
বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনকাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর যুদ্ধাপরাধ থেকে মুক্তি, এনসিপির সঙ্গে গোপন সম্পর্ক ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক—সব মিলিয়ে কী ইঙ্গিত দিচ্ছে?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন এক অদ্ভুত রকমের স্রোত বইছে। দেশের ক্ষমতায় রয়েছে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকারের দায়িত্ব রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই যেসব অনিশ্চয়তা, গোপন যোগাযোগ ও রাজনৈতিক অঙ্ক চলমান—তাতে সবচেয়ে আলোচিত নাম হয়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামী।
সম্প্রতি একটি ঘটনা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে—জামায়াতের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম যুদ্ধাপরাধ মামলায় খালাস পেয়েছেন। এই রায়ের আগে-পরে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা জনমনে প্রশ্ন তুলেছে। যেমন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধান বিচারপতির একটি অনির্ধারিত বৈঠক, যেটির ব্যাপারে সরকারি কিংবা বিচার বিভাগীয় কোনো ব্যাখ্যা আসেনি। আর ঠিক তার পরই আসে জামায়াত নেতার মুক্তির ঘোষণা। সময়কাল ও ঘটনার ধারাবাহিকতা দেখে অনেকেই বলছেন, এটি নিছক বিচার নয়—এটি এক কৌশলী রাজনৈতিক পদক্ষেপ।
নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) দেশের রাজনৈতিক আলোচনায় একটি নতুন মাত্রা এনেছে। যদিও তারা নিজেদের “নাগরিক প্ল্যাটফর্ম” হিসেবে তুলে ধরতে চায়, বাস্তবতা ভিন্ন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে জনসমাগমের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, জামায়াতের নেতাকর্মীরা বেনামে উপস্থিত থেকে এনসিপিকে মাঠে মানুষের ভিড় জোগাতে সহায়তা করেছে।
তবে গত কয়েকটি এনসিপি কর্মসূচিতে জামায়াত লোক দেয়নি। এর ফলেই ফ্লপ হয়েছে তাদের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি কিংবা জেলা পর্যায়ের মিটিং। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াত তাদের ‘সহযোগিতা’ টান করে রাজনৈতিক দর কষাকষিতে নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে চায়। এবং ঠিক এই জায়গা থেকেই এটিএম আজহারের মুক্তিকে ‘তুষ্টিকরণের রাজনীতি’র একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জামায়াত সম্প্রতি জানিয়েছে, তাদের নেতৃবৃন্দ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কারও সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যদিও কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জানাতে তারা অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এই ধরণের গোপন বৈঠক সাধারণত রাজনীতির নতুন ছকের ইঙ্গিত দেয়। প্রশ্ন উঠেছে—এই বৈঠক কি কোনো নির্বাচনী সমঝোতার ভিত্তি? নাকি ভবিষ্যতের ক্ষমতার ভাগাভাগির ছক?
জামায়াতে ইসলামীর রয়েছে একটি সুসংগঠিত, আদর্শিকভাবে অনুগত ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন। বহু দল যেখানে মাঠ পর্যায়ের সংগঠনে দুর্বল, সেখানে জামায়াত এখনো শক্ত ভিত গড়ে রেখেছে। রাজনৈতিক পক্ষগুলোর কাছে এটি এখন এক ধরণের প্রয়োজনীয়তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জামায়াতের অবস্থান ঠিক করার দিকে তাকিয়ে আছে সরকার, এনসিপি, এমনকি বিএনপিও। সবাই তাদের ‘তুরুপের তাস’ হিসেবেই ভাবছে।
বর্তমানে জামায়াত এক অদ্ভুত কৌশলের খেলায় নেমেছে। কখনো এনসিপিকে সহায়তা করছে, আবার কখনো নিজেদের লোকজন গুটিয়ে নিচ্ছে। কখনো তারা আদালতের করিডোরে নতুন বার্তা দিচ্ছে, আবার কখনো সেনাবাহিনীর সঙ্গে ‘অভদ্রতা-বিহীন সংলাপ’ চালাচ্ছে। এই ধরণের রাজনীতি অনেক সময় বিস্ফোরক হয়ে উঠতে পারে।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান চিত্র জটিল, পরস্পরবিরোধী, এবং রহস্যঘেরা। এই অস্থিরতার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর কৌশলগত অবস্থান একেবারেই নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। তারা হয়তো এখনো বড় কোন পদক্ষেপ নেয়নি, কিন্তু সময়মতো তাদের ‘চাল’ যে গোটা রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে—তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমরা যারা সাধারণ নাগরিক, তারা শুধু দেখছি—কেউ তাস ফেলছে, কেউ তুরুপের চাল দিচ্ছে। কিন্তু খেলাটা আসলে কার? আর কাকে জেতাতে এই খেলা—সেই উত্তর আজও অজানা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



