আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু। বর্তমান মুক্তচিন্তার যুগে ধর্মান্ধতার কোন সুযোগ নাই। আজকের দিনে মানুষ আর বিশ্বাসী নাই, তাদের বিশ্বাস যুক্তিতে। তাই আমার আজকে লিখতে বসা। আশা করি, আমার এই পোস্টের মাধ্যমে বহুল প্রচালিত ধর্মীয় বিশ্বাস বনাম নাস্তিক্যবাদের যুক্তি বিতর্কের সুরাহা হবে।
পৃথিবীতে অসংখ্য ধর্ম আছে তবে দ্বীন কেবল একটাই আছে। খ্রিস্টান ধর্ম, ইহুদী ধর্ম, জৈন ধর্ম, সনাতন ধর্ম ইত্যাদি অসংখ্য ধর্ম আছে। সর্বনতুন ধর্ম হিসেবে এসেছে নাস্তিক্যবাদ। কিন্তু দ্বীন কেবল একটাই আর তাহল ইসলাম।
ইসলাম যে কোন ধর্ম নয় বরং দ্বীন তার প্রমান আমি দিয়েছি "কিছু বিশ্বজনীন ভ্রান্তি" শীর্ষক পোস্টের ৪ নং ভ্রান্তির সহীহ ব্যাখ্যায়।
নাস্তিক ভাইয়েরা বলে থাকেন যে, "ধর্ম হল বিশ্বাসের সমষ্টি যাতে কোন যুক্তির স্থান নাই। তাই আস্তিকদের সাথে বিতর্ক করাই বৃথা যেহুতু বিতর্কের প্রান যুক্তি আর সেটাই আস্তিকদের নাই।" আমি আস্তিক ভাইয়েদের এ দাবীর সাথে বিন্দুমাত্র দ্বিমত পোষন করতে রাজি নই। পৃথিবীর সকল ধর্মই কেবল বিশ্বাসের সমষ্টি এবং তাতে যুক্তির কোন বালাই নাই। কিন্তু নাস্তিক ভাইয়েদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা প্রকাশ পায় তখনই যখন তারা ইসলামকেও ঐসকল ধর্মের কাতারে ফেলে এবং মুসলিমদের সাথে বিতর্ক করতে অস্বীকৃতি জানায়।
আমি নিচে কুরান ও হাদীসের কিছু উদ্ধৃতির সাহায্যে প্রমান করব যে, ইসলামে বিশ্বাস নয়, যুক্তিকি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
বিশ্বাস না যুক্তিঃ আল কুরান কি বলেঃ-
উদাহরন ১-
(৮)﴿وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا(৭)﴾وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا
অর্থঃ- মানুষের নফসের ও সেই সত্তার কসম যিনি তাকে ঠিকভাবে গঠন করেছেন। তারপর তার পাপ ও তার তাকওয়া তার প্রতি ইলহাম করেছেন। (সূরা আশ শামস, আয়াত ৭-৮)
ব্যাখ্যাঃ এই আয়াতদ্বয় থেকে বোঝান হয়েছে যে আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন যার দ্বারা মানুষ পাপ-পুন্যের ফারাক বুঝতে পারে এবং তদানুযায়ী আমল করতে পারে। এখানে "ইলহাম" শব্দটির অর্থ হিসেবে অতিপ্রাকৃত জ্ঞান বা খুবই সাধারনভাবে বোঝার ক্ষমতা।
মন্তব্যঃ এই আয়াতদ্বয়ের মাধ্যমে আল্লাহ এটিই প্রমান করলেন যে তিনি যুক্তিতে বিশ্বাসী। কেননা, বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে মানুষ যুক্তিভিত্তিক কাজ করবে এটিই তিনি চান।
উদাহরন ২-
إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِندَ اللَّهِ الصُّمُّ الْبُكْمُ الَّذِينَ لَا يَعْقِلُونَ
অর্থঃ অবশ্যি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ধরনের জানোয়ার হচ্ছে সেই সব বধির ও বোবা লোক যারা -বিবেক বুদ্ধি কাজে লাগায় না৷ (সূরা আনফাল, আয়াত ২২)
ব্যাখ্যাঃ এখানে আল্লাহ পাক ঐসকল মানুষকে মানুষের মর্যাদা না দিয়ে তাদেরকে জানোয়ারের সাথে তুলনা করেছেন যারা বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগায় না তথা যুক্তি দিয়ে চিন্তা করে না। মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ জীব এবং তার এই শ্রেষ্ঠত্বের কারন তার বিবেক-বুদ্ধি ও যুক্তিভিত্তিক চিন্তার ক্ষমতা। যখন কেউ মানুষের এই দিকটি হারিয়ে ফেলে তখন সে আর আশরাফুল মাখলুকাত থাকে না। তাই আল্লাহ তাদেরকে জানোয়ারের সাথে তুলনা করেছেন।
মন্তব্যঃ মহান আল্লাহ পাক আরো একবার বললেন যে তার কাছে যুক্তি কতটা প্রিয়। আর বস্তুত মহান আল্লাহ যুক্তিবাদী।
উদাহরন ৩-
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تُؤْمِنَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَيَجْعَلُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لَا يَعْقِلُونَ
অর্থঃ আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউই ঈমান আনতে পারে না৷আর আল্লাহর রীতি হচ্ছে, যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে কাজ করে না তাদের ওপর কলুষতা চাপিয়ে দেন। (সূরা ইউনুস, আয়াত ১০০)
ব্যাখ্যাঃ মহান আল্লাহর হুকুম ছাড়া তথা ইচ্ছা ছাড়া কেউই ঈমান আনতে পারে না। এর মানে এই নয় যে কেউ ইচ্ছা করলেও ঈমান আনতে পারবেন না। এর মানে এই যে, যারা বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করেন কেবল তারাই ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আসতে পারবেন, অন্যরা নয়। আর যারা বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করে না এবং তদানুযায়ী আমল করে না তাদের উপর আল্লাহ রহমত বর্ষন করেন না।
মন্তব্যঃ এই আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মুসলমান হতে গেলেই তাকে যুক্তিবাদী হতে হবে। নামকাওয়াস্তে মুসলমান সবাই হতে পারবে। কিন্তু প্রকৃত হেদায়েত পেতে গেলে তাকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করতে হবে তথা যুক্তি দিয়ে সবকিছু বিবেচনা করতে হবে এবং তদানুযায়ী আমল (কাজ) করতে হবে। অথচ অবিশ্বাসীরা বলে কিনা ইসলামে যুক্তি নয়, বিশ্বাসের প্রাধান্য রয়েছে!!!
উদাহরন ৪-
وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ
অর্থঃ তারা (জাহান্নামীরা) আরো বলবেঃ আহা! আমরা যদি শুনতাম (নবীদের কথা) এবং বিবেক -বুদ্ধি দিয়ে বুঝতাম। তাহলে আজ এ জ্বলন্ত আগুণে সাজাপ্রাপ্ত দের মধ্যে গন্য হতাম না। (সূরা মুলক, আয়াত ১০)
ব্যাখ্যাঃ এই আয়াতটিতে দোযখের অধিবাসীরা কি বলবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত জাহান্নামীরা বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে কোন কথা চিন্তা করে না তথা যুক্তি খাটিয়ে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হয় না। এবং একারনেই তারা জাহান্নামী। তারা বলবে, হায়! যদি আমরা নবীদের কথা শুনতাম এবং বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে তা চিন্তা করতাম! অর্থাত, তারা যদি বিবেক বুদ্ধি তথা যুক্তি দিয়ে এইসকল কথা চিন্তা করত তবে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারত যে কুরান-হাদীস আসলে যুক্তিসম্মত এবং বিবেকপ্রসূত।
মন্তব্যঃ জাহান্নামীরাই (অবিশ্বাসী) হল অযৌক্তিক দাবীর পক্ষে এবং যুক্তি ও বিবেকের উর্ধ্বে। অথচ তারা কিনা আমাদের বলে, দ্বীন ইসলাম বিশ্বাসের ঝুলি এবং যুক্তির স্থান এতে নেই। না, আমি বলি, "দ্বীন ইসলাম যুক্তির উপরই প্রতিষ্ঠিত এবং যুক্তি দ্বারা যে ফল পাওয়া যায় আমরা তাতেই বিশ্বাসী।"[/sb
উদাহরন ৫-
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنزَلَ اللّهُ مِنَ السَّمَاء مِن مَّاء فَأَحْيَا بِهِ الأرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَآبَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخِّرِ بَيْنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ لآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
অর্থঃ- নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ তা’ আলা আকাশ থেকে যে পানি নাযিল করেছেন, তদ্দ্বারা মৃত যমীনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালার যা তাঁরই হুকুমের অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে।
ব্যাখ্যাঃ এই আয়াতে আল্লাহর কুদরত সমূহের বর্ণনা রয়েছে এবং আল্লাহ তা'লা বললেন যে এরই মধ্যে বুদ্ধিমান (বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন ও যুক্তিবাদী মানুষ) মানুষের জন্য নিদর্শন রয়েছে।
মন্তব্যঃ যারা প্রকৃত যুক্তিপ্রেমী তারা আল্লাহর এসকল বিষয়ের মাঝেই যুক্তি খুজে পাবে। বুদ্ধিমানদের (যারা বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগায়) সবকিছু বলে দেয়া লাগে না, তাদের জন্য ইশারাই যথেষ্ঠ। আর যাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হয় এবং তারপরও তারা অস্বীকার করে তারাতো চোখ থাকিতেও অন্ধ।
কুরানের সাহায্যে আমি প্রমান করলাম যে ইসলাম যুক্তিতে বিশ্বাসী। তথা মুসলিমরা ঈমান আনে যুক্তিতে। যুক্তির সাথে বিশ্বাসের কি সম্পর্ক তা নিয়ে আমি পরে আরো বিস্তারিত বলছি (এই পোস্টের শেষের অংশ দ্রষ্টব্য)
বিশ্বাস না যুক্তিঃ সহীহ হাদীস কি বলেঃ-
সুধী পাঠক, চিন্তা করে দেখুন, কুরআনের তথা ইসলামের মৌলিক
বিষয়গুলো নিয়ে বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগানো এবং চিন্তা-গবেষণা
করাকে আল্লাহ তা'লা কী অপরিসীম গুরুত্ব দিয়েছেন। এই বিবেক-বুদ্ধি ও চিন্তা-গবেষণার ব্যবহারকে তিনি কোন বিশেষ যুগের মানুষের জন্যে নির্দিষ্ট করে দেননি। কারণ, মানব সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে
কুরআনের কোন কোন আয়াতের অর্থ বা ব্যাখ্যা নতুন তথ্যসমৃদ্ধ হয়ে মানুষের নিকট আরো পরিষ্কার হয়ে ধরা দিবে (এর মানে এই নয় যে কুরানের অর্থ পরিবর্তিত হয়ে যাবে। এর মানে কুরানের অর্থ অনুধাবন মানুষের নিকট আরো সহজ হয়ে যাবে)। একথাই রাসূল (সা.) তাঁর দুটো হাদীসের মাধ্যমে এভাবে বর্ণনা করেছেন।
প্রথম হাদীসঃ- (প্রথম হাদীসটি অনেক বড়, তাই সংক্ষেপে তা উপস্থাপন করা হল-)
হযরত আবু বকর (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) ১০ জিলহজ্জ
কুরবানির দিনে আমাদের এক ভাষণ দিলেন এবং বললেন, বলো,
আমি কি তোমাদিগকে আল্লাহর নির্দেশ পৌঁছাই নাই? আমরা বললাম,
হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ। তখন তিনি বললেন, ‘হে খোদা, তুমি সাক্ষী
থাক।’ অতঃপর বললেন, ‘উপস্থিত প্রত্যেকে যেন অনপু স্থিতকে এ
কথা পৌঁছিয়ে দেয়। কেননা, পরে পৌঁছানো ব্যক্তিদের মধ্যে এমন
অনেক ব্যক্তি আছে, যে আসল শ্রোতা অপেক্ষাও এর পক্ষে অধিক
উপলব্ধিকারী ও রক্ষাকারী হতে পারে’। (বুখারী ও মুসলিম)
(হাদীসটির ‘কেননা’ শব্দের আগের অংশটুকু বহুল প্রচারিত কিন্তু
‘কেননা’র পরের অংশটুকু যে কোন কারণেই হোক একেবারেই প্রচার
পায় নাই।)
দ্বিতীয় হাদীসঃ-
‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তির মখু উজ্জ্বল করুন, যে আমার বাণী শ্রবণ করেছে, তা
স্মরণ ও সংরক্ষণ করেছে এবং অন্যদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।
জ্ঞানের অনেক বাহক নিজে জ্ঞানী নয়। আবার জ্ঞানের অনেক বাহক
নিজের চেয়ে অধিক জ্ঞানীর কাছে তা পৌঁছে দেয়’।
(তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমি, বায়হাকি)
তৃতীয় হাদীসঃ-
রাসূল (সা.) ওয়াবেছা (রা.) কে বললেন, তুমি কি আমার নিকট
নেকি ও পাপ সম্পকের্ জিজ্ঞাসা করতে এসেছো? সে বললো: হ্যাঁ।
অতঃপর তিনি আংগুলগুলো একত্র করে নিজের হাত বুকে মারলেন এবং
বললেন, তোমার নিজের নফস ও অন্তরের নিকট উত্তর জিজ্ঞাসা কর।
কথাটি তিনি তিনবার বললেন। তারপর বললেন- যে বিষয়ে তোমার
নফস ও অন্তর স্বস্তি ও প্রশান্তি লাভ করে, তাই নেকী। আর পাপ হলো
সেটি, যা তোমার মনে সন্দেহ-সংশয়, খুঁতখুঁত বা অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
যদিও সে ব্যাপারে মানুষ তোমাকে ফতোয়া দেয়। (আহমদ, তিরমিজি)
ব্যাখ্যা: হাদীসখানিতে রাসূল (স.) স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, মানুষের অন্তর তথা বিবেক যে কথা বা কাজে সায় দেয় বা স্বস্তি অনুভব করে, তা হবে ইসলামের দৃষ্টিতে নেক, সৎ, ভাল বা সিদ্ধ কথা বা কাজ। আর যে কথা বা কাজে মানুষের অন্তর সায় দেয় না বা অস্বস্তি ও খুঁতখুঁত অনুভব করে তা হবে ইসলামের দৃষ্টিতে গুনাহ, খারাপ বা নিষিদ্ধ কাজ।তবে অন্য হাদীসে উলেখ- আছে এবং সাধারণভাবে আমরা সকলেও জানি
বিবেক পরিবেশ, শিক্ষা ইত্যাদি দ্বারা পরিবর্তিত হয়। তাই বিবেক-বিরুদ্ধ
কথা চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করার আগে তা যেমন কুরআন-হাদীস দিয়ে যাচাই
করে নিতে হবে তেমনই বিবেক-সিদ্ধ কথা চূড়ান্তভাবে অগ্রাহ্য করার
আগেও তা কুরআন-হাদীস দিয়ে যাচাই করে নিতে হবে।
মন্তব্যঃ অর্থাত, হাদীসও বলে বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা যে সিদ্ধান্ত আসে তাই গ্রহন করতে। আর এটি যারা করে তারাই মানুষ (আশরাফুল মাখলুকাত) আর অন্যরা জানোয়ার (মানুষ হওয়ার যোগ্যতা তাদের নাই)
বিবেক-বুদ্ধি তথা যুক্তির প্রয়োজনীয়তা এবং ইসলামে এর অন্তর্ভুক্তির কারন (যারা যুক্তি দ্বারা কোন কিছু বিশ্বাস করতে চান না তাদের জন্য)-
মহান আল্লাহ তো কুরআনের বক্তব্যকে চোখ-কান বন্ধ করে মেনে নিতে
বলতে পারতেন; কিন্তু তা না বলে তিনি উল্টো কুরআনের বক্তব্যকে
বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে বুঝার ব্যাপারে অপরিসীম গুরুত্ব দিয়েছেন। এর
প্রধান কয়েকটি কারণ হচ্ছে-
ক. বিবেক-বুদ্ধি সকল মানুষের নিকট সকল সময় উপস্থিত থাকে,
খ. বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহার করে সিদ্ধান্তে পৌঁছা যেমন সহজ তেমন তাতে
সময়ও খুব কম লাগে,
গ. কোন বিষয় বিবেক-সিদ্ধ হলে তা গ্রহণ করা, মনের প্রশান্তি নিয়ে তা
আমল করা এবং তার উপর দৃঢ় পদে দাঁড়িয়ে থাকা সহজ হয় এবং
ঘ. অল্প কিছু অতীন্দ্রিয় (মুতাশাবিহাত) বিষয় বাদে ইসলামে চিরন্তনভাবে
বিবেক-বুদ্ধির বাইরে কোন কথা বা বিষয় নেই
তবে কি ইসলামে বিশ্বাসের (ঈমান) কোনই স্থান নেই? যুক্তি ও বিশ্বাস (ঈমান) কি পরস্পর বিরোধী না সম্পর্কযুক্ত? যদি সম্পর্কযুক্তই হয় তবে এদের সম্পর্কটা কি?
আমি যদি বলি ইসলামে বিশ্বাস তথা ঈমানের কোন অবস্থান নাই তাহলে কোন পাগলও আমাকে "কাফির" উপাধি দিতে দ্বিধা করবে না। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশিত পথে আমি আমার ছোট মাথা দ্বারা বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে যা বের করলাম তাহল ইসলামে ঈমানের স্থান রয়েছে। কিন্তু সেই ঈমানের সাথে যুক্তির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ইসলামে ঈমান অনেকটা পরনির্ভরশীল বা পরজীবী। যুক্তি ছাড়া ইসলামে বিশ্বাসের কোন স্থান নাই। এটি প্রমানে নিচে আমি অতিসাধারন কিছু ঘটনার আশ্রয় নিব।
আমরা যারা ব্লগ লিখি তাদেরকে এযুগের সচেতন নাগরিক বলা হয়। আর সচেতন হতে শিক্ষার কোন বিকল্প আছে কিনা তা আমার জানা নাই। যদিও প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষকে টাকা আয়ের মেশিন বানায়, সচেতন বানায় না তবুও কোন এক কারনে মানুষ সচেতন হতে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত হতে যায়। যারা ৮ম শ্রেনী পাস করে এসেছেন তারা অবশ্যই গনিতের উপপাদ্য ১ থেকে উপপাদ্য ২৪ পর্যন্ত পড়েছেন।
উপপাদ্য ৪ (৬ষ্ঠ শ্রেনীর গনিত বইয়ে আছে) এ বলা হয়েছে, একটি সরলরেখা অপর দুইটি সমান্তরাল সরলরেখাকে ছেদ করলে একান্তর কোনদ্বয় সমান হবে।
আবার, উপপাদ্য ১৯ এর অনুসিদ্ধান্তে (৯ম শ্রেনীর বইয়ে আছে, ৮ম শ্রেনির বইয়ে আংশিক দেয়া আছে। মাধ্যমিক জ্যামিতি- পৃষ্ঠা ২৪) রম্বসের কর্নদ্বয় পরস্পরকে সমকোনে সমদ্বিখন্ডিত করে- এটি প্রমান করতে হয়।
উপপাদ্য ১৯ এর অনুসিদ্ধান্ত প্রমানের প্রথম দিকে একটি অংশে একান্তর কোনদ্বয় সমান প্রমান করতে হয়(প্রমানের তৃতীয় লাইন)। সেখানে স্রেফ বলা আছে যে, অমুক কোন= অমুক কোন [যেহুতু এরা একান্তর কোন]। ভাবখানা এমন যেন, এটা তাদের বিশ্বাস যে একান্তর কোন হলেই কোনদ্বয় সমান। কিন্তু একান্তর কোন হলেই যে তা সমান হবে এর কি নিশ্চয়তা? তখন তারা বলে, এটা ক্লাস সিক্সের বইয়ে প্রমান করা আছে। অনুরুওভাবে, আমরা (মুসলিমরা) যখন কোন কিছু বিশ্বাস করি তখন প্রথমে তা যুক্তি দ্বারা প্রমান করে নেই তারপর তা বিশ্বাস করি।
আমরা প্রথমে বলি, কোন ঈশ্বর নাই। এরপর মুক্তচিন্তা শুরু করি, বিবেক-বুদ্ধি খাটাই, যুক্তিকে কাজে লাগাই। এরপর যে সিদ্ধান্তে উপনিত হই তাহল কোন ঈশ্বর নাই আল্লাহ ব্যতীত। অর্থাত,আমরা আল্লাহকেও অন্ধভাবে বিশ্বাস করি না, যুক্তি দ্বারা প্রমান করে তবেই বিশ্বাস করি।
সুতরাং এটি বলার আর কোন অবকাশ থাকে না যে ইসলামে যুক্তির কোন অবকাশ নাই। বরং ইসলাম যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত আর মুসলিমগন কেবল যুক্তি দ্বারা যা প্রমানিত হয় তাতে বিশ্বাস করেন, যুক্তি দ্বারা যা প্রমানিত হয় না তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেন না।
ইসলামঃ যুক্তিতে বিশ্বাসী
নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার। ইসলাম মানেই মুক্তচিন্তা, ইসলাম মানেই যুক্তি। তাই জয় হউক ইসলামের, ভ্রান্তবিশ্বাস-অন্ধবিশ্বাসের প্তন ঘটুক।
এবং আল্লাহই সর্বোত্তম জ্ঞানী।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৪০