somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রহস্যেঘেরা চুক্তির সিন্দুক (Ark of the Covenant) ( শেষ পর্ব)

০২ রা এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৪:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুসা (আঃ) আর্কটি তৈরি করার পর এটি বনী ইসরাইল গোত্রের কাছেই ছিল। এমনকি মরুভূমিতে তাদের ৪০ বছর বিচরণের সময়ও এটি তাদের সাথেই ছিল বলে বাইবেল থেকে জানা যায়। যখনই তারা কোন স্থানে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করতো তখন আর্কটি একটি বিশেষ এবং পবিত্র তাঁবুর মধ্যে সুরুক্ষিত অবস্থায় রাখা হতো। এই বিশেষ তাঁবুটির নাম ছিল Tabernacle। বাইবেলের মতে যখন বনী ইসরাইল গোত্রের একটি অংশ যখন প্রমিজড ল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে জর্ডান নদীর তীরে আসে তখন আর্ক বহনকারী প্রিষ্টদের পা নদীর পানি স্পর্শ করা মাত্রই নদীর পানি শুকিয়ে যায় এবং যতক্ষন তারা নদী অতিক্রম না করে ততক্ষন এই অবস্থাতেই থাকে নদীটি। এরপর আর্কটি সহ বনী ইসরাইল গোত্র মিশরে উপস্থিত হয়। ( এরপরের কিছু কাহিনী আগের পর্বে উল্লেখ আছে)


ছবিঃ বিশেষ তাঁবু Tabernacle।
আর্কটির অভিশাপ হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য জেরিকো শহর হতে আর্কটিকে গরুর গাড়িতে উঠিয়ে কোন চালক ছাড়াই শহরের বাহীরে ছেড়ে দেয়া হয়। বাইবেলের ভাষ্য অনুযায়ী এর পর আর্কটি kirjath-jearim নামক স্থানে স্থানান্তরিত হয়। সেখানে এটি ২০ বছর ছিল। এরপর রাজা ডেভিড বা দাউদ (আঃ) আর্কটিকে পুনরুদ্ধার করে বনী ইসরাইল দেড় কাছে নিয়ে আসনে।
পবিত্র কোরআন থেকে আর্কটি সম্পর্কে যা জানা যায় তা হচ্ছে “এই সংগে তাদের নবী তাদের একথাও জানিয়ে দিলঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে বাদশাহ নিযুক্ত করার আলামত হচ্ছে এই যে, তার আমলে সেই সিন্ধুকটি তোমরা ফিরিয়ে পাবে, যার মধ্যে রয়েছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য মানসিক প্রশান্তির সামগ্রী, যার মধ্যে রয়েছে মূসার পরিবারের ও হারুনের পরিবারের পরিত্যক্ত বরকতপূর্ণ জিনিসপত্র এবং যাকে এখন ফেরেশতারা বহন করে ফিরছে ৷যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো তাহলে এটি তোমাদের জন্য অনেক বড় নিশানী ৷ “ [আল কোরআন ( ২:২৪৮)]

এ প্রসংগে বাইবেলের বর্ণনা কুরআন থেকে বেশ কিছুটা বিভিন্ন । তবুও এ থেকে আসল ঘটনার যথেষ্ট বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়।এক যুদ্ধে ফিলিস্তিনীরা বনী ইসরাঈলদের থেকে এটি ছিনিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু তাদের যে শহর ও যে জনপদে এটি রাখা হতো সেখানেই মহামারীর প্রাদুর্ভার হতে থাকতো ব্যাপকভাবে। অবশেষে তারা সিন্দুকটি একটি গরুর গাড়ির ওপর রেখে হাঁকিয়ে দিয়েছিল। সম্ভবত এ বিষয়টিকে কুরআন এভাবে বর্ণনা করেছে যে,সেটি তখন ফেরেশতাদের রক্ষণাধীনে ছিল কারণ সেই গাড়িটিতে কোন চালক না বসিয়ে তাকে হাঁকিয়ে দেয়া হয়েছিল। আর আল্লাহর হুকুমে এটিকে বনী ইসরাঈলদের দিকে নিয়ে আসা ছিল ফেরেশতাদের কাজ। আর এই সিন্দুকের ''মধ্যে রয়েছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য মানসিক প্রশান্তির সামগ্রী''- একথার অর্থ বাইবেলের বর্ণনা থেকে যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে এই যে,বনী ইসরাঈল এই সিন্দুকটিকে অত্যন্ত বরকতপূর্ণ এবং নিজেদের বিজয় ও সাফল্যের প্রতীক মনে করতো। এটি তাদের হাতছাড়া হবার পর সমগ্র জাতির মনোবল ভেঙে পড়ে। প্রত্যেক ইসরাঈলী মনে করতে থাকে, আমাদের ওপর থেকে আল্লাহর রহমত উঠে গেছে এবং আমাদের দুর্ভাগ্যের দিন শুরু হয়ে গেছে। কাজেই সিন্দুকটি ফিরে আসায় সমগ্র জাতির মনোবল ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। তাদের ভাঙা মনোবল আবার জোড়া লেগে যায়। এভাবে এটি তাদের মানসিক প্রশান্তির কারণে পরিণত হয়। ''মূসা ও হারুণের পরিবারের পরিত্যক্ত বরকতপূর্ণ জিনিসপত্র'' এই সিন্দুকে রক্ষিত ছিল। এর অর্থ হচ্ছে, 'তূর-ই-সিনাই'-এ (সিনাই পাহাড়) মহান আল্লাহ হযরত মূসাকে পাথরের যে তখতিগুলো দিয়েছিলেন। এ ছাড়াও হযরত মূসা নিজের লিখিয়ে তাওরাতের যে কপিটি বনী লাভীকে দিয়েছিলেন সেই মূল পাণ্ডুলিপিটিও এর মধ্যে ছিল। একটি বোতলে কিছুটা ''মান্না'ও এর মধ্যে রক্ষিত ছিল, যাতে পরবর্তী বংশধররা আল্লাহর সেই মহা অনুগ্রহের কথা স্মরণ করতে পারে, যা মহান আল্লাহ ঊষর মরুর বুকে তাদের বাপ-দাদাদে ওপর বর্ষণ করেছিলেন। আর সম্ভবত অসাধারণ মু'জিয়া তথা মহা অলৌকিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হযরত মূসার সেই বিখ্যাত 'আসা' বা লাঠিও এর মধ্যে ছিল।


ছবিঃ সোলেমান (আঃ) এর উপাসনালয়ে আর্কটির স্থানান্তর
সোলেমান (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে তাঁর উপাসনালয়(Solomon's Temple) নির্মাণের সময় তাতে আর্কটি স্থাপন এবং সুরুক্ষার জন্য একটি বিশেষ স্থান তৈরি করেন। তাঁর মৃত্যুর অনেক বছর পর ব্যাবলনিয়রা জেরুজালেম দখল করে নেয় এবং Solomon's Temple ধ্বংস করে দেয়। এরপর আর্কটির সঠিক অবস্থান জানা যায়নি। বাইবেলের Book of Ezra এর ভাষ্য অনুযায়ী ব্যাবলিনিয়রা জেরুজালেমের অন্যান্য সম্পদের সাথে আর্কটিও নিয়ে যায়। আবার Book of Revelation এর তথ্য অনুযায়ী ঐ সময় আল্লাহর আদেশে আর্কটি স্বর্গে স্থানান্তরিত করা হয়।
এরপর আর্কটির অবস্থান সম্পর্কে অনেক গুজব শোনা যায়। শোনা যায় এটি ইউথোপিয়ার অর্থোডক্স চার্চে সুরক্ষিত আছে। আবার কেউ কেউ মত দেন এটি Knight Templers রা পুনরুদ্ধার করে আয়ারল্যান্ডে নিয়ে যায়। কারো কারো মতে এটি ভ্যাটিকান চার্চে সুরক্ষিত আছে। কিন্তু এসবই গুজব যার কোন প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আর আর্কটিও পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম রহস্যময় বস্তু হিসেবে মানুষের মাঝেই রয়ে গেছে।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×