somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘মুসলমানদের করণীয়’ প্রসঙ্গেঃ পর্ব ১

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার এক বন্ধু আই পি এস নজরুল ইসলামের মহা ফ্যান । ভূমিপুত্র বকুল সহ লেখকের সব বইগুলি তার বই-এর সেলফে শোভা পায় । এতটা আদিখ্যেতা আমার পছন্দ নয় কোনদিন ই। একদিন তো ভাল রকম তর্ক হয়ে গিয়েছিল । ওকে বলেছিলাম, “ধর্ম নিয়ে আমি পড়ি । এই কথাগুলোর সূক্ষ্মতায় তুই পৌঁছতে পারছিস না বলে তোর এত পছন্দ ভদ্রলোক কে । আমি যে দুই একটা লেখা পড়েছি , তাতে আমার কিন্তু আহা মরি কিছু লাগে নি । যে কথা গুলো তোর ধর্ম নিরপেক্ষ বলে মনে হচ্ছে , সেগুলো আসলে সাম্প্রদায়িকতার প্রকাশ , তুই ধরতেই পারছিস না ।” ও তো কিছুতেই মানবে না । আমাকে বলল, “তুই বিরাট ধর্মজ্ঞ ।তাই সব কথা তেই সাম্প্রদায়িকতা খুঁজিস ।” আমি তখন ক্ষান্তি দিয়েছিলাম । আর ওই প্রসঙ্গ তুলি নি কখনো । মনে হয়েছিল বন্ধুত্ব চটে যেতে পারে । আর সেটা আমার কারণে হোক আমি চাইনি ।

অনেকদিন ওর সাথে তেমন কথা হয় না । ও এখন সরকারী কর্মচারী । ব্যস্ত মানুষ । গত ১৫ ই সেপ্টেম্বর আমার স্কুটিটা নিয়ে বাজার থেকে ফিরছি, আচমকা দেখা তার সাথে । ও বলল, ও নাকি আমাদের বাড়ি ই গিয়েছিল । আমি বললাম , “আমি তো ছিলাম না । আয় বাড়ি একসাথে বসে আড্ডা মারা যাবে খানিকক্ষণ ।” ও বলল , “আমার কিছু কাজ আছে । একটা বই দিয়ে এলাম । পরে জানাস কেমন লাগলো । পরে তো বই টা নিতে আসবো, সেদিন কথা হবে, আড্ডা দেওয়া যাবে ।” বলে একটা অদ্ভুত হাসি হাসল । ওই অদ্ভুত হাসি মাখা এক্সপ্রেশন টার পাঠোদ্ধার আমার পক্ষে সম্ভব হল না । আমি বললাম, “আসিস একদিন সময় করে । অনেক গল্প করব । আম্মি একদিন তোর খবর নিচ্ছিল । তোর নাম্বার টা দে তো!” ও নম্বর টা দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেল । আমি যথা রীতি স্কুটি স্টার্ট দিলাম ।

বাড়িতে ফিরে দেখি আব্বু তো আহ্লাদে আটখানা।সালাম দিলাম না, তবু এতটুকু বিরক্ত হল না । বরং বলল , তোর বন্ধু একটা চমৎকার বই দিয়ে গেল তোকে পড়তে । এই বই টা নিয়ে তো দারুণ হইচই এখন । এতদিনে নজরুল ইসলাম একটা ভাল বই লিখেছে । বই টা ব্যান করবে শুনলাম । তোরা কথায় পেলি ? আব্বুর কাছে একটু ভাব নিয়ে বললাম । এসব ই তো আমাদের কাজ । বলে টলে বইটা নিয়ে উপরে চলে এলাম । আমার রুমে। ভাল করে খাটে বসলাম বই টা নিয়ে । লাল সুন্দর মলাটের ঝকঝকে বই একটা । পাতা খুলে মন দিয়ে পড়তে বসলাম । কয়েক পাতা পড়েই বন্ধু কে ফোন ! একখানা মার্জিত গালি দিয়ে বললাম , কেন দিলি বই টা পড়তে । যত পরছি তত মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে । ও বলল তোর কথাই মনে হল বই টা পড়ে । মনে হল তুই ভাল রিভিউ করতে পারবি বইটার । প্লিজ করে দে । এতক্ষণে বুঝতে পারলাম ওই এক্সপ্রেশন টার অর্থ কি ! তাই একবার পড়ে নিয়ে বইটার রিভিউ করতে শুরু করলাম । সেই রিভিউ টাই –আপনাদেরদের সাথে শেয়ার করবো ক্রমশ …

বইটি মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত। নাম “মুসলমানদের করণীয়” । লাল প্রচ্ছদে মোড়া । পাতার মান সুন্দর ঝকঝকে । মুদ্রণেও মিত্র ও ঘোষ এর সুনাম এর বিন্দু মাত্রও ক্ষুণ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই । ছোট বই । একশ দুই পাতার । প্রথমে খুলেই চোখে পড়লো যে লেখক পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে এই বই টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে –
“রাজ্যে মুসলমান দের অবস্থা খুবই খারাপ আর সকলের থেকে তারা শিক্ষায় পিছিয়ে ।সরকারী চাকুরী তে তাঁদের উপস্থিতি প্রায় শূন্যের কাছাকাছি ।কিন্তু এখনও এরকমই চলতে থাকবে ? মুসলমানদের অবস্থা বদলের জন্য করণীয় কি ? স্বল্প পরিসরে এই গ্রন্থে সেটাই বলার চেষ্টা করা হয়েছে।”
পড়ে মনে হল খানিকটা জ্যোতিষ বিদ্যা ধরনের । মুসলমানদের এই অবস্থা হওয়ার কারণ কি ? কথায় তাঁদের ত্রুটি, এসব খুঁজে দেখার কিম্বা দেখানোর দায়িত্ব লেখকের নেই । লেখক খালি সমাধানের পথ বলে দেবেন । যেমন টি জ্যোতিষে করা হয় আর কি !

এর পর উৎসর্গের পাতা । বই টি উৎসর্গ করা হয়েছে “ভূমিপুত্রদের” । এই শব্দটি লেখক আগেও বহু জায়গায় ব্যবহার করেছেন ।কিন্তু এখানে তিনি তার অর্থ তিনি পরিষ্কার করেছেন ।

বইটির বিষয়বস্তু শুরু করার আগেই লেখক আমাদের কতকগুলি পরিভাষার অর্থ পাঠকের কাছে পরিষ্কার করে দিতে চান । এখানে প্রথমেই বলা হয়েছে ‘মূল নিবাসী/ ভূমিপুত্র/ অধিজন’ বলতে তিনি বোঝেন শূদ্র ও শূদ্র থেকে ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের । বাদ বাকি ব্রাহ্মণ কায়স্থ বৈদ্য রা এদেশের ভূমিপুত্র নন ! কিন্তু তার এরকম মনে করার কারণ কি ? কারণ হল তার আর্য আক্রমণ তত্ত্বে বিশ্বাস । তিনি জানেন না যে আর্য আক্রমণ তত্ত্ব আসলে একটি ভাষা-তাত্ত্বিক তত্ত্ব , যা তখন প্রায় বিনা বিচারে এবং খানিক টা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে প্রতিষ্ঠিত ও প্রচারিত করা হয়েছিল । “…আর্য রা ছিলেন পশুপালক যাযাবর । কৃষি বা নাগরিক সভ্যতার শুরু তাঁদের মধ্যে তখনও হয়নি । তাঁদের শক্তির দিক ছিল শক্তিশালী ভাষা , বাহনরূপে দ্রুতগামী ঘরা,আর লোহার যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার । তার বহু আগেই এদেশের বাসিন্দা রা কৃষিকাজ শিখে শিল্প গড়ে গ্রামীণ এমনকি নাগরিক সভ্যতার পত্তন করেছেন ।পাণ্ডুরাজার ঢিবি , হরপ্পা , মহেঞ্জদরো তার প্রমাণ । কিন্তু ঘোড়া ও লোহার ব্যবহার তাঁদের জানা ছিলনা বলেই মনে হয় । ফলে সভ্যতায় এগিয়ে থাকলেও যুদ্ধে যাযাবর আর্যদের সাথে এঁটে উঠতে পারেন নি । টাই আর্যরা তাঁদের মেরে কেটে , জয় করে , তাঁদের উপর নির্মম যন্ত্র বর্ণ-ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছেন । তাঁদের জীবনের সবকিছু থেকে বঞ্চিত করে পিছিয়ে রেখেছেন। আমরা শূদ্ররা বা শূদ্র দের থেকে ধর্মান্তরিত রা সেই আদি বাসিন্দা দের বংশধর ।”এদেরকেই তিনি মূল নিবাসী , ভূমিপুত্র বা অধিজন বলে চিহ্নিত করেছেন । কিন্তু উক্ত অংশের প্রায় প্রতি টি বাক্যের বিরুদ্ধে নৃতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায় বর্তমানে । তাছাড়া লেখক আরও একটি বিষয় খতিয়ে দেখেন নি । তার সব কথা সত্যি বলে মেনে নিলেও ব্রাহ্মণ দের সাথে বৈদ্য ও কায়স্থ দের এক শ্রেণী তে কেন ফেলা হল ? তাঁদের কেন ভূমিপুত্র বলে স্বীকার করা হল না ? পৃথিবী তে কোন তত্ত্ব তো কোনদিন দাবী করেনি যে কায়স্থ ও বৈদ্য রা আসলে এদেশের ভূমিপুত্র নয় । অন্তত আমার জানা নেই ।

এরপর তিনি ‘ভদ্রলোক-ছোটলোক’ এর অর্থ পরিষ্কার করতে গিয়ে বলেছেন ব্রাহ্মণ- কায়স্থ-বৈদ্য রা নিজেদের সামাজিক অবস্থান কে অন্যদের থেকে উঁচু করে দেখাতে নিজেদের কে ভদ্রলোক আর শূদ্র ও শূদ্র থেকে ধর্মান্তরিত দের অবজ্ঞা করে ছোটলোক বলে থাকেন। কিন্তু নজরুল ইসলাম সাহেব এটা দেখেন নি যে সেই ‘ছোটলোক’ রাও আর নিম্ন আর্থ সামাজিক স্তরের মানুষদের ছোটলোক বলে থাকেন । আমার বাড়িতে থাকা রান্নার মেয়ে নাসিমাও জোলাদের ছোটলোক বলে থাকে অতি অনায়াসেই। সেক্ষেত্রে নজরুল সাহেবের কাছে উত্তর আছে কিনা আমার জানা নেই । (নাসিমা তো আর নজরুল সাহেবের বই পরেন নি ! জানবেন কিভাবে যে কারা কাদের ছোটলোক বলে আর তাঁর ই বাকি বলা উচিত! হে হে!)

আলোচনায় এর পরের বিষয়বস্তু হল ‘যেসব পরিভাষার ব্যাপারে সতর্ক থাকার প্রয়োজন আছে’ । এইখানে যেসব শব্দের অর্থ সম্পর্কে উনি আমাদের সতর্ক করতে চান , সেগুলি বহু-পরিচিত । বিদ্যাসাগর সাহিত্য-সম্রাট পণ্ডিত মহাত্মা ইত্যাদি ।

‘বিদ্যাসাগর’ পরিভাষার ব্যাপারে তাঁর মত হল , তিনি মনে করেন না যে ব্রাহ্মণ ঈশ্বরচন্দ্রের বিদ্যাসাগর পদবী উচ্চবর্ণের হিন্দুর চক্রান্তের ফল স্বরূপ প্রদত্ত । তাঁর এই উপাধি-র যোগ্যতা নেই । তাঁর বিধবা বিবাহ প্রচলন সুধু উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের জন্য ছিল । শূদ্র ও মুসলিমদের এতে কোন উপকার হয় নি । কিন্তু নজরুল ইসলাম কে আমার বিনীত জিজ্ঞাসা এই যে , আজকের ভারতের বিধবা বিবাহের আইন তো সকলের জন্য , পিছনে কার অবদান আছে বলে তিনি মনে করেন ? ঈশ্বরচন্দ্রের এই অবদান তিনি অস্বীকার করেছেন কিভাবে ? তিনি আরও বলেছেন , সংস্কৃত শিক্ষা তিনি জে সমস্ত অব্রাহ্মণ দের জন্য উন্মুক্ত করেছিলেন, তা নয়। তিনি বৈদ্য ও কায়স্থ দের জন্য উন্মুক্ত করেছিলেন , শূদ্রদের জন্য নয় । আমার তাঁর কাছে দ্বিতীয় জিজ্ঞাস্য এই যে, সেদিন তিনি সেই অচলায়তন ভেঙ্গেছিলেন , একথা কেউ অস্বীকার করতে পারে কি যে তার জন্যই তো আজ শূদ্র এমনকি মুসলিমরাও সংস্কৃতে এম এ করতে পারছে । বেদ নিয়ে গবেষণা করতে পারছে । বিদ্যাসাগরকে অশ্রদ্ধা করার পেছনে যে দুটি যুক্তি দেখিয়েছেন জনাব নজরুল সাহেব, তাতে তো আমি কুযুক্তি খুঁজে পাচ্ছি । তাছাড়া তাঁর বিদ্যাসাগর উপাধি যে ব্রাহ্মণদের প্রতারণা ,তাও মানতে পারলাম না । কেন না , সেই ব্রাহ্মণরাই বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ঘোর বিরোধী ছিলেন ।

এর পর ‘সাহিত্য-সম্রাট’ শব্দটিকেও তিনি ভয়ঙ্কর প্রতারণা মূলক মনে করেছিলেন , কেননা বঙ্কিম-চন্দ্র মুসলমান বিদ্বেষী ছিলেন । তিনি হিন্দুদের একটা পৃথক জাতি বলে মনে করেছিলেন । এই কারণেই উচ্চবর্ণের হিন্দু রা অব্রাহ্মণ রবীন্দ্রনাথ কে নয় , বঙ্কিম চন্দ্র কে সাহিত্য সম্রাট করেছিল ।(এখানে মনে হচ্ছে , রবীন্দ্রনাথ কে করলে তোমার প্রশ্ন , বিভিন্ন দার্শনিক মতাদর্শী দের মধ্যে হিন্দু চেতনা তো ছিলই না । মুসলিমরাই তো হিন্দু বলেন এদের এবং এদের পৃথক জাতিসত্তা তৈরি করেন । তাছাড়া হিন্দু দের মুসলিম বিদ্বেষ কিন্তু চিরকালের জন্য নয় । এর কারণ কিন্তু হিন্দুরা নয় মুসলিমরাই । প্রাচীন দক্ষিণ ভারত ও উত্তর পশ্চিম ভারতে হিন্দু রাজারা মুসলিমদের আশ্রয় ,বাণিজ্য করতে ও পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা দেন নি । কিন্তু মুসলিমদের হিন্দু বিদ্বেষ বরাবরের । তাঁদের ধর্ম প্রসূত । কাজেই মুসলিমরাই তাঁদের বাধ্য করে তোলে এই বিরোধিতায় । তাও কয়েক শতাব্দী পরে তারা বিরোধিতা করেছিল , সহ্যের সীমা অতিক্রম হওয়ার পর । নজরুল সাহেব আর একটি অভিযোগ করেছেন , তা হল আনন্দ মঠে তিনি তো শাসন ক্ষমতা মুসলিমদের হাত থেকে নিয়ে ব্রিটিশ দের হাতে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। একথা যদিও সত্যি নয় তবু যদি এক মুহূর্তের জন্য ধরেই নেওয়া যায় যে তিনি সেইটা চেয়েছিলেন, তাও তাঁর সমর্থনে একটা কথা বলতেই হয় যে তাঁর সময়ে ইংরেজ দের অত্যাচার তেমন ছিল না । তাছাড়া সমস্ত হিন্দু রা এত বছরের মুসলিম শাশনের পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিল । তারা বুঝতে পেরেছিল যে একমাত্র ইংরেজরাই তাঁদের রক্ষক হয়ে উঠতে পারে । একথা সত্যি যে ব্রিটিশ খ্রিষ্টান রা কখনোই হিন্দু বাড়ির নারী ও তাঁদের কুলদেবতার প্রতি অসম্মান করেনি , যা এতদিন মুসলিম শাসনে হত । তাঁদের মুল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক । তাই হিন্দুরা স্বাভাবিক ভাবেই মুসলিম দের থেকে ইংরেজদের কে শাসক হিসাবে পছন্দ করেছিল । তাছাড়া , বঙ্কিম চন্দ্র কে বলা হয় হিন্দু পুনর্জাগরনের দার্শনিক । তিনি বুঝেছিলেন এত বছরের শাসনেও মুঘল রা সারা ভারত কে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে পারেন নি । ফলে হিন্দু ঐক্যও স্থাপিত হয় নি । কিন্তু ইংরেজরা সেটা মাত্র কয়েক বছরেই করে দেখিয়েছেন । একমাত্র এদের ছত্রছায়াতেই হিন্দু ঐক্য ও পুনর্জাগরন সম্ভব । মুসলিম সমাজের ক্ষেত্রে এমনটাই চেয়েছিলেন স্যর সৈয়দ আহমেদ । তাই তিনিও দ্বিজাতি তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন। যদিও এই পার্থক্য করা খুব একটা কল্যাণকর পন্থা নয় , তবু বলা যায় যে সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্কিম চন্দ্র অযৌক্তিক কিছু করেন নি ।

এর পর জনাব নজরুল ইসলাম ‘পণ্ডিত’ শব্দ টি নিয়ে আলোচনা করেছেন । তাঁর বক্তব্য হল , পণ্ডিত পদ টি কেন বংশ গত হবে ? কেন জওহরলাল কে পণ্ডিত বলা হল , একই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেন বাবাসাহেব আম্বেদকর কে পণ্ডিত বলা হল না ? ( এখানে লক্ষণীয় : আম্বেদকরের লেখা সম্পর্কে কি তিনি অবহিত নন ? নয়ত বঙ্কিম কে সাম্প্রদায়িক বললেও আম্বেদকর কে বলেন নি কেন ? আম্বেদকার যেভাবে ইসলামের তীব্র সমালোচনা করেছেন, বঙ্কিম চন্দ্র তো তাঁর ধারে-পাসেও নেই। আম্বেদকরের মত স্পষ্ট ভাষায় তিনি কখনই ইসলামের সমালোচনা করেন নি । না কি লেখক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবেই বিষয়টি আড়াল করে গেছেন , নয়ত তাঁর হিন্দুদের বিরুদ্ধে ‘শূদ্র মুসলিম ঐক্য তত্ত্ব’ দেওয়া সম্ভব হত না । ) তাঁর বক্তব্য হল পণ্ডিত পদ বংশ গত ও ধর্মগত কেন হবে ? নজরুল সাহেব তো এটা জানেন যে , ‘রায়চৌধুরি’ হোক বা ‘চাকলাদার’ কিম্বা ‘শেখ’… এইসব পদবী প্রথমে ধর্ম বা বংশগত না থাকলেও পরে হয়ে গেছে । কিন্তু তাতে তো কারো কিছু যায় আসে নি । এই প্রশ্ন করতে গিয়ে তিনি বলেছেন “ওস্তাদ” আলাউদ্দিন খাঁ র ছাত্র হলেও রবিশঙ্কর “পণ্ডিত” হবেন কেন ? নজরুল সাহেবের এই বক্তব্য মেনে নিলেও বলা যায় যে পণ্ডিত বা ওস্তাদের মধ্যে সম্মানের পার্থক্য আছে কি ? তবে কি নজরুল সাহেব মেনে নিচ্ছেন যে পণ্ডিত ই বেশি সম্মানের ? তিনি তো ভালই জানেন যে,ওস্তাদ আর পণ্ডিতে পার্থক্য নেই, আর থাকলেও সাধারণ মানুষের জানার মধ্যে নেই , তবু তিনি জোর করে পার্থক্য তেনে এনে ইসলাম কে আলাদা করতে সচেষ্ট । ( আমার কথায় সন্দেহ থাকলে পথ চলতি মানুষদের জিজ্ঞাসা করে একটা পরিসংখ্যান নিতে পারেন যে কয়জন এই পার্থক্য টা জানেন ) ।নজরুল সাহেব , আপনি তো একই যুক্তি তে ইসলামি স্কুল গুলো কে ‘মাদ্রাসা’ আখ্যা দেওয়ার বিরোধিতা করতে পারতেন। ব্যাপার তো আসলে একই , তাই না ?

সর্বশেষ যে আলোচনা তিনি করেছেন তা ‘মহাত্মা’ শব্দ টি নিয়ে । তিনি বলেছেন যে গান্ধীজী মহাত্মা আখ্যা দেওয়ার মত নয় । কেন না তিনি বর্নব্যবস্থায় বিশ্বাস করতেন । তিনিও ছিলেন ব্রাহ্মণ্য ব্যবস্থার প্রতিনিধি। এই শব্দও লেখকের মতে ব্রাহ্মণ দের প্রতারণা । শূদ্র ও অহিন্দু দের ভুল বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত । কিন্তু আপনি যাকে দোষী বলছেন নজ্রুলসাহেব , তিনি তো ব্রাহ্মন্য ব্যবস্থার প্রতিনিধি নন । এই আমাদের সবার প্রিয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । ‘মহাত্মা’ আখ্যা টা তাঁর ই দেওয়া । সুতরাং এই উপাধি যদি অস্বীকার করতে হয় তবে গান্ধীজীর সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও অসম্মান করা হয় ।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×