নিয়নের আলো গুলো কেবল জ্বলে উঠতে শুরু করেছে। এই সময় টাকে পৃথিবী নামক একটি গ্রহে সুন্দর নামে আখ্যায়িত করা হয় ’এ ডার্কার স্টেইজ অব ট্যুইলাইট’। ডাস্ক। গোধূলী... । শহরের বড় বড় রাস্তা গুলোতে দু একটি ৩য় স্কেলের রিমিন কার ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না। জেক্সলিন নামের এই গ্রহে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যমই হচ্ছে বিভিন্ন স্কেলের 'রিমিনকার'। এছাড়াও ভূ-গর্ভস্থ তিনটি স্তরেও রয়েছে টিউব। টিউব গুলো হয়তো এখন যাত্রীহীন।
শহরের প্রধান প্রধান মোড় গুলোতে এখন জটলা। শহরের এভিনিউগুলোর ত্রিমাত্রিক প্রজেক্টরের আর কিছুক্ষণ পরেই সরাসরি দেখানো হবে জেরক্স এর 'নাইন নাইন' অপরাধের শাস্তি। অর্থ্যাৎ অপর্যাপ্ত জ্বালানীসহ মহাকাশ যানে করে নিক্ষিপ্ত করা হবে 'জেক্সলিন' গ্রহের বাইরে। যার ফলাফল আটানব্বই ভাগ মৃত্যু। 'নাইন নাইন' শাস্তি শুধু মাত্র বড় ধরনের কুখ্যাত অপারাধীর ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়।
এই গ্রহের বাসিন্ধারা এখনও বুঝতে পারছে না জেরক্স কেন এই শাস্তি পেতে যাচ্ছে। কারণ জেরক্স বিজ্ঞান অধিপ্তরের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা এবং প্রথম শ্রেণীর বিজ্ঞানী। দুপুরে হঠাৎ করেই বিজ্ঞান অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেই প্রত্যেকের 'রিস্ট ভয়েচ রের্কোডার'র ছোট একটি বার্তায় এই তথ্য জানানো হয়। অথচ এই জেরক্সই গত তিন বছর আগে জেক্সলিন গ্রহকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। তিনি ল্যুসিক নামক মহাউল্কা পিন্ডকে দুই হাজার মাইল দুরে ধ্বংস করে রক্ষা করেন জেক্সলিন গ্রহকে। যদি ল্যুসিককে ধ্বংস করা সম্ভব না হতো তাহলে জেক্সলিন গ্রহ আজ ধ্বংস স্তুপ হয়ে থাকতো।
শহরের প্রতিটি মোড়ে, এভিনিউ এর সামনে ভীড় বাড়তে থাকে। আর কিছুক্ষন পর্ ভেসে উঠবে বিজ্ঞান অধিদপ্তরের কার্যালয়। জেরক্সের নাইন নাইন অপরাধের শাস্তির দৃশ্য। এই শাস্তির কথা ভাবলে প্রত্যেকে শিহরিত হয়। যদিও বা সেই অনুভূতি কৃত্রিম। কারণ এই গ্রহের কোন মানুষের শিহরিত বা অবাক হওয়ার ক্ষমতা নেই। প্রকৃত অর্থে এই গ্রহের মানুষের মানবিক আবেগ অনুভূতি নেই।
মানুষের প্রথম আর্বিভাব ঘটেছিল পৃথিবী নামক একটি গ্রহে। সেই গ্রহে নাকি ভালোবাসা নামক একটি ব্যপার ছিল। একজন পুরুষ, একজন নারী বৈধ একটি বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সন্তান অর্থ্যাৎ পরবর্তী প্রজম্ম জম্ম দিত। জেক্সলিন গ্রহে একজন মেয়ে বা একজন পুরুষের পরস্পরের প্রতি কোন আর্কষন, অনভূতি নেই। এখানে একজন মানুষের জিন থেকে ক্লোন করে ল্যাবরোটরিতে আর একজন মানুষ তৈরী করা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী আনুপাতিক হারে নারী, পুরুষ সৃষ্টি করা হয়। ভ্রুণ যখন ল্যাবরোটরিতে বেড়ে উঠতে থাকে সেই অবস্থাতে তাদেও করোটিক ল্যাবিওতে বিশেষ পদ্ধতিতে মানবিক গুণাবলির বেশ কিছু অংশ ধ্বংস করে ফেলা হয়।
ত্রিমাত্রিক একজন প্রজেক্টরে একজন সুর্দশন যুবকের ছবি ভেসে উঠে। সে কিছু বলে উঠার পরপরই বিজ্ঞান অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কঠিন মুখ দেখা যায়। হঠাৎ করে ক্যামেরা একবার জেরক্সের মুখের উপর থেকে ঘুরে আসে। জেরক্সের পাশে কিছুটা দূরে দুইজন তরুণ তরুণীকে দেখা যায়। এ্যালেক ও এলিন তাদের মুখ ভাবলেশহীন। জেরক্স এর মুখে কিছুটা হাসি। এই হাসির সঙ্গে জেক্সলিন গ্রহের মানুষেরা পরিচিত নয়। কারণ তারা কখনো হাসি দেখেনি। আবার দেখা যায় বিজ্ঞান অধিপ্তরের মাহপরিচালনের মুখ। তিনি বলতে শুরু করেন জেরক্সের 'নাইন নাইন' অপরাধের অভিযুক্ত হওয়ার কারণ। তিনি বলেন জেক্সলিন গ্রহে মানবিক আবেগ নিষিদ্ধ হয় প্রায় দেড় হাজার বছর আগে। তখন থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে সন্তান জম্ম দেয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ জেরক্স এমন একটি যন্ত্র আবিস্কার করেছে যা করোটিক ল্যাবিওতে ব্যবহারের ফলে মানুষ ফিরে পাবে ভ্রুণ অবস্থার হারানো মানবিক আবেগ, সৃষ্টি হবে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা।
এরপর জেরক্সের মুখ দেখানো হয়। আবার দেখানো হয় সেই তরুণীর মুখ। তারা গভীর আবেগ নিয়ে হাত ধরে পাশাপাশি বসে আছে। এরপর দেখানো হচ্ছে জেরক্সকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই মনুষ্যবিহীন মহাকাশযানের ভিতর। স্বয়ংক্রিয় ভাবে মহাকাশযানের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। মহাকাশ যান উৎক্ষেপন শুরু করে। হঠাৎ করেই আশ্চর্য্যজনক একটি ঘটনা ঘটে। দেখা যাচ্ছে অ্যালেক নামের সেই তরুন হাতে ভয়াবহ একটি অস্ত্র নিয়ে ছুটে যাচ্ছে মহাকাশ যানের দিকে, তার হাতের অস্ত্র দিয়ে আগুনের মত ফুলকি বের হয়ে আঘাত করে মহাকাশ যানের মাথায়। মহাকাশ যান থুবড়ে পড়ে। এরপর আগুনের কিছু ফুলকিই এদিক ওদিক ছুটতে দেখা যায়। এরপর কিছু রঙের এলোমেলো খেলা ছাড়া ত্রি-মাত্রিক প্রজেক্টরে আর কোন ছবিই দেখা যায় না।
পরিশিষ্ট: জেক্সলিন গ্রহে এখন প্রাকৃতিক ভাবেই মানব সন্তানের জম্ম হয়। একের অপরের প্রতি অনুভূব করে গভীর আবেগ, উৎকন্ঠা, ভালোবাসা। জেরক্স কে নাইন নাইন অপরাধের শাস্তি পেতে হয়নি। অ্যালেন নামের সেই ক্রোধন্মোত্ত যুবকের হাতে বিজ্ঞান অধিপ্তরের মহাপরিচালক মারা যাবার পর জেরক্স এখন সেই দায়িত্ব পালন করছেন। জেক্সলিনর কৃত্রিম লেকের ধারে গোধূলী দেখার জন্য এখন ভীড় জমে। 'এ ডার্কার স্টেইজ অব ট্যুলাইট এই সব লেকের ধার দিয়ে মাঝে মাঝে হেটে যায় অ্যালেক এবং এলিন। হয়তো তখন বাতাসে এলিনের চুল এলোমেলো হয়ে যায় কখনো সবুজ শাড়ীর আঁচল উড়ে যায়...
অফ টপিক- গল্পটি ২০০৯ সালে লেখা
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ২:০৮