somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাড়ির সাধারণ রোগ: জিনজিভাইটিস।

০১ লা এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৫:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জিনজিভাইটিস হলো জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত মাড়ির এক ধরনের রোগ। জিনজিভাইটিস পেরিওডন্টাল ডিজিজের একটা অংশ যা দাঁতের সুস্থ পেরিওডনশিয়ামকে (দাঁতের চারপাশের টিস্যু, মাড়ি ও হাড়) আক্রমণ করে। জিনজিভাইটিস সাধারণত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়। আমাদের দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে খাদ্যকণা একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে জমে থেকে প্লাক সৃষ্টি করে। এই প্লাকে প্রচুর পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা উপযুক্ত পরিবেশে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থেকে মাড়ির রোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু শুধু প্লাক সৃষ্টিই জিনজিভাইটিসের একমাত্র কারণ নয়। জিনজিভাইটিসের আরও অনেক কারণ আছে। যখন কোন মানুষের এমন কোন শারীরিক দুর্বলতা হয় বা এমন কোন ঔষধ নিয়মিত সেবন করতে হয় যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে ফেলে তখন তার জিনজিভাইটিস হতে পারে। যেমন: লিউকেমিয়া। এটি মাড়ির রক্ত নালীকে এফেক্ট করে জিনজিভাইটিস করতে পারে। অন্যক্ষেত্রে, ডায়াবেটিস, এডিসন ডিজিজ, এইচ আই ভি (এইডস), দেহের কোন অঙ্গ প্রতিস্থাপন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া সহজেই মাড়িতে জিনজিভাইটিস সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন ধরে রক্তচাপের ঔষধ, জন্মবিরতিকরণ পিল, এ্যান্টি ক্যান্সার ড্রাগ, এ্যান্টি এপিলেপটিক ড্রাগ গ্রহণ করলেও জিনজিভাইটিস হতে পারে। তাছাড়া দেহে কিছু হরমোনের পরিবর্তনের সময় যেমন: প্রেগন্যান্সি, বয়:সন্ধিকাল এবং স্টেরয়েড থেরাপি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও জিনজিভাইটিস হতে পারে। কিছু কারণ জিনজিভাইটিস হবার সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দেয়। যেমন: ধূমপান, তামাক পাতা বা গুল গ্রহণ, মুখে সঠিক ভাবে ফিট না করা বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম দাঁত বা ডেনচার এবং ব্রিজ ও ভাঙা দাঁত।

জিনজিভাইটিস হলে সাধারণত মাড়ি লাল হয় এবং সামান্য ফুলে যায় ও ব্যথা হয়। মুখে ও শ্বাসপ্রশ্বাসে দুর্গন্ধ আসে। অনেক সময় মাড়ি নিচের দিকে নেমে যায় এবং পরবর্তী সময় এটা দাঁতের সাপোর্টিং পেরিওডনশিয়ামকে অ্যাফেক্ট করে স্থায়ী দাঁত দুর্বল করে ফেলে। এমনকি দাঁত উঠেও আসতে পারে।

যখন ব্যাকটেরিয়া মাড়িকে আক্রমণ করে তখন স্যালিভারী প্রোটিন বা সফট টিস্যু ব্যাকটেরিয়াকে ঘিরে ফেলে এবং দুর্বল করে ফেলে এবং রক্তের কিছু কোষ ছাড়ে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও উদ্দীপিত করে। এই রোগ প্রতিরোধকারী কোষ বা ম্যাক্রোফেইজ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার জন্য যে কেমিক্যাল ব্যবহার করে তা যে শুধু ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে তা নয়; এর সাথে সাথে দাঁতের চারপাশের কানেকটিভ টিস্যু বা মাড়ির কোষকেও ধ্বংস করে। যতক্ষণ পর্যন্ত রোগের কারণ দূর করা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত এটা চলতে থাকে।

জিনজিভাইটিস সাধারণত হজেই সনাক্ত করা যায়। মূলত: দন্তরোগ বিশেষজ্ঞরা রোগীর মুখ এবং শরীরের অন্যান্য তন্ত্র সম্বন্ধে তথ্য নিয়ে এবং মুখের কিছু পরীক্ষা করে জিনজিভাইটিস নির্ণয় করে থাকেন। জিনজিভাইটিসে আক্রান্ত রোগী সাধারণত মুখে দুর্গন্ধ, ব্রাশে রক্ত আসা, মাড়ির রং পরিবর্তন হওয়া, মাড়ি নিচের দিকে নেমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যার কথা বলে থাকে। সময়মতো পরীক্ষা বা সঠিক চিকিৎসা না করালে এই জিনজিভাইটিসই মারাত্মক আকার ধারণ করে মাড়ির স্থায়ী ক্ষতি সাধন করতে পারে যা প্রায়ই ANUG (Acute necrotizing ulcerative gingivitis) হিসেবে দেখা দেয়। ANUG যে শুধু মাড়িতেই হয় তা নয়। এটি দাঁতের পেরিওডনশিয়াম, হাড়, মুখ এবং ঘাড়কেও অন্তর্ভুক্ত করে। ANUG এ সাধারণত দাঁত দিয়ে রক্ত পড়া, ব্যথা, দাঁতের চারপাশের আবরণ নষ্ট হয়ে যাওয়া, দাঁত পড়ে যাওয়া এবং অনেক সময় কাঁধের লসিকা গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। রোগীর দেহে জ্বর এবং শারীরিক দুর্বলতা থাকতে পারে। সাধারণত যারা পুষ্টিহীনতায় ভোগে, এইচ আই ভি (এইডস) বা ক্যান্সারের রোগী অথবা যাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা এ রোগে বেশি ভোগে।

জিনজিভাইটিস প্রতিরোধ করতে হলে প্রতিদিন নিয়মিত দাঁত ব্রাশ এবং ফ্লসিং করতে হবে। নিয়মিত দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে চেকআপ করাতে হবে। চিকিৎসক উপযুক্ত চিকিৎসা দ্বারা দাঁতের কঠিন ময়লা (ক্যালকুলাস) ও প্লাক সম্পূর্ণ দূরীভূত করতে পারেন। ANUG এর ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসা দিতে হবে।

সর্বোপরি প্রতিদিন নিয়মিত ভালভাবে দাঁত ব্রাশ ও ফ্লসিং করে এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর ডাক্তারের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিয়ে আমরা সহজেই জিনজিভাইটিস প্রতিরোধ করতে পারি।

সৌজন্যে:
কেয়ার এন্ড কিউর ডেন্টাল ক্লিনিক, মেহেদীবাগ, চট্টগ্রাম।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×