somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিয়মিত হাঁটুন, বাঁচার মত বাঁচুন

০১ লা মে, ২০১১ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রাতভ্রমণে বের হয়ে একই উদ্দেশ্যে বের হওয়া বন্ধু এবং পরিচিতজনদের নিকট থেকে একটি প্রশ্ন প্রায় সময় শুনতে হয়। তাহলো- 'আপনার কত?' প্রথম প্রথম বুঝতাম না। পরে বুঝতে পেরেছি তারা জানতে চান আমার ডায়াবেটিস এর মাত্রা কত। 'আলহামদুলিল্লাহ, আমার ডায়োবেটিক নেই' বল্লে তারা হয়ত মনে মনে ভাবতে থাকেন, বেটার কাম নাই তাই হুদাই হাঁটে। কেউ কেউ সরাসরি জিজ্ঞাস করেই বসেন- 'তাহলে হাঁটেন কেন্?' সংক্ষেপে বলি, আপনারা হাঁটেন ডায়বেটিক কন্ট্রোল করার জন্য আর আমি হাঁটি শরীর সুস্থ্য রাখার জন্য। জানিনা তারা আমার কথা বিশ্বাস করেন কি না। কারণ তাদের তো বদ্ধমূল ধারণা হয়েই আছে যে, ডায়োবেটিস হলেই কেবল হাঁটতে হবে। অবাক হওয়ার মতো বিষয় হলো, অনেক শিক্ষিত লোকও কিন্তু হাঁটার ব্যাপারে এমন ধারণা পোষণ করে থাকেন। আমরা কতটা স্বাস্থ্য অসচেতন তা এখান থেকেই প্রতীয়মান।

নিয়মিত হাঁটাকে রোগ প্রতিরোধের হাতিয়ার হিসাবে মনে করে সুস্থ অবস্থা থেকেই হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিৎ। অথচ আমরা হাঁটি তখনই, যখন ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার, হৃদরোগ ইত্যাদি অসুখ ধরা পড়ে এবং ডাক্তার সাহেব বলেন যে ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি আপনাকে হাঁটতে হবে, তখন আমরা হাঁটি। পারলে দৌড়ানোর চেষ্টা করি।

স্বাস্থ্যই সুখের মূল। একটি চির-রুগ্ন শরীরের নিকট অঢেল সম্পদ এবং উন্নত গাড়ী-বাড়ী অর্থহীন। কায়িক পরিশ্রমের ফলে সুষম খাদ্যের অভাবের পরও শহরের রিকশা-ঠেলা ওয়ালা এবং দিন মজুর আর গ্রামের কৃষক ভাইয়েরা শহুরে শিক্ষিত লোকদের তুলনায় ভাল স্বাস্থের অধিকারী হয়ে থাকেন। তাদের কায়িক পরিশ্রমের সাথে সুষম খাদ্য যোগ হলো তো তারাই হতেন সবচেয়ে ভাল স্বাস্থের মালিক।

যে বয়সে একজন নির্মাণ শ্রমিক মাথায় অথবা কাঁধে ভার বহন করে বহুতল বিশিষ্ট ভবনের উপরে উঠে পড়েন, ২/৩ জন সওয়ারী নিয়ে রিকশা চালক হন্ হন্ করে তার বাহন চালিয়ে নিয়ে চলেন, কৃষক ঘন্টার পর ঘন্টা মাঠে হাল চাষ করেন ঠিক সেই বয়সে শহরের অধিকাংশ শিক্ষিত লোকদের শরীরে বাসা বাঁধে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ এবং হৃদরোগ সহ নানা রকম জটিল রোগ-ব্যধি। অথচ নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম তথা শরীরচর্চা বা হাঁটা হাঁটি চালু রাখলে এসব রোগ নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হতো।

কায়িক পরিশ্রম করেননা এমন প্রত্যেক শ্রেনী-পেশার লোকদের উচিৎ নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করা। সবচেয়ে সহজ, সস্তা, জনপ্রিয় এবং নিরাপদ ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটা। স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা গেছে- হাঁটা রক্তচাপ কমায়, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, অতিরিক্ত মেদ কমায়, রক্তের সুগার কমায়। ভাল কলেষ্টেরল এইচডিএল বাড়ায় আর মন্দ কলেষ্টেরল এলডিএল কমায়। রক্ত নালীর দেয়ালে চর্বি জমতে দেয়না, অ্যাথেরোসোক্লেরোসিস প্রতিরোধ করে। হাঁটলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে। ডায়াবেটিস হয়ে থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখে। হাঁটার ফলে পেশীর শক্তি বাড়ে, শরীরের ওজন ঠিক থাকে আর শরীর থাকে ফিট। হাঁটা হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। বিষণ্ণতা প্রতিরোধ করে এবং ভাল ঘুম হয়। শুধু তাই নয় বিভিন্ন জটিল জটিল রোগের জন্য আলাদা আলাদা ব্যায়াম আছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে হাঁফানির মতো জটিল রোগও কিন্তু বিশেষ ধরনের ব্যায়ামের মাধ্যমে আরোগ্য হতে পারে।

হাঁটার উপকার পেতে অবশ্যই নিয়মিত এবং সপ্তাহে অন্তত চার বা পাঁচ দিন হাঁটতে হবে, তবে সপ্তাহে সাত দিন হাঁটতে পারলে তা হবে সোনায় সোহাগা। হাঁটতে হবে ৩০/৪০ থেকে ৬০ মিনিট ধরে। বরযাত্রীর হাঁটা হাঁটলে কিন্তু হবে না। হাঁটতে হবে যথেষ্ট দ্রুত যেন শরীর থেকে ঘাম বের হয়। আপনি দৈনিক যত বেশি হাঁটবেন, মনে হবে আপনি ততই বেশি ভাল আছেন। ভাল থাকার ব্যাপারে আপনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। হাঁটার উপকার নিশ্চিত করার জন্য আপনার মধ্যে কোন চারিত্রিক দোষ-ত্রু টি থেকে থাকলে তাও কিন্তু সংশোধন করে নিতে হবে।

হাঁটা হাঁটির সর্বোত্তম সময় হচ্ছে ভোর বেলা, যারা নামাজ পড়েন তাদের জন্য ফজরের নামাজের পর। এসময় গাড়ী ঘোড়া এবং কল কারখানা বেশী না চলার কারণে ভোরের বাতাস থাকে অনেকটা নির্মল। সকালে যাদের সম্ভব নয় তারা তাদের সুবিধা মতো যে কোন একটা সময় নির্ধারণ করে নিতে পারেন, তবে দুপুরের ভরা রোদে মোটেই নয়।

আপনি ইচ্ছে করলে হাঁটার সময়টুকুতে পরিকল্পিত ভাবে অন্যান্য কাজও সেরে নিতে পারেন। যারা লেখালেখি করেন তারা হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে বিভিন্ন টপিক্‌স নিয়ে চিন্তা করতে পারেন। মোবাইলে রেকর্ডিং করে কুরআন, লেকচার আবং পছন্দের গান এবং আরো যা কিছু চান শুনতে শুনতে হাঁটতে পারেন। হাঁটতে হাঁটতে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে থাকুন, সবুজ ঘাস লতাগুল্ম এবং বৃক্ষরাজী থেকে সতেজতা আহরণ করার চেষ্ট করুন। যে কাজটি করা সম্পূর্ণ নিষেধ তা হলো টেনশন। সর্বাবস্থায় টেনশন মুক্ত থাকতে হবে।

যারা নতুন ব্যায়াম বা হাঁটা হাঁটি শুরু করবেন তারা প্রথম দিন বেশী বেশী হাঁটবেন না। আপনার আশপাশে কাউকে খুব দ্রুত হাঁটতে দেখে আপনিও প্রতিযোগীতা বা যোশে পড়ে অতিরিক্ত করলেন তো সমস্যায় পড়লেন। এভাবে করতে গেলে হঠাৎ মাংশ পেশীতে অতিরিক্ত চাপ পড়ার ফলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে শরীর ব্যাথাতুর হয়ে যেতে পারে। তাই সাধারণ গতিতে প্রথম দিন ১৫/২০ মিনিট তার পর থেকে একটু একটু বাড়িয়ে এক ঘন্টা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন। প্রাথমিক অবস্থায় একটু আনইজি এবং আলসেমি লাগতে পারে। ধৈর্য্য ধারণ করে মাস খানেক চালিয়ে নিতে পারলে অভ্যাসে পরিণত হবে এবং তখন না হাঁটলেই আনইজি লাগবে। হাঁটার সময় সাথে ২/১ জন বন্ধু থাকলে ভাল হয়। অবশ্য হাঁটার স্পট গুলোতে হাঁটতে হাঁটতে এমনিতেই কয়েক জন বন্ধু তৈরী হয়ে যেতে পারে।

সবশেষে আমার নিজের হাঁটা হাঁটি বা ব্যায়াম শুরু করার একটি মজার ঘটনা বলে শেষ করছি- ছোট বেলায় আমি ছিলাম খুব হেংলা পাতলা। তাই একটু মোটা-সোটা এবং নাদুস নুদুস হওয়ার প্রবল সখ ছিল। আমি যখন সপ্তম শ্রেণীতে তখন মিনহাজ নামের একটা নতুন ছাত্র আমাদের ক্লাসে ভর্তি হয়েছিল। ও ছিল বেশ মোটা এবং নাদুস নুদুস টাইপের। ওর সাথে ভাব হওয়ার পর তার মোটা হওয়ার রহস্য বের করতে গিয়ে জানতে পারলাম সে চট্টগ্রাম পেরেড ময়দান এবং ততসংলগ্ন ব্যায়ামাগারে নিয়মিত ব্যায়াম করে। আমাকেও ওর মতো মোটা হতে হবে, তাই পরদিন থেকেই শুরু করলাম ব্যায়াম। সেই ধারাবাহিকতায় এখনো চলছে আমার নিয়মিত ব্যায়াম। তবে মজার বিষয়টি হচ্ছে, মিনহাজ কিন্তু ব্যায়াম করতো তার মোটা শরীরটা কমানোর জন্য। ভাগ্যিস সে গোপন রহস্যটি তখন জানা হয়নি। তখন যদি জানতে পারতাম সে মোটা কমানোর জন্য ব্যায়াম করছে তাহলে হয়ত ভুলেও ওপথ মাড়ানো হতো না আমার। কারণ তখন আমার নিকটও ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা এবং উপকারীতা সম্পর্কে ভাল ধারণা ছিল না। শুধু মনে করতাম ব্যায়াম করলে মোটা হওয়া যায়।

অতএব আসুন, আমরা নিয়মিত হাঁটা হাঁটির মাধ্যমে সুস্থ এবং দীর্ঘ জীবন লাভ করার চেষ্টা করি।

৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×