পঞ্চম পর্বের মানোন্নয়ন পরীক্ষার ফলাফল পেলাম গতকাল। ফলাফল পেয়েই আশ্চর্য হলাম। নম্বরপ্রাপ্তির পরিমাণ খুবই কম। ৬০ নম্বরের মধ্যে আমার ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ৩২.৭৫ পরীক্ষা কিন্তু খারাপ দেইনি। বরং ভালোই দিয়েছি। ৪০ পাওয়ার আশা ছিল। ভাবলাম খাতা পুনরায় মূল্যায়নের আবেদন জানালাম। কিন্তু জেনে আরও অবাক হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি খাতা পুনরায় মুল্যায়নের সুযোগ নাই কারণ খাতা দুই জন পরীক্ষক দেখে থাকেন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম এটা জেনে যে সম্মানিত পরীক্ষকগণ মানোন্নয়নের আশায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের খাতা একটু অন্য দৃষ্টিতে দেখেন! দুই ধরণের মানুষ মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। কেউ অসুস্থতার জন্য- আর কেউ অন্য কোন কারনে পরীক্ষা খারাপ হয়ে থাকলে সেই ক্ষতিটা পুষিয়ে নেয়ার জন্য। দ্বিতীয় পক্ষের জন্য হয়ত ওতটা কষ্টের হবে না কিন্তু প্রথম পক্ষের জন্য এটা মেনে নেয়া যথেষ্ট কষ্টের এবং দুঃখের যে তাঁর খাতাটা যথাযথভাবে মুল্যায়ন করা হচ্ছেনা। তাঁকে শিক্ষক নামের অল্প কিছু বুদ্ধিবেশ্যার শিকারে পরিণত হতে হচ্ছে। অথচ সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়ম মেনে পরীক্ষার ফি দিয়ে, পরীক্ষকের খাতা দেখার ফি দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন। কিন্তু তারপরও তাঁর সাথে এই বেঈমানি করছেন কিছু শিক্ষক। তাঁরা এটা না নিলেই পারতেন! শুধু শুধু পরীক্ষা নিয়ে এই ধরণের প্রতারণা করার কোন অর্থ হয়না। জানি না এটা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগেই হচ্ছে কিনা! শুধু তাই হলে আমি খুবই দুর্ভাগা। কারণ আমার আরও যে মানোন্নয়নের পাহাড় পড়ে আছে সামনে। সেগুলোর সম্মুখীন হব কিনা জানিনা। বড় ভয় হচ্ছে। আমি অবশ্য মেনে নিয়েছি সব কিছুই। যেমন মেনে নিতে হয় যুদ্ধাহত সৈনিককে।
আমার জন্য ইংরেজি বিভাগে এটা নতুন কিছু নয়। এর চেয়ে বড় বাঁশ বিভাগ আমাকে দিয়ে রেখেছে অনেক আগেই। আমি ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র ছিলাম। কিন্তু সমস্যার কারণে আমি সহ আমার কিছু বন্ধুর পরীক্ষা দেয়া হয়না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অদ্ভুত নিয়মকানুন, বিভাগের মহামান্য শিক্ষকদের সেই অদ্ভুত সিস্টেম সম্পর্কে অদ্ভুত অজ্ঞতা, আর আমাদের নিরীহতা আমাদের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে দুইটা বছর। বিভাগ ইচ্ছা করলে এটা এড়াতে পারত। আমাদের জীবন থেকে কিছুটা সময় কম নষ্ট হত। অবশ্য এটা শুধু আমাদের ক্ষেত্রেই ঘটেনি। আমাদের আগেও ঘটেছিল। কিন্তু তাঁদের পরিণতি এতটা করুণ ছিল না। তাঁদেরকে বিভাগ থেকে কিছুটা লঘু দণ্ড দেয়া হয়েছিল- ১ বছর। আর আমাদের বিভাগ গুরু দণ্ডই দিয়েছিল-দুই বছর শিক্ষা বিরতি দিয়ে চতুর্থ ব্যাচে ভর্তি হয়েছিলাম। তাই মানোন্নয়ন পরীক্ষায় কিছু শিক্ষকদের এই কম নম্বর দেয়াটা আর কষ্টের মনে হয়না আমার কাছে। যেখানে শিক্ষকদের অজ্ঞতা দুই বছর নষ্ট করতে পারে সেখানে পরীক্ষার খাতায় ১০ নম্বর কম দেয়াটা কোন ব্যাপার না। জয়তু আমার ইংরেজি বিভাগ।
আমার কোন বর্ষে পড়ি এটা নিয়ে অনেক মিথ্যা বলতে হয়েছে অনেক বন্ধু-বান্ধবি, পরিবার, হলের বড় ভাই-ছোট ভাই, আত্মীয়স্বজন,শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে। এজন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আমি কেন একা একা একটা মিথ্যার ভার বহন করব যার দায় সম্পূর্ণ আমার না! এই দায় যতটুকু আমার ততটুকু আমার শিক্ষকদের, আমার বিভাগের। আজ থেকে আমার কোন দায় নেই, নেই কোন অভিযোগ। সবাই আমাকে ক্ষমা করবেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


