somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতীতকে দেখুন আজ ও আগামীর সম্ভাবনায়

১৯ শে মে, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিরাপত্তার কারণেই গাড়ি ড্রাইভ করার সময় রিয়ার-ভিউ মিরর বা পিছনে দেখার আয়নাটি হয়ে ওঠে অতি জরুরী বস্তু। জীবনের ক্ষেত্রেও কি ব্যাপারটি এমনি? বর্তমান ও ভবিষ্যৎ যাত্রাপথের নিরাপত্তা এবং তাদের অনিশ্চিত বাকগুলো দক্ষতার সাথে পার হওয়ার জন্য অতীতকে নিরীক্ষা করে সামনে এগোনোর দরকার আছে কি?

যারা গাড়ি চালান প্রায়শই রিয়ার-ভিউ আয়নায় গাড়ির পিছনের রাস্তাটি দেখে নেন তারা। লক্ষ্য করেন গাড়ির পিছনের দরজা, রাস্তার বাড়তি উত্যক্তকারী, দ্রুতগতির যানবাহন কিম্বা প্রভাবশালি কোন গাড়িচালক - যেকোন বিপদ ও ঝুকির আশঙ্কা পেছন থেকে আসছে কিনা। ঝুকি থেকে নিরাপদ থাকার পাশপাশি এটা আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ দিতেও সাহায্য করে। যথেষ্ট সময় পাই আমারা গাড়ি ওভারটেক করা বা থামিয়ে দেয়া কিম্বা গতি কমানোর আগে।

জীবনের হাইওয়েতে একটানা ড্রাইভিংটা এরকমই, অবিরাম অজানা ঘটনার সহযাত্রী হওয়া। আর বর্তমান ও ভবিষ্যতের পথে এই লম্বা সফরে অতীতের অভিজ্ঞতাগুলো হতে পারে আমাদের নির্ভরযোগ্য গাইড। অতীতকে সঠিক ভাবে নাড়াচাড়ায় সিদ্ধহস্ত হলে সেটা আজকের দিনকেই আলোকিত করে।

পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কিম্বা কর্মক্ষেত্র সবজায়গাতেই এমন মানুষের দেখা মেলে যারা অতীত থেকে মোটেও শিখতে পারেনা। জীবনযাপনের ধরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি, সেটা উর্বর হোক আর না হোক তার প্রয়োজনীয়তা নির্ধারন করতে দ্বিতীয় বার সেটা নিয়ে ভাবাটা দরকারি। ঠিক সে অর্থেই অতীতের ভুলগুলো পর্যালোচনা করলে সেগুলে থেকে আমারা আসলে শিখতেই পারি। অতীতকে যখন আপনি পর্যবেক্ষণ করেন তখন এটা আমদের সামনের চ্যালেঞ্জ ও পরাজয়ের বিরুদ্ধে শক্তির দিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করতে সাহায্য করে। ক্লাসরুমে বসে শেখার চাইতে জীবনের কাছ থেকে মূলবান বিষয়ে শেখাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

কিছু মানুষ দেখা যায় যারা অতীতে এমন ভাবে আটকে যান যেটা তাদের জন্য ক্ষতির কারণই হয়ে দাড়ায়। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে কি শিখলেন ও বুঝলেন সেটা বাদ দিয়ে তারা এক নাগাড়ে পিছনের ভুল, পরাজয়, সমস্যা পর্যালোচনায় ডুবে থাকেন। মানসিক সুস্থতাকে একরকম আগে থেকেই তারা খরচ করে ফেলেন। দোষ, নিন্দা এবং ’যদি এমন হতো’ জাতীয় বিষয় রোমন্থন করে তারা বর্তমান থেকে সরে গিয়ে তারা নিজেদের পীড়ার মধ্যে ফেলেন। এ ধরণের মানুষরা ফোকাস করেন আঘাত, বিয়োগান্তক ঘটনা, নৈরাশ্যে ও হতাশার উপর। ফলাফল হিসেবে আলোড়িত আবেগের নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের দরকার হয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞের। শেখার বদলে অতীত থেকে তারা যে কোন গঠনমূলক বিষয়ই ঝেড়ে মুছে ফেলেন।

নাম উল্লেখ না করে একজন বয়স্ক মানুষের কথা বলি যিনি অতীত নিয়ে আচ্ছন্ন থাকতেন। স্কুল শেষ করতে না পারার জন্য তিনি দায়ী করতেন বাবা-মাকে, বন্ধুদের দায়ী করতেন খারাপ রেজাল্ট করার জন্য, বাজে পেশার জন্য দায়ী করতেন স্ত্রীকে, এবং দুর্ভাগ্যের জন্য সহকর্মীরা দায়ী হতো তার কাছে। আমি যখন তাকে দেখি তখন তিনি তিক্ততা আর পুরোপুরি ক্রোধে উন্মত্ত। পরে তিনি বেশ বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

মূল্যায়ন করলে বোঝা যায় এই বয়স্ক মানুষটি তার অতীতকে সমালোচনা করার জন্য ভিন্ন কিছু করতে পারেন। তিনি তার চিন্তার এই অনুৎপাদনশীল ধরনটা সঠিক করতে পারতেন শুরুতেই। কিন্তু মৃত্যুশয্যায় এটা অনেক দেরি হয়ে যায়না?

তাহলে কিভাবে আপনি অতীত থেকে লাভবান হতে পারেন? এখানে কিছু টিপস আলোচনা করা হলো। কাজে লাগিয়ে দেখুন পরিবর্তনটা টের পান কিনা।

> জীবনের প্রতিটা সপ্তাহ ও মাস নিয়ে পর্যালোচনা ও নিরীক্ষণ করুন। কিছু মানুষ আছেন যারা দৈনিক পর্যালোচনা থেকে উপকৃত হন।

> আপনার কাজের ধরণ, স্বভাব, অনুভূতি, আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি যেগুলো অনুৎপাদনশীল বলে মনে করেন সেগুলো চিহ্নিত করুন।

> লাইফস্টাইলের ওইসব অনুৎপাদনশীল ধরন ও ধারণাকে সংশোধন করুন। ভাবুন, জীবন সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর দরকার আছে কি? দরকার হলে তাই করুন এবং সেটা অবশ্যই দ্রুত।

> নতুন মূল্যায়নগুলো থেকে শিখুন। এই শিক্ষাগুলো মূল্যবান প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যাবস্থা থেকে পাবেন না।

> রিয়ার-ভিউ মিরর কার দরকার? আদতে আমাদের সবারই এটা প্রয়োজন। কেবল যারা ইতিবাচক পরিবর্তন চাননা তাদের কথা আলাদা। মনে রাখবেন জীবনযাপনটা আসলে ড্রাইভিংয়ের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

> জীবন হলো আমাদের দৈনন্দিন কর্ম ও প্রতিক্রিয়ার অবিরাম বুনে চলা ফসল। এ কারণেই অতীতের ব্যাপারে যতœশীল ও সতর্ক পর্যালোচনা জীবনের জন্য দরকারি হয়ে পড়ে।

জর্জ অরওয়েল একজন বৃটিশ লেখক। অতীত পর্যালোচনার ব্যাপরে তার একটি উক্তি দিয়ে শেষ করছি আজকের লেখা : অতীতকে নিয়ন্ত্রণ করার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যত নিয়ন্ত্রণ হয়, আর অতীত নিয়ন্ত্রিত হয় বর্তমানকে নিয়ন্ত্রণ করার মধ্য দিয়ে। কথাটি আমাদের পুরো লাইফস্টাইলের জন্যই খাটে।

তামিম আব্দুল্লাহ
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×