somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দাঁত শিরশির বা সেনসেটিভ টুথ।

২৫ শে মার্চ, ২০১০ দুপুর ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দাঁতের বাইরের শক্ত আবরণ হচ্ছে এনামেল যা আমরা বাইরে থেকে দেখতে পাই। এটা দাঁতের ভিতরের ডেন্টিন, পাল্প বা মজ্জাকে সুরক্ষা করে। কোন কারণে যদি এই এনামেল ক্ষয়ে যায় তাহলে ভেতরের এই ডেন্টিন বের হয়ে আসে এবং ঠাণ্ডা, গরম ও মিষ্টি খাবারে শিরশির করে। এটাই দাঁত শিরশির নামে পরিচিত। কোন কারণে যদি দাঁত ফেটে যায় বা ক্ষয়ে যায়, দাঁতের কোন ফিলিং যদি ক্ষয় হয়ে যায় বা খুব বেশি এগ্রেসিভভাবে দাঁত ব্রাশ করার কারণে দাঁতের গোড়া কিছুটা বের হয়ে গেলেও দাঁত শিরশির করে।

সাধারণত আমাদের দাঁতের ক্রাউন বা মুকুটের বাইরের আবরণ হচ্ছে এনামেল এবং দাঁতের রুট বা গোড়ার বাইরের আবরণ হচ্ছে সিমেন্টাম। এনামেল আমাদের দেহের সবচেয়ে কঠিনতম অংশ যা দাঁতের মুকুট অংশকে সুরক্ষা করে আর সিমেন্টাম রক্ষা করে দাঁতের গোড়ার অংশকে। এই এনামেল ও সিমেন্টামের নিচে দাঁতের আরেকটি অংশ থাকে যার নাম ডেনটিন। এটা এনামেলের মত এত কঠিন নয়। ডেনটিন অসংখ্য আণুবীক্ষণিক টিউবিউলস্ বহন করে যা ডেনটিনাল টিউবিউলস্ নামে পরিচিত। যখন এনামেল বা সিমেন্টাম কোন কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তখন এই ডেনটিনাল টিউবিউলসগুলোর মাধ্যমেই ঠাণ্ডা, গরম, এসিডিক ফুড, স্টিকি (আঠালো) খাবার খাওয়ার ফলে ভেতরের স্নায়ূ বা নার্ভ ও কোষ উত্তেজিত হয়। এজন্য কোন রোগী যখন ঠাণ্ডা বা গরম জাতীয় কোন খাবার খায়, তখন তার দাঁত শিরশির করে এবং সে খুব অস্বস্তি অনুভব করে। এমনকি শ্বাস প্রশ্বাস নেয়ার সময়েও শিরশির অনুভূতি হতে পারে।

দাঁত ঠিকমত পরিষ্কার না করলে ক্যারিজ বা দন্তক্ষয় হয়ে ডেনটিন বের হতে পারে। কোন আঘাতের কারণে দাঁত ফেটে গেলে বা খুব জোরে দাঁত ব্রাশ করার ফলেও ডেনটিন বের হতে পারে। এছাড়া কারো যদি মাড়ির সমস্যা বা ইনফেকশন থাকে সেক্ষেত্রেও মাড়ি নিচের দিকে নেমে যায় এবং সিমেন্টাম বের হয়ে আসে এবং সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ডেনটিন বের হয়ে আসে। এসব ছাড়াও মাড়ির সমস্যা অনেকদিন পর্যন্ত থেকে গেলে বা চিকিৎসা না করালে মাড়ি দাঁত থেকে আলগা হয়ে যায় এবং একটা পকেটের মত জায়গা তৈরি করে, একে পেরিওডন্টাল পকেট বলে। এই পকেটের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া জমে মাড়িকে আরো আলগা করে ফেলে এবং ভবিষ্যতে ইনফেকশনের সৃষ্টি করে। এভাবে রোগী ঠান্ডা, গরম বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার সময় দাঁতে শিরশির অনুভব করে।

ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিয়ে দাঁত শিরশির বা সেনসিটিভ টুথ-এর চিকিৎসা সঠিকভাবে করা যায়। যদি কারও বেশিরভাগ দাঁতে হালকা শিরশির অনুভূত হয় সেক্ষেত্রে দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে সেনসিটাইজেশন টুথপেস্ট ব্যবহার করা যায়। এতে যদি তেমন উপকার না পাওয়া যায় বা দাঁত শিরশির যদি কোন নির্দিষ্ট দাঁতের মাঝেই হয়, তাহলে এর সিভিয়ারিটি অনুসারে দাঁতের ফিলিং করা যায় বা রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট করে দাঁতে ক্যাপ বসানো যায়। যদি অতিরিক্ত জোরে দাঁত ব্রাশ করার ফলে দাঁতের বাইরের সারফেসে 'ভি' সেপের গর্ত সৃষ্টি হয়, তবে সেগুলো সহজেই টুথ কালার ফিলিং দিয়ে পূরণ করা যায়। যদি মাড়ি নিচের দিকে নেমে গিয়ে দাঁতের গোড়া ক্ষয় হয়ে যায় এবং সিমেন্টাম ক্ষয়ের ফলে ডেন্টিন বের হয় ও দাঁত শিরশির এর সমস্যা থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে গাম বা মাড়ি গ্রাফটিং করে পূর্বের খালি জায়গা ঢেকে দেয়া যায়।

কারো কারো ক্ষেত্রে বেশি coarse food খাওয়ার ফলে দাঁতের উপরের এনামেল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ডেনটিন বের হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে এ ধরনের খাবার খাওয়ার অভ্যাস কমাতে হবে। এছাড়া কারো ঘুমের সময় যদি দাঁত কিড়মিড় বা খিঁচানোর অভ্যাস বা নাইট গ্রাইন্ডিং হ্যাবিট থাকে, সেক্ষেত্রে এনামেল ক্ষয় হতে পারে এবং এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন অর্থোডোন্টিস্ট-এর পরামর্শ অনুসারে হ্যাবিট ব্রেকিং অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবহার করতে হবে। যাদের খুব জোরে এবং খুব তাড়াতাড়ি ব্রাশ করার অভ্যাস আছে তাদেরকে অবশ্যই সময় নিয়ে সঠিক নিয়ম মেনে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। প্রতিদিন ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে। সুতরাং দাঁতে এ ধরনের কোন সমস্যা হলেই দেরি না করে একজন অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ অনুসারে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। দাঁতের সুস্থতা সম্পর্কে জানতে বছরে অন্তত একবার ডাক্তারের কাছে রুটিন চেকআপ করাতে হবে। সঠিকভাবে যত্ন নিলে দাঁতের মাড়ি থাকবে সুস্থ, সবল এবং দাঁত হবে শক্ত ও মজবুত।

সৌজন্যে: কেয়ার এন্ড কিউর ডেন্টাল ক্লিনিক,
মেহেদীবাগ, চট্টগ্রাম

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১০ বিকাল ৩:০৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×