somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিত্রনাট্যঃ চাপারঙের শাড়ী

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চিত্রনাট্য ঃ চাপারঙের শাড়ী

১ম দৃশ্য
সকাল
পাঁচতারা হোটেলের পুলপাড়।

ছাতাওয়ালা তিনচেয়ার বিশিষ্ট বসার স্থান পুলের পাড় ধরে। পুলের পাড়ে ক'জন পুলিশ। পানিতে ভাসছে উবু হওয়া একটি লাশ। পুলিশ হোটেল ওয়েটারদের কিছু জিজ্ঞাসা করতে থাকবে শব্দহীন।

কাটঃ

২য় দৃশ্য
সকাল
একটি বেডরুম

রুমের ডানপাশে বিছানা। তার বিপরীত পাশে ড্রেসিংটেবিল এবং আয়না। দেখা যাবে ললিতা বিছানা সাজাচ্ছে। লালরঙের শাড়ী পরা,সজ্জিত চুল, কোমরে আঁচল গুঁজে রেখেছে।আয়নার সামনে সায়ন নিজকে পরিপাটি করে নিচ্ছে। পরনে স্যুট টাই সু। চুলগুলো আছড়ে নিচ্ছে বারবার। ললিতা বিছানা সাজিয়ে সায়নের কাছে যাবে।টাই ঠিক করে দিতে দিতে কথা বলবে।

ললিলাঃ আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরবে।প্রদর্শনীটা ঘুরে আসবো।
সায়নঃকিসের প্রদর্শনী যেন!
ললিতাঃ(পূর্ববৎ ভঙিমায়)আজ প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিন।সবাই বলছে আজই যাওয়ার জন্য।
সায়নঃ ও আচ্ছা! তোমার চিত্র প্রদর্শনীতে? ওখানে গিয়ে কী হবে? বাদ দাও।তারচে পার্কে বসে বাদাম চিবানো উত্তম।(বলে আড়চোখে ললিতার আচরণ লক্ষ্য করলো।)
ললিতাঃতোমার সব বিষয়ে হেয়ালী।এত কষ্ট করে চিত্রগুলো আঁকলাম, তার আজ প্রদর্শনী হচ্ছে-শতমানুষ দেখছে -আর আমি যাবো না!
সায়নঃ শত মানুষ দেখছে না কাকপক্ষীও উড়ছে না -কে জানে! হস্তচিত্র না ছাই! শিশুকালে আমি কাঠপিন্সিল দিয়ে এরচেয়ে ভালো আঁকতাম।
কত ঘর এঁকেছি চারকোণা! স্কেল ছাড়া বাঁকা হয়ে যেতো, তাই স্কেল দিয়ে সোজা করে আঁকতাম। ঘরের কাছের গাছগুলো বড় আঁকতাম, তারপর নদী বয়ে যেতো সুদুরের কোনো গ্রামে, দুরের গাছগুলো ক্রমে ছোট থেকে ছোট করে আঁকতাম। আর গাছগুলোর গভীরে ডুবে থাকতো লহিত ডুবন্ত সূর্য। চিল-বকসহ সব পাখি নীড়ে ফিরতো উড়ে।কি যে রমণীয় চিত্র! আহা! ছবিতে আরো থাকতো.....
ললিতাঃ হস্তচিত্র না ছাই? কাঠপিন্সিল দিয়ে এরচেয়ে ভালো আঁকতে? (অসংযত বালকোচিত কন্ঠে) যাবো না,যাবো না তোমার সঙ্গে।ছিঁড়ে ফেলবো সব ছবি। পুড়িয়ে ফেলবো। তুলিগুলো দিয়ে তুমি কান খুছিয়ো।
সায়নঃ (কানে হাত দিয়ে)হ্যাঁ মন্দ হয়না।অনেকদিন কাজের চাপে কান পরিষ্কার করা হয়না।(হঠাত মনে পড়ার ভঙ্গিতে) না না। এতো মোটা তুলি তো আমার কানে ঢুকবে না।
ললিতাঃ না ঢুকলে জোর করে ঢুকিয়ে দেবো।
সায়নঃ ওগুলো দিয়ে বরঞ্চ ফ্লাওয়ারবেস পরিষ্কার করবো,কি বলো?
ললিতাঃ (বিছানার একপাশে বসে পড়ে স্বগত)আমার কোনকিছুতেই উনার মূল্যায়ন নেই ।আমার সব কিছুই ফেলনা ।কিছু বলবনা আর এই ঘরে।( কাঁদোকাঁদো কণ্ঠে) কারো সাথে আর কোন কথা নেই ।
সায়নঃ (আকস্মিক কণ্ঠে ) আচ্ছা একটা ধাঁধা বলি?
লঃ (চড়ে বসে)চুপ! একটা কথা নয়।
সাঃ একটা ধাঁধা....
লঃচুপ!( মুহূর্তে নীরবতা)
সাঃ ইয়ে মানে ...
লঃ(মুখে আঙুল দিয়ে ইশারা করে "চুপ"
সাঃ মো ...
লঃ( ইঙ্গিতে চুপ থাকার নির্দেশ)
সাঃ মো ...(ভীত চেহারায় ) মোনা ....
লঃ চুপ!
(কিছুক্ষণ নীরব ।অফস্কিনে একটি বাচ্ছার খেলাধুলার আওয়াজ আসবে ।সাথে কুকুরের আদুরে কোঁ কোঁ শব্দ ।)
সাঃখানিক অপেক্ষার পর ভীত অপরাধী চেহারায় ।)মোনালিসা ! ( ভীত কৃত্রিম হাসি হেসে ) মোনালিসার কথা বলছিলাম।
লঃমোনালিসা!?
সাঃ হ্যাঁ। ধরো ,আমি তোমার সামনে মোনালিসাকে নিয়ে আসলাম । জীবন্ত মোনািসাকে বসিয়ে দিলাম এইভাবে ।আর পাশে রাখলাম মোনালিসার স্থির হস্তচিত্র। তুমি তখন কী করবে?মোনালিসার শুকনো স্থির হস্তচিত্র নিয়ে উঠেপড়ে লেগে যাবে ;নাকি জীবন্ত মোনালিসার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে ?
লঃ( অযাচিত উৎপল্লতায় )কি বলে! চিত্রটির দিকে কেন তাকাবো ?আমি তো জীবন্ত মোনালিসাকেই দেখবো ।
সাঃ সাবাস ! তুমি জিতলে এবং হারলে !
লঃ মানে !
সাঃ ( ললিতার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে মিষ্টি গলায়।) গোধূলির রঙ ছিটানো তোমার এই মুখখানা যখন কাঁদোকাঁদো করে অভিমানে ভরিয়ে তোলো ৃথিবীর সকল হস্তচিত্র মুল্যহীন হয়ে যায়। মনে হয় - প্রকৃতির সকল রঙ দিয়ে আঁকা জীবন্ত একটি চিত্র আমার সামনে হাজির।কীভাবে তখন চোখ ফেরাই বলো? আমি তো বৃক্ষের দিকে তাকিয়ে বৃক্ষের শাখার কথা ভুলে গেছি।নদীর দিকে তাকিয়ে নদীর ঢেউয়ের কথা ভুলে গেছি।আকশের দিকে তাকিয়ে থেকে থেকে টেরই পাইনি -আকাশের বৃষ্টিতে ভিজে চুপুচুপু।
লঃ (মুখের মাঝে রক্তিম আভার খেলা লুকানোর চেষ্টা করে। ) ভণিতা ছাড়ো। তোমার এই ভণিতায় কাজ হবে না।(হঠাত মনে পড়ার ভঙ্গিতে)ওহ! আমি তো কারো সাথে কথাই বলবো না।(ঘুরে বসে)তোমার সাথে আড়ি।
সাঃভণিতা কি আমি জানি।যতটুকু শিখিয়েছো, তাই-ই।
লঃআমার সাথে করার জন্য শিখাইনি।
সাঃ কার সাথে করবো তাহলে?
লঃকারো সাথে না।
সাঃএই মূল্যবান শিক্ষাটুকু অপচয় করবো? অপচয়কারী শয়তানের ভাই।শয়তানের ভাই হতে চাই না আমি।কাকা-জেঠা হলে কথা ছিলো।

অফস্কিনে একটি শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনা যাবে।।সায়ন- ললিতা সেদিকে মনোনিবেশ করবে। কান্নারত শিশু রনকের প্রবেশ রুমে।

রনকঃঅঁ্য অ্যঁ অঁ অঁ বওওল,..... অঁ অঁ অঁ বল....আমার বল।
সাঃ(রনককে কোলে নেবে।)কে নিয়েছে আব্বু? বল কে নিয়েছে? কে সে ক্রিমিনাল, যে আমার আব্বুর বল কেড়ে নেওয়ার সাহস পায়?(রনক কান্নারত, ড্রয়িংরুমের দিকে আঙুলের ইশারা করবে।)চলো।আমরা বাপ-বেটা মিলে বল উদ্ধার অভিযানে নামি।
রঃ অ্যঁ অঁ্য... আচ্ছা... চলো.... অঁ অঁ (দুহাতে চোখ মুছতে মুছতে চলে যায়।)

দৃশ্য২
ড্রয়িংরুম

রুমে দুসারি সোফা সমান্তরালভাবে রাখা।মাঝামাঝি একজন বসার উপযোগী আরেকটি সোফা। এদের মাঝখানে খাটো একটা টেবিল সাজানো।হাই-টেবিল, আরো অন্যান্য আসবাবপত্র। রুমে ঢুকবে ললিতা এবং রনককে কোলে নিয়ে সায়ন।রুমে দুটি সাদাকালো কুকুর একটি বল নিয়ে খেলা করবে।
সাঃ(রনককে কোল থেকে নামিয়ে কালো কুকুরটির দিকে এগুবে।) পিটু, এইই পিটু।রনকের বলটা দিয়ে দে সোনা।এটা ওর অনেক সখের ধন।এটা কিনতে গিয়ে ওর মায়ের হাতের গালি শুনতে হয়েছে,মুখের চড় খেতে হয়েছে।ওহ সরি, হাতের চড় খেতে হয়েছে- মুখের গালি শুনতে হয়েছে। দিয়ে দে সোনা। বলটা দে। (বলের উপর ঝাপটে পড়বে।কিন্তু বলটি চলে যাবে সিকির কাছে।)সিকি! লক্ষি কুকুরী। আমি জানি তুই খুব ভদ্র একটি কুকুরী। তুই বলটি অবশ্যই দিয়ে দিবি।( বলের উপর ঝাপটে পড়বে।ততক্ষণে বলটি পিটুর কাছে।) কুকুর জাতের মধ্যে তোর মত মহৎ কুকুর আর নেই।তোকে তো আমি কিংবদন্তি কুকুর খেতাব দেবো।তুই নিশ্চয়ই আমাকে ফাঁকি দিবি না।( এবার বলটি ডাইনিং টেবিলের নিচে।সায়ন সিকির দিকে আড় চোখে তাকিয়ে সিকির পুর্বেই বলটি হস্তগত করতে দ্রুত টেবিলের নিচে ছুটলো। অপ্রতুলভাবে নুয়ে টেবিলের নিচে ঢুকতে গিয়ে জোরেশোরে টাক খেলো মাথায়।ভেতরে আর না গিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে গেলো, চোখ ডান-বা করে ললিতাকে উদ্দেশ্য করে অপ্রস্তুতভাবে হাসবে।ললিতা এতোক্ষন হাসছিলো।হাসি কৃত্রিমভাবে থামিয়ে সায়নকে বলবে-
লঃ ব্যথা পেয়েছো বুঝি!
সাঃআমি? নাকি টেবিল!?
লঃনা না, টেবিল ব্যথা পেতে যাবে কেনো? তুমি ব্যথা পেয়েছো?
সাঃক্ষানিকটা ব্যথা পেয়েছে মাথা বেচারা।তাতে আমার কী?
লঃ টম যদি এই টাকটা খেতো- তার মাথা চলে যেতো রুমের ওইপাশে, বডি ঢুকে যেতো টেবিলের ভেতর। জেরি হলে ভিমরি রোগীর মত কাঁপতে কাঁপতে ফ্লোরে পড়ে যেত।আর যদি কুকুরটি হতো - সে ভয়ংকর দাতগুলো বের করে হুংকার দিতো
সাঃ এভাবে- (টম এন জেরির কুকুরটির মত হুংকার দেবে দাত বের করবে।এটা শুনে কুকুরগুলো চলে যাবে বাড়ির লনে।তা দেখে সায়নের মুখের হুংকার ক্রমেই মিলিয়ে যাবে।) হায়! প্রতিপক্ষ যুদ্ধ পরিকল্পনা পাল্টিয়েছে। আমাকে এখন সৈন্যসংখ্যা বাড়াতে হবে। রোহিত! রোহিত!
রোহিতঃ (অফস্কিন থেকে।) জী স্যার! আইতাছি। (রোহিতের আগমন)

সাঃ চল্! ওই কুকুরদের কাছ থেকে বল উদ্ধার করতে হবে।
(দুজন শিনা উঁচু করে টমের মত বীরদর্পে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরবে।একবার পিটুর সামনে ঝাপ দেবে,ব্যর্থ হবে। আবার সিকির সামনে ঝাপ দেবে,তাও ব্যর্থ। এভাবে ক্রমাগত ঝাপাঝাপি- কখনো ক্যারাম খেলার ময়দায় শরীর ভরিয়ে ফেলা- আঙ্গিনায় রাখা ঝাপলা গাছের সাথে শরীর আটকে যাওয়া। বারবার পরাস্ত। আবার নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়া।ললিতা অদৃশ্যে হেসে কুটিকুটি। রনকও কান্নাভেজা মুখে হাসবে।অবশেষে বল উদ্ধার করে রনকের হাতে দেবে।রনক বল পেয়ে তুষ্ট মনে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।

ললিতা সায়নের আপাদমস্তক চাক্ষুষ করে হাসবে । সায়নও তা দেখে অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে ।

#
দৃশ্য ৩
দিন
সুরম্য অফিসকক্ষ। পরিপূর্ণ আভিজাত্যের ছাপ। মনিবভক্ত কুকুরের মত বসে থাকবে রোহিত চেয়ারে।প্রধান কোচচেয়ারে ওপাশ ফিরে ফোনে কথা বলতে থাকবে সায়ন।
সাঃ Sayan speaking. yeah! I'm now preparated. Are you all staying there? ok. please, wait just five minutes more.I'll be there. thanks.(রিসিভার রেখে রোহিতের দিকে ফিরবে।একটা বক্স থেকে একটা শাড়ি বের করে দেখাবে।) শাড়িটা কেমন দেখতো।
রোঃ জীবনেও এমন সুন্দর শাড়ি দেখিনি দাদা।দিদিকে খুব মানাবে।
সাঃ special one on this world. (প্যাকেটটা গুটিয়ে।) নে, নিয়ে যা। তোর দিদিকে দিবি।
রোঃ(প্যককেটটা নিয়ে) নমস্কার দাদা।
(রোহিত চলে যাবে। সায়ন উঠে অফিসের মিটিং প্লেসের দিকে রওয়ানা দেবে।)

দৃশ্য ৪
দিন
মিটিংপ্লেস।
লম্বা টেবিলের দুইপাশে বেশ ক'জন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বসে আছে।সায়ন রুমে প্রবেশ করবে।
সাঃ good afternoon everybody.
উপস্থিতি কন্ঠঃ good afternoon to you sir.
সাঃ How are you?
উ কঃ we are fine.
১ম কর্মকর্তাঃ are you fine, sir?
সাঃ yaap! I'm good. well, at first, I'm sorry for my late. then, thank you for waiting for me.
২য় কঃ আপনার সান্নিধ্য পেয়েছি এতেই প্রশান্তি। অপেক্ষাতে শুধু আগ্রহ বেড়েছে।
৩য় কঃ আপনার জন্য অপেক্ষাতে আমাদের কষ্ট হয়নি স্যার।আর হবেও না।।
সাঃআপ্নাদের ভালোবাসায় সিক্ত। ধন প্রাচুর্য অনেক পেয়েছি।আপনাদের প্রেম প্রাচুর্যে অধিক সুখি- আনন্দিত। (প্রসন্ন মুখে)আমাদের কোম্পানি আজ উত্তরোত্তর উন্নতি করেই যাচ্ছে। পিতার উছিলায় আমি এর পাহারা দিচ্ছি।মালিক তো আপনারা। যারা সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি খেটে যাচ্ছেন কোম্পানির জন্য।আপনাদের ঐকান্তিকতায় শ্রমে ঘামে আর জ্ঞানে এই প্রতিষ্ঠানটি আজ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে রূপান্তরিত। আপনারা এর কর্মচারী নন- নন বেতনভোগী চাকরিজীবী ;আপনারাই এ কোম্পানির মালিক। (থেমে) আগামীতে আপনাদের কাজের গতি এবং মান বৃদ্ধি পাক।কোম্পানির সুনাম ধরে রাখতে কাজ করে যেতে হবে।(থেমে) এই মুহূর্তে আমি ঘোষণা করছি - আজ থেকে কোম্পানির মুনাফার ১০% লভাংশের অধিকারী ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দু( সমবেত হাততালি) সকল কর্মচারীর মহার্ঘভাতা বাসস্থানভাতা পরিবহণ ও চিকিৎসাভাতাসহ অন্যান্য সুবিধাদি বৃদ্ধি করা হবে।

দৃশ্য ৫
মধ্যবিকেল
পার্কের পাশের একটি রাস্তা।পাশে স্বচ্ছ পানির লেক।রাস্তার দু'ধারে কৃষ্ণচূড়া,বকুল ও অন্যান্য সজ্জাকরণ বৃক্ষের সাথে সমান তালে আইচক্রিম বাদাম চটপটি প্রভৃতির দোকান। সায়ন ললিতা আর তাদের মাঝখান দিয়ে হাঁটছে ছোট্ট ছেলে রনক ।ললিতা সাজগোজে অনেক পরিপাটি ।রনক হাঁটছে আর অনর্গল কথার তুবড়ি ছুটাচ্ছে । সায়ন ললিতা বাধ্য স্টুডেন্টের মত জবাব দিয়ে তাল রাখছে।

রনকঃ ... তারপর আমি সেই প্লেনে চড়ে নানু বাড়ি যাবো । নানু বাড়ির আমগাছ হতে আম পাড়বো ওই প্লেনে চড়েই উড়ে উড়ে । সেই প্লেনে কয়টি পাখা থাকবে আব্বু?
সায়নঃ তিনটি ...
রনকঃ হ্যাঁ তিনটি পাখায় আব্বু আম্মু আমি ।আমরা তিনজন দাঁড়াবো ।আর পাখিদের মত উড়বো । উড়ে উড়ে আকাশের একাবারে কা...ছে চলে যাবো। আম্মু ,তুমি দাঁড়াতে ভয় পাবে নাতো? আকাশে অনেক বাতাস , বাতাসের সাথে শয়তানের গান ।বুকটা চেপে ধরে ।তুমি ভয় পাবে নাতো ?
ললিতাঃ তুমি থাকতে আমি কি কোন কিছুতে ভয় পাই ? তুমিই তো আমার পাহারা...(কথা শেষ হবে না ।)
রনকঃ হ্যাঁ ঠিক বলেছ আম্মু। আমরা তিনজনই থাকবো সেখানে। আমাদের হাতে থাকবে একটা করে পিস্তল ।হুহু করে গুলি করে সোনালি চিল ধরবো ।কি বলো আব্বু?
সায়নঃ অবশ্যই । আমরা পাখি ধরবো তারার কবুতর ধরবো । একটা রূপোলী রঙের পরী ধরে এনে বাসায় রেখে দেবো ।তুমি তার সাথে খেলবে ।কথা বলবে ।
রনকঃ (চোখে বিভোরতা ।ঘোর কাটিয়ে ।)আব্বু ,এক্ষণই আমরা আকাশে যাবো ।চলনা আব্বু। আকাশে যাবো ।(সায়নের হাত ধরে নাড়াবে)
সায়নঃ (ললিতার দিকে রোমান্টিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ।) যাবে নাকি , ছেলের স্বপ্নের আকাশে ?নতুন একটি ধরিত্রী বানাবো । ভেসে বেড়াবো নক্ষত্রের মত, তোমাকে ঘিরে আমি আর আমাকে ঘিরে তুমি...
ললিতাঃ ( দুষ্টুমিতে নিচুগলায়) রনক ঘুরবে কাকে ঘিরে ?(মুচকি হাসবে)
সায়নঃ ( কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে ।) রনক আমাদের দুজনকে ঘিরে ঘুরবে।
যাবে না?
ললিতাঃ (চাপা কণ্ঠে) হাত টা তো ধরেই আছি ।তুমি উড়লেই আমি উরবো।তুমি ভাসলে আমি ।
সায়নঃ (রনকের কানের কাছে এসে ) আব্বুরে , তোমার আম্মু তো রাজি হয়ে গেছে । আকাশ থেকে তাহলে ঘুরেই আসা যাক।
রনকঃ ( সে দিকে কর্ণপাত না করে বেলুনের দিকে আঙুল দেখিয়ে টানবে ।) আব্বু ওই লাল নীল বেলুনটা কিনে দাও ।ওই সবুজটাও দেবে ।চলো।

সায়নঃ বেলুনে চড়েই বুঝি আকাশে যাবে?
রনকঃ (তা না শুনে নিজের কথায় ব্যস্ত ) আসো না ...। বেলুন কিনে দেবে...

সায়নঃ (অট্টহাসিরত ললিতার দিকে তাকিয়ে নিরাশার নিশ্বাস ফেলল।) উনি এখন আকশের তারার কথা ভুলে মর্তের বেলুনের প্রেমে মজেছে।

বেলুনের দোকানে যাবে । বেলুন কিনবে হরেক রকমের ।তিনজন আইচক্রিম খেতে খেতে আর কথা বলতে বলতে হাঁটবে হাসবে ।রনক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করবে আর সায়ন তার জবাব দিতে থাকবে......

দৃশ্য ৬
সন্ধ্যা
প্রোট্রেট গ্যালারী

দেয়ালে ঝুলানো বিভিন্নরকমের ঢঙের উদ্দ্যেশ্যের তৈলচিত্র ।এক পাশের দেয়ালে ঝুলানো ছবিগুলো দেখছে সায়ন ।ললিতা । সাথে রনক ।

সায়নঃ অয়েল ইউজে তুমি শুধু নিপুণ নও, সুনিপুণ ।( আরো কয়েকটি ছবি দেখবে এবং একটি ছবির কাছে এসে আটকে যাবে। ।
(ছবি- স্তনপানরত শিশুর মুখে দুধের পরিবর্তে রক্ত ঝরছে ।বিবসনা মা মৃত ।)
ছবিটি আরো অনেকেই দেখতে থাকবে আগ্রহভরে। সায়ন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছবিটি দেখবে। ) কি ভয়ানক প্রোট্রেট !
ললিতাঃ এটি সিরিয়ার মা ও শিশু। যারা দাঙ্গায় মারা গেছে বা যাচ্ছে -তাদের প্রতিনিধি।
সায়নঃ এ ছবি তুমি কীভাবে আঁকলে! ( আরেকটু দেখে) এই ছবিটির জন্য তোমায় আমি কুর্নিশ করবো। ( নুয়ে কুর্নিশ করবে।)
ললিতাঃ এই এই কি করছো ...
( উপস্থিত ভিজিটররা আকর্ষিত হবে।
১ম ভিজিটরঃ আপ্নিই তাহলে সেই নারী ! সামনে দাঁড়িয়ে।
২য় ভিজিটরঃ আপনার একটি অটোগ্রাফের জন্য কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি । ( ডায়রি বাড়িয়ে দেবে।)
উপস্থিত সকলের চোখে একই চাহিদা ।
ললিতাঃ আচ্ছা আচ্ছা দিচ্ছি...।
( সায়ন পাশেই ভড়কে যাওয়া চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।)

দৃশ্য ৭
সন্ধ্যা বেলা।
ড্রয়িং রুম।
সায়ন সোফায় বসে টেলিভিশন দেখবে। দেয়ালটায় বড় মাপের একটি প্রোট্রেট - সায়ন ললিতা আর রনক হাস্যোজ্জ্বল । কলিংবেল বেজে উঠবে ।টিভির শব্দ থাকবে ঘরে । মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করে সায়ন দরজার দিকে তাকাবে। অপস্কিনে ললিতা আর রনকের কথা ভেসে আসবে ।

রনকঃ আরো বেশ কয়েকটি খাবার তো আমি পছন্দ করি ।তুমি কিনা সারাক্ষণ শুধু দুধ দুধ দুধ খাওয়াতেই চাও। মানুষ কেন দুধ খায় বলতো ?
ললিতাঃ বড় হওয়ার জন্য।
রনকঃ বড় হয় কেন?
ললিতাঃ দুধ না খাওয়ার জন্য ।বেশি করে দুধ খাও ,দ্রুত বড় হয়ে গেলে আর দুধ খেতে হবে না।
রনকঃ বেশি করে দুধ খেলে তোমার মত বড় হয়ে যাবো?
ললিতাঃ হ্যাঁ।
রনকঃ তখন আবার আমার বাচ্চাকে দৌড়াবো দুধ খাওয়ানোর জন্য?

কথাগুলোর মাঝেই সায়ন দরজা খুলবে এবং দেখবে একজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন। মুহূর্তেই সায়ন তাঁকে চিনবে।

সায়নঃ আরে মাইদুল ! তুই? কোন মেসেজ না জানিয়েই ?

মাইদুলঃ জাস্ট সারপ্রাইজ ।( নিজ থেকেই ঘরে ঢুকতে ঢুকতে ।) এসে পড়লাম তোর নিদ্রা ভাঙতে । সুখের বাড়িতে তোর নিশ্চিন্তে ঘুম ।আর আমি সদা চোখ খোলা রেখে দেশে দেশে ঘুরি।
সাঃ ( সোফা দেখিয়ে দিয়ে।) বস বস । ডেনমার্ক থেকে কবে ফিরলি?
মাঃ আজই । সকালে ল্যান্ড করলাম। দিনভর হাতের কিছু কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তারপর সোজা তোর এখানে ।
সাঃ হ্যাঁ, তাই তো জার্নি ফেস। উঠেছিস কোথায়?
মাঃ নিজের বারিতেই। উত্তরায়। তো... তোর বাড়ি এতো ফাঁকা কেনো
? ( অফস্কিনে ললিতা আর রওনকের কথা অস্পষ্ট ।
) ফাঁকা নয় , লোক আছে। ডাকনা ওদের ।
সাঃ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। (অফস্কিনের দিকে লক্ষ করে) ললিতা, এদিকে এসো। দেখো কে এসছে।
ললিতা এবং রনক আসবে। মাইদুল রনককে কোলে নেবে।
সাঃ (মাইদুলকে দেখিয়ে ললিতাকে বলবে) এই হচ্ছে মাইদুল। দেশান্তরি ব্যবসায়ী ।ডেনমার্ক থাকে। যার কথা তোমাকে অনেকবার বলেছি। (এবার মাইদুলকে উদ্দ্যেশ্য করে) আর এ হচ্ছে আমার ধরিত্রী ।
ললিতাঃ( মাইদুলকে) কেমন আছেন মাইদুল সাহেব?
মাঃ বেশ ভালো । আপনি বলুন।
লঃ আমিও বেশ ভালো। আপনার কথা অনেক শুনেছি। তাতে আপনাদের বন্ধুত্বের গাঢতা সম্পর্কে ধারণা পেলাম ।
মাঃ হ্যাঁ, দুরত্ব আর সময় সেই গাড়তায় তারল্য ধরাতে পারেনি। after twelve years i'm in Bangladesh .but এখনো সেই আগের অনুভূতিটা টের পাচ্ছি।

সাঃ মুখে মুখে অনেক দূর। এতদিন পর দেশে ফিরলি , একটা আগাম বার্তা জানালি না ।
মাঃ it's a surprise my friend.
সাঃ তোর সারপ্রাইজের গুষ্টি কিলাই। ...
লঃ হয়েছে। গুষ্টি কিলানোর পরে আবার কি কিলানো শুরু করো কে জানে । আমি বরং তোমাদের জন্য চা নিয়ে আসি। এই সুযোগে কিলানো শেষ করো ।
ললিতা চলে যাবে ,সায়ন চড়ে বসে কথা শুরু করবে মাইদুলের সাথে।

সায়নঃআচ্ছা তুই আমাকে একটা কল তো দিতে পারতি।
মাঃ কল দিলে কি এখন এই মজাটা হত? ...

কথা চলতে থাকবে।

দৃশ্য ৮
রাত।
বারান্দা।
স্বচ্ছ জোসনার আলো। বারান্দার পাশে একটি জলপাই গাছ। গাছের ফাঁক গলে কিছু আলো পড়বে । পাতার ছায়াও পড়বে ।বারান্দার রেলিং ধরে সায়ন আর ললিতা। মদির কণ্ঠে কথা বলবে তারা ।

সাঃ পূর্ণিমার প্রথম অংশটাই সবচেয়ে বেশি সুন্দর ।গ্রামের খালের নতুন জলের মত কিশোর - দোষহীন। (থেমে) তোমার মুখের মত, পাপহীন। ( ললিতা মুচকি হাসবে।) তবু তোমার মুখে এসে যখন আছড়ে পড়ে, পূর্ণতা পায় জোসনা । কিশোর জোসনা উদ্বেল হয়ে উঠে।
লঃ কলেজের কত মেয়েকে পটিয়েছো এমন কাব্যবুলি ঝেড়ে ?

সাঃসে অনেক ।আপাতত একজন পটলেই হল। আচ্ছা, তোমার মনে আছে -এই দিনটির কথা?
লঃ কোনদিন ?
সাঃ আমাদের বিয়ের রাত ?
লঃ এমনই জোসনা ছিল সে রাতেও। তোমার সে কি দুষ্টুমি ! হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলে বারান্দায়।
সাঃ আর আকাশের সব সৌন্দর্য এসে জমা হয়েছিল তোমার মুখে।
লঃ(হেসে) সব মনে আছে।
সাঃ (পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে) গাও না।
লঃ কী?
সাঃ সেই গানটি । সেই রাতে যে গেয়েছিলে।
লঃ না গানটি আমার মনে নেই।
সাঃ (আহ্লাদে মিনতি করে ।) গাও না। গাও প্লিজ ।
লঃ আচ্ছা বাবা গাইছি ।

নজরুল গীতি - প্রিয়ো এমনো রাত ,যেন যায় না বৃথাই ......

দৃশ্য ৯
সন্ধ্যা।
একটি পাঁচতারা হোটেলের পুল-রেস্টুরেন্ট । পেছনে পুলের জলে আবছা আলোর টলটল ।সায়ন আর মাইদুল ছাতাওয়ালা টেবিলে বসে সিগারেট ফুঁকছে আর সামনে রাখা টাকিলার গ্লাসে কিছুক্ষণ পরপর ঠোঁট ডুবাচ্ছে ।

সাঃ ব্যবসা আমিও করি ।দাম্পত্য জীবন ব্যবসার গতি কমায় না, বরং বাড়ায় ।
মাঃ কীভাবে যে সময় ফুরিয়ে গেলো দ্রুত !রোড এক্সিডেন্টে মা বাবা মারা যাওয়ার পর সেই যে দেশ ছাড়লাম। ডুবে ছিলাম অর্থ উপার্জনে ।যেন ঘুমের মধ্যে সময় চুরি হলো। এখনো ঘুম কাটেনি । ঝাপসা চোখে ঘুমের রেশ। আমার কাছে প্রচুর ডলার আছে- পাউন্ড আছে। কাকে দেখাবো এসব । কি কাজে আসবে? কিছুই ভালো লাগে না।

সাঃ মানুষের পৃথিবী আসলে সংসারেই আবদ্ধ। সংসারে যে সুখি হতে পারেনা তার জন্য পৃথিবীর কোথায়ও সুখ নেই । আর যার সংসারই নেই ,তার পৃথিবীই নেই ।

মাঃ তুই সুখে আছিস?
মাঃ certainly, I'm happy. I'm satisfied with my family. দু'টাকা রোজগারে দু'টাকাই কাজে লাগার নিশ্চয়তা। আমার বউয়ের মাঝে যাদু আছে। যা আমাকে বাঁচিয়ে রাখে।

মাঃ তোকে দেখে হিংসে লাগে ।

সাঃ হাহাহা... তাও ভালো। মাথায় যদি সুবুদ্ধি আসে?

মাঃ হুম, এবার আসবে মনে হচ্ছে ।( কিছুক্ষণ থেমে।) ওয়েটার! Two more cocktails aunt roberta

সাঃ তোর সাথে চুক্তিটা কালই সেরে ফেলবো ।

মাঃ ওকে। আচ্ছা , তুই তো বিদেশী কাচামাল ইউজ করতে পারিস। দেশি পন্যের এরেজমেন্ট অতো ভালো নয় ।

সাঃ দেশে যথেষ্ট ভালো মানের কাঁচামাল আমি পাচ্ছি। যা বিদেশেও রপ্তানী হয় ।( সায়নের চোখ মুদে আসছে। টলছে ।অতিমাত্রায় নেশা হয়েছে।)

মাঃ তুই এবছরই একবার ডেনমার্ক ঘুরে আসিস। অনেক কাজ আছে। (মদের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে ।) নে, এটা চালিয়ে দে । ( সায়ন মাথা দিয়ে নিষেধ করবে। কিছুই দেখছে না সে।মাইদুলের জোরাজোরিতে আরেক ঢোঁক গিলবে ।অমনি তার ব্রেন ডিএকটিভ হয়ে পড়বে। )

দৃশ্য ১০
দিন

সায়নের বাড়ির ড্রয়িংরুম ।

কান্নাভেজা চোখে মুখে বিমর্ষ বিমূঢ বসে আছে ললিতা ।অন্য সোফায় মাইদুল ।দাঁড়িয়ে রোহিত ।সবাই ভারাক্রান্ত । ললিতার পাশে নির্বাক রনক পোষা একটি কুকুর নিয়ে বসে আছে।

মাঃ আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না । ওই সময়টা আমরা অনেক বেশি আবেগী ছিলাম । ভাবিনি যে এতো বেশি ড্রাংক ছিলাম আমরা। (থেমে) ওর নেশা অনুমান করতে পেরে আমি গুঁটিয়ে নিয়ে ,বিল পে করে কেনো যে আবার ওয়াশ রুমে গেলাম। কতক্ষণ ডিলেয় করেছিলাম মনে নেই।

এসে দেখি ...এসে দেখি ...(থেমে) এসে দেখি সায়ন পুলে উবু হয়ে পড়ে আছে। উহঃ ! ( কান্না)
রোহিতঃ ( কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে ) ভাগ্যেই এমন খেলা ছিলো ।ভালো মানুষরা দুনিয়া ছেড়ে চলে যায় আগে।

তিনজন পুলিশের লোক ঢুকবে রুমে।

ওসিঃ সরি মিসেস সায়ন ।আমরা অলরেডি স্পট ঘুরে এসেছি ।ইনভেষ্টিগেশান চলছে। অনেক ক্রু হাতে এসে গেছে । তদন্তের কাজে যেকাউকে যেকোনো সময় আমরা বিরক্ত করবো ।( রোহিতকে হাতের ডাণ্ডা দিয়ে গুঁতো দিয়ে।) এই তুই কে? কী নাম?
রোহিতঃ ( ভীত কণ্ঠে ) আমি এই বাড়ির চাকর। নাম রোহিত ।
অসিঃ কাজে লাগবে। ( মাইদুলকে) আপনি কে ?চোখ মুখ এতো লাল কেনো ?
মাঃ আমি মাইদুল ইসলাম। সায়নের ক্লোজ ফ্রেন্ড।
ওসিঃ ও আচ্ছা। কিছুক্ষণের মধ্যে আবারও আসতে পারি । ( চলে যায় )

রনক আর পোষা কুকুরটি হেটে চলে যায় ।

রোহিতঃ ছোট সাব। কই যান? বিপদ আপদের তো হাত পা নাই। (রোহিত তাদের পিছে পিছে যায় ।

বাড়ির বাইরে। লনের একপাশে কোনে ছোট্ট একটা কবর ।বুঝা যাবে পোষা একটি কুকুরের সমাধি। সেখানে গিয়ে অন্য কুকুরটিসহ রনক বসে থাকবে । কিছুটা দূরে রোহিত তা লক্ষ করবে ।

সায়নের বেড রুম।
মাইদুল নিজের সোফা থেকে উঠে ললিতার পাশে গিয়ে বসবে। মোলায়েম কণ্ঠে কথা বলবে।

মাঃ কেঁদে কি হবে বলুন । যে যাবার , সে তো গেছে। আপনাকে আরো শক্ত হতে হবে । দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। এই সব বিশাল সম্পত্তি আপনাকে সামলাতে হবে । ( ললিতা স্বচ্ছ চোখে তার দিকে তাকাবে। মাইদুল নিজের কথার সঠিকতা বোঝাতে মাথা নাড়বে ।)
ললিতাঃ ( মাথা নেড়ে মাইদুলের কথার সায় দিবে।) যান। ফ্রেশ হয়ে নিন। (উঠে দাঁড়াবে ।)আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছি । ( চলে যায়।)

সায়নের রুম ।মাইদুল আধ শোয়া হয়ে ল্যাপটপ চালাচ্ছে। ললিতা ঘরে ঢুকবে হাতে হরেকরকম খাবারসহ ট্রে।

লঃ আপনার জন্য খাবার এনেছি ।( বলতে বলতে পাশের শেলফে খাবার রাখবে। )
মাঃ ( উঠে বসবে।) ওহ । এতো খাবার ! সব দেখছি আমার পছন্দের লিস্ট ।( ললিতার দিকে তাকিয়ে) আমার পছন্দের খাবার তালিকাটা এখনো মনে রেখেছো ?
লঃ শুধু পছন্দের খাবার তালিকা নয়। আরো কত কিছু মনের মধ্যে সাজিয়ে রেখেছি ।
মাঃ সে আমার সুভাগ্য ।
লঃ ( মাইদুলের মুখে এক টুকরো খাবার তুলে দিয়ে ) অনেক সুভাগ্য মানুষকে কষ্ট দেয় ।

অফস্কিনে রনকের ডাক , আম্মু আম্মু ।

মাইদুলঃ ( রনকের ডাকের পরিপেক্ষিতে।) কতকিছুই নতুন করে ঘটলো ।
লঃ (বসা থেকে উঠতে উঠতে) শুধু ঘটলো না , পুরোনো ঘটনার পরিণতি ।আমি যাই , রনক ডাকছে ।

চলে যায় , মাইদুল সে দিকে চেয়ে থাকে ।

দৃশ্য ১১
রাত।
সেই বারান্দা ।
জোসনার আলো এখন গাঢ় হয়েছে । বারান্দার পাশে জলপাই গাছ। গাছের ফাঁক দিয়ে কিছু জোসনার আলো পড়ছে ।কিছু পাতার ছায়া পড়ছে ।বারান্দায় রেলিং ধরে ললিতা ও মাইদুল ।মদির কণ্ঠে কথা বলবে তারা।

মাঃ মধ্য পূর্ণিমা । তোমার মুখের বিষণ্ণতাও কাটিয়ে দিয়েছে।।
লঃ পূর্ণিমার এ এক দ্বিমুখী শক্তি - মনের বিষণ্ণতা যেমন বাড়ায় ; তেমনি কুয়াশার মত তা সরিয়েও আলো ছড়ায় ।
মাঃ এমন কত যে রাত আকাশের দিকে তাকিয়ে কাটিয়েছি।

নজরুল সঙ্গীতাংশ বাজবে। হালকা বাতাস আসবে । ঠাণ্ডা । ললিতা কেঁপে উঠে শাড়ির আঁচলে গা ঝাপটে নেবে ।)

লঃ চলো, ঘরে যাই ।
( চলে যায় ।)

দৃশ্য ১২
রাত।
সায়নের শোয়ার ঘর। মাইদুল আর ললিতা।

লঃ কত কিছুই না হারালাম তোমার জন্য ।
মাঃ আমিও কম হারাইনি। প্রাণপ্রিয় বন্ধুকেও হারালাম । ( ললিতা এবং মাইদুল পি ও ভি তে তাকাবে । দেয়ালের ওপারে রোহিত কান পেতে শুনতে দেখা যাবে এসব কথা । ) প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে মদ পান করিয়ে মাতাল করে পানিতে চুবিয়ে মেরেছি ।কারণ ,তার চেয়ে বেশি প্রিয় যে তুমি ।
( ললিতা মাইদুলকে জড়িয়ে বুকে মাথা রেখে কেঁদে উঠবে ।)

দৃশ্য ১৩
সকাল।
সায়নের বাড়ি ।
( দুজন সিপাহীসহ তিনজন পুলিশ ঢুকবে সামনে কাজের মেয়েটাকে দেখবে।)
ওসিঃ এই মেয়ে , নাম কী তোমার ? কে তুমি?
কাজের মেয়েঃ ( ভীত কণ্ঠে ) রাবিয়া । এই বাইত্তে কাম করি ।
ওসিঃ মাইদুল সাহেব কোথায় ?
রাঃ তিনিন তো উপরে ।
ওসিঃ আচ্ছা , ঠিক আছে।
পুলিশ উপরে চলে যায় ।সায়নের রুমে ঢুঁকে । মাইদুল পুলিশকে দেখে উঠে দাঁড়ায় ।
ওসিঃ এরেস্ট হিম।
মাঃ আমাকে এরেস্ট করছেন কেনো ?
ওসিঃ আপনি সায়ন সাহেব কে খুন করেছেন । আমাদের হাতে সব প্রমাণ এসে পৌঁছেছে ।
মাঃ কি বলেন ! সায়ন আমার প্রিয় বন্ধু। তাঁকে আমি খুন করতে যাবো কেন?
ওসিঃ ( গত কালের বলা রেক্ডকৃত কথাগুলো শোনাবে । পুলিশ তাঁকে হ্যান্ডকেপ পরিয়ে নিয়ে যাবে। যাওয়ার সময় রোহিত সামনে পড়বে। )

ওসিঃ তোমার সাহসি কাজের জন্য অনেক ধন্যবাদ ।
রোঃ আমার মনিব হত্যার বিচার হবে , এটাই চাই ।
( পুলিশ চলে যাবে। রোহিত উপরে উঠে যাবে সিঁড়ি বেয়ে ।

দৃশ্য ১৪
দিন।
সায়নের বেডরুম ।
শঙ্কা আর দুশ্চিন্তাহীনভাবে ললিতা রুমে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে । রুমে ঢুকবে রোহিত ।এসে ললিতার পিছে দাঁড়াবে ।আয়নায় দেখবে ললিতা ।

লঃ Thank you soo much Rohit. । তোমার বুদ্ধির কারনেই ওই খুনিটা ধরা পড়লো

রোঃ তুমি কি কম পরিশ্রম করেছো? ( থেমে , ললিতার কাঁধে হাত রেখে।)
পৃথিবীতে কত প্রেম কাহিনীর জন্ম হল । আমাদের প্রেমের কাহিনীর সাথে হয়তো কোনটাই মিলবে না ।
লঃ ( উঠে দাঁড়িয়ে। ) হয়তো পুঁথিতে লেখা থাকবে না । তবু আমরা অনেক বেশি সুখে থাকবো ।
দুজনে বিছানায় বসে পড়বে।
রোঃ এখন আমাদের দুজনের মাঝে আর কোন বাধা নেই । অতঃপর রাজা আর রানী সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো ।( বলেই ললিতাকে জড়িয়ে শুয়ে পড়বে ।)
লঃ এই ছাড়ো , রনক দেখে ফেলবে ।তোমার ছেলেটা এমনিতেই অনেক পাকা ।
রোঃ ছেলে আমার যতই পাকা হোক , বাবা মায়ের ভালোবাসার মাঝে নিশ্চয়ই ভিলেন হবে না ?( জোরে হেসে উঠবে।

ক্লোজ শটে রুমে ছোট ছোট দুটিপা ঢুকবে । উপরে বড় দা'য়ের আগা দেখাবে ক্লোজ শট। কিছুক্ষণ পরেই ললিতার বিকট চিৎকার। রুমের সিলিং ফেনে থাকবে ক্যামেরা ।

দৃশ্য ১৫
দিন।
সায়নের বাড়ির লনের এক কোণে , সেখানে পূর্বে একটি কুকুরের কবর ছিলো , এখন দুটি কবর । পাশে নির্বাক বসে থাকবে রনক ।

২১-১২-২০১০
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:১৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×