বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
An article on current secularism, atheism, Islam, true secularism and what we (Muslims) have to do now
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু। বর্তমান সময়ে ধর্মনিরপেক্ষতা ও নাস্তিক্যবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকের মতে, ধর্মিনিরপেক্ষতা আর নাস্তিক্যবাদ আলাদা আবার অনেকের মতে দুটি এক ও অভিন্ন উদ্দেশ্যে গঠিত। আমি আমার লেখায় ইসলাম, নাস্তিক্যবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছি এবং মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে, উদাহরনের মাধ্যমে কোনটি সর্বোত্তম নিরপেক্ষ তা মানুষের সামনে আনতে চেয়েছি।
ধর্মহীনতা বা নাস্তিকতার গোড়াপত্তন
সভ্যতার ক্ষেত্রে আধুনিক ইউরোপ এবং ইউরোপ এর বিভিন্ন জাতির মিশ্রন যুক্তরাষ্ট্র প্রাচীন গ্রীসের অধিকারী। রোম সম্রাজ্যের মাধ্যমে এই উত্তরাধিকার ইউরোপ পর্যন্ত পৌছে গেছে। গ্রীক মিথলজিতে মানুষ এবং দেবতাদের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। তারা একে অন্যের বিরোধী এবং শত্রু। তাদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং দ্বন্দ্ব-কলহ সর্বদাই বিদ্যমান। এ কারনে বিশ্বপ্রকৃতির গুপ্ত রহস্য উন্মোচনের ক্ষেত্রে মানুষ যতটুকু সাফল্য অর্জন করেছে উহা দেবতাদের পরাজয় ও ব্যর্থতার ফসল বৈ কিছুই নয়, মানুষ উহা প্রাণপন যুদ্ধ করে দেবতাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছে। এই হিংসুটে, অসহায় দেবতারা পরাজিত না হলে মানুষকে রহস্য উদঘাটন বা আবিষ্কারের কোন সুযগই দিত না এবং প্রকৃতির যে সম্পদ ও অবদানের সাহায্যে মানুষ উপকৃত হচ্ছে তা থেকেও তারা বঞ্ছিত হত। গ্রীক চিন্তাধারার এই দৃষ্টিতে, বিজ্ঞানের প্রতিটি অগ্রযাত্রাকে হিংসুটে দেবতাদের পরাজয় বলে গন্য করা হয়। এ কারনেই বিজ্ঞান ও ধর্ম পরস্পর বিরোধী বলে মনে করেন আধুনিক ইউরোপে শিক্ষিত বা ইউরোপীয় সংস্কৃতিকে ভালবাসেন এমন বিজ্ঞানীরা। তারা নিজেদের প্রতিটি সাফল্যকে দেবতাদের বিরুদ্ধে জয় বলে মনে করেন। এভাবেই নাস্তিকতার (ধর্মহীনতার) গোড়াপত্তন হয়। প্রকৃতপক্ষে ধর্ম (শুধুমাত্র সত্য ধর্ম। কেননা পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মমতেই ঐ ধর্ম ব্যতিত অন্য সকল ধর্ম ভুল। অতএব ধর্মকে ১০০% সঠিক প্রমাণ করতে গেলে এই কথাটিরও সত্যতা প্রমাণ করতে হয়। এবং তা করতে গেলে সত্য ধর্ম কেবল একটিই পাওয়া সম্ভব। একই সাথে একাধিক ধর্ম সত্য হতে পারে না যেহুতু তাদের মৌলিক বিষয়াদিতে পার্থক্য রয়েছে।) ও বিজ্ঞান পরস্পর সহায়ক এবং নিশ্চয়ই উভয়ে উভয়ের বিরোধী নয়।
“বিজ্ঞান ধর্ম ব্যতিত খোড়া, ধর্ম বিজ্ঞান ব্যতিত অন্ধ” (আলবার্ট আইনস্টাইন)
“যে ব্যক্তি আংশিকভাবে বিজ্ঞানকে জানবে সে হবে নাস্তিক (ধর্মহীন) আর যে ব্যক্তি বিজ্ঞানঅকে পরিপূর্ণ রুপে জানবে সে হবে আস্তিক (ধর্মে বিশ্বাসী) (ফ্রান্সিস বেকন)
নাস্তিক্যবাদ যে আসলে একটি ধর্ম তার একটি যৌক্তিক প্রমাণঃ
নাস্তিক্যবাদ (atheism) প্রক্রিতপক্ষে একটি ধর্ম হিসেবে প্রকাশ পাচ্ছে। একটি ধর্ম হতে যা যা দরকার তা এর মধ্যে বিদ্যমান। নিম্নে এর স্বপক্ষে যৌক্তিক প্রমাণ উপস্থাপন করা হলো।
১. ইশ্বরঃ নাস্তিকেরা মানুষ-কে ইশ্বর মানে। তাদের মূল কথা “সবার উপরে মানুষ সত্য” কিন্তু আফসোস! এরাই আবার ভিনগ্রহে মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান প্রাণীর (এলিয়েন) খোজ করে আর বলে তারা নাকি “সবার উপরে মানুষ সত্য” এই কথাটিতে বিশ্বাসী। অথচ ইসলামে যে মানুষকে সৃষ্টির সেরা বলে অভিহিত করা হয়েছে সেই ইসলামকে মানবতা বিরোধী বলে। (আমি মহাবিশ্বে প্রাণের অস্তিত্বের ব্যাপারে হতাশাবাদী নই। তবে যদি মহাবিশ্বে প্রাণ পাওয়াও যায় তাহলে হয় সেই প্রাণী মানুষের চেয়ে নিকৃষ্ট মানের হবে নয়তো মানুষ হবে তথা মানুষের সমগোত্রীয় হবে শুধু ভিন্নতা হবে আমরা পৃথিবীর অধিবাসি আর ওরা ভিনগ্রহের ঠিক যেমন আমি বাংলাদেশী আর বারাক ওবামা আমেরিকান)
২. প্রার্থনাঃ মানবসেবা। এরা মানবসেবা কে প্রার্থনা (prayer) মনে করে। কিন্তু হায়! এই মানবসেবা যে ইসলামেরই একটি অংশ তা তারা বুঝেও বুঝে না। তারা এটিও বুঝেও বোঝে না যে কোন উপায়ে মানুষের সেবা করলে সেটা সেবা হবে আর কি করলে আসলে সেবা নয় ক্ষতি হবে তা ইসলামে বলে দেওয়া হয়েছে। তারা “চকচক করিলেই সোনা হয় না” প্রবাদটি মনে হয় পড়ে নাই। আল কুরানে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, “না, আমরা সত্যের দ্বারা মিথ্যার উপর আঘাত হানি। ফলে তার মগজ চুরমার হয়ে যায়। তখন দেখ! তা অন্তর্নিহিত হয়। আর ধিক তোমাদের প্রতি! তোমরা যা আরোপ কর সে জন্য” (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ১৮)... তাই তারা আপাতঃদৃষ্টিতে যা সুন্দর এবং সেবা মনে হয় তাই করে কিন্তু পর্দার আড়ালে যা লুকায়িত থাকে সে সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না। তাই তারা সমকামীতা, অশ্লীলতা, পায়ুকামীতা, ব্যাভিচার, মানবসৃষ্ট আইন (সংবিধান) এর পক্ষ নেয় এবং বিজ্ঞান সম্মত শরিয়াহ আইনকে “পশ্চাতপদ”, “মানবতাবিরোধী” ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করে। তারা আমাদের দেশের (বাংলাদেশ) মহান মুক্তিযুদ্ধকে গৌরব কিন্তু ইসলামের জিহাদকে মানবতাবিরোধী কাজ বলে মনে করে। (আমি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি নই। আমি খালি এতুটুকু বোঝাতে চেয়েছি যে, আমাদের জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের যেমন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ঠিক তেমনি রয়েছে জিহাদ-এরও।)
৩. দাওয়াতঃ এরা মানুষকে তাদের “There is no God” কথা বিশ্বাসে আমন্ত্রন জানায় এবং প্রয়োজনে এর স্বপক্ষে যুক্তিও (নিঃসন্দেহে ঐ যুক্তি খন্ডনযোগ্য এবং খোড়া) দেখায়।
৪. যুদ্ধঃ এরা নিজেদের যুদ্ধের পক্ষে বলে দাবি করে। অথচ দেখুন, মাদার তেরেসা (ক্যাথলিক মানবতাবাদী) দাঙ্গাকালীন সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে অবস্থান করেন। এ সময় তিনি দাঙ্গায় আক্রান্ত (দাঙ্গা পিড়ীত এবং দাঙ্গা স্রষ্টা উভয় শ্রেণীই) লোকদের সেবা দেন। এতে করে দাঙ্গা স্রষ্টারা নতুন বেগ পায়। তারা দেখতে পারে তাদের চিকিতসা নিয়ে কোন শঙ্কা নাই। তাই তারা পূর্নোদ্যমে দাঙ্গা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অথচ ঐ সময়ে মাদার তেরেসা এবং তার মতো মানবতাবাদীরা যদি দাঙ্গা স্রষ্টাদের সেবাদান না করতেন তবে হয়তো দাঙ্গা স্রষ্টারা চিকিতসা না পেয়ে শিক্ষা নিত এবং পরে আবারো দাঙ্গা সৃষ্টি করতে ভয় পেত। এভাবে কয়েকজন দাঙ্গা স্রষ্টার প্রাণের বিনিময়ে লক্ষ সাধারণ মানুষ বেচে যেত। তাই দেখুন, এই মানবতাবাদীরা (?) কিভাবে যুদ্ধ উস্কে দেয়। এছাড়াও তারা ব্যাভিচারের বিপক্ষে নয়। অথচ ব্যাভিচারের কুফল এইডস। তারা ব্যাভিচারের সমর্থন করে মহামারী এইডসকেও সমর্থন করছে। আর যে ইসলাম ব্যাভিচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে তাকে বলছে “মানবতাবিরোধী”... তারা অপরাধীদের বাচাতে দেশে দেশে মানবাধিকার কমিশন গঠন করছে, ফাসির বিরোধীতা করছে। অথচ ঐ অপরাধীর প্রাণের বিনিময়ে হয়তো শত শত মানুষ বাচান যেত, ওই অপরাধীকে বাচাতে যেয়ে শত শত সাধারন নিরীহ মানুষের হত্যাকান্ডকে, রক্তের মূল্যকে উপেক্ষা করছে। এতে করে অন্য অপরাধীরাও সাহস পাচ্ছে। আর যে ইসলাম এই স্কল অবৈজ্ঞানিক কাজ এর বিরোধীতা করছে তাদের বলছে “মানবতাবিরোধী”, “পশ্চাতপদ” ইত্যাদি... এভাবে এরা যুদ্ধ কএছে কিন্তু অস্বীকার করছে।
৫. তীর্থস্থানঃ মিডিয়া। মুসলমানেরা যেমন মক্কা-মদীনায় যেয়ে নিজেদের ইবাদত পেশ করে, হাজ্জের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বকে তাদের শক্তি জানান দেয় নাস্তিকেরা ঠিক তেমন মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের করা কাজ মানুষের মাঝে উপস্থাপন করে। যেহুতু মানুষই ইশ্বর তাই তারা মানুষের কাছে নিজেদের করা কাজ পেশ করে মানুষের মন জয় করতে চায়। মিডিয়ার মাধ্যমেই তারা নিজেদের শক্তিমত্তার প্রদর্শন করে। ইসলামী রাশট্র যেমন শূরা কমিটির মাধ্যমে চলে ঠিক তেমন নাস্তিকেরা চলে মিডিয়াগুলোর ইচ্ছানুযায়ী। মিডিয়া থেকে সিদ্ধান্ত আসে মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে (?) কোন সত্যকে মিথ্যা আর কোন মিথ্যাকে সত্য বানাতে হবে।
৬. লক্ষ্যঃ ধর্মহীন প্রিথিবী গঠন।
উপরের যুক্তিসমূহ আলোচনা করলে এইটা জলবত তরলং যে নাস্তিক্যবাদ আসলে একটি নতুন ধর্ম বৈ কিছুই না। এরা এমন এক পৃথিবী গড়ে তুলতে চাইছে যেখানে মানুষ নিজেই হবে নিজের ইশ্বর। কিন্তু এমনটি হলে মানুষ-মানুষে খুনো খুনি শুরু হবে। সবাই যখন ইশ্বর হবে তখন যে পরিস্থতির অবতারণা ঘটবে এসম্পর্কে আল-কুরানে বলা হয়েছে, “যদি ও দুই (আসমান ও জমিন) এর মাঝে আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য থাকত তবে উভয়ে বিশৃঙ্খল হয়ে যেত এবং উভয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হতো। সুতরাং সকল মহিমা আল্লাহর, যিনি আরশের অধিপতি,- তারা যা আরোপ কর তার উর্ধ্বে” (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ২২)... তাই বলা যায়, এই নব্য ধর্ম নাস্তিক্যবাদ ধর্ম প্রিথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আনতে বদ্ধ পরিকর। এছাড়াও পরকালভীতি উঠে গেলে ,আমুষ এখন যতটুকু ভাল কাজ করছে তা-ও ছেরে দেব। তাই ইসলাম ধর্ম বাদ দিয়ে নয়, সকল ধর্মের সুসহবস্থানের মাধ্যমে একটি সুন্দর প্রিথিবী গড়ার আদেশ দেয় যেমন প্রিথিবী এই মানব্জাতি পেয়েছিল ৮০০ বছর ইসলাম জাহান এর মাধ্যমে।
বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষতাঃ আসলে কতটুকু নিরপেক্ষ
বর্তমান সমাজে যে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলা হচ্ছে তা প্রকৃতপক্ষে ধর্মহীনতা বা নাস্তিক্যবাদ নামক নতুন ধর্ম (আগেই প্রমাণ করা হয়েছে যে, নাস্তিক্যবাদ আসলে একটি ধর্ম) মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়ার এক অনন্য কৌশলগত কারনে তৈরী। তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষতার মূলমন্ত্র “ধর্ম নেই তো বিভেদ নেই” যা নাস্তিক্যবাদ এর সাথে সঙ্গতিপূর্ন। অন্যদিকে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহান আল্লাহ তা’লা ইসলামকে কেবল এক ধর্ম হিসেবে প্রেরণ করেন নাই, সাথে দিয়ে দিয়েছেন আইনসমষ্টিও (শরিয়ত) যাতে সকল ধর্মের সাম্যতা বিদ্যমান রয়েছে। ইসলাম বিশ্বাস করে এবং জানে, “সকল ধর্মের সুসহবাসই সুন্দর পৃথিবী গঠনের এক ও অদ্বিতীয় শর্ত”... ধর্মনিরপেক্ষতা যে আসলে কোন ধর্ম সমর্থন করে না এমনটি ভাবা নিতান্তই বোকামি। এটি নাস্তিক্যবাদকে সম্পূর্ণ সমর্থন দেয় এবং নাস্তিকেরাই যখন দেখে যে, “There is no God” কথাটিতে কেউ বিশ্বাস করছে না তখন তারা একটি ভন্ন নাম দিয়ে ভিন্ন মতাদর্শের নামে ধর্মনিরপেক্ষতা চালু করে। ধর্ম নিরপেক্ষতার মাধ্যমে এরা নাস্তিক্যবাদ কে অন্যান্য ধর্মাবল্মবীদের উপর এক অভিনব কায়দায় চাপিয়ে দিচ্ছে এবং তাদের ধর্মচ্যুত করছে। একটি খুবই সাধারন এবং বাস্তবধর্মী উদাহরন দেই, আমি বাংলাদেশের এক প্রখ্যাত উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ, মিরপুর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭)... আমি ৮ম শ্রেনীর ছাত্র। জুলাই মাস, ২০১১ সাল। গ্রিষ্মের ক্ষরতাপে বেলা ৪টা বা সাড়ে ৪টার দিকে ছাত্রদের আনা পানির বোতলের পানি শেষ হয়ে যায় এবং নিচতলায় স্কুলের নিচতলায় পানির ট্যাঙ্ক থেকে পানি আনতে যাই অন্য আরো অনেকের মতো। সেখানে দেখা হয় এক ধর্মভীরু ছেলের সাথে যে তার প্যান্ট টাকনুর উপরে উঠিয়ে পড়েছিল (ইসলাম অনুযায়ী প্যান্ট টাকনুর নিচে পড়া মারাত্মক পাপ) এবং মাথায় টুপি ছিল। হটাত সেখানে উপস্থিত হন আমাদের বিদ্যালয়ের দিবা-জুনিয়র শাখার উপাধ্যক্ষ ফেরদৌস আরা ম্যাডাম (সম্ভবতঃ ইনি ঈশ্বরে অবিশ্বাসী বা মুসলিম বিদ্বেষী। তার একটাই প্রশ্ন “মাদার তেরেসা কেন বেহেশতে যাবেন না?”) তিনি এসে ঐ ধর্মভীরু ছেলেকে বকা দেন এবং পরবর্তীতে টুপি না পড়তে এবং প্যান্ট গুটিয়ে না পড়তে কঠোর আদেশ দেন। তিনি বলেন, “টুপি কলেজের (এই বিদ্যালয়টি ৩উ হতে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত। তাই টিচারেরা এটাকে কলেজ বলতে ভালবাসেন।) ইউনিফর্ম না এবং প্যান্ট আনফোল্ড (না গুটানো) এটা কলেজের ইউনিফর্মের অংশ। এ কলেজে হিন্দু-মুসলমান সবাই পড়ে এবং সবার জন্যই এ নিয়ম সমান। কেউ যদি এর বিরোধীতা করে তবে সে সাম্প্রদায়িক কাজ করে”।
এখন দেখুন, কিভাবে নাস্তিকেরা তাদের নিয়ম দ্বারা, অসাম্প্রদায়িকতার নামে এবং ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে মুসলমানদের একান্ত ব্যক্তিগত ধর্মীয় আচার পালনেও বাধা দেয়। অথচ ইসলাম যখন নিয়ম করে মানুষকে অপকর্ম (ব্যাভিচার, অশালীন জামা পড়া কিভাবে সুকর্ম হয়? আর কিভাবে বা স্ত্রীদের ঘরে আরামে রেখে স্বামীদেরকেই স্ত্রীর প্রয়োজনীয় সবা কাজ মেটাতে বলা অপকর্ম হয়?) হতে বাধা দেয় তখন তারা সেই আইন কে বলে “মানবতাবিরোধী” কিংবা “পশ্চাতপদ” কিংবা “সঙ্খ্যালঘুদের বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যাচারস্বরুপ”...অথচ তারাও কিন্তু আইন করে আমাদের একান্ত ব্যক্তিগত ধর্মীয় কাজগুলোতে বাধা দিচ্ছে এবং যেখানে আমাদের কাজগুলো কাজগুলো মোটেও খারাপ নয় উলতো বিজ্ঞানম্মত, মানবতার জন্যই করা। (অপচয় রোধে এবং অহঙ্কার হতে রক্ষার জন্য টাকনুর নিচে প্যান্ট পড়া নিষেধ, মেয়েরা শারীরিকভাবে পুরুষদের চেয়ে অনেক দুর্বল। তাই মেয়েরা ঘরে আয়েশ করবে আর পুরুষেরা বাহিরের কাজ করেব। অতএব, ইসলামে যদি নারী-পুরুষে কোন ভেদাভেদ করেও থাকে তবে তা নারী-পুরুষের মঙ্গলের জন্যই। কিন্তু ইসলামে কোন ভেদাভেদ করা হয় নাই। কোন কোন ক্ষেত্রে নারীদের বেশী এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষদের বেশী অধিকার দেয়া হয়েছে)... এখন আপনিই বলুন, কারা মানবতার পক্ষের শক্তি এবং কারা অন্যের উপর নিজের মত চাপিয়ে দেয়। অনুরুপভাবে একসময় হয়তো আমরা দেখতে পাব, মুসলমানদের যেমন প্যান্ট টাকনুর উপরে পড়া-টুপি পড়া নিষেধ করা হয়েছে সেরকম একদিন মা মারা গেলে হিন্দুদের মাথা টাক করাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এভাবে নাস্তিকেরা তাদের নিজেদের ধর্ম অন্যান্যদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে। তাদের প্রশ্ন করলে তারা বলবে, “এটা ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ। এখানে মুসলমান-হিন্দু বলে কোন কথা নাই। সবার জন্যই এক নিয়ম”... এক্ষেত্রে “এক নিয়ম” কথাটার আলাদা তাতপর্য্য রয়েছে। এই এক নিয়ম মানে সবাই নিজের মতো করে ধর্ম পালন করবে তা না। এই এক নিয়ম মানে সবাই “ধর্মনিরপেক্ষ” দের বানানো আইন মানবে হোক তা কোন ধর্ম বিরোধী কিংবা ধর্মের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ।
অতএব উপরের আলোচনার সাপেক্ষে এটা বলা কোনক্রমেই বাহুল্য হবে না যে, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রকৃতপক্ষে নাস্তিকতারই অপর নাম। অতএব আপনি যদি ধর্মে বিশ্বাসী হন (হিন্দু-ইসলাম-বৌদ্ধ যেকোন ধর্ম) তবে ধর্মনিরপেক্ষতা কে না বলুন। কেননা যদি ধর্মনিরপেক্ষতা=নাস্তিকতা হয় তবে ধর্মনিরপেক্ষতাউইয় ও ধর্মে বিশ্বাস একই সাথে হতে পারে না। ধর্মনিরপেক্ষতা সকল ধর্মের জন্যি ক্ষতির কারণ। আজ এরা আমার ধর্ম ইসলাম কে টার্গেট করেছে কাল হয়তো আপনার ধর্মকে টার্গেট করবে।
প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ কি এবং কোনটি সর্বোত্তম ধর্মনিরপেক্ষতাঃ
পরকালভীতি উঠে গেলে মানুষ এখন যতটুকু ভাল কাজ করছে তা-ও ছেরে দেব। তাই ইসলাম ধর্ম বাদ দিয়ে নয়, সকল ধর্মের সুসহবস্থানের মাধ্যমে একটি সুন্দর প্রিথিবী গড়ার আদেশ দেয় যেমন প্রিথিবী এই মানব্জাতি পেয়েছিল ৮০০ বছর ইসলাম জাহান এর মাধ্যমে। সুতরাং নাস্তিক্যবাদ কোনক্রমেই মানবতার সন্ধান হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে বুঝায় ঐ আদর্শ যাতে সকল ধর্মের সুসহবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন দেখা যাক, ঐ আদর্শ আসলে কোনটি।
পূর্বেই প্রমানিত হয়েছে যে বর্তমান তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা আসলে ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য কোন সমাধান হতে পারে না। তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষতার বাইরে আরেকটি ধর্ম নিরপেক্ষ সংবিধান আছে যার না শরিয়াহ। (মুসলিম ভাইয়েরা, ইসলাম যে শুধু একটি ধর্ম না তা পরবর্তীতে প্রমান করা হয়েছে। এবং এর ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রমাণ নিম্নে দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সকলের শান্তির জন্যই ইসলামের আগমন। মহানবী (স) মদীনা চুক্তি করেন। সেখানে মদীনা অধিপতি হন তিনি। মদীনার সে চুক্তিতে ৮ গোষ্ঠীর বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী অংশ নেন। তার বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের কোন অভিযোগ নাই। এবং তিনি শরিয়াহ আইন জারি রেখেছিলেন। অতএব বলা যায়, শরিয়াহ আইনে কোন গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা ধর্ম বিশেষের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে না) ইসলাম ধর্ম বাদ দিয়ে নয়, সকল ধর্মের সুসহবস্থানের মাধ্যমে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে চায়। আসলে এটিই সুন্দর পৃথিবী গঠনের একমাত্র উপায়। ধর্ম মানুষের সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গাগুলোর একটি। অনেক সময় মানুষ কোনটি সত্য ধর্ম তা জানার পরও ঐ সনাতনি বিশ্বাস সহ নানা কারনে আগের ধর্মেই অটল থাকে (উদাহরনঃ আবু তালিব, আব্দুল মুত্তালিব)...তাই সর্বদাই সত্য ধর্মের পাশাপাশি অন্য ধর্মও থেকে যায়। একারণে সকল ধর্মের সহবস্থান জরুরী হয়ে পড়ে। ইসলাম শরিয়াহ আইনের মাধ্যমে এই সহাবস্থানই নিশ্চিত করে। ইসলাম বিধর্মীদের জন্য যেরুপঃ-
(ক) ইসলামি শরিয়াহ আইনের বশ্যতা স্বীকার কর (ঠিক যেমনটি তারা পূর্বের মানবসৃষ্ট সংবিধানের বশ্যতা স্বীকার করেছিল। শরিয়াহ আইন প্রকৃতপক্ষে একটি সংবিধান যা অন্য সকল সংবিধান হতে উত্তম)
(খ) যার যার ধর্ম পালন করতে পারবে, মুসলিমরা এতে বাধা দিতে পারবে না।
(গ) মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং রাষ্ট্রের চালক হওয়ায় তারা বিধর্মীদের নিরপত্তা দেবে। বিনিময়ে বিধর্মীদের মধ্য হতে যুদ্ধক্ষম লোকেরা বার্ষিক কর প্রদান করবে যার নাম জিজিয়া। শিশু-বৃদ্ধ-স্ত্রীলোক-অপ্রাপ্তবয়স্কদের এটা দিতে হবে না। এর পরও যারা রাষ্ট্রের পক্ষে যুদ্ধ করবে তাদের কর দেয়া লাগবে না। (কর মুসলমানদেরও দিতে হয়। রাষ্ট্রের সঙ্কটকালীন সময়ে সাহাবারা নিজেদের খাদ্য খরচও রাষ্ট্রের জন্য দিয়ে দিয়েছেন। এছারা তারা যুদ্ধও করেছেন। কিন্তু বিধর্মীদের খালি একটি করলেই চলছে- হয় যুদ্ধ নয়তো কর যেখানে মুসলমানদের করতে হচ্ছে ২টাই)
আশা করি উপরোক্ত যুক্তিগুলো ইসলাম যে সর্বোত্তম ধর্ম নিরপেক্ষ তা প্রমানে যথেষ্ট হবে। এছাড়াও বিখ্যাত ইংরেজ লেখক আরনল্ড তার “The preaching of Islam” গ্রন্থে স্বীকার করেছেন যে, ইসলাম নিরপেক্ষ। তিনি বলেন, ইসলামী দুনিয়ায় বহু সঙ্খ্যক খ্রিস্টান-ইহুদী (স্থান এবং কাল ভেদে হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ প্রভৃত ধর্মও প্রযোজ্য) স্বাধীনভাবে নিজ ধর্মকর্ম পালন করছে। এছাড়াও অন্য কোন ধর্মে শরিয়ত এর মতো কোন আইনাবলী দেয়া নাই যা রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাই ইসলামের শরিয়াহ আইন অন্য কোন ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। অন্য সকল ধর্মাবলম্বী যেকোন সংবিধান বা রাষ্ট্রের আইনাবলী অনুসরণ করতে পারে, এটা তাদের জন্য পাপের কিছু নয়। কিন্তু একজন মুস্লিম যদি আল্লাহর আইন ব্যাতিরেকে অন্য আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায় তবে সে আল্লাহর উপর জুলুম করে। তাই বলা যায়, ইসলামের শরিয়াহ আইন কোন ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এবং এ আইন প্রতিষ্ঠার ফলে কোন ধর্মের অবমাননা বা কোন ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয় না বরং শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠা না করলে তা ইসলাম ধর্মের প্রতি অবমাননা করা হয়। পরবর্তী অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হলো কীভাবে মানবসৃষ্ট আইন মুসলমানদের জন্য হারাম।
পরবর্তী অংশ দ্বিতীয় খন্ডে। দ্বিতীয় খন্ডঃ ইসলাম, নাস্তিক্যবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা (পর্ব ২)
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই আর্টিকেলটির কোন স্বত্ত্বাধিকার সংরক্ষিত নয়। সকলে এর ব্যাপক পরচারের ব্যবাস্থা করবেন এটিই কাম্য। তবে লেখক কি উদ্দেশ্যে কি কথা বলেছেন তা লেখকই ভাল জানেন। তাই কোন প্রশ্ন থকলে তার উত্তর লেখকই ভাল দিতে পারবেন (আল্লাহর পর, নিশ্চই আল্লাহ সর্বোত্তম জ্ঞানী)... তাই এতটুকু অনুরোধ থাকবে লেখাটি যখন অপরের নিকট পৌছে দিবেন তখন ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে লেখকের নাম এবং যোগাযোগের ঠিকানাগুলো ঠিক রাখবেন এতে করে লেখক এই আর্টিকেলের উপর আনা অভিযোগসমূহের সমুচিত জবাব প্রদান করতে পারবেন। আর্টিকেলটির কোন অংশে যদি আপনার দ্বিমত থাকে তবে অবশ্যই তা জানাতে ভুল করবেন না। মানুষ মাত্রই ভুল। সাহাবায়ে কেরামও অনিচ্ছাকৃত অনেক ভুল করেছেন আর আমি তো সেই কোন ছার। প্রকৃত বন্ধু সেই যে সামনে ভুল ধরিয়ে দেয়, পশ্চাতে প্রশংসা করে। আর্টিকেলটিতে কোন তথ্যগত ভুল (যেমনঃ কুরান-হাদিসের ভুল রেফারেন্স ইত্যাদি) বা যেকোন প্রকার ভুল থাকলে তা পশ্চাতে না বলে সামনে বলবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।
নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা আল্লাহর এবং আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
মোহাম্মদ আশরাফ আজীজ ইশরাক (ফাহিম)
মেইলঃ [email protected] অথবা [email protected] অথবা [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:১৭