স্বাধীনতার ৪০ বছর উদযাপন হবে আগামী বছর।
জানা নেই পৃথিবীতে আমাদের মত এমন কোন অবাগা জাতি আছে কিনা যারা তাদের স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচার না করে ৪০ বছর পার করে দিয়েছে। আমি সেই সকল জাতির কথা বলতেছি যে জাতি আমাদের মত রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করে নিজেদেরকে একটা জাতি হিসেবে আবির্ভাব করেছে।
অভাগা আমরা, আমাদেরকে দেখতে হয়েছে স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে লাল-সবুজের রক্তে রন্জিত পাতাকা, সে পতাকার জন্য আমাদের (আনুমানিক) ৩০ লক্ষ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে।
অভাগা এ জাতি, যাকে দেখতে হয় স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতার দাপট, বুক ফুলিয়ে উরা বলে বেড়ায় '৭১ এ কোন যুদ্ধ হয়নি, উরা বলে বেড়ায় উরাই নাকি আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা করবে।
এ দেশের সর্বোচ্চ আদালত স্বাধীনতা বিরোধীদের সেদিনকার নেতা গোলাম-আজমকে এ দেশের নাগরিকত্ব দিয়ে সম্মানিত করে, ধিক জানাই সে বিচার ব্যাবস্তাকে যে বিচার ব্যাবস্তা আমার ভাইয়ের রক্তের বিচার করে না, ধিক জানাই সে বিচার ব্যাবস্তাকে যে বিচার ব্যাবস্তা আমার বোনের সম্মানহানির বিচার করে না।
এমনই এক অভাগা জাতি আমরা, স্বাধীন হয়ে ও আমাদেরকে স্বাধিন মানচিত্রের ভিতরে নির্বাচনে প্রতিদন্ধিতা করতে হয় স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে, স্বাধীনতাতেই যারা বিরোধীতা করেছিল তারাই কিনা বলে বেড়ায় আমাকে দূর্নিতিবাজ, সন্ত্রাসী!!
আসলে উপরের কথাগুলো শুধু দু্ঃখ থেকেই বলা, কি পেলাম আমারা আর কেনই বা এমন হল!
২০০৮ এর নির্বাচনের মত প্রতিটা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ওয়াদাই ছিল স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার কিন্তু ওরা কোনবার করে নি। আর এইবার ঠিকই বিচার শুরু করল মনে করে অনেক আশায় খুশি হয়ে বসেছিলাম কবে দেখব কিংবা একদিন হয়ত দেখব এ দেশের বুকে সেই হায়নাদের বিচার যারা আমার মা-বোনের সম্মান হানী করেছিল, হত্যা করেছিলা আমার বাবা-ভাইকে। কিন্তু বাস্তবে কি দেখতেছি? আসলেই কি সেই আকাংখিত বিচার হচ্ছে নাকি বিচারে অন্তরালে কোন নাটক করে উনারা ক্ষমতায় ঠিকে থাকার নীল-নকশা তৈরি করতেছে?
এটা ভাবার কারন হল, এর আগেরবারও উনারা একই ওয়াদা নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে বেমালুম ভুলে গেছিল বিচারের কথা। আরও অনেক কারন আছে...
আজকে যদি সত্যি সত্যি স্বাধীনতা বিরোধীদের কিংবা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াই হয়ে থাকে, তাহলে:
১। কেন প্রধান আসামী গোলাম-আজমকে সবার আগে গ্রেপ্তার করা হল না? কারন এই বিচার করতে হলে সেই প্রধান আসামী, তাকে গ্রেপ্তার না করার কারন কি?
=> আমরা সাধারন মানুষ অত জটিল হিসাব বুঝি না, এর কারন হিসাবে সহজে যেটা বুঝি সেটা হল, গুআজম এখন কোন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কোন নেতা নয়। তার কোন কাজে কর্মে আওয়ামীলীগ ভয় পায় না, কারন সে কোন হরতাল কিংবা সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে পারবে না, তাই তার ব্যাপারে অত আগ্রহী নয়। অথচ নিজামী-সঈদী-মুজাহিদ-সাকারা সরকার বিরোধী আন্দোলনের বড় হাতিয়ার, তাই সরকার বিরোধী আন্দোলনকে দমানোর জন্যইকি এদেরকে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের নামে গ্রেপ্তার করা হল? জানি এরা এই বিচারের আওতাধীন কোন সন্দেহ নাই, তা হলে গুআজমের কি হল?
২। সরকার যখনই তার নির্বাচনী ওয়াদা থেকে সরে গিয়ে বাকসালের মত করে ২০২১ এর স্বপ্ন দেখে আর যখন সামনে কোন প্রতিবন্ধক দেখে তখনই -----
=> গুআজমকে বাদ দিয়ে নিজামী-সঈদী-মুজাহিদকে গ্রেপ্তার করল তখন যখন স্বাধীনতার বিরোধীদল জামাত বিভিন্ন ঈস্যুতে আন্দুলনের হুমকি দিল। আচ্ছা মেনেই নিলাম আসলে বিচার শুরুই করল ঐসময়ে। তাহলে ঐসময়ে সাকাকে কেন গ্রেপ্তার করা হল না? পরে সাকাকে গ্রেপ্তার করা হল যখন মিডিয়াতে সাকাকে বলতে শুনলাম সংসদ থেকে পদত্যাগ করবে তখনই। তাহলে কি বলতে পারিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামী সরকারের প্রধান উদ্দ্যেশ্য নয়, বরং বিরোধীদের দমনই প্রধান উদ্দ্যেশ্য যেমনটি উনরার করেছিল '৭১-'৭৫ বাকশাল কায়েমের জন্য?
৩। দলীয় পরিচয়ে যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত করা
=> আওয়ামীলীগ করলেই মুক্তিযুদ্ধা আর না করলেই যুদ্ধাপরাধী, এটাই যেন আওয়ামীলীগের নীতি এখন। যেমন বলা চলে হাসিনার বেয়াইন একজন নামকরা যুদ্ধাপরাধী, যার বিরুদ্ধ্যে অসংখ্য প্রমান মেলে যেমনি প্রমান মেলে গোলাম-আজমের বিরোদ্ধ্যে। অথচ সে ধরাছুয়ার বাইরে। আর সাঈদী এখন যুদ্ধাপরাধী। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি সাঈদি যুদ্ধাপরাধী নয়, তবে হতেও পারে তবে শীর্ষ ১০জনের প্রাথমিক তালিকায় থাকার মত সে নয়। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষপঠে আওয়ামীলীগের বিরোধী শক্তি হিসাবে সে একটা বড় চ্যালেন্জ আর তাই তাকেও টপ ১০ এ ধরা হল। '৭১ এ তার কোন দলীয় পরিচয় ছিল না, পরবর্তীতে সে জামাতের রাজনীতীর সাথে যুক্ত হয়। সে যদি যুদ্ধাপরাধী হয় তার বিচার হতে হবে তবে টপ ১০ এ সে পড়তে পারে না। আওয়ামীলীগের এম.পি আছে ২ জন যারা যুদ্ধাপরাধী বলে পরিচিত অথচ ওদের খুজ নাই, তবে সাঈদিকে যুদ্ধাপরাধী বলে টপ ১০ এ আনা কোন বিচার বলে মনে হয় না বরং মনে হয় বিরোধী দমন। তবে হা তাকে যুদ্ধাপরাধী বলা যায় যদি জামাতকে যুদ্ধাপরাধীদল হিসাবে বলি, সেক্ষেত্রে প্রথমে আওয়ামীলীগকে জামাতের রাজনীতী বন্ধ করতে হবে---আরা সেটাও জনগন মেনে নিবে কারন এই দলটা '৭১ প্রকাশ্যে বিরোধীতা করেছিল স্বাধীনতার।
দেশের বর্তমান অবস্তা দেখে আমার মনে হচ্ছে আওয়ামীলীগ সেই আগের পথেই হাঁটতেছে. ওরা ধীরে ধিরে বাকশালের দিকেই যাচ্ছে। তবে হয়ত এবার আর বাকশাল শব্দ কিংবা বলে কয়ে বাকশাল করবে না পরোক্ষভাবে বাকশাল কয়েম করবে।
সেদিন আওয়ামী একজন এম.পিকে বলেতই শুনলাম উনাদের পরবতী লক্ষ্য হল ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা, যা '৭৫ সালে উনারা বলেছিলেন সারা জীবন থাকা।
আরও বেশী অবাক হই যখন দেখী কেউ এই সরকারের সমালোচনা কিংবা খারাপ কাজের প্রতিবাদ করলে তাকেই দমনের কৌশল হাতে নিয়েছে অর্থাৎ কেউ আওয়ামীলীগের কাজের সমালোচনা করে খারাপ গুলো বলতে পারবে না, সবাইকে মোজাম্মেল বাবু কিংবা মনজুরুল বাবুর মত হতে হবে..যার প্রমান টিআইবি। এই সেই টিআইবি যে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছিল বিগত জোটসরকারের ভয়াবহ দূর্নিতির রুপ। তখন আবার আওয়ামীলীগ সেটাকে ব্যাবহার করে সরকার বিরোধী আন্দোলন করেছিল।
অবস্তা এখন এমন কেউ সরকারের কোন খারাপ কাজের কথা বলতে পারবে না, সবকিছু সহ্য করে যেতে হবে। বললেই মাহমুদুররহমানের মত সাংবাদিককে ৬মাসের জেল দিয়ে নজির সৃষ্টি করতেও পারে সরকার। কিংবা সানাউল্লাহ হত্যাকান্ডকে প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন দলীয় কোন্দল যার ভিডিও প্রকাশ্যা প্রমান করে কে খুনি। অথবা বলেদিতে পারে নির্দিধায় "যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার ষড়যণ্ত্র" (টিআইবি)। তাহলে কি দাড়াল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে এ সরকার নাকি এইটাকে একটা হতিয়ার হিসাবে নিয়ে দেশে লুটতরাজ করে যাবে আর ২০২১ এর স্বপ্ন দেখবে আর কেউ প্রতিবাদ করলেই বলে দিবে "যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার ষড়যণ্ত্র" কিংবা "যুদ্ধাপরাধী বলে বিচার শুর করবে" কিংবা "রাষ্ট্রদ্রোহী" বলে বিচারের কাড়গড়ায় দাড় করাবে।
আসলে অভাগা জাতি অভাগাই থেকে যাব, সবাই প্রহসন করবে আর নিজেদের আখের গুচাবে, আমরা আমজনতা আমজনতাই থাকব। ১০টাকা চলের কথা বলে ৪৫ টাকায় চাউল খাইতে হবে আমাদের।
কপাল পোঁড়া জাতি আমরা আসলেই, শুধু রক্ত দিতে জানি, রক্তের বদলা নিতে জানি না। '৫২, '৭১, '৯০ আমরা রক্তই দিয়েছি বিনিময়ে আওয়ামিললিগ-বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের আখের গুচিয়েছে আমাদের কিছু করেনি, তাইত বলত শুনি একটার বদলে দশটা লাশ চাই!!