somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছবিতে একটি শান্ত নদীর কান্না ও সম্ভ্রমহানীর কাহিনী।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ এলাকা আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশ। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে নেমে আসা জলরাশি প্রায় ৮০০ নদী ও শাখা নদী সৃষ্টি করে বন্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। কালের বিবর্তনে এই ৮০০ নদী ও শাখানদীর অনেকগুলাই হারিয়ে গেছে, অনেকগুলাই দিক পরিবর্তন করে ফেলেছে আবার অনেকগুলাই মূল নদীর সাথে তার সম্পর্ক ধরে রাখতে পারে নাই। এই ৮০০ নদীর ভিতর "শীতলক্ষ্যা" নদী একটা বিশেষ নদী। ১১০ কিলোমিটার লম্বা এই নদীটি উত্তরে বৃহ্মপূত্র আর দক্ষিনে ধলেশ্বরী নদীর সথে মিশেছে।

আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা এই শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে রূপগন্জ এলাকায়। বইতে একটা শব্দ আছে, নদীর এপার ভান্গে ওপার গড়ে এইতো নদীর খেলা। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই এই নদীর দুপারে তেমন ভান্গন দেখিনি, তেমন কোন বড় চর পড়তেও দেখিনি। ভরা বন্যাতেও এই নদীতে তেমন বড় ঢেউ উঠেনা।মুরুব্বীদের মতে এই শীতলক্ষ্যা নাকি অন্যসব সব নদীর মা। এই কারনে এই নদীর এমন শীতল ও লক্ষী আচরন। আর এই শীতল আর লক্ষী শব্দ থেকেই এর নাম হয়েছে শীতলক্ষ্যা। আর এই নদীর পানি খুবই স্বচ্ছ আর খুবই পরিষ্কার।

যখন স্কুলে পড়তাম, তখন প্রতিদিন এই নদীতে গোছল করতাম। কলেজ ভার্সিটি বা এখনো সুযোগ পেলেই নদীতে নেমে যাই গোছল করতে। ছোট বেলা থেকেই লক্ষ্য করতাম, বছরের একটা বিশেষ সময়ে(মার্চ-এপ্রিল) নদীর পানি হালকা ঘোলা হয়ে যায়। ২-৩ দিন এরকম ঘোলা থেকে তারপর আবার ঠিক হয়ে যায়। গত কয়েক বছর লক্ষ্য করলাম এই ঘোলাপানির স্হায়ীত্ব ধীরে ধীরে বাড়ছে। গত বছরও এই ঘোলা সময়কাল ছিলো ১৫ দিনের মত। তারপর আবার ঠিক হয়ে গিয়েছিলো। ঢাকা শহরের উত্তরের তুরাগ নদীর দূষিত পানি বালু নদী হয়ে ডেমরা এলাকা দিয়ে এই শীতলক্ষ্যা নদীতে পড়ে তখন এর কিছু অংশ উত্তর দিকে আসে এবং যখন বৃষ্টিতে অথবা অন্য কোন উপায়ে উজানে পানির প্রবাহ একটু বেড়ে যায় তখন এই পানি দক্ষিন দিকে মেঘনার মোহনায় বিলীন হয়ে যায়।

এবার এই ঘোলাপানির শুরু হয়েছিলো ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে। এক সপ্তাহের মধ্যে এই ঘোলা পানি আরো ঘোলা হয়ে ঘন কালচে রুপ ধারন করলো। চরম দূর্গন্ধযুক্ত। তুরাগ আর বালু নদীর পানি যেমন কালো, তেমনই কালো। পানির উপর তৈলাক্ত জিনিষের আবরনের ছাপ সুষ্পষ্ট। এই তৈলাক্ত আবরনের কারনে নদীতে এখন কোন ঢেউ নেই বললেই চলে। একটা ছোটখাট পুকুরেও এর চেয়ে বড় ঢেউ দেখতে পাওয়া যায়। অনেক মাছ মরে ভেসে থাকতে দেখা যায়, এবং জাল দিয়েও মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। গোছল তো দুরের কথা, পানি গায়ে লাগালেই গা চুলকায় আর ফুলে উঠে।

গতকাল পহেলা বৈশাখের সকালে বাড়িতে গেলাম। বৈশাখের আগে ২/৩ দিন কয়েকদফা বৃষ্টি হওয়ার পর ধারনা করেছিলাম উজানে পানির প্রবাহ বেড়ে এই কালো পানিকে ধুয়ে নিয়ে আমাদের চকচকে পানি উপহার দিবে। কিন্তু কালকেও নদীর পানির রংয়ের কোন তফাৎ দেখতে পেলাম না। প্রায় ৩ মাস যাবৎ নোংরা দূর্গন্দ যুক্ত পানি এই নদীটার উপর চেপে বসে আছে। এরকম ভাবে পানি নোংরা কখনোই হয়নি আর এত লম্বা সময় কখনো নদীর পানি এমন ছিলো না। আমার প্রানের নদীটার এমন অবস্হা হবে কখনো ভাবতে পারিনি। কালকে এই নদী পার হবার সময় একেবারে চোখে পানি এসে গিয়েছিলো। হাতে ছোট ক্যামেরাটা ছিলো। কয়েকটা ছবি তুললাম ব্লগে পানি অভাবনীয় পানি দূষনের ব্যাপারটা শেয়ার করার জন্য।

এই ছবিগুলোতে নদীর পানি দূষনের ভয়াবহতার ছিটেফোটাও ফুটে উঠেনি। বরং পানিতে তেলের আবরেনর কারনে ছবিতে ক্লাসিক রিফ্লেশন পাওয়া গেছে।

এই অন্যায়ের কি কোন শেষ নেই? এভাবেই সবকিছু সুন্দর শেষ হয়ে যাবে!!!! এভাবে প্রকৃতিকে ধংশ করে দেওয়ার ফল অবশ্যই পেতে হবে।


১> এই প্রথম ছবিটা শুধু পানি দূষনের আগে তোলা। মাঝির পিছনে নদীর পানি দেখুন। টলটলে স্বচ্ছ পানির আরো অনেক ছবি ছিলো, কিন্তু আমার সুকন্যা আমার মোবাইলটা হাতে নিয়েই ছবি ডিলিট করা শুরু করে। তাই, এখন সেগুলা নেই।


২>


৩>


৪>


৫>


৬>


৭>


৮>


১০>


১১>


১২>


১৩>


১৪>


১৫>


১৬>

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১১:০৫
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×