somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গোপন নয়, গোপন-সুলভ: একটি কাল্পনিক রাজনৈতিক স্যাটায়ার

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রতিকী ছবি

আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপি ও এনসিপির মধ্যকার একটি কাল্পনিক বৈঠকের চিত্র কি হতে পারে? আসুন আমরা কল্পনা করি। এই কল্পনায় রাজনীতির বাস্তবতা, ব্যঙ্গ আর সমসাময়িক মিডিয়ার প্রভাব একসূত্রে গাঁথা হয়েছে।

বিএনপির অন্দরমহলে একদিন যেন হঠাৎ করেই ঝড় উঠল। এক বৃষ্টিভেজা বিকেলে রাজধানীর এক অভিজাত গলিতে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির ভিতরে আয়োজন করা হলো এক গোপন বৈঠকের। বৈঠকে অংশ নিতে এসেছেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা। আরেকদিকে, বেশ জাঁকজমকভাবে এসেছেন সদ্যপ্রসূত রাজনৈতিক দল এনসিপির প্রাণপুরুষ জনাব হাসনাত আব্দুল্লাহ ও তার বিশ্বস্ত সহচর জনাব সারজিস আলম। তাদের সাথে এসেছে আরও দুইজন, যারা পরিচয় দিতেই চায় না, শুধু বলে “আমরা স্ট্রাটেজিক অ্যাডভাইজার”।

চা, বিস্কুট, খেজুর আর একদম বিশেষভাবে আমদানিকৃত বাদাম দেওয়া ঘন স্যুপ দিয়ে বৈঠক শুরু হলো। সবাই জানে, বৈঠকের এজেন্ডা ‘গোপন’, কিন্তু আসলে সবার মনেই একটাই কথা—কে কাকে কতটা ছাড় দেবে?

জনাব হাসনাত শুরুতেই বলেন, “দেখেন ভাই, আমরা তো নতুন দল। আমাদেরকে সুযোগ দিতে হবে। আপনারা ১০০টা সিট আমাদের দেন, বাকিটা ইতিহাস আমরা লিখবো।”

বিএনপির এক নেতা কাশতে কাশতে জবাব দেন, “ভাই, আপনি ইতিহাস লেখার আগে আমাদের ভূগোলটা একটু বুঝেন। ১০০ সিট তো দূরের কথা, ১০টা দিয়েই আমাদের মাথাব্যথা!”

এরপর শুরু হয় রাজনৈতিক ব্যাকরণ, গণতন্ত্রের মহান তত্ত্ব, এবং ’৯০ এর আন্দোলনের গল্প। একজন তো বলেই ফেললেন, “আপনারা তো এখনো ঢাবি ক্যাম্পাসে একটা চায়ের দোকানে পোস্টার লাগান নাই, আর এখনই মন্ত্রীত্ব চান?”

এনসিপির পক্ষ থেকে এক অ্যাডভাইজার তখন গম্ভীর হয়ে বলেন, “আমাদের কাছে এমন কিছু স্ট্র্যাটেজি আছে, যা প্রয়োগ করলে এক ঘণ্টার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং হতে পারি।”

এ কথায় বিএনপি নেতারা খানিকটা চমকে উঠেন, কারণ সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতা তারা জানেন। কিন্তু তারাও রাজনীতির পুরনো খেলোয়াড়। একজন একটু হেসে বললেন, “আপনারা যদি ট্রেন্ডিং-এ যেতে চান, আমরা তো দরকার হলে কোট প্যান্ট পরে বসে বলবো—এই তো আমাদের ভবিষ্যৎ মন্ত্রিসভা!”

ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে থাকে। আলোচনা জমে কিন্তু সিদ্ধান্ত জমে না। শেষপর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়—তাদের দলীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে ১০০ সিট ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়। তবে, ভালো ব্যবহার করলে ৫/৬ টা সিট নিয়ে কথাবার্তা চলতে পারে।

বৈঠকের শেষে পরিবেশ কিছুটা ঠান্ডা, কিছুটা কৃত্রিম হাসিতে মোড়া। কেউ কিছু মুখে বলে না, কিন্তু সবার চোখে একটাই প্রশ্ন—কে আগে ফেসবুকে যাবে?

বৈঠক শেষ হতেই রাত দশটার সময় জনাব হাসনাত নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্ট দেন:

“আজ বিএনপির সাথে একটি ফলপ্রসূ মিটিং হয়েছে। আমরা ১০০টি আসন চেয়েছি। তারা আমাদের ‘শ্রদ্ধার সাথে’ বলেছে ৫টা দেওয়া সম্ভব! গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চলবে! আমরা আপোষ করবো না। #ট্রান্সপারেন্সি #নিউপলিটিক্স #দলবদলনয়দিকবদল”

তারপরে ৩০ মিনিটের মধ্যে জনাব সারজিস আলম লাইভে চলে আসেন। তিনি লাইভে বলেন:

“আপনারা দেখছেন, আমরা নতুন একটা ভিন্নধর্মী রাজনীতি চালু করতে চাই। আমরা অন্ধকারে আলো আনতে চাই। কিন্তু বিএনপি এখনো সেই পুরনো ‘অ্যালবাম পলিটিক্স’-এ আটকে আছে। তারা ভাবে আমরা ফেসবুকে থাকি বলে রাজনীতি বুঝি না!”

লাইভে একজন কমেন্ট করলো, “ভাই, আপনে তো মন্ত্রীত্ব চাইলেন, রাজনীতি না।”
আরেকজন লিখলো, “বিএনপি আপনাদের ৫টা আসন দিতে চেয়েছে, এইটাও অনেক! আপনারা তো ফেসবুক লাইভে আসার আগেই আলোচনার বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।”

পরদিন সকালে “দৈনিক দলীয় বিশ্বাস” নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল হেডলাইন দেয়:

“গোপন বৈঠকের খবরে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় – এনসিপির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে।”

বিকালে জনাব হাসনাত আবার এক পোস্ট দেন:

“আমরা কখনোই গোপন কিছু করিনা। রাজনীতি যদি গোপন করতে হয়, তাহলে সেটা ষড়যন্ত্র। আমরা ‘ওপেন পলিটিক্স’-এ বিশ্বাসী।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মাথা চুলকাতে থাকেন। কেউ বলেন, “এনসিপির সাথে কাজ করার আগে একবার ডাটা এনক্রিপশন শেখা দরকার!
আরেকজন বলেন, “ওরা আসলে রাজনীতি করতে আসেনি, সোশ্যাল মিডিয়ার লাইভে পারফর্ম করতে এসেছে।”

অন্যদিকে বিএনপির নেতারা নিজেদের দলীয় বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, এনসিপির সাথে ভবিষ্যতে আলোচনার আগে মিটিংয়ের দরজায় বড় করে লিখে দিতে হবে—“ফোন বন্ধ রাখুন, ফেসবুকে না যান, এবং মেসেঞ্জারে কাউকে কিছু লিখবেন না।”

রাজনীতি যে কতটা ট্র্যাজিকমেডি হতে পারে, সেটা এই বৈঠক দিয়ে আবার প্রমাণিত হলো।

সবশেষে এক মিম ভাইরাল হয় যেখানে দুইজন নেতা দাঁড়িয়ে আছেন, একজনের হাতে চায়ের কাপ, আরেকজনের হাতে মোবাইল, ক্যাপশন—“বৈঠক শেষ হবার আগেই পোস্ট প্রস্তুত!”

এটাই হলো আমাদের দেশের ‘নিউ পলিটিক্স’। যেখানে কথার চেয়ে ক্যাপশন বেশি ওজনদার, আর চায়ের কাপে রাজনীতি কম, কন্টেন্ট বেশি!



সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ধর্ম অবমাননার ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:২৯


ঢাকায় এসে প্রথম যে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম, সেটা ছিল মিরপুরের একটা নামকরা প্রতিষ্ঠান। লটারির যুগ তখনো আসেনি, এডমিশন টেস্ট দিয়ে ঢুকতে হতো। ছোট্ট বয়সে বুঝিনি যে স্কুলের টিচাররা কোন মতাদর্শের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমানের হঠাৎ ‘জামায়াত-বিরোধী’ উচ্চারণ: রাজনীতির মাঠে নতুন সংকেত, নাকি পুরোনো সমস্যার মুখোশ?

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৯

তারেক রহমানের হঠাৎ ‘জামায়াত-বিরোধী’ উচ্চারণ: রাজনীতির মাঠে নতুন সংকেত, নাকি পুরোনো সমস্যার মুখোশ?

বিএনপি রাজনীতিতে এক অদ্ভুত মোড়—অনেক বছর পর হঠাৎ করেই তারেক রহমান সরাসরি জামায়াতকে ঘিরে কিছু সমালোচনামূলক কথা বললেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন থাপ্পড় খাবি!

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩



ঘটনাঃ ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দামের পতনের সময়।
চৈত্র মাস। সারাদিন প্রচন্ড গরম। জামাই তার বউকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। সুন্দর গ্রামের রাস্তা। পড়ন্ত বিকেল। বউটা সুন্দর করে সেজেছে। গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এডমিন সাহেব আমাকে নিয়ে অনেক বক্তব্য দিতেন এক সময়।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৯



আমার "চাঁদগাজী" নিকটাকে উনি কি জন্য ব্যান করেছিলেন, সেটা উনি জানেন; আসল ব্যাপার কখনো আমি বুঝতে পারিনি; আমার ধারণা, তিনি হয়তো নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতেন; মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×