সাধারণত আমাদের দাঁতের ক্রাউন বা মুকুটের বাইরের আবরণ হচ্ছে এনামেল এবং দাঁতের রুট বা গোড়ার বাইরের আবরণ হচ্ছে সিমেন্টাম। এনামেল আমাদের দেহের সবচেয়ে কঠিনতম অংশ যা দাঁতের মুকুট অংশকে সুরক্ষা করে আর সিমেন্টাম রক্ষা করে দাঁতের গোড়ার অংশকে। এই এনামেল ও সিমেন্টামের নিচে দাঁতের আরেকটি অংশ থাকে যার নাম ডেনটিন। এটা এনামেলের মত এত কঠিন নয়। ডেনটিন অসংখ্য আণুবীক্ষণিক টিউবিউলস্ বহন করে যা ডেনটিনাল টিউবিউলস্ নামে পরিচিত। যখন এনামেল বা সিমেন্টাম কোন কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তখন এই ডেনটিনাল টিউবিউলসগুলোর মাধ্যমেই ঠাণ্ডা, গরম, এসিডিক ফুড, স্টিকি (আঠালো) খাবার খাওয়ার ফলে ভেতরের স্নায়ূ বা নার্ভ ও কোষ উত্তেজিত হয়। এজন্য কোন রোগী যখন ঠাণ্ডা বা গরম জাতীয় কোন খাবার খায়, তখন তার দাঁত শিরশির করে এবং সে খুব অস্বস্তি অনুভব করে। এমনকি শ্বাস প্রশ্বাস নেয়ার সময়েও শিরশির অনুভূতি হতে পারে।
দাঁত ঠিকমত পরিষ্কার না করলে ক্যারিজ বা দন্তক্ষয় হয়ে ডেনটিন বের হতে পারে। কোন আঘাতের কারণে দাঁত ফেটে গেলে বা খুব জোরে দাঁত ব্রাশ করার ফলেও ডেনটিন বের হতে পারে। এছাড়া কারো যদি মাড়ির সমস্যা বা ইনফেকশন থাকে সেক্ষেত্রেও মাড়ি নিচের দিকে নেমে যায় এবং সিমেন্টাম বের হয়ে আসে এবং সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ডেনটিন বের হয়ে আসে। এসব ছাড়াও মাড়ির সমস্যা অনেকদিন পর্যন্ত থেকে গেলে বা চিকিৎসা না করালে মাড়ি দাঁত থেকে আলগা হয়ে যায় এবং একটা পকেটের মত জায়গা তৈরি করে, একে পেরিওডন্টাল পকেট বলে। এই পকেটের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া জমে মাড়িকে আরো আলগা করে ফেলে এবং ভবিষ্যতে ইনফেকশনের সৃষ্টি করে। এভাবে রোগী ঠান্ডা, গরম বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার সময় দাঁতে শিরশির অনুভব করে।
ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিয়ে দাঁত শিরশির বা সেনসিটিভ টুথ-এর চিকিৎসা সঠিকভাবে করা যায়। যদি কারও বেশিরভাগ দাঁতে হালকা শিরশির অনুভূত হয় সেক্ষেত্রে দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে সেনসিটাইজেশন টুথপেস্ট ব্যবহার করা যায়। এতে যদি তেমন উপকার না পাওয়া যায় বা দাঁত শিরশির যদি কোন নির্দিষ্ট দাঁতের মাঝেই হয়, তাহলে এর সিভিয়ারিটি অনুসারে দাঁতের ফিলিং করা যায় বা রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট করে দাঁতে ক্যাপ বসানো যায়। যদি অতিরিক্ত জোরে দাঁত ব্রাশ করার ফলে দাঁতের বাইরের সারফেসে 'ভি' সেপের গর্ত সৃষ্টি হয়, তবে সেগুলো সহজেই টুথ কালার ফিলিং দিয়ে পূরণ করা যায়। যদি মাড়ি নিচের দিকে নেমে গিয়ে দাঁতের গোড়া ক্ষয় হয়ে যায় এবং সিমেন্টাম ক্ষয়ের ফলে ডেন্টিন বের হয় ও দাঁত শিরশির এর সমস্যা থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে গাম বা মাড়ি গ্রাফটিং করে পূর্বের খালি জায়গা ঢেকে দেয়া যায়।
কারো কারো ক্ষেত্রে বেশি coarse food খাওয়ার ফলে দাঁতের উপরের এনামেল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ডেনটিন বের হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে এ ধরনের খাবার খাওয়ার অভ্যাস কমাতে হবে। এছাড়া কারো ঘুমের সময় যদি দাঁত কিড়মিড় বা খিঁচানোর অভ্যাস বা নাইট গ্রাইন্ডিং হ্যাবিট থাকে, সেক্ষেত্রে এনামেল ক্ষয় হতে পারে এবং এক্ষেত্রে অবশ্যই একজন অর্থোডোন্টিস্ট-এর পরামর্শ অনুসারে হ্যাবিট ব্রেকিং অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবহার করতে হবে। যাদের খুব জোরে এবং খুব তাড়াতাড়ি ব্রাশ করার অভ্যাস আছে তাদেরকে অবশ্যই সময় নিয়ে সঠিক নিয়ম মেনে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। প্রতিদিন ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে। সুতরাং দাঁতে এ ধরনের কোন সমস্যা হলেই দেরি না করে একজন অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ অনুসারে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। দাঁতের সুস্থতা সম্পর্কে জানতে বছরে অন্তত একবার ডাক্তারের কাছে রুটিন চেকআপ করাতে হবে। সঠিকভাবে যত্ন নিলে দাঁতের মাড়ি থাকবে সুস্থ, সবল এবং দাঁত হবে শক্ত ও মজবুত।
সৌজন্যে: কেয়ার এন্ড কিউর ডেন্টাল ক্লিনিক,
মেহেদীবাগ, চট্টগ্রাম

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


