কিছুদিন আগে ঢাকায় একাধিক বিল্ডিংয়ের ধ্বস্, ঈদের আগে পিছে দেশের নানান জায়গায় মোটামুটি শক্তিশালী মাত্রার ভূমিকম্প আর ঢাকা শহরে ক্রমবর্ধমান মানববোঝার কারনে দেশের অনেকেই, বিশেষ করে ঢাকাবাসীরা, হয়তো ভূমিকম্প নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন। এ নিয়ে জনপ্রিয় ব্লগ সচলায়তনে ব্লগার তানভীর আজ চমৎকার একটি লেখা দিয়েছেন, "বাংলাদেশে ভূমিকম্প বিষয়ক ঝুঁকি, প্রস্তুতি ও করণীয়" নামে। আমি মনে করি আমাদের সবারই লেখাটা পড়া উচিত, তাই সামহোয়ারের পাঠকদের জন্যও লিংকটি শেয়ার করলাম।
http://www.sachalayatan.com/tanveer/35227
লেখাটিতে মন্তব্য হিসেবে সাধারণ গৃহস্থের অবস্থান থেকে তাৎক্ষণিক প্রস্তুতি হিসেবে কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায় তার একটা তালিকা তৈরী করেছিলাম। তৈরী করতে গিয়ে দেখলাম, বেশ লম্বা তালিকা হয়ে গেছে। ভাবলাম অন্যান্য ব্লগের পাঠকদের সাথেও তালিকাটা শেয়ার করলে মন্দ হয়না। তালিকাটি মূলত ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি রোধে নেয়া যায় এমন কিছু পুর্বপ্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপের। কাজগুলো খুবই সহজ এবং অল্প সময়েই করা সম্ভব। এমন কি চাইলে আজই। কিছুটা ব্যয়সাপেক্ষ, তবে জীবনের নিরাপত্তার কথা ভাবলে এটুকু ব্যয় অর্থপূর্ণ বলে মনে করি।
খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যায় এমন কিছু পয়েন্ট:
বাসার ডাইনিং টেবিলটিকে ব্যবহার করুন। ভূমিকম্পের সময় দূর্ঘটনা এড়ানোর জন্য ‘ড্রপ-কাভার-হোল্ড অন’ বা ‘ডাক-কাভার’পদ্ধতি যে বিশেষজ্ঞরা সাজেস্ট করেন তা নিশ্চয়ই এতক্ষণে তানভীরের লেখাটিতে পড়েছেন। বাসার সবাই মিলে ডাক-কাভারের জন্য ডাইনিং টেবিলটি হতে পারে খুব ভালো একটি আশ্রয়। এজন্য:
১। বাসার ডাইনিং টেবিলটা একটু বড় করে এবং বডি শক্ত করে বানান, দরকার হলে ডাবল লেয়ার কাঠ দিয়ে।
২। ডাইনিং টেবিলের পাতের নিচের দিকে "ভুমিকম্প এইড বক্স" সেট করে রাখুন। এতে টর্চ, রেফারির বাঁশী, শুকনো খাবার (বিস্কুট), সিম্পল ফার্স্ট এইডের জিনিসপত্র থাকতে পারে।
৩। দেখতে খারাপ দেখালেও ডাইনিং টেবিলের আশপাশেই কোথাও ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখা ভালো। বাসার সবাই এটার ব্যবহারবিধি জেনে রাখুন, খুবই সহজ।
৪। বাংলাদেশের বাসাগুলোর ডিজাইনে এটা করা খুব কঠিন, তাও সম্ভব হলে ডাইনিং রুম হিসেবে ঘরের এমন কোন জায়গা বেছে নিন যার অন্ততঃ একটি দেয়াল দালানটির সবচেয়ে বাহিরের দেয়াল হয়। এক্ষেত্রে, ভূমিকম্পের সময় ডাইনিংয়ের নিচে আশ্রয় নিয়ে, পরবর্তীতে ধ্বংসস্তুপ থেকে বেরিয়ে আসা সহজ হবে।
ভবনধ্বসের ক্ষেত্রে ধংসস্তুপ থেকে বেরুবার মুখ হতে পারে দরজা গুলো। আবার মরণফাঁদও হতে পারে, যদি ধ্বসের সময় দরজা বন্ধ থাকে। দরজার পাল্লা দুমড়ে গিয়ে এমন হয় যে পরে ছিটকিনি আর খোলেনা! ভেতরে আটকা পড়ে যাবার ঘটনা খুব বেশী ঘটে। এজন্য:
৫। যতদূর সম্ভব ঘরের সবগুলো রুমের দরজা খোলা রেখে ঘুমান।
৬। দিনের বেলাতেও প্রয়োজন না হলে ঘরের ভেতরের দরজাগুলো বন্ধ করবেননা।
৭। ভুমিকম্প টের পেলে সাথে সাথে ঘরের সদর দরজা খুলে দিন, অন্যান্য দরজা বন্ধ থাকলে সেগুলোও যত বেশী সম্ভব খুলে দিন।
৮। আমাদের দেশে বারান্দা বা জানালা টাইপের এক্সিটগুলো সাধারনত গ্রিল দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়, নিরাপত্তার জন্য। এটা ভূমিকম্পবান্ধব না, কিন্তু কিছু করার নেই। এজন্য, সম্ভব হলে বাসার সবচেয়ে বড় বারান্দাটির গ্রিলের এক কোনায় গ্রিল কাটার ঝুলিয়ে রাখুন।
৯। ভূমিকম্প শরীরের যে প্রত্যঙ্গটির জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক, তা হলো মাথা। এটাকে বাঁচাতে পারলে জীবন বাচার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। এজন্য বাসার সব সদস্যর বিছানার পাশে হাতের কাছাকাছি কোথাও একটি করে হেলমেট রাখার ব্যবস্থা করুন।
১০। অনেক সময়েই ভূমিকম্পে ভবনধ্বসে যা ক্ষয়ক্ষতি হয় তার চেয়েও বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয় পরবর্তীতে আগুন লেগে। সবচেয়ে বেশী আগুন লাগে গ্যাস লিকেজের কারণে। এজন্য অবশ্যই রান্না শেষ হলে গ্যাসের মূল সুইচ বন্ধ করার অনুশীলন করুন। শুধু নিজেরা করলে হবেনা, একই বাড়ীর অন্যান্য প্রতিবেশী/ভাড়াটিয়াদেরকেও এই ব্যাপারে সচেতন করুন। তানাহলে নিজের বাড়ীতে আগুন না লাগলেও অন্যের বাড়ীর আগুন আপনার ঘর পোড়াবে।
১১। মোবাইল ফোন চার্জ দেয়ার জায়গাটিকেও ডাইনিং টেবিল থেকে কাছাকাছি কোথাও রাখুন। মোবাইল ফোনে সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর ফোন নম্বর অবশ্যই রেকর্ড করে রাখুন।
১২। সবশেষে, বছরে একবার করে হলেও ঘরের সবাই মিলে প্রকৃত ভুমিকম্পের সময় কি করবেন তার একটা ট্রায়াল দিন। করতে গিয়ে হাসি আসতে পারে তবে এটা ভীষন কাজের।
শুভকামনা রইলো।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৪১