somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যোগব্যায়াম (০৫) - মাইগ্রেইনের জন্য যোগ, কল্পনা নাকি বাস্তবতা

২৬ শে জুন, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাইগ্রেইন : কি, কেন ও কিভাবে

মাইগ্রেইন, মাথায় এক বিভিষীকাময় যন্ত্রণার নাম। প্রযুক্তি নির্ভর লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত আমরেকিনদের মধ্যে ২৮ মিলিয়নেরও বেশি লোক মাইগ্রেইনে আক্রান্ত, যাদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই মহিলা। আরেক হিসাবে দেখা যায় ৩.২ মিলিয়ন কানাডিয়ান অর্থাৎ কানাডার মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশই মাইগ্রেইনে আক্রান্ত। এখানেও পুরুষদের (৫%) তুলনায় মেয়েদের (১৫-১৭%) আক্রান্ত হবার হার বেশি। আমাদের দেশের মাইগ্রেইন আক্রান্ত রোগীর সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়না। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন অবধি এই রোগের স্থায়ী নিরাময়ের কোন ব্যাবস্থা আবিষ্কার করতে পারেনি। তবে অতিসম্প্রতি হেডেক (Headache) ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে মাইগ্রেইন নিয়ে একটি গবেষনার ফলাফল যেটি এর ভুক্তভোগীদের জন্য হতে পারে এক কথায় চমৎকার একটি সুসংবাদ। সুসংবাদটি দেয়ার আগে চলুন এক ঝলকে দেখে নিই মাথাব্যাথার যন্ত্রণাদায়ক এই রোগটির লক্ষণ ও এর কারণগুলো কি।

মাইগ্রেইন হলো রক্তবাহী নালী ও ধমনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত মাথাব্যাথা যার কারণ কোন আঘাত বা প্রদাহ এবং স্নায়ুর শেষপ্রান্তে উত্তেজনা বা জ্বালাপোড়া। আর এমনটা ঘটে ব্রেইনের উপরিপৃষ্ঠের রক্তবাহী শিরা বা ধমনী প্রসারিত হওয়ার কারণে। এই দুরবস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বিতৃষ্ণাবোধ, বমিভাব, অস্থির মেজাজ, আলো বা শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা, দৃষ্টি পথে বিঘ্নতা বা চিহ্নের উপস্থিতি কিংবা মাথাঘোরা। ব্যাথা অনুভূত হতে পারে মাথার একপাশ কিংবা উভয় পাশেই, ঘাড়ের পিছন দিকে, চোখের চারপাশে, মুখমন্ডলে কিংবা সাইনাসে। ব্যাথা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে, ক্ষেত্রবিশেষে চার থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসা করা না হলে এটা দুর্বল করে ফেলতে পারে। ব্যাথায় আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব লক্ষণ হিসেবে স্নায়বিক সর্তকসংকেত কিংবা অলৌকিক কোন আভা যেমন অস্পষ্ট দৃষ্টি বা আলোর ঝলকানি দেখা যেতে পারে। হাত ও পায়ের শিরশিরানি অনুভূতিও এর হতে পারে মাইগ্রেইন আক্রমণের সতর্কবাণী। এখনো পর্যন্ত মাইগ্রেইনের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা ব্যাবস্থা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে বিভিন্ন ঔষধ গ্রহণের মাধ্যমে এর প্রকোপ কমানো ও ব্যাথা থামানো সম্ভব হয়।

মাইগ্রেইন আক্রমণের সূত্রপাত ব্যাক্তিবিশেষে ভিন্ন হয়। এর প্রভাবকের মধ্যে আছে স্ট্রেস, সুনির্দিষ্ট কোন খাদ্য, আবহাওয়ার পরিবর্তন, আলো, গন্ধ, ঘুমের নিয়মে পরিবর্তন, কিছু ঔষধ ও হরমোনের ওঠানামা। বিজ্ঞানীরা এটাও ভেবেছেন, মস্তিষ্কের সেরাটনিন ও ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় রাসায়নিক পদার্থের কারণেও মাইগ্রেইনের আক্রমণ হতে পারে। এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন এর ওঠানামও মেয়েদের মাইগ্রেইন আক্রমণের কারণ হতে পারে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, অধিকাংশ মহিলাই রোগীরাই পিরিয়ডের আগে বা চলাকালে এবং মেনোপজ বা অন্ত:সত্তা অবস্থায় মাইগ্রেইনে আক্রান্ত হন। কণ্ট্রাসেপটিভ ও হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরপি) অনেকক্ষেত্রে মাইগ্রেন থেকে উদ্ভুত মাথাব্যাথাকে আরো বাজে অবস্থায় নিতে পারে। ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয়, অ্যালকোহলিক পানীয়, বাদাম, ধূমপান অথবা আচার জাতীয় খাবার, কৃত্রিম চিনি ইত্যাদি খাবারের কারণেও মাইগ্রেইনের যন্ত্রণা আরম্ভ হতে পারে বলে জানা যায়। ক্ষুধাবোধ থেকেও তৈরী হতে পারে এই মাথাব্যাথা। এছাড়াও দৈহিক কিছু প্রভাবক আছে যেমন অত্যধিক বা অতিস্বল্প ঘুম, যৌন কার্যকলাপ, শরীরে ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপও অনেকের মাইগ্রেইন অ্যাটাকের কারণ। মাইগ্রেইনের পরিবেশগত প্রভাবকের মধ্যে রয়েছে - অত্যধিক আলো বা সুর্য রশ্মির ঝলকানি, অস্বাভাবিক ও তৃপ্তিদায়ক নয় এমন গন্ধ, আবহাওয়ার পরিবর্তন, ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতায় অবস্থান এবং ভিন্ন টাইমজোন ইত্যাদি।

প্রথাগত চিকিৎসা বনাম যোগ থেরাপি
এখনপর্যন্ত যেহেতু মাইগ্রেইনের সঠিক কোন চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি তাই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান নিরাময়ের বদলে একে প্রতিরোধ করার পরামর্শ দেয়। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাথা নাশক ওষূধ সেবন, স্ট্রেস কমানো এবং যে সমস্ত প্রভাবক রোগীর মাইগ্রেইন অ্যাটাকের কারণ সেগুলো এড়িয়ে চলা। তবে গত মে মাসের মাঝামাঝি হেডেক (Headache) ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে, যোগ মাইগ্রেইনের বারবার আক্রমণের হার কমায় এবং এর তীব্রতা ৭০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস করে। যোগ স্নায়বিক ভারাক্রান্ত অবস্থা কাটিয়ে মনকে শিথিল করার মাধ্যমে মাথা ব্যাথার মাত্রা স্থায়ী ভাবে কমাতে পারে।

তিন মাসব্যাপী ওই গবেষণাটি পরিচালনা করেন ইউনিভার্সিটি অফ রাজস্থানের একদল গবেষক। গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ডক্টর পি. জে. জন। তিন মাস সময়সীমার ওই পর্যবেক্ষণের শেষে ড. জন দেখলেন, সুনির্দিষ্ট কিছু যোগাসন, দম নেয়ার এক্সারসাইজ এবং প্রণোদনামূলক দোয়া বা মন্ত্রপাঠ মাইগ্রেনের তীব্র আক্রমণকেও স্থায়ী ভাবে কমিয়ে ফেলতে পারে।

গবেষক দলের একজন বিশেষজ্ঞ নেহা শর্মা জানিয়েছেন, 'বিজ্ঞানীরা ব্রেইনের একটি ক্যামিকেল সেরোটনিনকে মাথাব্যাথার মূল প্রতিনিধি হিসেবে চিহ্নিত করে আসছিলেন। তারা ভাবছিলেন, সেরোটনিনের লেভেল যতো অল্পমাত্রায় থাকবে তা রক্তবাহী শিরা ও ধমনীকে ততো প্রসারিত করে এবং মাইগ্রেন তৈরী করে। আর যোগের মাধ্যমে এই সেরটনিনের মাত্রা বাড়তে পারে। এটাই আমাদেরকে এই গবেষণা কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে, আমরা দেখতে চাইছিলাম সেরোটনিন লেভেল ওঠানামার সঙ্গে আসলেই মাইগ্রেন আক্রমণের সম্পর্ক আছে কিনা।'

ড. জনের গবেষক দলটি মাইগ্রেনে ভুগছে এমন ৭২জন রোগীকে নিয়ে দুটি দলে ভাগ করেন। প্রথম গ্রুপকে তারা শেখালেন কিভাবে মাইগ্রেনের উদ্দীপনাকে থামিয়ে দিতে হয় এবং সেই সঙ্গে ডায়েট ও লাইফস্টাইল সংক্রান্ত দরকারি পরিবর্তনগুলো।

দ্বিতীয় গ্রুপকে গবেষক দল যোগ থেরাপি দিলেন যার মধ্যে ছিল বেশ নমনীয় কিছু যোগাসন যেমন - অর্ধকটি চক্রাসন, অর্ধ চক্র, শিশাঙ্ক আসন এবং অর্ধ মৎসেন্দ্রাসন। এছাড়াও জল নেতি, সাতক্রিয়া, ক্রিপাল ভারতি এবং প্রাণায়ামের পাশাপাশি দমের অভ্যাস, শিথিলায়ন ও ধ্যান।

এই গ্রুপে অংশগ্রহণকারীরা সপ্তাহে পাচ দিন এক ঘন্টা করে যোগসনের প্র্যাকটিস করেছে। তিন মাস পরে যোগের গ্রুপটিতে সার্বিক উন্নতি লক্ষ্য করা গেল। তাদের মাইগ্রেন অ্যাটাকের হার ও তীব্রতা দুই-ই কমেছে লক্ষণীয় মাত্রায় যেখানে অন্য গ্রুপটির কোন ইতিবাচক পরিবর্তনই হয়নি বরং কারো কারো ক্ষেত্রে লক্ষণসমুহ আরো বাজে অবস্থায় পৌছে গেছে।

গাবেষণায় অংশগ্রহণকারী দলটির বয়স গড়পড়তা ২০ থেকে ৩৮ বছর এবং ১০ স্কেলের মাত্রায় তাদের মাইগ্রেনের তীব্রতা ছিল ৭.৬ মাত্রায়। যেসমস্ত রোগী যোগ থেরাপি প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন তারা দমের এক্সারসাইজ করতে হতো, ঘাড় ও কাধের ব্যায়াম করতে হতো, সাইডওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড বেন্ডিং আসনগুলো প্রতিবার অ্যাটকের পর আগের বারের চেয়ে তাদের মাথাব্যাথার তীব্রতাকে কমিয়ে দিয়েছিল। একই সঙ্গে যোগের এই আসনগুলো তাদের মধ্যকার উদ্বেগ, স্ট্রেস ও অবসাদকে লক্ষনীয় মাত্রায় কমিয়ে দিয়েছিল, জানালেন ড. জন।

উপরোক্ত গবেষণাটি আরো দীর্ঘমেয়াদে করতে পারলে এটি মাইগ্রেইন চিকিৎসার ক্ষেত্রে আরো কার্যকরী ফলাফল এনে দিতে পারবে নি:সন্দেহে। যোগের প্রত্যেকটি আসনই একাধিক রোগের নিরাময় করে। পাশাপাশি এটি দেহ, মন ও দমের মধ্যে কাঙ্খিত ভারসাম্য এনে আপনার লাইফস্টাইলকে করে তোলে আরো সহজ ও সুন্দর।

তামিম আব্দুল্লাহ
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০০৮ বিকাল ৫:৫৬
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×