somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময় জানার জন্য প্রাণীরা ব্যবহার করে হরেক রকম ঘড়ি

০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সামুদ্রিক প্রাণীরা সময় বোঝার জন্য দেহঘড়ি ছাড়াও আরও বিভিন্ন রকম ঘড়ি ব্যবহার করে। প্রাণীজগতের সকল সদস্য, হোক সে ক্ষুদ্র ছত্রাক থেকে শুরু করে পশু এমনকি মানুষ সকলেই দেহ ঘড়ি বা দেহের অন্তর্নিহিত যে সময় রক্ষক তার সাহায্যে দেহের সকল কাজকর্ম, আহার, নিদ্রা ও নিদ্রা হতে জেগে ওঠাকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু সর্বশেষ গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে কিছু প্রাণী, এমনকি মানুষও একাধিক ঘড়ির সাহায্যে দেহের স্বাভাবিক কাজকর্ম পরিচালনা করে।

অধিকাংশ সামুদ্রিক প্রাণী ২৪ ঘণ্টায় সময় কে ভাগ করে না এমন কিছু চক্রের সাহায্যে সময় হিসাব করে। দিনের মাঝে একাধিক বার জোয়ার-ভাটার চক্র তাদের শিকার করা বা খাদ্য সংগ্রহ করা বা অন্যান্য কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, আবার মাসিক চক্র গুলো ৩০ দিনের জন্য তাদের প্রজনন ক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে।

অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার নিউরোবায়োলজিস্ট, ক্রিস্টিন ট্রেসমার-রেইবল বলেন, বহু বহু বছর আগে প্রাচীন গ্রীসে জেলেরা লক্ষ্য করেছে, সমুদ্রের শামুক ঝিনুক চাঁদের সাথে মিল রেখে তাদের ওজন হ্রাস বৃদ্ধি ঘটায়। তিনি ব্যাখ্যা করেন, 'পূর্ণিমা অমাবস্যার চক্রের সাথে এদের প্রজনন অঙ্গের আকারে বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটে।'

বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানীরা দেখেছেন সামুদ্রিক প্রাণীর সকল সদস্য সবচেয়ে ক্ষুদ্র প্ল্যাঙ্কটন হতে বৃহৎ আকারের কাঁকড়া ও অন্যান্য জলজ প্রাণী এই চক্র মেনে চলে। তবে প্রাণীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট ব্যখ্যা করতে গিয়ে এই চক্র বা দেহ ঘড়ির গুরুত্ব যে প্রশ্নের সম্মুখীন হয় তা হল এই দৈহিক ঘড়ি কি অনেক গুলো ঘড়ির সমষ্টি নাকি কেবল একটি ঘড়িরই পরিবর্তিত রূপ। 'আর তখনই আমরা এ ব্যাপারে জানতে পারি' সহলেখক ট্রেসমার-রেইবল সেপ্টেম্বরের ২৬ তারিখে এক বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রকাশিত ফলাফলে একথা বলেন। ট্রেসমার-রেইবল এবং ইংল্যান্ডের লিচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের কারালাম্বোস কিরাকু সহ আরেকটি দল উভয়ই দুটি ভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী যারা একাধিক চক্রের মাধ্যমে দৈহিক কাজকর্ম পরিচালনা করে -তার নিদর্শন পান।

চন্দ্রচক্রের রহস্য ট্রেসমার-রেইবলের দল আবিষ্কার করেন যে একপ্রকার সামুদ্রিক কেঁচো বা র‍্যাগ ওয়ার্ম যার বৈজ্ঞানিক নাম Platynereis dumerilii একটি দেহ ঘড়ি ও চন্দ্র ঘড়ির সমন্বয়ে তাদের সময়ের হিসাব রাখে। এরা অমাবস্যার শুরুতে প্রজননক্রিয়া সম্পন্ন করে এবং নতুন প্রজন্মের জন্ম দেয় এবং এরা আবার আবার এক মাস পর প্রজনন করতে সক্ষম হয়। র‍্যাগওয়ার্মের পরিপূর্ণতা লাভের এই একমাস ব্যাপি চক্র ও কিছু র‍্যাগওয়ার্মের এই চক্র পূর্ণ করার ব্যর্থতা থেকেই গবেষকরা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হন যে দেহ-চন্দ্র ঘড়ি ও দেহঘড়ি সম্পূর্ণ দুটি ভিন্ন বিষয়।

কিন্তু এক অনাকাঙ্ক্ষিত মোড়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য জানা যায় তা হল র‍্যাগওয়ার্মের দেহচন্দ্রঘড়ির জন্য দায়ী জিন তাদের দেহ ঘড়ির ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। শুধু তাই না, এদের চলাফেরা বা সামুদ্রিক গাছ বা পাথরের উপর হাঁটাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। দেহচন্দ্র ঘড়ির আনবিক কর্মকাণ্ড এখনো রহস্যময় থাকায় ট্রেসমার-রেইবল নিশ্চিত নন কীভাবে এটা ঘটছে।

দ্বিকালচারী কিরাকু ও তার দল সামুদ্রিক ক্রাস্টাসিয়া প্রাণী ইউরিডাইস পালচেরা যা একপ্রকারের পোকা- এরমাঝে একই সাথে দুই প্রকারের ঘড়ির উপস্থিতি টের পান। দেহঘড়ির পাশাপাশি অন্য ঘড়িটি ছিল সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে সম্পর্কিত। তবে এদের দেহের ঘড়ি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। কিরাকু এক গবেষণার রিপোর্টে ব্যাখ্যা করেন যে ইউরিডাইস পালচেরা সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে মিল রেখে খাদ্য সংগ্রহ করে, জোয়ারের সময় সাঁতরে সাঁতরে এগিয়ে যায় আর ভাটার সময় আবার তীরের দিকে ফিরে আসে। কাজেই এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় এরা ঢেউ এর সাথে বা দেহ চন্দ্র ঘড়ির সাথে মিল রেখে কাজ করছে কিন্তু সেই ঘড়ি কীভাবে কাজ করছে তা নিয়ে বিতর্কও আছে। কিরাকু আরও বলেন, কিছু গবেষকদের মতে সামুদ্রিক ঢেউ বা জোয়ার ভাঁটার সাথে যে ঘড়ি কাজ করে এই প্রাণীদের মধ্যে সেটি আসলে দুটি দেহঘড়ির অসামঞ্জস্য হয়ে চলারই ফল। আবার অন্যরা মনে করতেন জোয়ারভাটা ঘড়ি ও দেহ ঘড়ি দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ও স্বাধীন প্রক্রিয়া এবং এভাবেই তা বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছে।

ই. পালচুরার জিনে যে প্রোটিন দেহ ঘড়ির দায়িত্বে থাকে তা নষ্ট করা হলেও দুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ঘড়ি কাজ করতে পারে এবং তখন তার সাতাঁর কাটা নির্ভর করে জোয়ারভাটার উপর, কিরাকু এবং তাঁর দল এ বিষয়টি প্রমাণ করে দেখান। 'দেখে মনে হয় এরাই এদের নিজেদের অস্তিত্ব', কিরাকু যোগ করে বলেন, "তারা আরও কিছু উপাদান ব্যবহার করতে পারে তবে এটা নিশ্চিত যে দেহ ঘড়ি কোনভাবেই জোয়ারভাটার সাথে সম্পর্কিত ঘড়ির উপর কোন প্রভাব ফেলে না।' টেসমার-রেইবলের মত ই. পালচেরার ঘড়িগুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কিত নয়। এবার কিরাকুর মতে 'আমি অবশ্যই এমনটি দেখে একটু একটি অবাক হয়েছি'। 'আমি ভেবেছিলাম এদের মাঝে আরও মজবুত কোন সংযোগ থাকবেই।' এমনকি উনি ওনার কয়েকজন সহ লেখকদের সাথে যেমন মলিকিউলার বায়োলজির জন্য ইংল্যান্ডের কেম্ব্রিজে অবস্থিত এম আর সি ল্যাবরেটরিতে মাইকেল হেসটিংস এর সাথে এ ব্যাপারে বাজিও ধরেছিলেন। 'এবং আমি সেই বাজি হেরেছি' হাসতে হাসতে কিরাকু বলেন।

একটি ঘড়ির ভেতর কিরাকু এবং টেসমার-রেইবল উভয়ই পরিকল্পনা করেন নিজ নিজ বিষয়ের ঘড়ির ওপর আরও গভীর ভাবে পড়াশোনা ও জানার লক্ষ্যে কাজ করবেন। এক বাজিতে কিরাকু ই. পালচেরায় একই প্রোটিন কি দুটি ঘড়িরই কাজ কে প্রভাবিত করে কি না এটা জানার জন্য কিছু পরীক্ষা করেন। তিনি বলেন 'আমরা কিছু ঘড়ির জিন কে নষ্ট করে দিচ্ছি এটা দেখার জন্য যে তাদের মধ্যে কিছু জিন কি পূনরায় ব্যবহৃত হয় কিনা' । কিরাকু বলেন যে, একই রকম ঘড়ির জিন বিভিন্ন প্রজাতিতে বিভিন্ন রূপে দেখা যেতে পারে। কাজেই এধরনের গবেষণা ক্রাস্টাশিয়ান প্রাণী ছাড়াও অন্যান্যদের উপরও প্রভাব বিস্তার করবে।

টেসমার-রেইবল আরও বলেন যে পৃথিবীর প্রাণীদের মধ্যে বহু ধরনের ঘড়ি থাকতে পারে। 'ইদুরের কিছু জিন এর গতিকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত এগিয়ে নিতে পারে যা তার দেহ ঘড়ির সময়ের সমান' তিনি বলেন। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষের ঘুম ও পূর্ণিমা ও অমাবস্যার চক্র তথা চন্দ্র চক্রের সাথে সম্পর্কিত, আবার আরেক গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু হরমোন মানুষের দেহের চক্র মাসিক অথবা অর্ধ মাসিক করতে সাহায্য করে।

টেসমার-রেইবল বলেন 'কেন ইঁদুরের জিন প্রতি ১২ ঘণ্টা পর পর তার চক্র কে পরিবর্তন করে? কেন মানুষের প্রতি মাস অন্তর একটি সময় পরিমাপক এর প্রয়োজন হয়? এগুলো এমন কিছু প্রশ্ন যা নিঃসন্দেহে জ্ঞানের সীমাকে আরও সমৃদ্ধ করবে'

বাই নেমে প্রকাশিত কালেরকণ্ঠতে দেখতে পারেন
পত্রিকা লিঙ্ক- সময় জানার জন্য প্রাণীরা ব্যবহার করে হরেক রকম ঘড়ি
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:২৬
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×