somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ সুর --- সুর কখনও মুক্তি দেয় না... সে শুধু নতুন খাঁচা বানায়!

২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঈশ্বরের ভুল ছায়া সিরিজ এর দ্বিতীয় গল্পঃ শেষ সুর

গাজীপুরের পুবাইলের প্রাচীন একটি গির্জা, বহু বছর আগে যেখানে ঘণ্টা বেজেছে শেষবার, আজ তার ভিতর প্রতিধ্বনিত হলো এক অশরীরী সুর। কুয়াশায় ঢাকা জীর্ণ দেয়ালের গা বেয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো ডেভিড—তার হাতে গিটার, চোখে ঘোরের মতো অচেনা আকাঙ্ক্ষা।

গিটারটা ছিল অস্বাভাবিক। কাঠের গায়ে খোদাই করা নোটেশনগুলো হঠাৎ করেই আলো ছড়াতে শুরু করল, আর ভেতর থেকে কেমন যেন একটা আর্তনাদ ভেসে এল। যেন শতাব্দীর পুরোনো কান্না কাঠের ফ্রেমে দগ্ধ হয়ে আছে।

ডেভিড জানে না, কিন্তু সে একজন সুরধারী—ঈশ্বরের তৈরি করা এক রহস্যময় অস্ত্র, যার গায়ে সুরের ছোঁয়া লাগলেই সত্য উন্মোচিত হয়। সুর শুধু মুক্তি দেয় না, সেটি ধ্বংসও আনে।

শব্দদণ্ড পরীক্ষা

ডেভিডকে হাজির করা হলো গির্জার এক অন্ধকার ঘরে। মোমবাতির আলোয় বসে আছে এক শিশু—তার চোখ অবিকল স্বচ্ছ, যেন সে কিছুতেই মিথ্যে বলবে না। ভেনেসা বলল, "একটা সুর বাজাও, যা সত্যকে জাগিয়ে তোলে।"

ডেভিডের আঙুল ছুঁয়ে দিল সেই অভিশপ্ত তার, আর বাতাসে যেন এক শীতল কম্পন ছড়িয়ে পড়ল। গিটারের সুর যেন বাতাস কাঁপিয়ে দিল। শিশুটি হঠাৎ কেঁদে উঠল, বলল, “আমি মাকে বলেছিলাম, আমি কিছু খাইনি... কিন্তু খেয়েছিলাম।” আর তার পর মুহূর্তেই সে নিজের গলায় দড়ি পেঁচিয়ে বসে পড়ল। ডেভিড ভয়ে কেঁপে উঠল। এটাই ছিল প্রথম “শব্দদণ্ড”

ভেনেসা: এক প্রাক্তন সুরধারীর দুঃখগাথা

ভেনেসার গলার পাশে ছিল অদ্ভুত এক ট্যাটু—সুরের নোটেশন। বহু আগে, সে নিজেও ছিল এক সুরধারী। তার সুরে একবার পুরো একটি গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়। সে নিজেই বলেনি কখনও, কিন্তু ডেভিড গিটারে বাজাতে বাজাতে সেই অতীতের স্মৃতি দেখতে পেল।
ভেনেসা বলল, “সুর আমাকে ছাড়েনি। আমি তাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম, সে আমাকেই ব্যবহার করল।”


জ্যাকের বিদ্রোহ ও আত্মবিসর্জন

জ্যাক, যে ডেভিডকে অপহরণ করেছিল, এক সময় নিজেও একজন সুরধারীর ভাই ছিল। তার ভাই আত্মহত্যা করে, কারণ ডেভিডের এক সুর তার মধ্যে অন্ধকারের দরজা খুলে দেয়। সে নিজের চোখ দুটো খুঁচিয়ে ফেলে, যেন সে আর কোনো সুরের আলো না দেখতে পায়।

শেষ সিদ্ধান্তের ঠিক আগে, জ্যাক গির্জার গোপন চেম্বার থেকে এক বিষাক্ত পানীয় পান করে। এটি শুধু সুরধারীদের জন্য বানানো—অন্তিম শক্তি দেয়, বিনিময়ে প্রাণ নেয়। গিটারের তার ছিঁড়ে ফেলেই সে বাজায় সেই ‘শেষ সুর’

ভেনেসার পতন ও প্রতিশোধ

ভেনেসা যেন পাগল হয়ে গেল। কিন্তু শেষ সুর বাজানোর সময়, হঠাৎ গির্জার ভাঙা স্টেইনড গ্লাস থেকে আটটি বিকৃত মুখ ফুটে উঠল। তারা চিৎকার করল—আগের আট সুরধারী, যাদের আত্মা সুরের দাসত্বে বন্দি ছিল। তারা এসে ঘিরে ফেলল ভেনেসাকে। তার শরীরের ট্যাটু জ্বলে উঠল, চামড়া ফেটে বেরিয়ে এলো আগুন, আর সে নিঃশেষ হয়ে গেল।

ডেভিডের রক্তস্নাত মুক্তি

রক্ত আর ছাইয়ের ভেতর দিয়ে পা ফেলল ডেভিড। গিটারটি ধীরে তুলে নিল—একটা অভিশপ্ত প্রতিশ্রুতির মতো। জ্যাকের গিটার হাতে তুলে নিল—মানুষের হাড় দিয়ে গড়া সেই পবিত্র অভিশপ্ত যন্ত্র। চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল, কিন্তু সে হাসছিল। “তুমি ক্ষমা পাও, জ্যাক।”

তারপর সে ইচ্ছাকৃতভাবে বাজাল শেষ সুর। সুরটা হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ল, আর পুরো গির্জা কেঁপে উঠে ধসে পড়ল।

পোস্ট-ক্রেডিট

একটি ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল এক অচেনা কিশোর। তার হাতে সেই রক্তাক্ত গিটার। তার পকেট থেকে একটি চিরকুট পড়ে গেল। তাতে লেখা:

"ডেভিড, তুমিই নবম সুরধারী।"

সে কুড়িয়ে নিল গিটার। বাতাসে আবার এক ক্ষীণ সুর বেজে উঠল।

দূরে, ছায়ামূর্তি ভেনেসার ছিন্ন গলার চামড়া হাতে দাঁড়িয়ে রইল—তার চোখে আবার সেই নোটেশন জ্বলছে...

মেমোরেবল ডায়ালগ

ভেনেসা: “সুর কখনও মুক্তি দেয় না... সে শুধু নতুন খাঁচা বানায়!”

ডেভিড: “তাহলে আমি এই খাঁচা ভেঙে ফেলব—এমন সুর বাজাবো, যা শুনে সবাই মুক্ত হবে!”



শেষ
















সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:২২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×