somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মালয়েশিয়ার অবিশ্বাস্য উন্নতিতে ইসলামী ব্যাংক, বীমা ও হজ্ব ফান্ডের অনন্য ভূমিকা:-মেথিউ বেলোট্টি (Matthew Bellotti)

২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





বিগত ৩১ আগস্ট ২০০৭ হাটি হাটি পা পা করে মালয়েশিয়া তাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে এসেছে। ৫০ বছর পূর্তির দিনটিকে তারা মহাসমারোহে, উৎসবের আমেজে উদযাপন করেছে। যে অনুষ্ঠান ছিল অর্ধশতাব্দীর মধ্যে বিস্ময়কর এবং চমকপ্রদ। প্রথম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের দিনটিতে কুয়ালালামপুরে পতাকা উড়িয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টুন্কু আবদুর রহমান। এটি ছিল ১৯৫৭ সালের ঘটনা। ১৯৫৭ থেকে ২০০৭। এ পঞ্চাশ বছরে মালয়েশিয়া প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। বলা যায় উন্নতির শীর্ষ বিন্দুতে অবস্থান করছে। সুতরাং এ জাতি অতি আনন্দে আত্মহারা হয়ে তাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করবে তা তো নিতান্ত একটি স্বাভাবিক ঘটনা।

২০১২ সালে এসে মালয়েশিয়া আজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে সম্মুখ পানে। আশেপাশের উন্নয়নশীল দেশের জন্য মালয়েশিয়া একটি অনুকরণীয় আদর্শ (মডেল) হয়ে উঠেছে। সীমানা পেরিয়ে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের জন্যেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলছে। শুধু কী তাই! প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং মুসলিম বিশ্বের উন্নয়নে রাখছে সক্রিয় ভূমিকা।

মালয়, চায়নীজ ও ইন্ডিয়ানদের সম্প্রীতি এবং ভ্রাতৃত্ববোধের যে পরিচয় পাওয়া যায় তা উন্নত রাষ্ট্রগুলোর কাছে ঈর্ষণীয়। মালয়েশিয়া উন্নয়ন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোন অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তা ব্যাপক হারে সমগ্র অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়েছে। আকর্ষণীয় আধুনিক ও নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীসমূহ যেমন- পেট্টোনাস টুইন টাওয়ার, পেনাং ব্রীজ, আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, পুত্রাজায়া (প্রশাসনিক রাজধানী) এবং সাইবার জায়া (তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি নগরী) গোটা দেশজুড়ে উন্নয়ন ছড়িয়ে দেয়ার সুস্পষ্ট লক্ষণ।

মালয়েশিয়ায় আছে মনোরম সমুদ্র সৈকত, এশিয়ার দীর্ঘতম জলপ্রপাত, বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ফুল (ঋষড়বিৎ)। আরো আছে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট কিনাবালু (উচ্চতা ৪০৯৫ মিটার) এবং কয়েক হাজার প্রজাতির বন্য প্রাণি, পাখি এবং জলজ প্রাণি।

প্রকৃতি এ দেশটিকে সাজিয়েছে তার অফুরন্ত ঢালি দিয়ে। প্রতিবছর প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে এখানে বেড়াতে আসে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল হতে লক্ষ লক্ষ পর্যটক। এ বছর পর্যটক আগমনের সংখ্যা অতীতের যে কোন রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাবে। পর্যটক আকর্ষণ করার জন্য সরকার একটি মেগা বাজেটের প্রকল্প নিয়েছে। যা- ‘‘গধষধুংরধ, ঞৎঁষু অংরধ’’ নামে খ্যাত। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশটিকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা। দেশটির পর্যটন মন্ত্রী ওয়াইবিএস দাতুক সেরি আদনান এ প্রসঙ্গে বলেন, ২০১০ সালে পর্যটক আগমনের সংখ্যা ছিল ১৫.৪ মিলিয়ন এবং এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০.১ মিলিয়ন। আমরা লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি এবং আশা করা হচ্ছে হয়তো লক্ষ্য মাত্রাকেও ছাড়িয়ে যাব।

দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প ‘‘গধষধুংরধ, ঞৎঁষু অংরধ’’ কে সফল করতে সংশ্লিষ্ট সকলে একত্রে, উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। হোটেল এবং পর্যটন কেন্দ্র গুলোকে আরো আকর্ষণীয় ও উন্নত করা হয়েছে। নতুন পুরাতন পর্যটকদের ভিড় সামলাতে হোটেল মোটেলগুলিতে স্থান সংকুলানের জন্য রুমের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সুন্দর সময় কাটানোর আদর্শ স্থান হিসেবে মালয়েশিয়া পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় এগিয়ে আছে। আমরা চেষ্টা করছি পর্যটকদের সর্বোত্তম সেবা দিতে, যাতে তারা গৃহে থাকার মত পরিবেশ উপভোগ করতে পারে। আমরা পর্যটকদের জন্য রেখেছি সব ধরনের উপকরণ। আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা। এতে থাকবে আমাদের দেশীয়-ঐতিহ্যের ছোঁয়া।

কী নেই এখানে; সব আছে আমাদের। আমাদের আছে- পর্বত, ঝরনা, গলফ খেলার সুযোগ, ড্রাইভিং এর সুযোগ, কেনাকাটার সুযোগ প্রভৃতি। মালয়েশিয়ার ট্যুরিজম মন্ত্রণালয় ঐ বছরের পুরোটা সময় ধরে সুবর্ণ জয়ন্তী পালন উপলক্ষে শত শত ইভেন্টের আয়োজন করেছিল। আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উপর বিভিন্ন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা ছিল। আরো ছিল নানা বিনোদনের আয়োজন।

মালয়েশিয়ায় জনপ্রিয় মেগাসেল (বিক্রয় উৎসব) যা ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে। মরুভূমির প্রচন্ড উষ্ণ আবহাওয়া থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে তারা ছুটে আসে এখানে। এখানে বড় বড় অনেক শপিং মল রয়েছে। এসব মলগুলোতে তুলনামূলকভাবে অনেক কম দামে জিনিসপত্র কিনতে পাওয়া যায়।

ডলার ও রিংগিতের বিনিময় হারের বর্তমান অবস্থান মালয়েশিয়ার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এদেশের গর্ব করার মত বিষয়গুলি হচ্ছে বৈদেশিক বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত অবস্থান, বৈদেশিক মুদ্রার শক্তিশালী রিজার্ভ, বড় অংকের জাতীয় সঞ্চয়, সর্বনিম্ন পর্যায়ে বেকারত্বের হার (৩.৫%) এবং মুদ্রাস্ফীতি (৩.৯%)। ২০১০ সালে জিডিপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৮ শতাংশ। সবই সম্ভব হয়েছে বিচক্ষণ নেতৃত্ব ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে।

আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তুন ডা. মাহাথির বিন মোহাম্মদ এর আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল পণ্য ও সেবার মান বাড়ানোর দিকে এবং উৎপাদন খাতে মূল্য সংযোজন করারোপের দিকে। বিশেষ করে কৃষি শিল্প যখন উত্তরোত্তর উন্নতি লাভ করছে। এ ধারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সময়েও অব্যাহত আছে। মালয়েশিয়া জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতির উন্নয়নে দ্রুত কাজ করে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২০ সালের মধ্যে পরিপূর্ণরূপে একটি শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করা।

(ঠরংরড়হ২০১২) জৈব প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, হালাল দ্রব্য ধারণা, ইসলামী অর্থনীতির প্রচলন আধুনিক মালয়েশিয়ার সর্বত্রই স্পষ্টতই দৃশ্যমান। এসব ক্ষেত্রে দেশটি বিশ্বে নেতৃত্ব স্থানীয় অবস্থানে আছে। অধিকন্তু আশা করা হচ্ছে (সেবা খাতে বছরপ্রতি ন্যূনতম ৭.৫ হারে) ২০২০ সালের মধ্যে মোট জিডিপির ৬০ ভাগ সেবা খাত থেকে আসবে।

মালয়েশিয়ার বর্তমান ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে যদিও সরকারের যথেষ্ট ভূমিকা আছে তথাপি প্রাকৃতিক সম্পদের অবদানও কম নয়। মালয়েশিয়া বিশ্বের ব্যবহারোপযোগী রাবার ও পাম অয়েলের অন্যতম যোগনদাতা। পাম অয়েল রপ্তানীযোগ্য পণ্য তালিকার মধ্যে শীর্ষে আছে। অন্যান্য দ্রব্যগুলো হচ্ছে- কোকোয়া, মরিচ, আনারস, তামাক এবং কাঠ।

খনিজ দ্রব্য, তেল এবং গ্যাসের মজুদও গর্ব করার মত। এক সময় বিশ্বের টিন উৎপাদনকারী দেশসমূহের মধ্যে শীর্ষ অবস্থান ছিল মালয়েশিয়ার। যা অর্থনীতিতে এখনও অবদান রাখছে। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে পেট্টোলিয়ামজাত পণ্য রপ্তানী খাতে শীর্ষ স্থান দখল করে নেয়। সাবাহ, সারাওয়াক এবং তেরেঙ্গানু প্রদেশে গ্যাসফিল্ডসমূহ আবিষ্কৃত হয়। তেল এবং গ্যাস রপ্তানী এখন মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি। অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ২০০৯-১০ অর্থ বৎসরের সমীক্ষা অনুসারে দেশটির তেল এবং গ্যাসের যে পরিমাণ মজুদ আছে তা দিয়ে তারা যথাক্রমে ২০ এবং ৪০ বৎসর পার করতে পারবে। যা বিশ্বের সর্বোচ্চ তেল এবং গ্যাস সমৃদ্ধ দেশ সমূহের মধ্যে যথাক্রমে ২৪তম এবং ১৩তম অবস্থানে।

শুধুমাত্র তেল এবং গ্যাস থেকে বিগত ২০১০ সালে আয় ছিল ৩৫০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। যা পূর্বের বছরের তুলনায় ১০.৫ ভাগ বেশী। (উৎস : গওউঅ)।

তেল ও গ্যাস ব্যবসার উন্নতিতে যে কোম্পানীটির অবদান উল্লেখযোগ্য তা হচ্ছে পেট্টোনাস। এ কোম্পানীটি ২০১০ অর্থ বৎসরে মোট রপ্তানী আয়ের ১৩.৫ ভাগ যোগান দেয়। সরকারী মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠানটি পেট্টোলিয়াম খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্যবসার পরিধি নিজস্ব গন্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বে প্রসারিত করেছে। পেট্টোনাসের সাথে মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিবিড়ভাবে জড়িত।

১৯৮০ সালে পেট্টোনাস ‘‘পেনিনসুলার গ্যাস ইউটিলাইজেশন’’ প্রকল্পের মাধ্যমে পাইপ লাইনে গ্যাস বিতরণ করে শিল্পায়নকে তরান্বিত করে। পাইপ লাইনের মাধ্যমে শিল্প ইউনিট গুলোতে জ্বালানি সরবরাহ করে।

১৯৭৪ সালে পেট্টোনাস বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা, সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি এখন একটি সফল প্রতিষ্ঠানে পরিণত। সরকারের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় কোম্পানি তেল এবং গ্যাস খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে।

এই কোম্পানি তেল, গ্যাস খাতের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা ছাড়াও দেশটির সামাজিক অগ্রগতিতেও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এটি শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রভৃতি খাতের উন্নয়নের অংশীদার যা মালয়েশিয়ার ইমেজকে বহির্বিশ্বে বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। ফরচুন ম্যাগাজিনের এক জরিপে বিশ্বের সেরা ৫০০ করপোরেট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পেট্টোনাস নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে।

‘‘ব্যাংক নেগারা মালয়েশিয়া’’ হচ্ছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি পুরো ব্যাংকিং সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে। মুদ্রা (রিংগিত) ছাপায় এবং সরকারের অর্থনৈতিক ও মুদ্রা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে যাবতীয় আর্থিক কর্মকান্ডে নীতি নির্ধারণী ভূমিকা পালন করে এবং পরামর্শক হিসেবে কাজ করে।

মালয়েশিয়ার ব্যাংকিং খাত ইসলামী পদ্ধতিতে পরিচালিত। যা অত্যন্ত গতিশীল এবং অগ্রসরমান একটি খাত হিসেবে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত।

শীর্ষ স্থানীয় ব্যাংক সিমব ইসলামিক ব্যাংক বারহাদ-এর প্রধান নির্বাহী পরিচালক বা সিইও বাদলিসিয়া আব্দুল গণি বলেন, ‘‘বিশ্বের মধ্যে একমাত্র মালয়েশিয়াতে ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ কাঠামো বিদ্যমান।’’

১৯৬৩ সালে আমরা এখানে ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করেছিলাম ‘হজ্ব ফান্ড’ (তাবুং হজ্ব) সৃষ্টির মাধ্যমে। যা মুসলিমদের পবিত্র হজ্বব্রত পালনে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারে।

পূর্বে তারা তোষকের নিচে টাকা-পয়সা জমা রেখে বা অন্যান্য অপ্রচলিত বিভিন্ন পদ্ধতিতে টাকা-পয়সা সঞ্চয় করত। পরবর্তীতে সরকার তাদের কথা মাথায় রেখে ‘হজ্ব ফান্ড’ (তাবুং হজ্ব) প্রকল্প চালু করে। যা খুব সফলভাবে কাজ করে।

প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেম থেকে ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম ভিন্নতর। এ ব্যবস্থায় গ্রাহকগণ সুদের পরিবর্তে লভ্যাংশ পেয়ে থাকে। লভ্যাংশের হারও অনেক সময় অধিক হয়ে থাকে। মালয়েশিয়া এখন বিশ্বের মোট ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবসার ৩০ শতাংশের অংশীদার। গোড়ার দিকে এটি এতটা সফলভাবে কাজ করেনি।

১৯৮৩ সালে ইসলামিক ব্যাংকিং আইন পাশ হওয়ার এক দশক পেরিয়ে গেলেও ইসলামি ব্যাংকের সংখ্যা ছিল মাত্র একটি। এবং ব্যাংকিং খাতে মোট লেনদেনের ১ ভাগ শুধু ইসলামিক খাত থেকে আসত। মূলত: ব্যাংকিং খাতে উন্নয়নের ব্যাপারে সরকারের মনযোগের কমতি ছিল। বরং সরকার জনগণকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে বেশী সম্পৃক্ত করার দিকেই মনোনিবেশ করেছিল। যা হোক পরবর্তীতে সরকার খুব শীঘ্রই এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিল।

জনাব আবদুল গণি ইসলামিক ব্যাংকিং এর গুরুত্ব এবং এর প্রসার মালয়েশিয়াতে উত্তরোত্তর কীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রচলিত প্রতিটি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে ইসলামী শাখা খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ফলে দ্রুত এ পদ্ধতি বিস্তৃতি লাভ করে; এবং এক বছরের মধ্যে যা ৬ ভাগে উন্নিত হয়।

পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে তাকাফুল (বীমা) আইন প্রণীত হলে মুসলিমরা বীমায় উদ্বুদ্ধ হয়, যা পূর্বে তাদের কাছে ধারণাতীত ছিল। বীমা ব্যবসায় সরকারের সহযোগিতার ফলে বীমা, পুঁজি বাজারের ৬ভাগ দখল করে নেয়। বর্তমানে বীমা মুসলিম এবং নন-মুসলিম সবার মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বর্তমানে মালয়েশিয়ায় ইসলামিক ব্যাংকের সংখ্যা ১২। এগুলো সম্পূর্ণ ইসলামী শরীয়াহ আইন দ্বারা পরিচালিত। পাশাপাশি অন্য ব্যাংকগুলোও তাদের প্রতিটি শাখায় ইসলামী ব্যাংকিং বুথ চালু করেছে। ইসলামিক অর্থব্যবস্থার মাধ্যমে উন্নয়ন তহবিল সংগৃহীত হয়েছে। যা দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন- রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট, রেল লাইন স্থাপন, নগরায়ন, উঁচু দালান ইত্যাদি নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে।

কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর তৈরিতে অর্থ সংগ্রহের জন্য ইসলামী ব্যাংক বন্ড ইস্যু করেছিল। মালয়েশিয়ার ইতিহাসে সে সময় এটি ছিল সবচেয়ে বৃহৎ অর্থ সংগ্রহ। বর্তমান মালয়েশিয়া ইসলামিক পুঁজি বাজারের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

ইসলামী ব্যাংকিং বাবস্থার অগ্রপথিক হিসেবে মালয়েশিয়া এ শিল্পে যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড়িয়েছে যা কল্পনাতীত। মালয়েশিয়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। বাদলিসিয়া আব্দুল গণি আশা প্রকাশ করেন যে, অন্যান্য দেশেও মালয়েশিয়ার মত ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। তাতে করে অন্যান্য দেশের সাথে সহজে লেনদেন পরিচালনা করতে সুবিধা হবে।

মালয়েশিয়ার সামগ্রিক উন্নতি অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে। ১৯৬৯-এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা মারদেকা (স্বাধীনতা) কে হুমকির সম্মুখীন করেছিল।

এতদ্সত্ত্বেও দেশটি পুনরায় নিজেদেরকে সংগঠিত করেছে। নতুন অর্থনৈতিক নীতি (ঘঊচ) গ্রহণ করেছিল। যার উদ্দেশ্য ছিল পূর্বের অবস্থা থেকে ফিরে আসা। তানশ্রি দাতো হামাদ কামা পিয়া চে ওথম্যান, সভাপতি এবং সিইও চবৎসড়ফধষধহ ঘধঃরড়হধষ ইবৎযধফ (চঘই) বলেন, ‘‘এ ধরনের নীতি গ্রহণের উদ্দেশ্য ছিল দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকলের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এ নীতির দু’টি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এক, সমাজের প্রতিটি অংশের দারিদ্য দূর করা। দুই, সমাজের বিশেষ কোন অংশ সুযোগ সুবিধা বা উন্নতির দিক দিয়ে অসমভাবে যেন এগিয়ে না যায়, তা তদারক করা।

মুসলিম মালয় বা ওরাং আসলির (ভূমিপুত্রের) কমপক্ষে একজন করে সদস্য নিয়ে একটি সংগঠন হবে। তারা বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে ট্রাস্ট্র ফান্ড সৃষ্টি করবে। এ বিনিয়োগে তাদের মালিকানা থাকবে এবং তারা ব্যবসায় পরিচালনায়ও অংশগ্রহণ করবে। যা তাদের জন্য গৌরবের ব্যাপার হবে। প্রকৃতপক্ষে এ ধারণা থেকে চঘই-এর উৎপত্তি হয়েছিল। ভূমিপুত্ররা পরোক্ষভাবে পুঁজি বাজারে প্রবেশ করতে শুরু করল। স্বল্প মেয়াদী বিনিয়োগ থেকে মুনাফা লাভের ধারণা পরিত্যাগ করে তারা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ বা বড় আকারের পুঁজি গঠনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। বড় বড় কোম্পানীগুলো তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার ট্রাস্ট ফান্ডে হস্তান্তর করে এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এককে ভাগ করে তা ভূমিপুত্রদের কাছে বিক্রি করে। ঐ তহবিল তারা আবার নানা জায়গায় বিনিয়োগ করল। শেয়ারগুলো বিক্রি না করে নিজেদের কাছে রেখে দেয়। শেয়ারগুলো অন্যান্য ব্যবসায় লগ্নি করে। এভাবে তারা যথেষ্ট উৎসাহ বোধ করে এবং তাদের মধ্যে একটি সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে ওঠে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করে।

চঘই এখন একটি অন্যতম শক্তিশালী লাভজনক প্রতিষ্ঠান। তাদের কাছে একশ বিলিয়ন মালয়েশিয়ান রিংগিতের সমপরিমাণ মূলধন ও সম্পদ আছে। এ প্রসঙ্গে তানশ্রী দাতো হামাদের অভিব্যক্তি হচ্ছে, ‘‘আমাদের এ ট্রাস্ট্র এখন সকলের জন্য উন্মুক্ত। এর পরিধি এখন এত ব্যাপক যে, এই প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সম্পদের মালিকানায় সকলের অংশীদারিত্ব থাকায় সমাজে একটি সম-অংশীদারিত্ব ভিত্তিক সমাজ কাঠামো গড়ে উঠছে। যা আগামীতে একটি সুখী সমৃদ্ধ মালয়েশিয়ার ভিত রচনা করছে এবং নতুন প্রজন্মও এর সুফল ভোগ করবে।

ওআইসি ভুক্ত বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর সাথে মালয়েশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ অতি নগন্য ছিল। এ বিষয়টি চিন্তা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মদ উপলব্ধি করেন যে, হালাল দ্রব্য উৎপাদন শিল্প এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে। ইতোমধ্যে এই শিল্প যথেষ্ট বিকাশমান। ফলে মুসলিমদেশগুলোর সাথে বাণিজ্যের ঘাটতি অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। প্রতি বছরের মে মাসে কুয়ালালামপুরে ‘‘বিশ্ব হালাল ফোরাম’’ একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করে। এ অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এর মাধ্যমে হালাল খাদ্য সম্পর্কে মালয়েশিয়ার অবস্থান ও কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা।

জনাব খায়রি জামাল উদ্দিন, এই ফোরামের সভাপতি। তিনি মত প্রকাশ করেন যে, ‘‘বিশ্বব্যাপী হালাল খাদ্য দ্রব্যের ধারণা এবং চাহিদা ছড়িয়ে দিতে মালয়েশিয়া একটি প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। এর বাজার আরো উন্নত করতে বিশ্বের দেশসমূহের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে চলেছে।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘৫০ বছর পূর্বেও মালয়েশিয়া আধুনিক ও সমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলোর কাছে ধারেও ছিল না। কিন্তু আজ আমরা উন্নতি ও কল্যাণের দিক থেকে অন্যান্য মুসলিম দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে এবং আমাদের এই উন্নয়নের চেহারায় একটি ইসলামিক রূপ আছে। সরকারের উঁচু পর্যায়েও ইসলামি ভাবধারার প্রচলন আছে। আজকের হালাল দ্রব্য শিল্প ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নতি ও বিকাশের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।’’

হালাল দ্রব্য শিল্পের সফলতা মালয়েশিয়া দুই দিক থেকে উপভোগ করছে। একদিকে এই শিল্প এখন মালয়েশিয়াকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করিয়েছে এবং অন্যদিকে মুসলিম এবং অমুসলিম দেশগুলোর নিকট এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

হালাল দ্রব্য শিল্প প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদের ইচ্ছার একটি বাস্তব নমুনা। তিনি ইচ্ছা পোষণ করেন মালয়েশিয়া অভ্যন্তরীণ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে এবং ঐতিহ্যকে ধরে রেখে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকলকে এক সাথে নিয়ে নতুন নতুন ধ্যান ধারণার উন্মেষ ঘটাবে।

খায়রি জামাল উদ্দিন আরো বলেন, ‘‘হালাল দ্রব্য শিল্প এমনি একটি ধারণা যা এই দেশের সকলকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। যার দরুন মালয়েশিয়া হালাল দ্রব্য বিষয়ক সব ক্ষেত্রেই এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিশ্ব হালাল ফোরাম মালয়েশিয়ার বিচিত্রমুখিতা থেকে অনেক উপকৃত হয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি কীভাবে সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে হালাল দ্রব্য শিল্প শুধু মুসলিম দেশের জন্য নয় বরং অমুসলিম দেশের জন্যেও একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। ঠিক একইভাবে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থাও একটি লাভজনক এবং সঠিক আর্থিক নীতি হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে।’’

হালাল দ্রব্য উৎপাদন, ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা, তেল এবং গ্যাস ক্ষেত্রের অগ্রগতির পাশাপাশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতেও মালয়েশিয়ার অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে মালয়েশিয়া এখন স্বীকৃত। ২০০০ এর বেশী কোম্পানি এই দেশে (বহুজাতিক এবং স্থানীয়) তথ্য যোগাযোগ এবং মাল্টিমিডিয়া ব্যবসা চালাচ্ছে। স্থানীয় কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতার সাথে টিকে আছে। এসব কোম্পানিকে ব্যবসায় সফল এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতে এদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে মালয়েশিয়া সরকার ১৯৯৫ সালে এমএসসি (গঝঈ- গঁষঃরসবফরধ ঝঁঢ়বৎ ঈড়ৎৎরফড়ৎ) নামে একটি ধারণার জন্ম দেয়। এতে করে বিশ্বের তথ্য প্রযুক্তি ব্যবসার জায়ান্টরা মালয়েশিয়ায় ব্যবসা সম্প্রসাণের উদ্দেশ্যে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে স্থানীয় কোম্পানীগুলোর জন্য সরকার বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। যাতে তারা বৃহৎ সব কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে।

১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গউঊঈ (গধষধুংরধহ উবাবষড়ঢ়সবহঃ& ঊপড়হড়সরপ ঈড়সঢ়ধহু) কোম্পানি। এ কোম্পানি (গউঊঈ) মালয়েশিয়ার উন্নয়নে সহায়ক সহযোগিতা প্রদানের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল। এর সিইও বাদলিশাম গাজালি বলেন, ‘‘ভিশন ২০২০’’ সফল করার উদ্দেশ্যে ১৯৯৫ সালে গঝঈ মালয়েশিয়ার জন্ম।

এখন গোটা মালয়েশিয়াই হচ্ছে একটি মাল্টিমিডিয়া সুপার করিডোর। প্রতিটি রাজ্যে থাকবে তাদের নিজস্ব সাইবার কেন্দ্র। যা ব্রডব্যান্ড সংযোগের মাধ্যমে অন্যান্য রাজ্যের সাইবার কেন্দ্রের সাথে সংযুক্ত থাকবে। এতে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে যোগাযোগ হয়েছে অত্যন্ত দ্রুত, কার্যকর এবং সুবিধাজনক। সব ধরনের প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের হাল নাগাদ তথ্য-উপাত্ত যে কোন সময় সংগ্রহ করতে পারবে। বিশ্বমানের অবকাঠামো নির্মাণে গউঊঈ তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যাতে ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতির স্বার্থে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হয়।

জনাব বাদলিশাম আরো বলেন, ‘‘১২ বছরের মধ্যেই গউঊঈ মালয়েশিয়া এখন ডিজিটাল রেসে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বিশ্বের নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন উঊখখ, ঐঝইঈ, উঐখ, ঝঐঊখখ এবং ইগড তাদের পূর্ব এশিয়ার ব্যবসা পরিচালনার জন্য মালয়েশিয়াকে বেছে নিয়েছে।

মালয়েশিয়ার ব্যবসা উদারীকরণ নীতির কারণে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মালয়েশিয়াকে একটি আদর্শ ও উপযুক্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

বিদেশী বিনিয়োগকারীরা মালয়েশিয়ায় তাদের বিনিয়োগ নিয়ে আসার পিছনে একটা কারণ হচ্ছে দেশটির উন্নত অবকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা। সবগুলো সমুদ্র বন্দর এবং বিমান বন্দরের সাথে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খুব সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। যার ফলে খুব সহজে পণ্য একস্থান থেকে অন্য স্থানে আনা-নেয়া করা যায়। অভ্যন্তরীণ বিমান যোগাযোগও খুব উন্নত। সাতটি সমুদ্র বন্দর আছে। যে গুলির মাধ্যমে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হয়।

ক্যালঙ্গ বন্দর হচ্ছে বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ সমুদ্র বন্দর। এ বন্দরের গভীরতা বেশী হওয়ার কারণে বিশ্বের বড় বড় জাহাজগুলো এখানে নোঙর করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। মালাক্কা প্রণালীর (বিশ্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক চ্যানেল) সাথে সরাসরি এ বন্দরের যোগাযোগ আছে। মালয়েশিয়ার উন্নত অবকাঠামোর কারণে এখানে ফ্রি ইন্ডাসট্রিয়াল জোন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে এবং বিশেষ কয়েকটি শিল্পকে প্রাধান্য দিয়ে শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই জোন এবং পার্কগুলোয় অবস্থিত ইউনিটগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করে। এখানে রয়েছে আকর্ষণীয় সুযোগ সুবিধা।

জনপ্রিয়তার তালিকায় ২০১১ সালে বিদেশীদের কাছে কুয়ালালামপুর এবং জর্জটাউন, পেনাংশহর এশিয়ার সেরা দশ পছন্দের শহরের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার্থে অনেক ব্যবসায়ী সংগঠনের জন্ম হয়েছে।

মালয়েশিয়ার আছে দক্ষ ও প্রতিষ্ঠিত জনশক্তি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার আরো দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার, টেকনেশিয়ান এবং অন্যান্য ট্রেডে দক্ষ লোকবল বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে মালয়েশিয়ার শ্রমিকরা খুবই পরিশ্রমী এবং উদ্যোগী।

এছাড়াও বিদেশী কোম্পানিগুলোকে মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার জন্য সরকার নানা ধরনের উৎসাহব্যঞ্জক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে লারয়ান দ্বীপে একটি স্বতন্ত্র উপকূলীয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। এখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছিল খুব সীমিত এবং করের পরিমাণ ছিল খুবই নগন্য। দেড়যুগের কাছাকাছি সময়ের মধ্যে এই দ্বীপে এখন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ২৭০০। মূলত: বিদেশী প্রতিষ্ঠানসমূহের মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশের পিছনে মূল কারণ হচ্ছে জীবন যাত্রার উন্নত মান। যা দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে দেশটিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়েছে।

মালয়েশিয়া বর্তমানে জীবনযাত্রায় উন্নত, আতিথেয়তায় পরিপূর্ণ, পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় দেশসমূহের মধ্যে একটি। যেখানে ব্যবসা করার জন্য এবং বসবাস করার জন্য রয়েছে মনোরম একটি পরিবেশ। যা বিশ্বের শুধু গুটি কয়েক দেশেরই আছে। এ দেশের আছে উষ্ণ, বন্ধু বাৎসল, আধুনিক চিন্তা চেতনায় সমৃদ্ধ উদার একদল মানুষ। যারা আজ মালয়েশিয়াকে নিয়ে গেছে উন্নতির চরম শিখরে। একবার ঘুরে আসুন মালয়েশিয়ায়। বিমুগ্ধ নয়নে অবলোকন করুন একটি দেশের স্বপ্ন পাড়ি দেয়ার ইতিহাস।



অনুবাদঃ মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন চৌধুরী

মূল লেখক : মেথিউ বেলোট্টি একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, যিনি মালয়েশিয়ায় কর্মরত।

সূত্র : টাইম ইন্টারন্যাশনাল, ইউএসএ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:১৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×