somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট কেন প্রয়োজন?

০৭ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সরকারের চেইন ফার্মেসি চালুর উদ্যোগ এবং অতি প্রয়োজনীয় ঔষধ হাসপাতালের ফার্মেসিতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের মাধ্যমে বিতরণ হতে যাচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা খাতের গেইম চেঞ্জিং ডিসিশন। সরকারি হাসপাতালে সাধারণত অসহায় ও দরিদ্র মানুষরা চিকিৎসা নিতে আসে। এই বাস্তবতায় একজন সাধারণ রোগী যখন হাসপাতালের ফার্মেসিতে যাবেন, তখন তিনি যেন ঔষধের ব্যবহার, ফলাফল, এবং প্রয়োগ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং পান — এটা খুবই জরুরি। আর এখানেই মূল ভূমিকা পালন করবেন ফার্মাসিস্ট।

আমাদের দেশে একজন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসককে প্রতিদিন যে সংখ্যক রোগী দেখতে হয়, সেটা অনেক সময়ই অমানবিক চাপ হয়ে দাঁড়ায়। এই জায়গায় ফার্মাসিস্ট চিকিৎসকের সহায়ক হিসেবে কাজ করে এই চাপ অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। ফার্মাসিস্ট নিশ্চিত করবেন সঠিক ঔষধ, সঠিক ডোজে, সঠিক সময়ের জন্য, সঠিক রোগী যাতে সবচেয়ে কম খরচে পায়। এর ফলে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার হার বাড়বে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাও বাড়বে।

সরকারি হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ হতে পারে গুণগত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের অন্যতম প্রধান ধাপ। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালে হসপিটাল ফার্মেসী আছে, এমনকি ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসও শুরু হয়েছে। সরকার এই ব্যবস্থা চালু করলে বেসরকারি পর্যায়েও এই ধারা আরও ছড়িয়ে পড়বে, ফলে আরও বেশি মানুষ মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পাবে। আর এই ফলাফল পৌঁছে যাবে শহর থেকে তৃণমূলে।

ফার্মাসিস্ট যখন ঔষধ সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকবে, তখন ঔষধের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। একই সঙ্গে ঔষধ না থাকার (স্টক আউট) ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। তাছাড়া প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঔষধ বিক্রি ও বিতরণের অনিয়মটাও বন্ধ হবে।

এই বাস্তবতায় প্রেসক্রিপশনে ঔষধের জেনেরিক নাম লেখা খুব দরকার। কারণ ফার্মেসিতে কোন ব্র্যান্ডের ঔষধ থাকবে, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। সরকারি ঔষধ ক্রয় হয় নির্দিষ্ট নিয়মে — যেখানে কম দামে সবচেয়ে ভালো গুণগত মানের ঔষধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেওয়া হয়। সেখানে নির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ডের নাম লিখলে পক্ষপাতের জায়গা তৈরি হয় এবং সেটা বাস্তবে সরবরাহ করা অনেক সময়েই সম্ভব হয় না।

ব্র্যান্ড নাম লেখার পেছনে বড় কারণ ছিল, ফার্মেসিতে কোনো ফার্মাসিস্ট না থাকা। যার ফলে ঔষধের গুণগত মান নিয়ে সংশয় ছিল। এখন যেহেতু গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট থাকবে, তাই গুণগত মান নিয়ে আলাদা করে চিন্তার দরকার নেই। আমরা জানি, যার কাজ তাকে করতে দিলে সেই কাজটাই সবচেয়ে ভালো হয়। ফার্মাসিস্টরা ঔষধের উৎপাদন থেকে বিতরণ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। সুতরাং ঔষধের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে থাকলে জনগণ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে যত ঔষধ প্রেসক্রাইব, বিতরণ বা বিক্রি হয়, তার ৫০%-এরও বেশি অযৌক্তিকভাবে ব্যবহৃত হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর হাসপাতালগুলোতে ১০% এর বেশি ব্যয় হয় শুধু অযৌক্তিক ঔষধ ব্যবহারের কারণে। আফ্রিকা ও এশিয়ার কিছু অংশে, ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ না থাকলেও ৬০%-এর বেশি রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় অযথা। বৈশ্বিক বাস্তবতায় বাংলাদেশেও কিন্তু এই সমস্যাগুলো প্রবলভাবে আছে। আর আমাদের মতো দেশে এই সমস্যার সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হতে পারে ফার্মাসিস্টের মাধ্যমে ঔষধ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং প্রেসক্রিপশন ছাড়া (ওটিসি ছাড়া) ঔষধ বিতরণ পুরোপুরি বন্ধ করা।

হাসপাতাল ফার্মেসি বাংলাদেশে চালু হবেই — সেটা এখন হোক, আর ১০ বছর পরে হোক। দেশ একটি গঠনমূলক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতের এই জরুরি পরিবর্তনটা যদি এখনই আমরা শুরু না করি, ভবিষ্যতে এর ফল ভোগ করতে হবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে। শুধুমাত্র উন্নত বিশ্বে আছে বলেই যে আমাদের চালু করতে হবে বিষয়টা তা নয় — বরং আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে হাসপাতাল ফার্মেসি চালুর এই উদ্যোগ স্বাস্থ্যখাতের ব্যয় কমানোর পাশাপাশি গুণগত সেবা নিশ্চিত করার জন্য একেবারে অপরিহার্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৫৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×