি হচ্ছে বা না হচ্ছে বোঝার কোন উপায়ই নাই। অথচ সমাজে একটা ভালো মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না, যাকে কেউ বিশ্বাস করতে পারে। আমরা কঠিন ভাবে সহিহ শুদ্ধ রুপে ইসলাম চর্চা করতে মরিয়া হয়ে উঠছি এই স্যােটেলাইটের উপর প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে, কিন্তু বর্তমান সমাজে প্রতিটি পেশার মানুষের মধ্যে ব্যবসায়িক ফায়দা লোটা ছাড়া সার্ভিসটা খুবই কম। আপনি খাঁটি মধু পাবেন না, খাঁটি ঘিঁ পাবেন না, খাঁটি চিকিৎসা পাবেন না - সর্বত্রই ব্যবসা আর ব্যবসা। এমনকি অধিকাংশ মসজিদ গুলোও আজ ব্যবসার সোর্স হিসাবে পরিগণিত হয়েছে,যেখানে খতিব থেকে শুরু করে সবাই এর অংশিদার।
এহেন পরিস্থিতিতে আমার মতে আমাদের রাষ্ট্রে একটি জাতীয় শরীয়াহ ও মাসআলা মাসায়েল বোর্ড গঠন করা অতীব জরুরী। যেখানে বিজ্ঞ এবং আস্থাভাজন আলেম উলামাগন দেশের সাধারণ মোমেন মুসলমানের জন্যে ধর্মীয় কর্তব্য সমুহ নির্ধারণ করবেন। পাশাপাশি কারা বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন সেই সব আলেম উলামাগনের একটা তালিকা থাকবে,যা নিয়মিত মনিটর হবে, তাঁরা যেটা বলবেন, তার বিপরীতে কোন কথা জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত হবে না অর্থাৎ একেক মসজিদের একেক ইমাম তার নিজের খেয়াল খুশি মতো কোন ফতোয়া বা মাসআলা দিতে পারবে না। মসজিদ, ইউটিউব, ফেসবুক বা ওয়াজ মাহফিল যেখানেই হোক না কেন, তিনি নিজের মতো করে নিয়ম কানুন বাতাতে পারবেন না। ব্যাক্তিগত ভাবে কে কি আমল করলো সেটা ধর্তব্যের বিষয় নয়, কিন্তু ঢালাও ভাবে যে যার মতো করে কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করে ফাতোয়া দিতে পারবেন না। দিলেই তিনি শাস্তি যোগ্য অপরাধে অপরাধী এবং দন্ডিত হবেন। তা না হলে সামনে আরো ভয়াবহ দিন আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে।
ফেসবুক বা ইউটিউব খুল্লেই নিত্য নতুন হুজুরদের নিত্য নতুন বয়ান! শুনতে শুনতে মানুষ আজ দিকভ্রান্তের চরম পর্যায়ে পৌছে যাচ্ছে। তাদের কেউ কেউ নিজেদেরকে এতোই বিজ্ঞ আর আলেম ভাবছেন যে তারা বর্তমানে বসে সেই সময়ের সাহাবী(রাঃ) দের ভুল ধরতেও পিছ পা হচ্ছে না।(নাউজুবিল্লাহ)। যেভাবে খুশি সেভাবে অপরকে বুঝানোর চেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় যদি মাসআলা মাসায়েল ও ফাতোয়া দেয়ার ব্যপারে যদি নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা হয়, তবে সমাজে বিশৃঙ্খলা আরো বাড়বে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২১ সকাল ১০:৪১