
ঈশ্বরের ভুল ছায়া সিরিজ এর দ্বিতীয় গল্পঃ শেষ সুর
গাজীপুরের পুবাইলের প্রাচীন একটি গির্জা, বহু বছর আগে যেখানে ঘণ্টা বেজেছে শেষবার, আজ তার ভিতর প্রতিধ্বনিত হলো এক অশরীরী সুর। কুয়াশায় ঢাকা জীর্ণ দেয়ালের গা বেয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো ডেভিড—তার হাতে গিটার, চোখে ঘোরের মতো অচেনা আকাঙ্ক্ষা।
গিটারটা ছিল অস্বাভাবিক। কাঠের গায়ে খোদাই করা নোটেশনগুলো হঠাৎ করেই আলো ছড়াতে শুরু করল, আর ভেতর থেকে কেমন যেন একটা আর্তনাদ ভেসে এল। যেন শতাব্দীর পুরোনো কান্না কাঠের ফ্রেমে দগ্ধ হয়ে আছে।
ডেভিড জানে না, কিন্তু সে একজন সুরধারী—ঈশ্বরের তৈরি করা এক রহস্যময় অস্ত্র, যার গায়ে সুরের ছোঁয়া লাগলেই সত্য উন্মোচিত হয়। সুর শুধু মুক্তি দেয় না, সেটি ধ্বংসও আনে।
শব্দদণ্ড পরীক্ষা
ডেভিডকে হাজির করা হলো গির্জার এক অন্ধকার ঘরে। মোমবাতির আলোয় বসে আছে এক শিশু—তার চোখ অবিকল স্বচ্ছ, যেন সে কিছুতেই মিথ্যে বলবে না। ভেনেসা বলল, "একটা সুর বাজাও, যা সত্যকে জাগিয়ে তোলে।"
ডেভিডের আঙুল ছুঁয়ে দিল সেই অভিশপ্ত তার, আর বাতাসে যেন এক শীতল কম্পন ছড়িয়ে পড়ল। গিটারের সুর যেন বাতাস কাঁপিয়ে দিল। শিশুটি হঠাৎ কেঁদে উঠল, বলল, “আমি মাকে বলেছিলাম, আমি কিছু খাইনি... কিন্তু খেয়েছিলাম।” আর তার পর মুহূর্তেই সে নিজের গলায় দড়ি পেঁচিয়ে বসে পড়ল। ডেভিড ভয়ে কেঁপে উঠল। এটাই ছিল প্রথম “শব্দদণ্ড”।
ভেনেসা: এক প্রাক্তন সুরধারীর দুঃখগাথা
ভেনেসার গলার পাশে ছিল অদ্ভুত এক ট্যাটু—সুরের নোটেশন। বহু আগে, সে নিজেও ছিল এক সুরধারী। তার সুরে একবার পুরো একটি গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়। সে নিজেই বলেনি কখনও, কিন্তু ডেভিড গিটারে বাজাতে বাজাতে সেই অতীতের স্মৃতি দেখতে পেল।
ভেনেসা বলল, “সুর আমাকে ছাড়েনি। আমি তাকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম, সে আমাকেই ব্যবহার করল।”
জ্যাকের বিদ্রোহ ও আত্মবিসর্জন
জ্যাক, যে ডেভিডকে অপহরণ করেছিল, এক সময় নিজেও একজন সুরধারীর ভাই ছিল। তার ভাই আত্মহত্যা করে, কারণ ডেভিডের এক সুর তার মধ্যে অন্ধকারের দরজা খুলে দেয়। সে নিজের চোখ দুটো খুঁচিয়ে ফেলে, যেন সে আর কোনো সুরের আলো না দেখতে পায়।
শেষ সিদ্ধান্তের ঠিক আগে, জ্যাক গির্জার গোপন চেম্বার থেকে এক বিষাক্ত পানীয় পান করে। এটি শুধু সুরধারীদের জন্য বানানো—অন্তিম শক্তি দেয়, বিনিময়ে প্রাণ নেয়। গিটারের তার ছিঁড়ে ফেলেই সে বাজায় সেই ‘শেষ সুর’।
ভেনেসার পতন ও প্রতিশোধ
ভেনেসা যেন পাগল হয়ে গেল। কিন্তু শেষ সুর বাজানোর সময়, হঠাৎ গির্জার ভাঙা স্টেইনড গ্লাস থেকে আটটি বিকৃত মুখ ফুটে উঠল। তারা চিৎকার করল—আগের আট সুরধারী, যাদের আত্মা সুরের দাসত্বে বন্দি ছিল। তারা এসে ঘিরে ফেলল ভেনেসাকে। তার শরীরের ট্যাটু জ্বলে উঠল, চামড়া ফেটে বেরিয়ে এলো আগুন, আর সে নিঃশেষ হয়ে গেল।
ডেভিডের রক্তস্নাত মুক্তি
রক্ত আর ছাইয়ের ভেতর দিয়ে পা ফেলল ডেভিড। গিটারটি ধীরে তুলে নিল—একটা অভিশপ্ত প্রতিশ্রুতির মতো। জ্যাকের গিটার হাতে তুলে নিল—মানুষের হাড় দিয়ে গড়া সেই পবিত্র অভিশপ্ত যন্ত্র। চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছিল, কিন্তু সে হাসছিল। “তুমি ক্ষমা পাও, জ্যাক।”
তারপর সে ইচ্ছাকৃতভাবে বাজাল শেষ সুর। সুরটা হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ল, আর পুরো গির্জা কেঁপে উঠে ধসে পড়ল।
পোস্ট-ক্রেডিট
একটি ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল এক অচেনা কিশোর। তার হাতে সেই রক্তাক্ত গিটার। তার পকেট থেকে একটি চিরকুট পড়ে গেল। তাতে লেখা:
"ডেভিড, তুমিই নবম সুরধারী।"
সে কুড়িয়ে নিল গিটার। বাতাসে আবার এক ক্ষীণ সুর বেজে উঠল।
দূরে, ছায়ামূর্তি ভেনেসার ছিন্ন গলার চামড়া হাতে দাঁড়িয়ে রইল—তার চোখে আবার সেই নোটেশন জ্বলছে...
মেমোরেবল ডায়ালগ
ভেনেসা: “সুর কখনও মুক্তি দেয় না... সে শুধু নতুন খাঁচা বানায়!”
ডেভিড: “তাহলে আমি এই খাঁচা ভেঙে ফেলব—এমন সুর বাজাবো, যা শুনে সবাই মুক্ত হবে!”
শেষ
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




