তোমার মনে আছে নিম্নী,
সেই রোজকার অফিসে আমি তোমার কাছে আসলে আমার হার্ট কাঁপত,তোমার শরীরের পারফিমের মিষ্টি গন্ধটা আমাকে আরও আকর্ষণ করত,তোমার মনে পরে ভালোবাসার অনেকটা দিন পার হবার পর তুমি আমাকে সেই পারফিউমের নামটা বলে ছিলে।
মনে পরে আমাদের ভালবাসার শুরুর দিকের কথা, তখন শীতকাল আমি প্রতিটা দিন তোমার বাসার নিচে এসে দাড়িয়ে থাকতাম তোমার সাথে অফিসে আসব বলে।তুমি বাসা থেকে আমার জন্য রান্না করে নিয়ে আসতে। তোমার মনে আছে কাজের বাহানায় তুমি আমার সঙ্গ পেতে চাইতে অফিসে, আমাকে কাছে ডাকতে তোমার পাশে বসাতে।মাঝে মাঝে আমরা আমাদের ভাবের আদান প্রদান করতাম পঙ্কজ দাদার মাধ্যমে। আহারে বেচারা।না পারত কিছু বলতে না পারত কিছু সইতে। মনে পরে আমার জ্যাকেট তুমি তোমার গায়ে পরে তোমার বাসায় যাওয়া, তখনও আমাদের ভালোবাসা শুরুই হয়নি, তারপরও তুমি পরম মমতায় সেই জ্যাকেট বাসায় নিজ গায়ে পরে নিয়ে গেছিলে, আর ফেরত দেবার সময় মেখে দিয়েছিলে একগাদা সুগন্ধী।অফিসে সিঙ্গারা খাবার আগে আমি তোমাকে বরাবরই মনে করিয়ে দিতাম ওষুধ খাবার কথা। আগে তো তোমার সব ওষুধ আমার ব্যাগে করেই রাখতাম।অফিসে বসের চোখ বাঁচিয়ে কলিগদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলত তোমার আমার অফিস প্রেম।তোমার মনে পরে অফিস বাথরুমে তোমার আটকে পরে যাওয়া, কি ভয়টাইনা তুমি পেয়েছিলে।কান্নায় আমাকে জড়িয়েও ধরতে পারছিলে না অফিস লজ্জার ভয়ে।প্রতিদিন সকালে তোমাকে অফিসে নিয়ে আসা আর অফিস থেকে তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া ছিল আমার রোজকার রুটিন।মনে পরে তোমার, মধুবনের লাড্ডু আর ছোলার কথা।
আমরা রোজ তা খেতাম আর রিক্সায় কত শত দুষ্টামি করতাম।তখন তোমার হাসিতে একটা মাধুর্যটা ছিল, ছিল নিশ্চিন্তে আমার হাত ধরে তোমার পথচলা। তুমি সবসময় চাইতে আমি তোমার পাশে থাকি।মার্চেন্ট ভিজিটে গেলে আর আসতে দুপুরের পর হলে তুমি না খেয়ে বসে থাকতে,ও হ্যাঁ অফিস শেষে টি এস সির আড্ডার কথা মনে আছে। আমি আমার জীবনেও এত ফুসকা খাই নাই যা তোমার সাথে প্রেমের সময় খেয়েছি।তোমার কমদামি খাবারের প্রতি আকর্ষণ আমাকে বরাবরই মুগ্ধ করত।আমার পকেট খরচ ও বেছে যেত।মনে পরে প্রথম যেদিন অফিসে জানাজানি হল তোমার আমার ভালোবাসার কথা, অজানা ভয় তোমাকে আর আমাকে গ্রাস করেছিল।আমাদের চাকরি থেকে যখন বাছাই পর্ব এসে ছিল “হয় তুমি জব করবে না হয় আমি জব করব” তখন তুমি নির্দ্বিধায় নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে আমার মতামতকেই প্রাধান্য দিয়ে ছিলে যদিও সেই সময় আমার থেকে তোমার চাকরিটা বেশি প্রয়োজন ছিল।
আর যেদিন তুমি চাকরিটা ছেড়ে দিলে আমাদের দুজনেরই মন খুব খারাপ হয়ে গেছিল।এক পর্যায়ে তুমি তো কেদেই দিয়েছিলে বসুন্ধারায় ক্যাপ্রিকনে। তোমার কান্নার মাঝে চাকরি হারানোর কোন রেশ মাত্র ছিল না ছিল শুধু আমার সাথে দুরত্ত্যের বিসাধ।
তার পর কত দিন পার হল। জীবনের কতই ঘটনা পার হয়ে গেল, অফিসে জিন্স টিশার্ট পরা মেয়েটা সালোয়ার কামিজে অভ্যস্ত হয়ে উঠল।পরিবর্তন আসল তোমার আমার চলন ভলনে,কথা বার্তায়।আমরাও হয়ে উঠলাম বাস্তববাদী ।
অবশেষে তোমার আমার বিয়ে হল।কিন্তু আমারা বদলে গেলাম।পরিবর্তন, পরিবর্ধন আমাদের ঘিরে রাখল।ভালোবাসার সাথে দায়িক্তবোধটাও বেড়ে গেল।আমাদের উপর আরোপ হল সামাজিক বৈবাহিক কিছু নিয়ম, যা আমরা কোনদিনও ভাঙতে পারব না।বউ আমি তোমাকে আগের চেয়েও বেশি ভালবাসি কিন্তু তোমাকে হয়ত তোমার নিয়মে ঠিক আগের মত প্রকাশ করতে পারি না, আর তাইত তুমিও আমার এই পরিবর্তনটাকে মেনে নিয়ে আমার কাছ থেকে তোমাকে গুটিয়ে নিয়েছ। প্রতিটাদিন তোমাকে আমি একটা হলেও চকলেট দিতাম আর তুমিতা নির্দ্বিধায় পরম আরামে আমাকে অল্প দিয়ে পুরোটাই খেয়ে ফেলতে।আজ তোমাকে আর তেমন একটা চকলেট দেওয়া হয় না হয়ত ভুলে জাই,আগের মত সব একটা মনেও থাকে না।আবেগ,ভালোবাসার সাথে আমাদের জীবনে নতুন এক বন্ধু এসেছে আর তা হল দায়িক্ত-কর্তব্য।ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা,উপার্জন, সংসার, নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে আমি এতটাই ব্যাস্ত হয়ে পরেছি যে আমি বর্তমানের সুখ গুলোকে বুঝে উঠতে পারছি না।
এমনটা আমি কোনদিনও চাইনাই।এমন পরিবর্তন আমার কোনদিনও কাম্য ছিল না, তারপর পরিবর্তন হতে হয়।কারন মানুষ মরে গেলে পচে যায় আর বেছে থাকলে বদলায়,সব বদলানোর কোন কারন লাগে না,অজুহাতই যথেস্থ।আমাদের সমাজে সবারই পরিবর্তন হয় অপরকে পরিবর্তিত হতে দেখে। তুমিও হবে।তবে তোমার প্রতিটা পরিবর্তনের প্রথম ধাপে শুধু একটা কথাই মনে রাখবে আমি তোমাকে সারাটাজীবন আমার সম্পত্তিরূপে নয় আমার সম্পদ রূপে পেতে চাই। লিখেছেনঃ এল এইচ জুয়েল
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৩