somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিন্দু ও মুসলিম ধর্মের পাথক্য

০৬ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হিন্দু ও মুসলিম সম্পর্ক অনুসন্ধান এবং গবেষণা শুরু হয় ৭ম শতকের প্রথম দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামিক প্রভাব বিস্তারের সূচনা লগ্ন থেকে। বিশ্বের তিনটি বৃহত্তম ধর্মের দুটি হলো হিন্দুধর্ম এবং ইসলাম ধর্ম।হিন্দুধর্ম ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু মানুষের জীবনের সামাজিক ধর্মীয় উপায়। ইসলাম ধর্ম যথাযথভাবে একেশ্বরবাদী ধর্ম যেখানে সর্বোচ্চ উপাস্য হলো আল্লাহ । সর্বশেষ ইসলামী নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) যিনি কুরআনকে মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী কিতাব হিসেবে বিশ্বাস বিতরণ করেন ।

ঈশ্বর সম্পর্কিত ধর্মতত্ত্ব ও ধারণা
ইসলামে কঠিনভাবে একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করা হয় ও ঈশ্বরের একক অস্তিত্ব এবং পূর্ণ ক্ষমতায় বিশ্বাস করা ইসলামের একটি মৌলিক শর্ত যাকে তাওহীদ বা একত্ববাদ বলে।অপরদিকে হিন্দুধর্ম ঈশ্বরকে একেশ্বরবাদ, বহুঈশ্বরবাদ, অবতারবাদ, নাস্তিক্যবাদ প্রভৃতি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। তবে হিন্দু মূল ধর্ম গ্রন্থগুলোতে একেশ্বরবাদ এর কথাই বলা হয়েছে । হিন্দুধর্মের মুল ধর্মগ্রন্থগুলো হল বেদ এবং উপনিষদ যেগুলোকে ঈশ্বরের বানী হিসেবে গণ্য করা হয় । আর মহামনীষিদের বানীগুলোকে যে গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেগুলোকে স্মৃতি বলা হয়। ইসলামধর্মে মুসলমানদের জন্য কুরআন হল প্রধান ধর্মগ্রন্থ যাকে ঈশ্বরের বাণী হিসেবে গণ্য করা হয়। এবং যেটি ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বর্গীয় দুত বা ফেরেশতা জীবরাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের প্রধান নবী মুহাম্মাদ(সাঃ) কাছে প্রেরিত হয় এবং আল্লাহর বাণী হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। তাছাড়া হিন্দুধর্মের স্মৃতির মত ইসলাম ধর্মেও নবী মুহাম্মাদ(সাঃ) এর বাণীসমূহ যা হাদীস নামে পরিচিত, তা প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিবরণ অনুযায়ী মুহাম্মদের মৃত্যূর পর বিভিন্ন গ্রন্থ আকারে উৎসসহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সেই গ্রন্থগুলোও ইসলামী বিধিবিধানের উৎস্য।

মনীষিগণ এবং নবীগণ
ইসলাম ধর্মে নবী হলেন পৃথিবীতে বিভিন্ন যুগে এবং স্থানে কোন জাতির জন্য সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক মনোণীত পথপ্রদর্শক যিনি উক্ত জাতিকে সৃষ্টিকর্তা মনোণীত নির্দেশ এবং বিধিবিধান প্রদানের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ধর্মীয় উৎস্য অনুসারে সৃষ্টিকর্তা মোট এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী পাঠিয়েছেন যাদের মাঝে প্রথম নবী হলেন আদম এবং শেষ নবী হলেন মুহাম্মদ (সাঃ) যাকে তার সময়কাল থেকে শুরু পরবর্তী সকল যুগের ও স্থানের মানুষের জন্য চূড়ান্ত নবী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কিছু মুসলিম এবং হিন্দু পন্ডিত মনে করেন ভবিষ্যপুরাণে নরাশংস নামে যে শেষ অবতার বা কল্কি নামক অবতারের কথা বলা হয়েছে অনেকেই মনে করে থাকেন যে ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) হলেন সেই ব্যক্তি বা অবতার কারণ নরাশংস নামের অর্থ প্রশংসিত মানব যা আরবিতে মুহাম্মদ শব্দটির অর্থের সমার্থক বলে কেউ কেউ মত দেন যদিও তা অধিকাংশ হিন্দু শাস্ত্রবিদদের ব্যাখ্যায় অসমর্থিত।ইসলাম ধর্মের মত হিন্দু ধর্মেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংস্কারক এসেছেন যাদের মাধ্যমে হিন্দু ধর্ম ধাপে ধাপে সমৃদ্ধ হয়েছে । এদেরকে মনিষী বা মুনি বলা হয় ।

ফেরেশতাগণ এবং দেবদেবীগণ
অন্যান্য ইব্রাহীমী ধর্মের মতই ইসলাম ধর্মও ফেরেশতার অস্তিত্বে বিশ্বাসী যারা হলেন আল্লাহর সৃষ্ট স্বর্গীয় দূত। অপরদিকে হিন্দুধর্মেও স্বর্গীয় দুত রয়েছে যাদের দেবতা বা দেবী বলা হয়। এরা দুই ভাগে বিভক্ত। এক শ্রেণী হল ঈশ্বরের অংশ আর অপর শ্রেণী হল ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট। হিন্দুধর্মে স্বর্গীয় দূতদের পূজা করা হয় যা ইসলাম ধর্মে সমম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। ইসলাম ধর্মে ঈশ্বর ব্যতীত কোন কিছুর উপাসনা করা নিষিদ্ধ। অপরদিকে হিন্দু ধর্মে দেবদূতদের পূজাকে আধ্যাতিক সাধনার অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসলাম ধর্মে ইবলিশ হল জ্বিন প্রজাতি হতে জন্ম নেয়া মানুষের মনে কুমন্ত্রণা প্রদানকারী শয়তান শ্রেণীর নেতা। ইসলামে শয়তানের অস্তিত্বে বিশ্বাসের মতই হিন্দুধর্মেও অসুরে বিশ্বাস করা হয় । হিন্দুধর্মে একাধিক অসুর রয়েছে কিন্তু তারা কোন নেতৃস্থানীয় অসুরে বিশ্বাস করে না।

ধর্মীয় আচার-রীতিনীতি, প্রার্থনা ও উপবাস পদ্ধতি
হিন্দুধর্মের অনুসারীগণ দৈনিক নিয়মিত এবং অনিয়মিতভাবে তাদের উপাস্য দেবতা, দেবীগণের প্রতিমূর্তিকে সামনে রেখে উপাসনা ও ভক্তিমূলক পূজা করে থাকেন। তাদের দৈনন্দিন উপাসনার মধ্যে আরেকটি প্রচলিত রীতি হল অগ্নির দ্বারা উপাসনা, তাতে অগ্নিবেদীতে ঘি তুষ প্রভৃতি দান করে দেহ এবং মনের আত্মিক মুক্তি সন্ধান করা হয়। অন্যদিকে ইসলাম ধর্মে সালাত বা নামাজ নামক ইবাদতের মাধ্যমে প্রতিদিন পর্যায়ক্রমিকভাবে পাঁচবার আল্লাহ বা ঈশ্বরকে স্বরণ করা হয়।

খাবার
ইসলাম ধর্ম শুকর ছাড়া অন্যান্য পশুর মাংস খাওয়া অনুমোদন করে। তবে সে ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পুরণ হতে হবে যা সুরা মায়েদাহ তে দেওয়া আছে। প্রাণীটি চতুষ্পদী ও তৃণভোজী হতে হবে এবং তা আল্লাহর নামে জবাই হতে হবে জবাইয়ের সময় কন্ঠস্থ রগ বিচ্ছিন্ন করে রক্ত প্রবাহিত করতে হবে তবেই তা হালাল হবে। তবে বৈদিক হিন্দুধর্মে অনুসারীদের নিরামিষভোজী শাকাহারী হতে বলা হয়েছে। বেদিক হিন্দুধর্মমতে প্রাণিহত্যা এবং প্রাণিজ মাংস নিষিদ্ধ। যদিও হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন শ্রেণীতে এটি নিয়ে দ্বিমত থাকার কারণে অনেকেই প্রাণিজ আমিষ ভক্ষণ করেন বিশেষত ভারতের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে। স্মৃতিশাস্ত্রের বিখ্যাত গ্রন্থ পদ্মপুরাণে সুরাপান কে দ্বিতীয় মহাপাপ হিসেবে ধরা হয়। ইসলামেও মদ্যপান স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। গো মাংস ইসলামে বৈধ হলেও হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছে গোমাংস ভক্ষণ একটি অতি গর্হিত অপরাধ। কারণ প্রচলিত হিন্দুধর্মে গরুকে সমৃদ্ধির প্রতীক এবং দুগ্ধদানের কারণে দুগ্ধদাত্রী মায়ের সমতুল্য মনে করা হয়। ইসলামে মানবীয় সম্পর্কের সাথে অন্যান্য জীবের সম্পর্কের স্পষ্ট পার্থক্য করা হলেও হিন্দুধর্মে মানব, প্রাণী ও উদ্ভিদ সকল জীবকে ভাতৃত্বের দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হয়।



সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:০১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×