somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাইক্রোক্রেডিট—অর্থনীতির হাতিয়ার না ঋণের জাল?

১৮ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশে মাইক্রোক্রেডিট শব্দটি আজ আর নতুন নয়। এটি দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠেছে। এর প্রধান রূপকার নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস মাইক্রোক্রেডিটকে সাধারণ মানুষের জন্য আর্থিক স্বাধীনতার পথ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সম্প্রতি মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নতুন ভবন উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, “মাইক্রোক্রেডিটই ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ।” প্রশ্ন হচ্ছে—আসলেই কি এটি ভবিষ্যতের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, নাকি এটি প্রান্তিক মানুষকে আরও একটি বন্ধনে বেঁধে রাখার কৌশল?

প্রফেসর ইউনূসের বক্তব্যে একদিকে যেমন ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার সাফল্য এবং স্বচ্ছতা তুলে ধরা হয়েছে, অন্যদিকে একটি নতুন ব্যাংকিং দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে জোরালো যুক্তি দেওয়া হয়েছে। তার মতে, মাইক্রোক্রেডিট হলো 'বিশ্বাসের ব্যাংকিং'—যেখানে জামানত নয়, বরং পারস্পরিক আস্থা ও আত্মমর্যাদাই ঋণ দেওয়ার ভিত্তি।

তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা কি শুধুই ইতিবাচক?

মাইক্রোক্রেডিট: স্বাধীনতা না ঋণের আবরণ?

১৯৮০ ও ৯০ দশকে যখন গ্রামীণ ব্যাংক ও অন্যান্য এনজিও প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম শুরু করে, তখন তা একটি আশার আলো ছিল। প্রান্তিক নারীরা গবাদিপশু, হস্তশিল্প বা ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করেছেন এই ঋণের সাহায্যে। অনেক পরিবার দারিদ্র্যসীমা থেকে উঠে এসেছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে মাইক্রোক্রেডিটের ইতিবাচক ভূমিকা অনস্বীকার্য।

কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ একপাক্ষিক নয়।

অভিযোগ আছে, ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণকারীরা এক প্রতিষ্ঠানের ঋণ দিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ করেন। কখনো কখনো তাদের ঋণের চক্র এমনই ঘনীভূত হয় যে তারা মূলধন হারিয়ে ফেলে, বাকি থাকে শুধুই কিস্তির বোঝা। অনেকক্ষেত্রে সুদের হারও একধরনের চাপ সৃষ্টিকারী। যদিও মাইক্রোক্রেডিট ‘উন্নয়নমুখী ঋণ’ হিসেবে চিহ্নিত, তবুও নির্দিষ্ট পরিসরে এটি বাণিজ্যিক চেহারা ধারণ করেছে বলেও অনেকে মনে করেন।

মাইক্রোক্রেডিট: ব্যাংক না এনজিও?

প্রফেসর ইউনূসের বক্তব্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—মাইক্রোক্রেডিটকে এনজিও ভাবনা থেকে বের করে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং কাঠামোয় আনতে হবে। তার ভাষায়, “এনজিও থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে ব্যাংকিং মেজাজ আসবে না।” এই বক্তব্য মূলত মাইক্রোক্রেডিটের ভবিষ্যত কাঠামোর দিক নির্দেশ করে। একটি আলাদা আইন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে, এটি হয়তো একটি খণ্ডিত এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ হিসেবেই থেকে যাবে।

তবে এই দৃষ্টিভঙ্গিরও সমালোচনা রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, ক্ষুদ্রঋণকে ব্যাংকিং কাঠামোয় নিয়ে গেলে তার সহজলভ্যতা ও মানবিক দিকটি হারিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে দরকার ভারসাম্যপূর্ণ নীতিমালা—যাতে প্রতিষ্ঠানও টিকে থাকে, এবং ঋণগ্রহীতার উপর অযথা চাপও না পড়ে।

পথ কোথায়?

মাইক্রোক্রেডিট বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু এই ব্যবস্থাকে উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে কার্যকর করতে হলে তার কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। শুধু ঋণ বিতরণ নয়, বরং ঋণগ্রহীতাদের প্রকৃত অর্থনৈতিক সক্ষমতা গড়ে তোলা, প্রশিক্ষণ দেওয়া, এবং প্রয়োজনমাফিক ঋণপুনর্গঠন প্রক্রিয়া তৈরি করাই হবে টেকসই সমাধান।

সুতরাং, মাইক্রোক্রেডিট আসলেই ভবিষ্যতের ব্যাংকিং হবে কিনা, তা নির্ভর করবে—আমরা কীভাবে এটি পরিচালনা করি তার উপর। এটি যেন ঋণের জালে পরিণত না হয়, বরং অর্থনৈতিক মুক্তির পথ হয়—এই হোক আমাদের লক্ষ্য।

আপনার মন্তব্য বা অভিজ্ঞতা থাকলে শেয়ার করুন। আলোচনায় সবাইকে স্বাগত।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:৪২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×