কতো যে ঘটনা:- এমনি হাজার হাজার ঘটনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পারত্যাক্ত পলিথিনের মতো সমাজের আনাচে কানাচে সর্বত্র। পত্রিকা খুললেই স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন -যেনো একটা নিত্ত নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে । খুন হওয়ার কারণ গুলোও সব নির্ধারিত। স্বামীর যৌতুক দাবী। কিংবা পরকীয়ায় স্ত্রীর বাধা প্রদান। আর পত্রিকায় খবরটা আসে তো খুন হওয়ার পরে। খুন হওয়ার আগে ঐ স্বামী পদাধিকার প্রাপ্ত ব্যক্তিটি কত ধরনের নির্যাতন যে জানে আর কত ধরনের নির্যাতন যে করে তা কিন্তু পত্রিকায় আসে না। দৈহিক নির্যাতন, মানষিক নির্যাতন, যাহিরি নির্যাতন, বাতনী নির্যাতন। আহা! নির্যাতনের কতো যে রূপ?
বিভিন্ন জিলার বিভিন্ন বৈঠকাদিতে আমি যাই আর সেই সুবাদে অনেক মহিলার সাথে পরিচয়। এই পরিচিতদের মধ্যে ধনী, গরীব, শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধার্মিক, অধার্মিক, চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, ছাত্রী, গৃহিনী, বিবাহিতা, অবিবাহিতা, কালো, ফরসা, সুন্দরী, অসুন্দরী সব ধরনের মহিলাই আছেন। এদের সাথে একান্তভাবে কথা বলে দেখেছি ৮০ ভাগ মহিলা তথাকথিত স্বামীদের দ্বারা নির্যাতিত। তারা স্বামীর প্রতি সন্তুষ্ট নয়।
আর সংক্রামক ব্যাধির মতো দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই অবস্থা। পরিপ্রেক্ষিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ এর মতো বিপর্যয়কর পরিস্থিতি। আর এই পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে পুরুষ-ই দায়ী। কারণ আল কুরআন ও হাদীসের শিক্ষা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে বর্তমান পুরুষ সমাজ। যে সব পুরুষ কুরআন হাদীস পড়ে তারাও যেনো ইসলামের সঠিক শিক্ষা বুঝতে পারছে না।
কাসেম সাহেব অসম্ভব ধার্মিক, অল্প বয়সেই হজ্ব করে এসেছেন। কুরআন এবং হাদীসের শিক্ষা দিয়েই জীবন সাজাতে চান। পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবার সাথে ভালো সম্পর্ক। কিন্তু স্ত্রী সালমা বেগম তাকে ভয় পায় বাঘের মতো। একবার তার চার বছরের ছেলে সালমার অজান্তে বাবার সাথে বাজারে চলে যায়। সালমা এ ঘর ও ঘরে ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে গেট খুলে রাস্তায় আসে। রাস্তায় এসেই দেখে রাস্তার ওপারে ছেলের হাত ধরে বাবা দাড়িয়ে আছে। ছেলেকে দেখে সালমা স্বস্থি পেলেও স্বামীর চোখ দেখে ভীত হয়ে পড়ে কিন্তু রাগের কারণ বুঝতে পারে না। সালমা ছেলেকে কোলে তুলে নিতে কাসেমের কাছে এগিয়ে যেতেই সালমার মুখের উপর থাপাথপ কয়েকটা থাপ্পর আর পিঠের উপর কিল বসিয়ে দেয়। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য কাসেমের একবার ও মনে হয় না প্রকাশ্য রাস্তার উপরে কাজটা কতোখানি খারাপ হলো। লজ্জায় মৃতপ্রায় মেয়েটি কোনো মতে বাড়ির ভেতর চলে আসে। স্বামীর গালি আর বকাবকিতে স্ত্রী তার অপরাধ বুঝতে পারে। সালমার অপরাধ ছেলে কি করে তার অজান্তে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো?
অথচ এই তো কয়েকদিন আগের কথা। রাত প্রায় বারোটার দিকে কাসেম সালমাকে ডেকে “এসো তো একটা সুন্নত আদায় করি” বলে খোলা মাঠে নিয়ে আসে। তারপর দৌড় প্রতিযোগীতা করে।
কি বলব এই সব আহমক আর দুর্ভাগা কাসেমদের। স্ত্রীদের গায়ে হাত তুলতে (মারতে) রাসূল (সাঃ) কড়াভাবে নিষেধ করেছেন। আর মুখে মারাতো কবীরা গুনাহ। তিনি বলেছেন “ঐ পুরুষ উত্তম যে তার স্ত্রীর বিবেচনায় উত্তম।” কিন্তু এই সব কাসেম সাহেবরা কি স্ত্রীর বিবেচনায় উত্তম হতে পারবেন?
রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নত আদায় করতে যেয়ে স্ত্রীর সাথে দৌড়ের প্রতিযোগীতা করল, আর তাকে মারল কার সুন্নত অনুযায়ী?
আমাদের পুরুষদের অন্তর থেকে ভালোবাসা, হৃদ্যতা যেনো আবার নির্বাসন নিয়েছে। তাদের স্ত্রীদের প্রতি ভালোবাসা অনেক ক্ষেত্রে গৃহকর্তা ও ভৃত্যের মতো, অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসার মতো।
গৃহকর্তা ও ভৃত্য বা দাসীর মতোই শুধু না, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশী। যেমন তার সমুদয় সেবা যত্ন কাজকর্ম তো করবেই, গোসলের পর তার পরিত্যাক্ত লুঙ্গিটাও স্ত্রীই ধুয়ে দেবে। রান্নার পর মাছের বড় টুকরাটা কিংবা ভালো জিনিষটা আগেই তুলে রাখে গৃহকর্তার জন্য। তারপর সবাইকে পরিবেশন করে খাওয়ানোর পর তার ভাগে সব সময়ই কম পড়ে কখনো কখনো থাকেই না। এটাই আমাদের নিন্ম মধ্যবিত্ত ঘরের চিত্র। স্বামী একটু সতেতন হলে কিন্তু এমনটি হয় না। তারা সচেতন অন্য ক্ষেত্রে যেমন সেদিন এক ভদ্র মহিলা খুব কষ্টে একটা কথা বলে ফেললেন। “আপা আমার বিয়ে হয়েছে ২৫/২৬ বছর। অফিস থেকে আসতে একটু দেরী হয় তাই সব সময় তার জন্য আমি বেশী করেই মাছ, তারকারী গোস্ত বা কিছু রান্না করি তা আগেই তুলে রাখি। কিন্তু সে দিন খাওয়া দাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে একজন মেহমান আসে তার জন্য তুলে রাখা বাটি থেকে তরকারি দিয়ে মেহমান কে আপ্যায়ন করাতে অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু কম হয়ে যায়। ব্যাপারটা তাকে বললাম, তারপরও সে করল কি জানেন আপা? রাগ করে খাওয়া ছেড়ে উঠে গেল আর বলল, তার প্রতি আমার নাকি আর কোনো নজর-ই নেই। আমি নাকি তাকে আর গুরুত্বই দেই না। এমনি আরো কতো কি?
নিজের স্বার্থের ব্যাপারে কতো সচেতন এই ব্যক্তি। সমাজে যে মহিলা যতো ভালো দাসীবৃত্তি করতে পারবে সে তত ভাল স্ত্রী। বাপের বাড়ি থেকে যখন তখন এটা সেটা এনে দিতে পারবে সে ভাল স্ত্রী।
মাঝে মাঝে শ্বশুর বাড়ি থেকে দাওয়াত আসবে, বছরে দুই ঈদে পোষাক আর সালামি আসবে তাহলে স্ত্রী খুব ভাল। আর দিতে না পারলেই নির্যাতন, তা মানষিক হতে পারে দৈহিকও হতে পারে।
এই অত্যাচার, নির্যাতনের সাথে কোনো নারীদের যে হাত নেই তা আমি বলছি না। আছে কোনো কোনো নারী ও এর সাথে সম্পৃক্ত আছে। যেমন ছিল আবু লাহাবের সাথে উম্মে জামিল, আবু সুফিয়ানের সাথে হেন্দা। তবে ইসলামের আগমনে এই সব আবু সুফিয়ান আর হেন্দারাও বদলে গিয়েছিল। অন্তরে অনুতাপ নিয়ে বলেছিল আমরা ভুল করেছি।
* চারিদিকে অশান্তির দামানলঃ- পারিবারিক অশান্তি আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে যে যাই বলুক না কেন মূল কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে আল্লাহর দেওয়া বিধান থেকে দুরে সরে যাওয়াই এর একমাত্র কারণ। আর এর জন্য অবশ্যই দায়ী পরিবারের কর্তা পুরুষটি। অনেকেই বলেন কেন? কর্তা পুরুষটি এর জন্য দায়ী হবেন কেন? মহিলাটি দায়ী হতে পারে না? মহিলাটি দায়ী হবেন না কারণ মহিলাটির কর্তা ও ঐ পুরুষটি। কেননা তিনি যে স্বামী (!) সেবা পাওয়ার বেলায় তিনি কর্তা, বকাঝকা করার বেলায় (সত্যিকারের শাসন না) তিনি কর্তা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় তিনি কর্তা, মারধোর করার বেলায় তিনি কর্তা। শুধু ইসলামী অনুশাসন অনুযায়ী পরিবার গঠনের সময় মহিলার উপর দায়িত্ব চাপালেই তো হবে না।
সত্যি কথা বলতে কি সমাজের শিক্ষিত অশিক্ষিত, ধনী গরিব, সচেতন অসচেতন, চাকুরিজীবি বেকার প্রত্যেক মহিলাই ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক পুরুষের আনুগত্য করে। অতএব ঘরের পুরুষেরা নিজেরা যদি ইসলামী অনুশাসন মেনে চলে, সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে এবং স্ত্রী ও সন্তানদের প্রথম থেকেই সেইভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে তাহলে সংসারটা শান্তির ঠিকানা হবে ইনশাল্লাহ। তা না করে মহিলাদের উপর দায় আর দোষ চাপালে কাজ হবে না। সেই দিন আল্লাহর দরবারে হাজির হলেই আসল তথ্যটি জানা যাবে।
শুধু চাইলেই হবেনাÑ দীর্ঘদিন থেকে কুদ্দুস সাহেব চাকুরী করেন কুয়েত। চার সন্তানের জনক। ছোট ছেলেটা বোধ হয় বাপের চেহারাই ভুলে গেছে। কুয়েতে যেয়ে কুদ্দুস সাহেবের জীবনের আমুল পরিবর্তন এসেছে। পিছনের সকল ভুল ত্র“টি থেকে খাসভাবে তওবা করেছেন। বাকি জীবনটা আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তা’আলা যেভাবে সন্তুষ্ট হন সেই ভাবে অতিবাহিত করতে চান। শুধু নিজের জীবন না স্ত্রী পুত্র কন্যারাও যাতে ইসলামী বিধি-বিধান মেনে চলে এটাই তার একমাত্র চাওয়া। এমনকি সমাজ-দেশ নিয়েও তিনি ভাবেন। কিন্তু তার স্ত্রী পুত্র কন্যারা কেউ তার ভাবনার শরীক হতে চায় না। বলতে গেলে তার প্রত্যেকটা কথার ই বিরোধীতা করে তারা। তাদের চিন্তাধার আর কুদ্দুস সাহেবের চিন্তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সমাজের আর দশ জন অনৈসলামিক-মুসলমানের মতোই তাদের চিন্তা চেতনা ও কর্মকান্ড। কুদ্দুস সাহেব চান তার চিন্তা ভাবনা এবং জীবন ধারা মতো তার পরিবার পরিজনের জীবন ধারাটাও যদি হতো........। কিন্তু তা কি করে সম্ভব? কাছে থেকে প্রশিক্ষণ দিয়েই সন্তানদের ঠিক রাখা যায় না আর সেই দুরদেশে থেকে টাকা পাঠিয়ে আর ফোনে কথা বলে পরিবার পরিজন কে আল্লাহর বিধি মোতাবেক পরিচালনা করা কি করে সম্ভব? শুধু চাইলেই হবে না। বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। কুদ্দুস সাহেব সেই বাস্তব পদক্ষেপ নিতে পারেননি। তাছাড়া কুদ্দুস সাহেবের স্ত্রী ও ইসলাম সম্পর্কে অনভিজ্ঞই বলা যায়। আমাদের সমাজের আর দশটি অল্প শিক্ষিতা মহিলারা যেমন।
আর একটি পরিবারের কথা বলি যে পরিবারের গৃহকর্তী মহিলাটি ইসলামী বিধি বিধান সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন। তিনি নিজে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান সঠিক ভাবে মেনে চলার চেষ্টা করেন এবং স্বামী পুত্ররা মেনে চলুক তা প্রাণপনে চান। কিন্তু তার স্বামী পুত্ররা তার এই চাওয়াটাকে বাড়াবাড়ি মনে করে।
যেমন তিনি চান তার ছেলেরা এবং ছেলেদের বাপ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদেই পড়–ক। তারা সবাই ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয় হোক। তারা প্রতিদিন আল কুরআন রাসূলের হাদীস থেকে কিছু পাঠ করুক। কিন্তু কই তাতো ঠিক মতো হয় না। এ ব্যাপারে গৃহকর্তাকে যদি একটু চাপ দেওয়া হয় তিনি বলেন, “শোন, তুমি খামাখা চিল্লাপাল্লা করো না তো! কে জান্নাতে যাবে আর কে জাহান্নামে যাবে আল্লাহপাক তা নির্ধারণ করে রেখেছেন। আমি যদি জান্নাতী হই তাহলে আমাকে দিয়ে আল্লাহপাক অবশ্যই ভালো কাজ করাবেন আর আমি যদি জাহান্নামী হই তাহলে তুমি যতই চেষ্ট করো না কেন আমাকে দিয়ে ভালো কাজ করাতে পারবে না।”
আবার ছেলেদের বুঝাতে গেলে বলে “শোনেন আম্মা- আব্বু নিশ্চয়ই কম বোঝে না।”
অতএব সব ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কি করার আছে? আমাকে অনেকেই বলেন আপা আদর্শ পরিবার গঠনে নারীদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে কিছু লেখেন। আসলে আমার মনে হয় কি জানেন? আদর্শ পরিবার গঠনে নারীরা কিছুই করতে পারে না যদি আদর্শ পুরুষ তার সহকর্মী সহযাত্রী, সহধর্মী না হয়। আমাদের সমাজে একটা কবিতার লাইন খুব প্রচলিত আছে। কার তৈরী করা পঙতি জানিনা
“সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে”
এর পরবর্তী পঙতিটি অনেকেই জানে না। পরবর্তী পঙতি হলো
“ সুযোগ্য পতি যদি থাকে তার সনে” সুযোগ্য পতি না থাকলে রমনীর পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয় সংসার টা আদর্শ রূপে গড়ে তোলার। তবে পরিতাপের বিষয়-আমাদের সমাজে সুযোগ্য পতির বড়ই অভাব। শুধু পতি বললে ভুল হবে, সুযোগ্য পিতারও ভীষণ অভাব আমাদের সমাজে। সুযোগ্য একদম নেই তা বলব না, আছে তবে বিরল। অধিকাংশ ঘরেই পিতা পুত্রের সম্পর্ক ভালো রাখতে গৃহিনীকে বিরাট ভুমিকা রাখতে হয়। ছেলের কথা, সমস্যা, চাহিদা, এমনকি ভাষাও মনে হয় বাবা বোঝে না কিংবা বুঝতে চায় না। আর ছেলেও বাবাকে সব বোঝাতে চায় না। যতদূর সম্ভব দুরে থাকার চেষ্টা করে। তখন সম্পর্কের সেতু বন্ধনের কাজটি করতে হয় তাকে। মজার ব্যাপার হলো এই বিষয়টা কেউ বোঝে না বাবা ও না ছেলেও না।
সমাজে কিছু প্রবাদ প্রচলিত আছে। যেমন
‘মা নেই সংসারে যার
সংসার অরণ্য তার।”আবার মা মরলে বাপ হয় তাঐ .

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



