somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজনীতি, করিডোর ও কৌশলী সেনাবাহিনী: একটি নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত?

২৭ শে মে, ২০২৫ সকাল ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন ও জল্পনা কল্পনা তৈরি হয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর থেকে যেভাবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরা হলো, তা এসব প্রশ্নেরই উত্তর দেয়ার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা এবং কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, সরকার এবং সেনাবাহিনী বিপরীতমুখী নয় বরং একসঙ্গে কাজ করছে।

সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ‘করিডোর’ ইস্যুতে সেনাবাহিনীর অবস্থান ছিল সাংবাদিকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। এ নিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয় এবং এ বিষয়ে সেনাবাহিনী কোনো এমন কার্যক্রমে যুক্ত হবে না, যা দেশের নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি তৈরি করে। তিনি আরও বলেন, করিডোর ইস্যু এবং সীমান্তে আরসা-র উপস্থিতি একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, বরং ভিন্ন প্রসঙ্গ।

এই সংবাদ সম্মেলন শুধু একটি ব্যাখ্যা নয়, বরং সাম্প্রতিক নানা গুজব, মিডিয়ার আলোচনা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর অবস্থান পুনরায় স্পষ্ট করার চেষ্টা। কারণ, উপদেষ্টা পরিষদের সর্বশেষ বৈঠকে যেভাবে সেনাবাহিনীর নাম না নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ পেয়েছে, তাতে ধারণা করা যায় সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।

তারও আগে গত ৫ আগস্টের পর থেকেই সেনাবাহিনী কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো, তারা প্রথমেই জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসে, যেখানে জাতীয় নির্বাচনসহ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বিএনপির সঙ্গে এমন কোনো বৈঠক হয়েছে কিনা—সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য মেলেনি।

যদিও সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে সরকার ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে এবং কোনো মতপার্থক্য নেই, তবুও বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখায়। সেনাবাহিনী যদি সত্যি একসঙ্গে কাজ করছে, তবে কেন তারা প্রথমে জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকে বসল? কেন তারা নিজ উদ্যোগে প্রেস ব্রিফিং শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল, যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি?

এখন থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনী নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং করবে বলে যে ঘোষণা দিয়েছে, তা একদিকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ইঙ্গিত দেয়, অন্যদিকে এটি সেনাবাহিনীর একটি সক্রিয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বা এমনকি অংশগ্রহণকারীর ভূমিকার সূচনাও হতে পারে—এমন আশঙ্কাও তৈরি করছে।

এই সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে, সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে যা অস্বীকার করা কঠিন। এই দূরত্ব মেটানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ এখনো চোখে পড়ছে না। আর সেই শূন্যস্থানে সেনাবাহিনী নিজেই নিজের অবস্থান জনগণের সামনে তুলে ধরছে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসছে।

প্রশ্ন হলো—এই আলোচনা কেবল পরিস্থিতি বোঝার জন্য, নাকি কোনো ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপরেখার সম্ভাব্য খসড়া তৈরির প্রক্রিয়া? সময়ই এর উত্তর দেবে। তবে এখন যা দেখা যাচ্ছে, তা হলো—বাংলাদেশের রাজনীতির মঞ্চে সেনাবাহিনী আবারো তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে, তবে তা এই মুহূর্তে সরাসরি নয়, বরং আড়ালের কৌশলে।

এ ধরনের সময়ে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হলো—জনগণের স্বার্থ ও দেশের স্থিতিশীলতা। সেনাবাহিনী হোক কিংবা সরকার—উভয়ের দিক থেকেই সতর্ক, দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছ আচরণই কেবল পরিস্থিতিকে উত্তরণের পথ দেখাতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই উত্তরণ কতটা শান্তিপূর্ণ, নাকি আরেকটি অস্থিরতার অধ্যায় রচিত হচ্ছে আমাদের চোখের সামনেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০২৫ সকাল ৮:৪১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×