একদা এক বাদশাহ রাতের বেলায় (তার দেশের জনগনের অবস্থা জানার জন্যে) শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তিনি তার পোশাক পরিবর্তন করে সাধারণের এক পোশাক পরে নিয়েছিলেন যাতে শহরের মানুষেরা তাকে চিনতে না পারে। সাথে ছিল তার এক কর্মচারী। আসলে বাদশাহ জানতে চাচ্ছিলেন যে, তার সম্পর্কে, তার প্রশাসন সম্পর্কে তার প্রজারা কী ভাবে?
সময়টা ছিল শীতকাল। খুবই ঠান্ডা পড়ছিল তখন। ছোট্ট একটা মসজিদের কাছাকাছি হলেন বাদশাহ। দেখলেন দু’জন লোক মসজিদের এক কোনায় বসে প্রচন্ড শীতে কাঁপছে। তাদের থাকার মত কোন জায়গা ছিল না। বাদশাহ তাদের আরো কাছে গেলেন এবং তারা কী বিষয়ে কথা বলছে তা শোনার চেষ্টা করতে লাগলেন।
তাদের মধ্যে একজন ছিল খুবই মজাদার (ফানী) ব্যক্তি। কৌতুক করে কথা বলত সে। শীতের প্রতি অভিযোগ করে সে বলল: “আমার মৃত্যুর পরে আমি যখন বেহেস্তে যাব, তখন আমি আমাদের বাদশাহকে বেহেস্তে ঢুকতে দিব না। যদি আমি দেখি যে, সে বেহেস্তের দরজা পার হচ্ছে তাহলে আমি আমার জুতা খুলে তার মাথায় ছুড়ে মারব।”
তখন অপর ব্যক্তিটি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করল: “কেন? তুমি বাদশাহকে কেন বেহেস্তে ঢুকতে দিবে না?”
“অবশ্যই আমি বাদশাহকে বেহেস্তে ঢুকতে দিব না। আমরা যখন এখানে ঠান্ডায় বরফ হয়ে যাচ্ছি, তখন তিনি তার আরামদায়ক গরম বিছানায় বসে আছে; সে জানে না যে আমরা কীভাবে বেচে আছি? সুতরাং কীভাবে সে বেহেস্তে আমাদের প্রতিবেশী হবে? আমার এমন কোন প্রতিবেশী সেখানে হোক তা আমি চাইনা।”
তারা উভয়ই অট্টহাসীতে ফেটে ফড়ল।
বাদশাহ তখন তার গোলামকে বললেন: “এই ছোট্ট মসজিদ আর এ দু’জনের কথা যেন ভুলোনা।”
যখন বাদশাহ তার প্রাসাদে ফিরলেন, তখন তার লোকবলকে সেই মসজিদে পাঠালেন। তারা সেই দু’জন গরীব মানুষকে প্রাসাদে ধরে আনল। তারা হতবুদ্ধ হয়ে গেল। কী ঘটছে এসব? ভীত-সন্ত্রস্থ হয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। দেখা যাক কী হয়। এমন সময় তাদেরকে একটা বিলাসবহুল ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো এবং বলা হলোঃ “তোমরা এখানে ভাল ভাল সব খাবার খাবে, সুস্বাদু পানীয় পান করবে এবং বিলাসবহুল এ ঘরে বাস করবে আর আমাদের বাদশাহর জন্যে প্রার্থনা করবে। কিন্তু ভুলেও আর কখনও এ ব্যাপারে অভিযোগ করতে পারবে না যে, তিনি যেন বেহেস্তে তোমাদের প্রতিবেশী না হয়!”
কত হৃদয়বানই না ছিল এ বাদশাহ! তাই নয় কি?
আমাদের মহানবীও (সা.) তাদের প্রশংসা করেছেন যারা গরীবদের উপকারে আসে; সাহায্য করে। তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি এ দুনিয়াতে কোন মু’মিন বান্দাহ’র প্রয়োজন পুরুন করে, আল্লাহ আখেরাতে তার প্রয়োজন পুরুন করবেন।” (সহীহ মুসলিম)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



