ভালো ছাত্র বলতে যা বোঝায় তা হয়তো নই, তবে মোটামুটি মানের ছাত্র যে আমি সেটা অবশ্য বলা যায়। এসএসসি এবং এইচ এস সি তে ফার্স্ট ক্লাস ছিল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমার্সে ব্যাচেলর ডিগ্রী (৩ বছরের) ছিল সেকেন্ড ক্লাস। ডিগ্রী পরীক্ষা দিয়ে চলে গিয়েছিলাম ইংল্যান্ডে, সেখানে কিংস্টন ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করলাম ফার্স্ট ক্লাস (এওয়ার্ড সহ)।
কাজের অভিজ্ঞতা বলতে যা আছে: বৃটিশ গ্যাসে কাজ করেছিলাম ১ বছর সেলস এবং মার্কেটিং এ। প্রথম বছরে কৃতিত্ব বলতে ১৪ তম সারা ইউকে তে ব্যক্তিগত ক্যাটাগরীতে। মাত্র ১ বছর কাজ করার পর আরেকটি কোম্পানি এনপাওয়ার (যারা ইংল্যান্ডে ক্রিকেট স্পন্সর করে) আমাদেরকে একটি বিশেষ ইনসেনটিভ দিয়ে নিয়ে যায় তাদের টিমে। সেখানে কাজ করলাম প্রায় ২.৫ বছর। যে দুটি কোম্পানীতে কাজ করেছি সেদুটোই লন্ডন ষ্টক এক্সচেঞ্জে সেরা ১০০ এর মধ্যে এবং একটি পৃথিবীর সেরা ৩০ টির মধ্যে একটি।
মাষ্টার্স শেষ করে একটি চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি হিউম্যান রিসোর্সে ৬ মাসের মত, অতপর দেশের টানে সিদ্ধা্ন্ত নেই বাংলাদেশে ফেরার। যদিও আসার আগে লন্ডন অলিম্পিকে কাজ করেছি বেশ কিছুদিন, ইউনিভার্সিটিতে ষ্টুডেন্ট রিপ্রেজেনটেটিভ ও ছিলাম ১ বছর।
গত বছরের শেষ দিকে দেশে ফিরে বেশ কয়েকটি দেশী বিদেশী ব্যাংকে পরীক্ষা দেই এবং টিকেও যাই। যাই হোক ইন্টার ভিউতে গিয়ে আমার অদ্ভুদ সব অভিজ্ঞতা হলো। দেশী ব্যাংক গুলোর প্রশ্নের মধ্যে আবোল তাবোল প্রশ্নই বেশী। যেসব প্রশ্ন করলো তার একটাও চাকরী সংক্রান্ত তো নয়ই বরং উল্টোপাল্টা, এবং ভূল ইংরেজীতে। ওই প্রশ্নের উত্তর জানলে আমার কাজের ক্ষেত্রে কোন উপকারেও আসবে না । কেউ জিজ্ঞেস করেনি কি কি স্কীল তুমি আমাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসতে পারবে? কোন কোন স্কীল তোমার আছে ? কিংবা এমন একটা কাজের উদাহরন দাও যেখানে তুমি টিমের অংশ হিসেবে কাজ করেছ এবং তোমার কাজ কি ছিল? লীডারশীপ করেছ এমন একটি উদাহরন দাও? কিংবা সিনারিও কোয়েশ্চেন? শুধু কেবল সাধারন জ্ঞানের প্রশ্ন.......মুখস্ত বিদ্যা জিন্দাবাদ।
অতি সম্প্রতি ঢাকা ব্যাংকের ইন্টারভিউ তে জানতে চাইল আমি কেন ইংল্যান্ড থেকে ফিরলাম, কেন নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করিনি, আমার বাবা কি করে, ভাই কি করে, কোন জেলা থেকে এসেছি, কোন স্কুলে পরেছি? চাকুরিটা খুবই দরকার ছিল যে কারনে বলতে পারিনি আমি কাজ করব এখানে আমার বাবা নয়। কেবল মাত্র ষ্টানচাটার্ড এর ইন্টারভিউ ছাড়া বাকি সবগুলোই ছিল আবোল তাবোল। যে প্রশ্নগুলো ঢাকা ব্যাংকে করেছে সেগুলি ইংল্যান্ডে করলে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্বে মামলা হয়ে যেত ডিসক্রিমিনেশনের কারনে। কারন ওখানে জব রিলেটেড প্রশ্ন ছাড়া অন্য কিছু জিজ্ঞাসা করা নিষেধ।
আর পরীক্ষার কথা কি বলবো বিদেশে যেখানেই পরীক্ষা দিয়েছি ৯০ % টিকেছি........কিন্তু দেশের বেলায় সেটা হয়নি কারন আমাকে ৫-৮ম শ্রেনীর গনিত করতে হয়েছে। এমন সব ইংরেজী এসেছে যেটা আমার কাজের ক্ষেত্রে কোনদিনই লাগবে না। কোথাও চাকুরী করতে হলে যা লাগে তা হলো শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা এবং ইংরেজী দক্ষতা ইত্যাদি। অনেক অভিজ্ঞতা না থাকলেও মোটামুটি যে আছে তা বলা যায়। আরও করুন বিষয় হলো অনেক অনেক সিভি পাঠিয়েছি কোন কাজ হয়নি, ইন্টার ভিউতে ডাক পাইনি। সিটি এন এ তে ডাক পেলেও দেশী সিটি ব্যাংকে এ পরিক্ষার জন্য কোয়ালিফাই হইনি। আরও অনেক দু:খ জনক অভিজ্ঞতা রয়েছে। মাঝে মাঝে নিজেকে জিজ্ঞাসা করি আর কি কি যোগ্যতা হলে দেশে চাকরী পাব?
আরেকটি অদ্ভুদ জিনিস লক্ষ্য করলাম সমস্ত প্রতিষ্ঠানেই ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের বেশী নেয়া হচ্ছে। ইংল্যান্ডের বি, সি এস দিয়েছিলাম সেখানে প্রতি ১০০ জন চাকুরের মধ্যে ক্যামব্রীজ+ অক্সফোর্ড এর ছাত্র ছাত্রী দের নেয়ার হার ১০ ভাগ এর নীচে । অনান্য প্রতিষ্ঠানে সেটা ৫ ভাগ এর নীচে। তবে তারা কি কম যোগ্যতা সম্পন্ন? কখনোই নয়, যেমনটি নয় অন্য কোথাও থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা। সেখানে আপনি কি পারেন তার ভিত্তিতে চাকুরী হয়? কোথায় পরাশুনা করেছেন তার ভিত্তিতে নয়।
সেখানে এমন ভাবে লোক নিয়োগ করা হয় যাতে সবাই সবার কাছ থেকে শিখতে পারে। ডাইভারসিটি মেইনটেইন করা হয় যাতে একই রকম ধারনার লোকজন এক প্রতিষ্ঠানে বেশী না থাকে এবং ক্রিয়েটিভিটি কমে না যায়। আমি যদি আমার প্রতিষ্ঠানে একই স্কুলের সবাইকে নেই তবে মোস্ট লাইকলি তাদের সমস্যা সমাধানের স্কীল একই রকম হবে........একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারনে। আর যদি সবরকম মিলিয়ে নেই তাহলে একটি ব্যালেন্সড টিম হয় যা কিনা প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্পদ। হয়তো তাদের প্রবলেম সভিং স্কীল অন্যরকম যা থেকে আরেকজন শিখতে পারবে। কিন্তু আমাদের দেশে মনে হয় কপি পেস্ট জেনারেশন চলছে.....সবাই তার নিজের মত একজন চায়। একজন শিক্ষার্থী যে একটি বিশেষ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছে তার সাথে আরেক জনের (আপেক্ষাকৃত নীচু মানের ইউনি) একই রেজাল্ট থাকলেও ইন্টারভিউ এর সময় একজনকে বিশেষ দৃষ্টিতে দেখা একটি মন্দ প্রাকটিস। আমি কি পারি এটা না দেখে কোথা থেকে এসেছি সেটা দেখা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি অযোগ্যতার লক্ষন।
যাই হোক অনেক বেহুদা প্যাচাল পারলাম। আগামী ৩ মাসের মধ্যে চাকুরী না পেলে স্বদেশকে মনে হয় গুডবাই জানাতে হবে। কারন ১ বছর ধরে চাকুরী খুজছি। সবাইকে শুভরাত্রি।