somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিক্যবাদ : ভণ্ডদের ভণ্ডামির ফুলস্টপ

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'নাস্তিক' শব্দটি ভাঙলে দাঁড়ায়,নাস্তিক + কন বা নাস্তি + ক। 'নাস্তি' শব্দের অর্থ হল নাই,অবিদ্যমান। 'নাস্তি' শব্দটি মূল সংস্কৃত হতে বাংলায় এসে ‘ক’ প্রত্যয় যোগে নাস্তিক হয়েছে। ইতিহাস তালাশ করলে দেখা যায় যে নাস্তিকতা পৃথিবীর প্রতিটি সমাজ ও দেশে এবং সব সময়ই একটি অজনপ্রিয় মতবাদ হিসেবে গণ্য ছিল। সর্ব প্রথম ব্যাক্তি যিনি এরকম চিন্তা লালন-পালন করেছিলেন, তার নাম হল ‘অ্যানাক্সাগোরাস’ (Anaxagoras)। অ্যানাক্সাগোরাস বিশ্বাস করতেন যে – সূর্য হল এক ধরণের অগ্নি-পাথর। যা তখনকার যুগের জনপ্রিয় বিশ্বাসের বিপরীত ছিল। এ জন্য তাকে নির্বাসনে যেতে হয়। philosopher,Anaxagoras (fifth century BCE), claimed that the Sunwas "a fiery mass, larger than the Peloponnese" a charge of impiety was brought against him, and he was forced to flee Athens. তবে বর্তমানে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা এক ধরণের ফ্যাশনে পরিণত হয়ে গেছে। তাছাড়া ইউরোপ আমেরিকার ভিসা পাওয়ার একটা ভালো মাধ্যম নাস্তিকতা। ইসলাম-বিরোধী চক্রের অনেকেই নিজেদেরকে 'মুক্তমনা নাস্তিক' দাবি করে মুসলিম নামধারীদের দ্বারা সংঘটিত বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনাকে ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত করে একদিকে ইসলাম ও মুসলিমদেরকে 'অমানবিক, বর্বর' প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে অন্যদিকে আবার নিজেদেরকে 'মানবতাবাদী, প্রগতিশীল' দাবি করছে।
কতিপয় পশ্চিমা দেশ ইসলামের নামে কিছু অস্ত্রধারী গোষ্ঠী সৃষ্টি করে মুসলিম দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। যার ফলে বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে সংঘাত ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল বৃদ্ধি পাচ্ছে। মসজিদে বোমা বিস্ফোরণ, নামাজে জানাযা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিয়েশাদী থেকে শুরু করে হাটবাজারে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অসংখ্য মানুষ হত্যাকরা হচ্ছে। এসব দৃশ্য দেখে ইসলাম বিরোধীরা দাঁত বের করে হাসছে। নাস্তিকরা মুহাম্মদ (স) এর সময়কার বিভিন্ন যুদ্ধকে অমানবিক বলে লিখতে লিখিতে ফেনা তুলে দিচ্ছে ; অথচ বিভিন্ন ইসলামীক বইয়ের সুত্রনুসারে মুহাম্মদ (স) এর সময়কার যুদ্ধে,(বদর, উহুদ,খন্দক, খায়বর, মুতা, মক্কা বিজয়, হোনায়েন, ত্বায়েফ, তাবূক) মুসলিম পক্ষে ১৪০ জন এবং কাফের পক্ষে ২৯৩ জন সহ সর্বমোট ৪০৩ জন নিহত হয়েছে। ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার তথ্যমতে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিল চৌষট্টি লক্ষ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিল সাড়ে তিন কোটি থেকে ছয় কোটির মধ্যে। আগ্রাসী মার্কিন শক্তির বিরুদ্ধে আক্রান্ত ভিয়েতনামীরা দীর্ঘ ১৮ বছর যাবৎ যুদ্ধ করে। এতে একক ভাবে আমেরিকা ৩৬ লাখ ৭২ হাজার মানুষকে হত্যা করে ও ১৬ লাখ মানুষকে পঙ্গু করে। হিটলার যে মিলিয়ন মিলিয়ন নিরীহ ইহুদীকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেছে তা নিয়ে তাদের কোনো রকম মায়াকান্না নেই। তাই তাদের লেখালেখিকে হাস্যকর মনে হয় তাদের বিশ্বাসকেও হাস্যকর মনে হয়॥
নাস্তিকদের মতে যেহেতু সৃষ্টিকর্তা নেই পরকাল নেই, মৃত্যুর সাথে সাথে অনন্ত কালের জন্য সবকিছুর অবসান হয়ে যায়।
নাস্তিকদের যুক্তি বিশ্বাস করে, মৃত্যুর সাথে সাথে সবকিছুর অবসানে বিশ্বাস করা মানে অপরাধী ও নিরপরাধীর মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা ; স্বাভাবিক মৃত্যু ও আত্মঘাতি মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; বুদ্ধ ও হিটলারের মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; লাদেন ও জর্জ বুশের মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; যুদ্ধাপরাধী ও মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা; গোলাম আজম এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে পার্থক্যকে অস্বীকার করা। মনে রাখতে হবে এই দুনিয়ায় সকল অপরাধের বিচার করা কখনোই সম্ভব না। তাই সকল অপরাধের বিচার হবে পরকালে।
নাস্তিকদের কত ধরনের লেখা কত ধরনের প্রশ্ন!! মুক্তমনায় একটা লেখা পড়েছিলাম - (সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষ আল্লা কোথায়)॥ আসলেই কিছু কিছু লেখা পড়লে বড়ই হাস্যকর মনে হয়॥ কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, "আল্লাহ কখনই মানব জাতির কোন ক্ষতি করেন না, বরং মানুষরাই মানুষের ক্ষতি করে। (১০:৪৪)"। ধরুন সোমালিয়াতে নির্যাতিত মুসলিমদের উপর একদিন হঠাৎ করে আকাশ থেকে নানান ধরনের খাবার আসা শুরু হল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেই খবর ইন্টারনেটএ ছড়িয়ে যাবে এবং বিবিসি, সিএনএন, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, ডিসকভারি চ্যানেল থেকে শত শত হেলিকপ্টারে করে হাজার হাজার সাংবাদিক গিয়ে সেখানে হাজির হবে। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ সারাদিন বসে টিভিতে দেখতে থাকবে এই অসম্ভব ঘটনা। সাড়া পৃথিবী থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই অলৌকিক ঘটনা নিজের চোখে দেখার জন্য প্লেনে করে সোমালিয়াতে যাবার জন্য বিরাট লাইন দিয়ে দিবে।
সোমালিয়ার আসে পাশের দেশগুলো থেকে লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষ গরু, ঘোড়া, গাধায় করে রওনা দিবে সোমালিয়ার উদ্দেশে এই বিনামুল্যে পাওয়া খাবারে ভাগ দেবার জন্য। কয়েক দিনের মধ্যে পৃথিবীর একটা বড় জনগোষ্ঠী সোমালিয়ায় গিজ গিজ করতে থাকবে। খ্রিস্টান, মুসলিম, ইহুদি আলেমদের মধ্যে বিরাট ঝগড়া লেগে যাবে যে এই অলৌকিক ঘটনার জন্য কে দায়ী – আল্লাহ,নাকি যীশু, নাকি ইহুদিদের খোদা?
কয়েকদিনের মধ্যে পশ্চিমা দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের আর্মিকে হাতিয়ে,সোমালিয়ায় ক্যান্টনমেন্ট বানিয়ে কাটা তারের বেড়া দিয়ে খাবারের লোভে সবাইকে বের করে দিবে তখন আবার আরেক সমস্যা সৃষ্টি হবে। শুধু এই সব প্রশ্ন নয় ব্লগে নাস্তিকদের অনেক হাস্যকর প্রশ্ন আছে -
.
বিজ্ঞান মনষ্ক উঠতি নাস্তিক: আল্লাহ যদি সবকিছুই সৃষ্টি করে থাকেন, তাহলে তাকে সৃষ্টি করলো কে?
.
হতাশাগ্রস্থ নাস্তিক: সত্যিই যদি আল্লাহ থাকে, তাহলে পৃথিবীতে এত দুঃখ, কষ্ট কেনো? সারা পৃথিবীতে মুসলিমরা এতো মারা যাচ্ছে কেনো?
.
দার্শনিক নাস্তিক: আল্লাহ বলে কেউ আছে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। যেহেতু আল্লাহকে কেউ দেখেনি এবং এখন পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞান সম্মত প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাই আল্লাহ বলে কিছুই নাই॥
.
উগ্রবাদি নাস্তিক: ধর্মটাই একটা ভাওতাবাজি তাই আল্লা থাকা না থাকার কথা উঠছে কেন?? স্রষ্টা একটা কাল্পনিক বিষয় সব মৌলবাদীদের ধান্দা।
.

উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর অনেক যুক্তি সম্পন্ন উত্তর আছে কিন্তু তারপরও নাস্তিকরা বিশ্বাস করবেনা যে সত্যিই স্রষ্ঠা বলে কেউ আছেন!!! এর কারণ নাস্তিকতার মুল ভিত্তি হলো অবিশ্বাস। নাস্তিকতার সংগা বিষয়ে উইকিপিডিয়া বলছে,নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস নয় বরং অবিশ্বাস এবং যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বাসকে খণ্ডন নয় বরং বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই এখানে মুখ্য। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার ২.৩% মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে পরিচয় দেয় এবং ১১.৯% মানুষ কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না। মানে নাস্তিকদের সংখ্যাটা খুব কম। আর নাস্তিক মাত্রই ধরে নেবে যে আল্লাহ নেই॥ কারণটা হাজার বছরের পুরনো। মানুষ এখন পর্যন্ত সৃষ্টি জগতের ৫% ও বৈজ্ঞানিক ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেননি। তাই কেবল মাত্র একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মানুষের পক্ষেই বলা সম্ভব যে, স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই।
.
সবশেষে নাস্তিকদের কয়েকটা প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি যারা সৃষ্টিকর্তা (বেহেস্ত দোযখ) বিশ্বাস করেন না।
.
(১) আপনাকে যদি কেউ বলে আপনাকে সাতদিন সারাদিন রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে এবং তার বিনিময়ে আপনাকে বাড়ি, গাড়ি, জমি, টাকা সব দেওয়া হবে – আপনি কি চোখ বন্ধ করে রাজি হয়ে যাবেন না-কি হবেন না ?
.
(২) আপনি নিজেকে কি নাস্তিক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন? আপনি কি সত্যিই নাস্তিক তবে -
.
(ক) আপনি কি ধর্ষণকে সমর্থন করেন। আপনার মা বোন বউ ধর্ষিত হলে আপনার কোনো আপত্তি আছে কি??
.
(খ) আপনি কি ইনসেস্ট (নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ের সাথে যৌনকর্ম) নৈতিকভাবে সমর্থন করেন?
.
(গ) আপনি নিজে কি সমকামি? আপনি কি নৈতিকভাবে সমকামিতাকে সমর্থন করেন?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×