somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিওঃ দ্যা জিরো থিওরাম (২০১৩)

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আপনে কেডা? কইথাইকা আইছেন? দুনিয়াতে কি করতাছেন? কেন করতাছেন? শেষ পর্যন্ত আপনে কই যাইবেন অথবা আপনার আদৌ কোন আল্টিমেট ডেসটিনেশন আছে কি? জীবনের কি কোন অর্থ আছে? নাকি শুধু আইলেন, খাইলেন, হাগলেন, বিয়া করলেন, সেক্স করলেন, বাচ্চা পয়দা কইরা এক সময় পটল তুললেন এইডাই জীবন? এইসব প্রশ্ন নিয়া বহু আগেই বুইড়া বুইড়া দার্শনিকরা অনেক কছলাইছে, মাথা ঘামাইছে, উত্তর খুঁজছে। কিন্তু সন্তোষজনক উত্তর কেউ দিতে পারেনাই। হয়তো পারছে কিন্তু সবাই সন্তুষ্ট হয় নাই। তবে এইসব প্রশ্নের খুব সহজ কিছু উত্তর রিলিজিয়ান দিয়া দিছে, যদিও এইসব উত্তরেও সবাই কনবিন্সড না। তয় এই রিভিও অথবা মুভিটা কি রিলিজিয়ানের বিরুদ্ধে গেল কি গেল না সেই তর্ক মুভি দেইখা নিজের লগে নিজে করা উত্তম। যেহেতু এইসব প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর এখনো পাওয়া যায় নাই, তাই মানুষ এইগুলারে নিয়া এখনো কছলায় এবং ভবিষ্যতেও কছলাইব।

মুভির নাম জিরো থিওরাম হওয়ার কারন মুভিটা থিওরি অব গ্রাভিটেশনাল সিঙ্গুলারিটি নিয়া ডিল করছে। উপরোক্ত প্রশ্নগুলাও এই মুভিতে উইঠা আসছে। মুভিতে দেখায় একজন টাকলা মাথার এবনরমাল (?)যুবক একলাই একটা বিশাল বিল্ডিঙে থাকে। দালানে অনেক গুলা ফ্লোর থাকলেও অন্য কেউ এই বিল্ডিঙে থাকেনা। এবং বাইরে থেকে দেখলে বুঝা যায় না ভিত্রে কিরকম হইতে পারে। মুভির কেন্দ্রীয় এই টাকলা পোলাডা অত্যন্ত লাজুক এবং অদ্ভুত। তার ঘরে একটা বিশাল কম্পিউটার আছে, যেইটায় প্রতিদিন সে একটা গেইমের মত কি একটা খেইলা শেষ পর্যন্ত কখনই যাইতে পারেনা। সবচেয়ে অদ্ভুত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হইল পোলাডা চরম অস্তিত্ব সংকটে ভোগে এবং একটা ফোন কলের আশায় প্রতিদিন বইসা থাকে। সে বিশ্বাস করে এই ফোন কলের মাধ্যমে জানতে পারবে জীবনের আসলে কোন অর্থ আছে কিনা। কিন্তু দিন যায়, রাইত আসে, এই ফোন কল আর আসেনা। আদৌ আসবে কিনা সেইটা মুভি দেইখা জাইনা লওয়ার ভার আপনাগো উপর বর্তাইল। পোলাডার মাঝে মাঝে মেজাজ চইরা গেলে কম্পিউটার ভাইঙ্গা ফালায়, কিন্তু লগে লগে করপোরেশনের লোকজন আইসা ঠিক কইরা দিয়া যায়। একটা সুন্দরি মাইয়া তাঁর প্রেমে পরলেও সে লাজুকতা আর অস্তিত্ব নিয়া জটিলতায় থাকায় সাড়া দিতে পারেনা। একসময় যে টের পায় তাঁর পুরা ঘরে ক্যামেরা এবং তাঁর প্রতিটা মুভমেন্ট কেউ একজন মনিটর করতেছে। আরও অনেক অদ্ভুত জটিলতা নিয়া আগাইতে থাকে মুভির কাহিনী।

মুভিটা একটা ব্যতিক্রমধর্মী আন্ডাররেটেট সাইন্স ফিকশন মাস্টারপিস। মুভিটা শুরু থাইকাই আপানারে একটা অন্য জগতে নিয়া যাইব। নিয়া যাইব আপানার অস্তিত্বের গভীরে। মুভিটার মেইন থিম এক্সিসটেনশিয়াল ক্রাইসিস এবং গুরুত্বপূর্ণ থিম হইল পোস্ট মডার্ন মিজারেবল ফুল অব শিট লাইফ যা করপোরেশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আপনে মানেন আর না মানেন। আপনার জীবনের প্রতিটা মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রিত। এবং আপনি যা চিন্তা করেন সেগুলাও আপনের না। আপনে একটা পুতুল, আমিও। মুভিতে এক পর্যায়ে দেখায়, কেন্দ্রীয় পোলাডা যখনি ঘর থাইকা বাইর হইয়া রাস্তায় নামে, লগে লগেই একটা ডিজিটাল এড তাঁর পিছনে লাইগা যায়। এবং এইডা লগে লগেই ঘুরে। আর এই এড এর মূল ভাষ্য হইল “তুমি যথেষ্ট নও”। আপনারে আর আমারে প্রতিদিনই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বোঝানো হয় আমাদের যা আছে তা যথেষ্ট না। আরও লাগবো। কিন্তু ঠিক কতটুকু হইলে যথেষ্ট হইব সেইটা কখনই বলা হয়না। আর আমরা এইডা নিয়া ভাবিওনা। খালি দৌড়াই আরও টাকা, আরও সম্পদ, আরও খ্যাতির পিছনে যেই দৌড়ের কোন শেষ নাই। জীবনে বসে জিরানোর সময় পাইনা। জীবনডারে উপভোগ করা অথবা তা না পারলেও জীবনরে প্রশ্ন করার সময় আর মগজও আমাদের অবশিষ্ট থাকেনা। দৌড়াই আর দৌড়াই। মুভিতে এক পর্যায়ে বোঝায় আপনি আসলে কতটা বড়। এই ব্যাপারে সুফি কবি রুমি বলছিল “তুমি মহা সমুদ্রে এক ফোঁটা জল নও, তুমি আসলে এক ফোঁটা জলে আস্ত একটা সমুদ্র”।

মুভিটা ভিন্ন ধাঁচের, কাহিনী, প্লট অরিজিনাল। আপনি একাকীত্বের রোগী না হইলে মুভিটা আসলে আপনার জন্য বানাইছে। আর যদি আপনি হইয়া থাকেন একজন লোনলি ভদ্র নেকড়ে তাইলে মুভিটা আপনের জন্য টনিক। আর যদি আপনি চিন্তাশীল হন, তাইলে মুভিটা নিয়া বইসা পরা আপনের জন্য ফরজ। হেপি মুভি ওয়াচিং।

আমার রেটিং ৯.৫
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৯
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×