somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাইকু সমগ্র

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




গহীন অরণ্য,
একটা নিঃসঙ্গ অগ্ন্যুত্সব
বিম্বিত হয় পাতায় পাতায়।



আমার অঙ্কুরিত বীজ,
নগ্ন পায়ে আমি ধরণী চষে বেড়িয়েছি
খুঁজেছি তোমার উর্বরতা, রোপণ করব বলে।



চোখের পাতায়
ঘুম নামে, মৃত্যু নামে
নামে তোমাকে দেখার অপূরণীয় স্বপ্ন।



তুমি পদ্ম হও
জলে থাকো
কিন্তু তৃষ্ণার্ত জল কখনই ছুঁতে পারে না তোমাকে।



পাথরের নিঃশ্বাস,
জগতের সকল অপ্রাণ
জেগে উঠে অপলক চেয়ে রয় অামার পানে।



তোমার হৃদপিণ্ডের আকরিক
থেকে নিষ্কাসিত প্রেম,
যন্ত্রণার মিশ্রনে শোধিত হয় আমার পুরনো আত্মা।



জলের আয়নায়
তোমার বিম্বিত চোখ,
ছেদন ঘটায় আসমানের হৃদপিণ্ডে।



মৃত্যু নামে,
তবুও দৃঢ়তায়
কুসুমায়িত হয় শাদা পদ্ম।



অস্তিত্বের সঙ্গম,
গোটা পৃথিবীকে আমি রুটির মতন
সেঁকে নেই উৎপাদিত তাপে।

১০

যেদিন মদ আর রুটি
ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়তমা
সেদিন তোমাকে সাথে নিয়ে নিমগ্ন হব গভীর ধ্যানে।

১১

মেঘলা সন্ধ্যা,
জগতের সকল বিষণ্ণতা কুণ্ডলী পাকায়,
ব্যথাতুর সুখের রেখা দেখা যায়
সদ্য যৌবন প্রাপ্ত আঁধারের বুকে।

১২

তোমার নোলকে
ঝুলে পড়া ভালোবাসায়,
আমি দিবারাত্রি মেখে যাই শূন্যতার রং।

১৩

বনসাই
গাছের চূড়ায়
রাত নামে, স্বচ্ছ রাত।

১৪

এক বিন্দু জলঃ
আমি গোটা সমুদ্রের অবয়ব দেখি
যেমনটা দেখি তোমাকে।

১৫

তোমার আঙুলের
ফাঁক দিয়ে গলে বেরিয়ে যাওয়া প্রেম,
আমাকে বৃদ্ধ হওয়া থেকে বিরত রাখে অনন্তকাল।

১৬

তৃষ্ণার্ত প্রেম,
পরূষ রজ্জুতে বেঁধে ফেলে তোমার-আমার উত্তপ্ত দেহ,
বন্ধনের চাপে আহত হয় অ-প্রেমের মুহূর্তগুলো।

১৭

ব্রহ্মাণ্ডের জরায়ুঃ
অন্তহীনতায় উৎপাদিত সন্তানগুলো
ক্ষণস্থায়ী ‘আমি’কে ছাড়তে বড্ড ভীত।

১৮

আবারো আসবে বসন্ত,
পৃথিবীটা হয়ে উঠবে একটা শিশু,
হৃদয়ে তাঁর বসত করবে কবিতা।

১৯

আমার সুখঃ
দিবারাত্রি ছটফটিয়ে মরে
তোমার দুঃখের উদরে প্রবেশ করবে বলে।

২০

তোমার কটিদেশে
দুলে উঠে ঘুমন্ত পৃথিবী,
একত্রে জড়ো হয় সবকটা শতবর্ষী তারা।

২১

তোমার বক্ষ যুগল,
স্বর্গের সামিয়ানায় ঢাকা পড়ে
বিকরিত অালোয় চকচক করে অামার চোখ।

২২

জলের অসুখঃ
দুঃখের তৃষ্ণায় কাতর হয়ে উঠে
জগতের সকল সুখী আত্মা।

২৩

তোমার মতই রাত্রির চাঁদের কাছে
হঠাৎ ধরা পড়ে যায় আমার অতীতের সবগুলো ভয়,
নত মস্তিস্কে আমি ঢুকে পড়ি অন্ধকারের ক্ষুধার্ত পেটে।

২৪

মহাকালের বুকে উলঙ্গ মেঠো পথ,
কেউ হাঁটে না এই পথে–
কেবল আমি আর এই বর্ষার সন্ধ্যাটা ছাড়া।

২৫

শিল্পে পরিপূর্ণ,
মরিয়া হয়ে জীবনের অর্থ তৈরি করি
গভীর অন্ধকারে।

২৬

যখন অধিষ্ঠিত হও তুমি,
ব্যথাতুর মিষ্টতায় উষ্ণ হয়ে উঠে হৃদপিণ্ড,
কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়ে পুরো অস্তিত্ব।

২৭

ব্যথার পরিধি পেরিয়ে,
আমাদের সহ্য কৃত অনুপস্থিতি ভেদ করে
আমার দুহাত ছুটে যায় তোমার পানে, একটু স্পর্শ করবে বলে।

২৮

স্তব্দতায় কুকুরের ঘেউ ঘেউ,
আরও স্তব্দ হয় স্তব্দতা–
ওদিকে রাত্রির কালো পর্দার আড়ালে ঘন হয় তোমার-আমার নিঃশ্বাস।

২৯

তুমিহীন মুহূর্তগুলোয়–
বধির হয়ে যায় মহাকালের কর্ণ জোড়া,
অন্ধ হয়ে যায় আসমানের নীল চক্ষু জোড়া,
আর রাত্রির ঘন অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকে আমার আত্মাহীন নিথর দেহটা।

৩০

স্রোতস্বিনীতে দ্রুত ভেসে যায়
আমাদের অতীত–
ধূলিকণায় ভরা এই ধরণীর বুকে
আমি কেবল দেখতে পাই তোমার ক্ষণস্থায়ী অবয়বের চিরস্থায়ী প্রতিবিম্ব।

৩১

গোধূলীর কচিঁ অাধাঁর,
মন খারাপের বৃিষ্টি ফোটারা
নকশা কেটে যায় সরু খালের ঘোলা জলে।

৩২

পাহাড়ের মৌনতার
সাথে তাল মিলিয়ে তুমি চুপ হয়ে গেলে
আতঙ্কে কেঁপে উঠে নীরবতার বুক।

৩৩

বুড়ো বিকেলের
ঘাড়ে চড়ে শূণ্যতায়
ঠোকর বসায় শালিকের সরু ঠোঁট।

৩৪

ব্রহ্মাণ্ড হাই তুলেছে,
আকস্মিকতায় বিস্ফিত হচ্ছে
রাত্রির ঘন দুটো ঠোঁট।

৩৫

বিষণ্ণ রাত্রিরে
কালো পথটার ধাঁর ঘেঁষে
হেঁটে যায় একাকীত্ব।

৩৬

সবকিছু ফুটছে
বেপরোয়াভাবে,
ব্রহ্মাণ্ডের সবকটা রং—
কণ্ঠ হয়ে তীক্ষ্ণ চিৎকারে
কাঁপুনি ধরাচ্ছে রাত্রির হৃদপিণ্ডে।



৩৭

সবকটা শব্দই তোমার,
নীরবতার প্রতিটা গহ্বর তোমারই,
তুমি ‘তুমি’ নও, যখন তুমি ‘তুমি’ হও।

৩৮

তোমার অাচঁল তলে,
অাকাশের নীলেরা গড়াগড়ি খায়
হেসে হয় কুটিকুটি।

৩৯

রাত্রির আঁচলে
ঢাকা পড়ে দিবসের সকল অানাগোনা,
কচি চাঁদ যন্ত্রনা ভোলায় মুচকি হেসে।

৪০

এই নিশিতে
অন্ধকারের হৃদপিণ্ডে ঢেলে দাও প্রেম,
ঘনীভূত হোক রাত্রির আবেগ।

৪১

আশার পালকে
ভর করে উড়ে বেড়াও,
উড়ে এসে বিদ্ধ হও আমার পুরনো আত্মায়।

৪২

মাত্র কয়েকটা শব্দেই
এঁটে যাবে আমাদের প্রেম,
কিন্তু ঘড়ির কাঁটায় কিছুতেই আঁটবে না প্রেমের মহাকাল।

৪৩

চক্ষু বুঝলেই
তোমার স্মৃতিগুলো
আমায় আচ্ছন্ন করে, কাঁপুনি ধরায় শরীরে।

৪৪

মাটি থেকে বৃষ্টি
ঝড়বে অাকাশে,
তুমি অার ভালো না বাসলে।

৪৫

জলের রং,
এবং গড়নে ধারণ করে
অস্তিত্বের সকল ঢং।

৪৬

অম্র মুকুল,
টিকে থাকার যুদ্ধে
হাবুডুবু খায় ঝড়ের প্রেমে।

৪৭

তন্দ্রায়,
ব্রম্মান্ড হেলে পড়ে
চোখের পাতায়।

৪৮

পুকুরের স্বচ্ছ জল,
প্রতিফলিত চাঁদের অালোয়
সিদ্ধ হয় অামার নিশি দুঃখরা।

৪৯

মার্চের রাত্রি,
সুতি কারুকার্যময় নোংরা পর্দা ভেদ করে
আমার ঘরে এসে নেচে উঠে গাঢ় নীলের ঢেউ।

৫০

তুমি মিষ্টতায় পুড়ে
দগ্ধ হওয়া মৌমাছিঃ
উম্মাদ হয়ে হুল ফুটাও।

৫১

তোমার পদস্পর্শে
হেসে উঠে মাটি,
কেঁদে উঠে স্পর্শকাতর আকাশ।

৫২

তুমি কি আসবে না?
দেখবে না এই দ্যুতিময় একাকীত্ব
ঝলসে দিচ্ছে কত ভালোবাসার চোখ?

৫৩

তোমার বুকের উপত্যাকা,
শূন্যতার নৃত্যে মুখরিত হয়—
মাতাল ব্রহ্মাণ্ড গড়াগড়ি খায়।

৫৪

এইসব এলোমেলো চিন্তারা
হেঁটে হেঁটে হামাগুড়ি দিয়ে খুঁজে নেয়
তোমার হাত, তোমার ঠোঁট, তোমার আত্মা।

৫৫

খুঁজতে বেড়িয়েছি আমার কণ্ঠটাকে,
আঁধারের বুকে আমার গর্জনটাকে,
সেখানে আমি পেয়েছি তোমায়, দ্যুতিময়।

৫৬

তুমি কালি হও,
শিল্প হয়ে থাকো অন্তহীনতার পুরোটা সময়,
আর তোমাতে লেপটে থাকি আমি।

৫৭

মস্তিস্ক,
যুক্তির খেলায় মত্ত হয়ে
ভুলে যায় যে জীবন একটা সুর, অযৌক্তিক সুর।

৫৮

শুভ্র মেঘ,
মাটির তৃষ্ণায় ব্যকুল হয়ে
ঘন হয়, কালো হয়, গা ঘেঁষে বসে থাকে মৃত্যুর।

৫৯

আমি নিমগ্ন হই,
অতলে গিয়ে দেখতে পাই—
তুমি আছো, আমি নাই।

৬০

অদেখায়ঃ
চক্ষু গড়িয়ে ব্যথা নামে,
তৃষ্ণায় লাল হয়ে উঠে দুটি মণি।

৬১

যন্ত্রণার বর্ধিতাংশে
ঢেলে দেই বিষ মিশ্রিত শরাব,
দুলে উঠে আধো জীবন, আধো মৃত্যু।

৬২

মাংসের টানে
মাংস নেচে উঠে,
আত্মার টানে কেঁপে উঠে আত্মা।

৬৩

সিগারেটের ধোঁয়াঃ
কুণ্ডলী পাকায়, শূন্যে মিলায়,
সম্পর্কের আপাত ছেদন হয় আগুনের সাথে।

৬৪

রেললাইনঃ
গোধূলির কচি অাধাঁরে
লোহার তৃষ্ণায় অাকুল শুয়ে অাছে সমান্তরাল লোহা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৪
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×