somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আঁধারবিলাস_পর্ব ১(আমার লেখা প্রথম ভৌতিক গল্প)

২৪ শে জুন, ২০০৮ রাত ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাস চলাকালীন সময়ে জামিল হঠাৎ রাহাতকে কনুই দিয়ে খোঁচা দিল। রাহাত তাকাতেই সে বললো, "ভুডুচর্চার নাম শুনেছিস?"
"কিসের নাম?"
"ভুডুচর্চা। একধরনের ডাইনীবিদ্যা। প্রেতসাধনা টাইপ ব্যাপার স্যাপার।"
"জানিস এখন স্যার কি নিয়ে লেকচার দিচ্ছে। 'মলিকিউলার সিমেট্রি' আর তোর মাথায় ভুডুচর্চা! পাগলা তুই মানুষ হবি কবে?"
"ক্লাস শেষে সব বলব।"

জামিল রাহাতকে টেনে রহিম মিয়ার চায়ের ঝুপড়ির পাশে নিয়ে গেল। কন্ঠ নামিয়ে বললো,"আমার সাথে এক জায়গায় যাবি?"
"কোথায়?"
"লালমাটিয়ার একটা বাসায়।"
"সেখানে গিয়ে কি হবে?"
"আগে চল তারপর বলব। ঐখানে আমার ওস্তাদ থাকেন। প্রেত সাধনা করে"
রাহাত অট্টহাসি দিয়ে বললো,"কে থাকে? তোর ওস্তাদ?প্রেত সাধনা করে?"
"হ্যাঁ আমার ওস্তাদ। আমাকে বুধবার মানে আগামীকাল তার বাসায় দাওয়াত করেছেন। তিনি একা থাকেন। আমি বলেছি আমি আমার এক বন্ধুকে নিয়ে আসব। আমরা রাতেও ওখানে থাকব। একা থাকতে কেমন জানি লাগে, এজন্য তুইও থাকবি।"
"রাতে থাকব কেন?"
"আগে বল তুই যাবি কিনা?"
"ভেবে দেখি।"
"ভাবাভাবির কিছু নাই। ঐখানে ওনার সাথে একটু পরিচিত হবি। তোর থাকতে ইচ্ছা হলে থাকবি নাহলে চলে আসবি.....সোজা হিসাব। কি... রাজি?"
"ওকে। যা রাজি।"
"থ্যাঙ্কস্‌ দোস্ত।"

ঢাকা শহরে এমন জঙ্গলময় বাড়ি আছে এটা রাহাত জানতনা। বিশাল একতলা বাড়ি, চারপাশে অনেক বড় বড় গাছ, লনের ঘাসগুলো না কাটতে কাটতে অনেক লম্বা হয়ে গেছে। চারপাশে অযত্নের ছাপ। জামিল রাহাতকে প্রায় না শোনার মত ফিসফিস করে বলল, "ওস্তাদ কিছুদিন আগে মেক্সিকো থেকে আসছে।"
"এর সাথে তোর পরিচয় কিভাবে হয়েছে?"
"ইন্টারনেটে.....চ্যাট করতে করতে পরিচয়।"
"ওরে বাবা। আমি এতদিন জানতাম ইন্টারনেটে চ্যাট করে প্রেমিক প্রেমিকা হওয়া যায় আর এখন দেখি ওস্তাদ আর সাগরেদও হয়......হা হা হা"
"ফাইজলামি করিসনা।"
জামিল কলিংবেল টিপলো। ডিং ডং........রাহাত হঠাৎ টের পেল অজানা আশঙ্কায় তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে।
যে ভদ্রলোক দরজা খুলে দিলেন তাকে দেখে মুহুর্তেই সকল আশঙ্কা উবে গেল। চশমা পরা ভালোমানুষ টাইপ চেহারার একজন ৫০-৫৫ বছর বয়সের লোক। তিনি অভ্যর্থনা জানিয়ে তাদের ভিতরে নিয়ে গেলেন। রাহাত আর জামিল এত সুন্দর করে সাজানো ঘর খুব কমই দেখেছে। দুজনই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, এত দামী আসবাববপত্র দেখে নিজের অজান্তেই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। ভদ্রলোক সোফায় বসতে বসতে বললেন, "তোমাদেরকে তুমি করেই বলি।"
জামিল বললো, "'অবশ্যই, আমরা আপনার ছেলের বয়সী। স্যার আমার বন্ধু আপনার সম্পর্কে জানতে চায়। ভুডুচর্চার ব্যাপারে তার খুব আগ্রহ।"
জামিলের বানানো কথা শুনে রাহাতের কান খাড়া হয়ে যায়। ভুডুচর্চা নিয়ে রাহাতের আগ্রহ এটা ভাবতেই তার হাসি পাচ্ছে। আপাতত তার আগ্রহ হলো এই ভাঁড় দুইটা কি করে সেটা দেখা।
ভদ্রলোক বলতে লাগলেন,"আমি যখন তোমাদের মত তখন পড়তে চলে যাই কানাডায়। সারাদিন ক্লাস আর সারারাত পড়াশোনা দিয়েই কাটাতাম। বাপের প্রচুর টাকা থাকার কারনে কখনও পেটের চিন্তা করতে হয়নি। একদিন পরিচয় হয় এক সাউথ আমেরিকানের সাথে......ডেভিড রোজারিও। আমি খুব মেধাবী ছাত্র ছিলাম বলে অনেক পরিচিতি পেতাম। ডেভিডের সাথে পরিচয় পর্বটা খুব ইন্টারেস্টিং ছিলো। একদিন পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলাম। ডেভিড আমার দিকে সুন্দর করে হেসে বললো, "'আমি জানতাম তুমি এখন পড়ে যাবে, তোমার নিয়তিতে তাই লেখা ছিল, আমি ডেভিড... তুমি?"........হয়ত এখানেই তার পর্ব শেষ হয়ে যেত কিন্তু তা হয়নি। সে আমার জীবনে আজও ছায়ার মত আছে।"

এইটুকু বলে ভদ্রলোক রাহাতের দিকে তাকিয়ে বললো, "ইয়াং ম্যান, ইউ ডোন্ট বিলিভ মি? হাহ্‌!"
রাহাত হঠাৎ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। কি বলবে ভেবে পেলনা। সে বললো,"ডেভিড কোন দেশের ছিল?"
"পেরু"
"আচ্ছা। তারপর......"
"তারপর ডিনার....."

ডিনার শেষে রাহাত আর জামিল ড্রইং রুমে বসে আছে। রাহাত জামিলকে বললো,"দেখ, এত কথা শুনলাম অথচ বেটার নামটা জানিনা। বেটার নাম কি?"
"উনার নাম খালেকুজ্জামান।"
"এই বেটাতো একটা পাগল। শোন আমি পাগক ছাগলের সাথে থাকবোনা। খাওয়া শেষ এখন চলে যাব।"
লোকটা হঠাৎ রুমে ঢুকে বললো....."এখনতো যাওয়া যাবেনা। আসল মজা বাকি রয়ে গেছে।"
রাহাত মুখটা সুবোধ বালকের মত করে বললো, " আপনার কাহিনী এখনও শেষ হয়নি।"
"হ্যাঁ, ডেভিডের সাথে ঘুরাঘুরি করতে করতে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ও একটু অদ্ভুত ছিলো। আজব এক সংগ্রহশালা ছিলো তার...মানুষের হাড় থেকে শুরু করে গাছের শিকড় সব ছিলো তার সংগ্রহে........আমার থিসিস কমপ্লিট হবার পর ডেভিড আমাকে একদিন অফার দিলো.....খালেক তুমি হাইতি যাবে?...আমি বললাম হাইতি গিয়ে কি হবে?...সে বললো, অন্যদের যা হয়না তা হবে।" তোমরা হয়ত বিশ্বাস করবেনা পরের মাসেই আমি তার পিছন পিছন হাইতি চলে গেলাম। ডেভিড গেল ভুডু শিখতে আর আমি গেলাম বেড়াতে"
জামিল বললো,"ওখানে গিয়ে কি করলেন?"
লোকটা হেসে বললো,"ওখানে গিয়ে আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনা দেখলাম"
"সেটা কী?"
খালেকুজ্জামান রাহাতের দিকে তাকিয়ে বললেন"রাহাত দেখতো বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে কিনা?"
রাহাত উঠে গিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে দেখলো বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।
সে ফিরে আসতেই লোকটা অদ্ভুত হাসি দিয়ে বললো,"তুমি কি মনে কর প্রেতসাধক হতে হলে আলখাল্লা পরতে হয় আর চুলে জট পাকাতে হয়?"
কথাটা শুনে রাহাত থমকে গেল কারন শুরু থেকেই সে এই লোককে অবিশ্বাস করে আসছে.........কিন্তু মনে হয় এই লোকের সুক্ষ কোন অজানা ক্ষমতা আছে মানুষের মন বোঝার।
রাহাত বললো, "এটা ২০০৮ সাল। আই ডোন্ট বিলিভ ইন ঘোস্ট।"
লোকটা রক্ত হিম করা হাসি দিয়ে বললো, "হা হা হা হা......মি টু। তুমি ভাগ্যবান এবং বুদ্ধিমান।"

লোকটা আবার বলা শুরু করলো, "হাইতিতে আমি ছিলাম ১৮ বছর। এতদিনে দেশের সাথে সব যোগাযোগ ছিন্ন করে ফেলেছি। আমি সেটাই চেয়েছিলাম। প্রথম তিন বছর ডেভিড ছিলো আমার সাথে........তারপর আমি একা।"
"ডেভিড কি চলে গিয়েছিলো?"
"না মরে গিয়েছিলো। একদল জনতা তাকে জ্যান্ত আগুনে পোড়ায় আমার সামনে।"
শুনে জামিল আর রাহাত চমকে যায়। জামিল বলে, "কেন?"


চলবে.........





সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০০৮ রাত ১১:৪৪
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×