somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম ও নারী

২৩ শে জুলাই, ২০১০ রাত ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নারীর অধিকার নিয়ে উদগ্র এক উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে আজ প্রাচ্য জগত। তোলপাড় চলছে পুরুষের সংগে তার নিখাত সমতার দাবীতে। নারীর অধিকারের অতি হুজুগে প্রবক্তাদের মধ্যে আছে এমন এক শ্রেণীর পুরুষ ও নারী যারা বিকারগ্রস্ত বাতুলের মত কথার থুবড়ি ফুটাচ্ছে ইসলামের নামে। জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে ইসলাম নারী এবং পুরুষের মধ্যে বজায় রেখেছে পরিপূর্ণ সমতা, এমন বল্গাহীন ফতোয়া দিচ্ছে এদের কেউ কেউ দুষ্টবুদ্ধি তাড়িত হয়ে। আর এক দল আছে ইসলাম সম্পর্কে যাদের বক্তব্য চরম মূর্খতার নামান্তর। কিংবা কোন কিছু না জেনেই তারা উদগার করছে বাষ্প। এদের জ্ঞানের বহর দেখে করুণার উদ্রেক হয়। এ বাচালের দল বলছে, ইসলাম নারীর শত্র“। বুদ্ধির ক্ষীণতার অজুহাত দেখিয়ে ইসলাম না কি খাটো করছে নারীর মর্যাদা। তাকে নামিয়ে এনেছে অধঃস্তন প্রাণীর সমপর্যায়ে। এদের মতে নারীকে অবনত করে তাকে কেবলমাত্র পুরুষের ইন্দ্রিয় তৃপ্তির উপকরণ আর মানব বংশবৃদ্ধির যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে এ অনুশাসনে। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী কি পরিমাণে পুরুষের আজ্ঞাবহ আর কিভাবে পুরুষ তার ওপর সর্বাত্মক আধিপত্য ভোগ করছে এটা প্রমাণ করার জন্য এ ধরণের খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে এরা।
এই উভয় শ্রেণীর লোকই ইসলাম সম্পর্কে সমান অজ্ঞ কিংবা বলা যায় ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যদের প্রতারিত করে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অশুভ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এরা সত্যকে এভাবে মিথ্যার সংগে তালগোল পাকিয়ে ঘোলা করতে নেমেছে পানি।
ইসলামে নারীর স্থান কতখানি তার উপর বিশদ আলোচনা শুরু করবার আগে, প্রথমে আমরা সংক্ষিপ্ত পরিসরে কিছু আলোকপাত করতে চাই ইউরোপের নারীমুক্তির আন্দোলন সম্পর্কে। কেননা আধুনিক প্রাচ্য জগতের সব বিভ্রান্তি আর অশুভ প্রবনতার মূল উৎস এ একটি জায়গায়।
গোটা ইউরোপ বলতে গেলে তাবৎ দুনিয়ায় চরম উপেক্ষিত ছিল নারী। তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করা হতো। অস্বীকার করা হতো তার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব। ‘পন্ডিত’ এবং ‘দার্শনিক’ সমাজে বহু অনুসন্ধিৎসা মুখরোচক আলোচনা আর বিতর্কের বিষয়বস্তু ছিল নারী। এ ধরনের প্রশ্ন নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিতন্ডা করতেন সে কালের ইউরোপের তথা কথিত জ্ঞানী ব্যক্তিরা। নারীর কি আদৌ কোন আত্মা আছে? যদি সত্যি থেকে থাকে তাহলে সে আত্মার স্বরূপটা কী? ওটা কী মানুষের, না জন্তুর? মানুষের আত্মা হয়ে থাকলে পুরুষের সংগে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিভাবে নির্ণীত হবে তার সামাজিক কিংবা মানসিক স্থান? পুরুষের সেবাদসি হিসেবে কি জন্ম হয়েছে তার? কিংবা দাসীর চাইতে কিঞ্চিত উপরে নারীর স্থান?
ইতিহাসের যুগ-পরিক্রমার সংক্ষিপ্ত একটি পরিসরে নারী যখন কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হলো সামাজিক পটভূমিতে তখনো কিন্তু অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন ঘটলো না। আমরা এখানে গ্রীক এবং রোমান সাম্রাজ্যের সেই বহু কথিত চরম উৎকর্যের যুগের কথা বলছি। এ যুগের নারীর সব মহিমা এবং আধিপত্যকে সাধারণভাবে নারী সমাজের উৎকর্য কিংবা প্রতিষ্ঠা হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না কোন মতেই। রাজধানী নগরীগুলোতে বাস করতেন এমন কিছুসংখ্যক অসামন্য রূপবতী এবং অভিজাত পরিবারের মহিলাই প্রতিষ্ঠার চূড়ায় উঠে ছিলেন গ্রীক আর রোমান যুগে। সামাজিক জৌলুস আর আনুষ্ঠানে শোভা বাড়াতেন এ রমণীকুল! ইন্দ্রিয়পরায়ণ সৌখিন ধনপতিদের এরা ছিলেন লীলা-সঙ্গিনী, তাদের চিত্ত বিনোদনের উপচার। নিজেদের ঐশ্বর্য এবং কৌলিন্যের প্রতাপ জাহির করবার জন্যই সামাজিক উৎসব আর ক্রিয়াকলাপে রূপবতী এসব মহিলার উপস্থিতিকে নন্দিত করতো ধনবান আত্মগর্বী পুরুষরা। কিন্তু এর থেকে এটা বুঝা যায় না, মানুষ হিসেবে নারী কোনো সম্মান এবং শ্রদ্ধার আসন পেয়েছে। আসলে আনন্দের খোরাক হিসেবেই লোক-সমাজে বিচরণের সুযোগ দেয়া হয়ে ছিলো তাকে।
ভূমিদাস প্রথা আর সামন্ত আধিপত্যের যুগেও নারীর এ সামাজিক অবস্থা ছিল অপরিবর্তিত। নিজের অজ্ঞতার কারণে সে কখনো বিলাসের স্রোতে, কখনো উদ্দাম বল্গাহীনতায় দিয়েছিল গা ভাসিয়ে। আবার কখনো পশুর মত তৃপ্ত থাকলো পান-ভোজনে আর সন্তান উৎপাদনে। তৃপ্ত থাকলো অন্যের ভোগের সামগ্রী হয়ে রাত-দিন গতর খেটে।
এরপর ইউরোপে এলো শিল্প-বিপ্লব। কিন্তু এ পরিবর্তন নারীর জন্য আনলো আরো বেশী দুর্গতি, গ্লানি এবং যন্ত্রণা। মানব জাতির ইতিহাসে আগাগোড়া যে লাঞ্ছনা সে ভোগ করে এসেছে, তার সব কিছুকে ছড়িয়ে যায় এ তিক্ততম নতুন অভিজ্ঞতা।

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×