বাংলাদেশের আন্ডারগ্রাউন্ড নিয়ে যখন আমার আগের লিখাটা লিখছিলাম তখন বেশ খারাপ লাগছিল,কারণ যাদের (ভাইব) নিয়ে লিখছিলাম তারা এক হিসেবে ‘গত’,তাই ভাবলাম এরপর অবশ্যই কোন ‘সম্ভাবনা’কে নিয়ে লিখব।আর তাই অনেক চিন্তা-ভাবনার পর মনে হল “ক্রিমেটিক এক্স” বোধ হয় খারাপ হবে না।
ক্রিমেটিক এক্স ব্যান্ড সম্পর্কে জ্ঞান আমার একেবারেই সীমিত এবং ওদের গানও খুব বেশী শোনা হয় নি কিন্তু লিখার সুযোগে নতুন একটা ব্যান্ড সম্পর্কে জানতে পারব ভেবে আগ্রহটা বেড়ে গেলো।
“ক্রিমেটিক এক্স” নামটা প্রথম শুনি বন্ধু কুশলের মুখে।আমরা একটা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গানের ভিডিও দেখছিলাম ওর বাসায় বসে।ধরনটাএকটু ভিন্ন;কেমন একটা ডক্যুমেন্টারি ফিল্ম ভাব! যাই হোক,নেটে ঘাটা-ঘাটি করে দেখলাম ক্রিমেটিক এক্স নিয়ে অনেক তথ্য যেমন আছে তেমনি ওদের নিয়ে পত্র-পত্রিকাতে লিখাও ভালই হয়েছে! আর ফেইসবুকে ওদের ব্যান্ডমেম্বার,ফ্যানদের বিচরণও(!) উল্লেখযোগ্য।
২০০৬ সাল।বুয়েটে নতুন একটা ব্যাচ এসেছে- হৃদ্দ। প্রজ্ঞা,সানি,মিশু,সঞ্জয় সহ আরও কয়েক বন্ধু মিলে একটা রক ব্যান্ড ফর্ম করে-‘ক্রিমেটিক’।
কিন্তু এর কিছুদিন পর ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে দুই সদস্য চলে যান।নতুনের আগমন আবার সেই শূন্যতা পূরণ করে।এরপর আরও কিছু পরিবর্তন আসে ব্যান্ডে,যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ব্যান্ডের নতুন নাম “ক্রিমেটিক এক্স”!
বুয়েট কালার ফেস্টিভালের সময় তোলা ক্রিমেটিক এক্সএর ছবি ।
২০০৭এর জানুয়ারিতে নিজেদের আঙিনা বুয়েটেই প্রথম স্টেইজ পারফর্ম করার সুযোগ পায় “ক্রিমেটিক এক্স”,উপলক্ষটা ছিল ২০০৫ ব্যাচের লেভেল সমাপনী। এরপর নিয়মিত বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন কনসার্টে পারফর্ম করে আসছে তারা।২০০৯ সালে ‘রক ২০২’ এ্যালবামে প্রথম গান ‘দ্বৈততা’ রিলিস হয় । সুন্দর মেলডির সাথে রকের ফিউসন।কিন্তু তাদের সবচেয়ে বড় চমক হয়ে আসল এ্যালবাম ‘রণাঙ্গনের ডাকটিকেট’।২০১০ এর মাঝামাঝি ‘জি সিরিজ’ লেবেল থেকে রিলিস হয় এ্যালবামটি।বেশ ভালো প্রচারণা করা হয়। এফ এম রেডিওতেও এ্যাক্সক্লুসিভ বলে রিলিসের কিছু দিন আগে থেকে গানগুলো বাজানো হয়(এতে ব্যবসায়িক কোন লাভ হয়েছে কিনা ‘জি সিরিজ’ই জানে)।
১ ছায়ামেঘের অন্তরালে
২ নিকষ আঁধার
৩ বৃষ্টি
৪ অর্থহীন স্তব্ধতা
৫ ফিরি না
৬ অস্তিত্বের অহংকার
৭ ক্রমঃশ আমাতেই
৮ It’s my life(Bon Jovi tribute)
৯ ঘৃণার অপকথা
১০ রণাঙ্গনের ডাকটিকেট
১১ দ্বৈততা (bonus)
১০টা নতুন আর একটা বোনাস ট্র্যাক নিয়ে মোট ১১টা গানের একটা অ্যাল্বাম।অসাধারণ সাউন্ডের কথা না বললেই নয়। প্রথমা প্রকাশনী থেকে ‘একাত্তরের চিঠি’ নামক যে চিঠির সংকলন কয়েক বছর আগে প্রকাশিত হয়েছিল তারই একটি চিঠি ছিল দুলাল নামের এক মুক্তিযোদ্ধার, যুদ্ধ চলাকালে মা’কে লেখা এই চিঠি পড়েই ক্রিমেটিক এক্সএর ইচ্ছে হয় ’৭১ এর বীরদের নিয়ে কিছু করার।আর করে সফলও হয়েছে তারা। চিঠিটি গানের মাঝেই পড়ে শোনানো হয়।
আমার অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে ‘ক্রমঃশ আমাতেই’ গানটা সবচেয়ে ভাল লেগেছে। সচরাচর এ ধরনের সফট গান শোনা হয় না, ভালও লাগে না। কিন্তু ক্রিমেটিক এক্স এর সুন্দর কম্পোসিশনের প্রশংসা না করে উপায় নেই। নারীকণ্ঠের কবিতা পাঠটা বেশ মানিয়ে গেছে কিভাবে যেন! এর একটা অফিসিয়াল ভিডিও অবশ্য দেখলাম।আমার কাছে ভালো না লাগলেও আপ্নারা দেখতে পারেন।
http://www.youtube.com/watch?v=ELFvdQ9WW7M
নিকষ আঁধার,অর্থহীন স্তব্ধতা,ঘৃণার অপকথা – এই ৩টি গানে থ্র্যাশ ভয়েসের সাথে হেভি মিউসিক ভালো লেগেছে আমার।ইটস মাই লাইফের সফট ভারসনটা খারাপ ছিল না। সব মিলয়ে প্রথম এ্যালবাম হিসেবে যথেষ্ট সফলই বলতে হয় ক্রিমেটিক এক্স’কে।
কিন্তু একটা ব্যাপার আমার ভালো লাগছে না, তা হল কোন নির্দষ্ট জনরা ফলো করছে না ক্রিমেটিক এক্স।তাদের নিজেদের ভাষায় বলা হয়- যখন যেটা শুনতে ভালো লাগে তাই করার চেষ্টা করে,নির্দিষ্ট কিছু না।
এধরনের কথা আমার মত একজন স্রোতা বললে হয়তো কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু আজ যখন রক মিউযিক বহু জনরায় ভাগ হয়ে গেছে তখন এধরনের যখন-যা-খুশি টাইপের গান করতে গেলে ঘন ঘন জনরা পরিবর্তন করতে হবে। এতে একদিকে ব্যান্ডটি কোন জনরাতেই এক্সপার্ট হবে না আবার অনেক সময় স্রোতার বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আশা করব ক্রিমেটিক এক্স ব্যাপারটা নিয়ে এবার ভাববে।
এবার ব্যান্ড মেম্বারদের সাথে পরিচিত হওয়া যাক।
বাম দিক থেকে
প্রজ্ঞাপ্রসূন ভট্টাচার্য(প্রজ্ঞা) আছেন ভোকালিস্ট ও গিটারিস্ট হিসেবে।
আরিফুর রহমান (মিশু) ক্রিমেটিক এক্সের বেইযে পরিবর্তনের সর্বশেষ সংযোজন বোধ হয় মিশু। যাত্রার শুরু থেকেই আছেন ক্রিমেটিক এক্সএর সাথে ভোকালিস্ট হিসেবে কিন্তু মুশফিক জেনি’র বিদায়ের পর বেইযিস্ট হিসেবে কাজে লেগে যান।
কাইফ আহমেদ (আশিক) ভোকালিস্ট এবং কিবোর্ডিস্ট হিসেবে ২০০৬ থেকে আছেন ক্রিমেটিক এক্সএর সাথে।
বাঁহাতি গিটারিস্ট রিফাত।
সঞ্জয় হালদার আছেন ড্রামার হিসেবে একেবারে শুরু থেকেই।
বুয়েট ইনডোর বাস্কেটবল কোর্টে চলছে মিউযিক ভিডিও’র কাজ।
বাংলাদেশের বেশ কিছু নামি-দামী ব্যান্ড,আর্টিস্ট এক বছরের জন্য এবিসি রেডিও’র সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে এই শর্তে যে- আগামি এক বছর তাদের সব গান আর খবরাখবর তারা স্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেবে আর ঐ আর্টিস্টদের কোন গান এবিসি রেডিও ব্যতিত অন্য কোন এফ,এম স্টেশন বাজানোর অনুমতি পাবে না!শুধু হৃদয় খানের মত অপদার্থ কিন্তু জনপ্রিয় আর্টিস্টরা না বরং আর্টসেল,ওয়ারফেইয,অর্ণবসহ দেশের অনেক সেরা আর্টিস্টও এমন লোভনীয় অফার লুফে নিতে দেরি করেননি। আসলে টাকার ব্যাপারে শিক্ষিত-অশিক্ষিত,ধনী-গরিব সবার ধর্ম একটাই। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এটা কতটা ভালো হল এবিসি’র জন্য বা আর্টিস্টের জন্য কিংবা স্রোতাদের জন্য।যাই হোক, কারও উপকার হোক বা নাই হোক, এবিসি যে বাকি এফ,এম স্টেশানগুলকে একটা জম্পেশ বাঁশ দিয়ে তাদের সক্ষমতা’র পরিচয় দিয়েছে –সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ রইল না !
এখন প্রশ্ন হতে পারে যে ক্রিমেটিক এক্সএর সাথে এর কি সম্পর্ক?ক্রিমেটিক এক্সও কি তাদের গান বেচে পেট চালানোর ধান্দা করছে নাকি?না বুয়েটিয়ানরা এই ভুল করে নি।কিন্তু সমস্যা আরও জটিল।তারা এবিসি রেডিও’র সাথে "Radio Alliance" - Abc Radio Band/Artist Unity
চুক্তি করেছে।এটা আসলে কোন ক্লাবে মেম্বার হওয়ার মত একটা ব্যাপার,কোন ব্যবসায়িক চুক্তি নয়।মূলত আর্টিস্টদের প্রোমোট করার জন্য তাদের গান বা এ্যালবাম রিলিসের শুরু-শেষ মিলিয়ে মোট এক মাস এক্সক্লুসিভভাবে বাজাবে এবিসি।এখন এই দুই ধরনের সম্পর্কে যে বিশাল তফাৎ আছে-তা আমার মত অনেক ভক্তই না বুঝে ক্রিমেটিক এক্সএর উপর রাগ করে বসে।
ওসব থাক,আসল কথায় ফিরে আসি।একটা তথ্য ক্রিমেটিক এক্সএর ব্যাপারে সব জায়গাতেই বেশ ফলাও করে লিখা, তা হল তাদের মো’স ব্যান্ড চ্যাম্পিওনশিপ পাওয়ার ঘটনা।আমি ঠিক জানি না এটা কি বা কেন দেয়। মনটাই খারাপ হয়ে গেল,যখন দেখলাম এক জায়গায় লিখা “it’s a highly prestigious competition in Dhaka “ ! ধুর! ঢাকায় থেকে এমন একটা highly prestigious জিনিস সম্পর্কেও খবর রাখি না, কি যে করি !
যাই হোক এবার বোধ হয় আমার ফালতু প্যাঁচাল বন্ধ করা উচিত। তবে যাওয়ার আগে বলে রাখি আমার মত আপনাদেরও যদি ক্রিমেটিক এক্সএর পরবর্তি কোন লাইভ শো দেখার ইচ্ছে থাকে তাহলে ফেইসবুকে একটু খোঁজ নিলেই পাবেন।আর ক্রিমেটিক এক্সএর অন্যান্য বেশ কিছু গান আছে মিক্সড এ্যালবাম রিপাব্লিক,চল বাংলাদেশ,গর্জে ওঠ বাংলাদেশ এবং রক ৬০৬ এ।ইশা খান দুরে’র বেশ আলোচিত মিক্সড এ্যালবাম হাতিয়ার’য়েও থাকছে ক্রিমেটিক এক্সএর আরেকটি সিঙ্গেল ট্র্যাক,যা খুব শীঘ্রই রিলিস পেতে যাচ্ছে।
ক্রিমেটিক এক্স তাদের পরবর্তি এ্যালবামের কাজ করছে।কাজ প্রায় অর্ধেক শেষ।আশা করি শীঘ্রই আমরা তা পাবো যাতে আরও ভালো ভালো গান থাকবে।আজ বিদায়।
(একটা কথা না বললেই না,আমার লিখাটিতে অনেক ভুল ছিল।যা পড়ে মিশু ভাই আমাকে সমস্যাগুলো ধরিয়ে দেন।আমি সংশোধন করার চেষ্টা করেছি।এরপরও ভুল থাকলে গালি দেবেন না প্লিজ– আশা না রিকোয়েস্ট করছি !)