somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিকেট কেটে অমর একুশে বই মেলায় ঢুকতে হবে? ( রিপোস্ট )

১৭ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১২ বা ১৩ জানুয়ারি সকাল বেলা চ্যানেল আইতে একটা লাইভ অনুষ্ঠান হচ্ছিল। সেখানেই প্রথম জানলাম এবারের বই মেলায় ঢুকতে দর্শকদের টিকেট লাগবে। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আনিসুল হক এবং ফরিদ আহমেদ। আশ্চর্যজনকভাবে এ দুজন প্রবেশমূল্য নিয়ে আলোচনার সময় বিন্দুমাত্র সমালোচনা করলেন না। সকাল বেলার অনুষ্ঠানে ফোন কম আসে। সে জন্যই হয়তো দর্শকরাও কোনো প্রতিবাদ বা প্রশ্ন করলেন না। আজ বিডি নিউজে খবর দিয়েছে, অমর একুশে বই মেলায় ঢুকতে প্রবেশ মূল্য লাগবে। অন্য পত্রিকা ও টিভিতে খবরটা প্রচার হলে হয়তো সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া জানা যাবে।
খবরটা প্রথম শোনার পর ভেতর থেকে একটা প্রতিবাদ টের পেলাম। একুশে বই মেলাকে যারা স্রেফ বই বিক্রির বাজার ভাবেন তারা নিশ্চিত ভুল করেন। এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘ সময়ের উৎসব। পুরো ফেব্রুয়ারি জুড়ে এ উৎসবে ধর্ম-বর্ণ-বয়স নির্বিশেষে সকল মানুষ অংশ নেন। উৎসবের কেন্দ্রে থাকে অবশ্যই বই। লোকে বই কেনে। বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়। তরুণ-তরুণীরা নানা বর্ণে সেজে মেলায় ঘোরে। দিন যতই যাচ্ছে ততোই মেলাটি লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের একটা মিলন উৎসবে পরিণত হচ্ছে।
কিন্তু এ মেলা নিয়ে শাসকদের ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক এ আয়োজনকে ঠেকাতে তারা একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন। সামরিক শাসকদের সময়ে এ বই মেলার স্থান পরিবর্তনের জোর প্রচেষ্টা হয়েছিল। এ মেলাকে ম্লান করতে ডিসেম্বরেই ঢাকা বই মেলা নামে আরেক বই মেলার আয়োজন শুরু হয়। কিন্তু মানুষকে টানতে পারেনি সে মেলা। মানুষ বাংলা একাডেমির বই মেলাতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন। ফলে, অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও ডাকা বই মেলা এখন পর্যন্ত ব্যর্থই। বিভিন্ন সময়ে এ বই মেলায় বিদেশী বই ঢোকানোর চেষ্টা হয়েছে। ভারতীয় প্রকাশকরা অনেক তদবির করেছেন। কিন্তু লেখক-প্রকাশকদের প্রতিবাদের কারণে তা হয়ে ওঠেনি। এ মেলা বাংলাদেশের পাঠক-লেখক-প্রকাশকদের মেলা হিসেবেই টিকে আছে।
এবার মেলায় নতুন উবদ্রব হিসেবে যুক্ত হয়েছে প্রবেশ মূল্য। বাংলাদেশের মতো জায়গায় টিকেট কেটে বই মেলা করা কতটা যৌক্তিক সেটা নিশ্চয়ই ভাবা দরকার। এখানকার পাঠকরা বই কিনুক না কিনুক মেলায় আসুক এটাই সবার চাওয়া। বই দেখতে দেখতে একটা কিনলেই প্রকাশকদের লাভ। যত কম দামের হোক টিকেট কেটে লাইনে দাঁড়ালে অনেকের আগ্রহই হারিয়ে যাবে। এমনিতেই প্রকাশকরা বলছিলেন, এ বছর বইয়ের বাজারে মন্দা যাবে। মন্দা অর্থনীতি বইয়ের বাজারেও ধস নামিয়েছে। ক্রেতাদের ক্রয়তালিকার মধ্যে বই নেই। এর মধ্যে যদি ভাসমান ক্রেতাদের টিকেট দিয়ে ঠেকানো হয় তবে বই মেলার সাফল্য নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠবে। মন্দা বইয়ের বাজার মাথায় রেখে এ বছর টিকেট চালুর সিদ্ধান্তকে স্রেফ বোকামি ছাড়া আর কিছু মনে হয় না।
পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষ চায় না, তাদের সর্বজনীন উৎসবের বাণিজ্যিকীকরণ না হোক। বই মেলার সঙ্গে মানুষের আবেগ জড়িত। গত বছর বই মেলায় গ্রামীন ফোনের স্পন্সর করা ভাস্কর্য নিয়ে মৃদু তর্ক উঠেছিল। কিন্তু মেলার খরচের কথা ভেবে সবাই মোটামুটি নীরব থেকেছেন। সবাই হয়তো ভেবেছেন, কত কিছুর জন্যই তো তারা স্পন্সর করে মেলায় করলে ক্ষতি কী? এবারও বিভিন্ন জায়গায় তাদের পোস্টার দেখা যাবে না, সে খবর এখন পর্যন্ত আমাদের কানে আসেনি। এই স্পন্সর বাড়িয়েও মেলার খরচ মেটানো যেত। প্রকাশকরাও স্টলের বিনিময়ে বড় অংকের টাকা দেন। কিন্তু ঠুঁটো জগন্নাথ মেলা কর্তৃপক্ষ সামান্য ধূলাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। পাঠক-লেখকের বসার একটু জায়গাও বের করেত পারে না। অন্য বড় সমস্যার কথা আপাতত তোলাই থাকলো।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেছেন, তারা টিকেটের টাকা দিয়ে গবেষণা ও প্রকাশনার কাজ করবেন। আমাদের প্রশ্ন হলো, বাংলা একাডেমিকে কি সরকার বরাদ্দ দেয়া বন্ধ করেছে? আর এখন তারা কি নিয়েই বা গবেষণা করছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্পের টাকা এনে তারা কোথায় খরচ করলেন? এখন পর্যন্ত একটা বইও কেন বের হলো না? মজার ব্যাপার হলো, একাডেমির জন্য সরকারি বরাদ্দ পুরেটাই অপব্যবহার করে একাডেমি। কোনো জবাবদিহিতার ধার তারা ধারে না। গত কয়েক বছরে তাদের গবেষণা ও প্রকাশনার কোঠা মোটমুটি শূন্য। বর্তমান নীতি ধরে রাখলে আগামীতে দরকারি কোনো গবেষণা প্রকাশিত হবে কি না সন্দেহ। অথচ তারা এখন জনগণের কাছ থেকে গবেষণার টাকা চায়।
বাংলা একাডেমি বছরে এখন একটাই কাজ করে। ফেব্রুয়ারির বই মেলা। সেটাও যেনতেন প্রকারে সেরে সারা বছর বসে থাকে বিপুল সংখ্যক লোকবল নিয়ে। প্রশ্ন হলো, বাংলা একাডেমির জবাবদিহিতা কোথায়? সেখানে গেলে বছরের অন্য সময় লেখক-পাঠকদের দেখাও মেলে না। লেখক-পাঠকদের আকৃষ্ট করার কোনো উদ্যোগও তাদের নেই। অথচ এই প্রতিষ্ঠানটিই নাকি জাতির মননের প্রতীক।
বাংলা একাডেমি বই মেলায় প্রতিদিন প্রায় হাজার খানেক বা তারও বেশি লেখক-সাংবাদিক-প্রকাশক-প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট মানুষ যায়। প্রশ্ন হলো, এই লোকগুলো কি প্রতিদিন টিকেট কেটে লাইনে দাঁড়াবে? প্রতিদিন শাহবাগ বা দোয়েল চত্ত্বর থেকে পাঠকরা টিকেট কেটে লাইনে দাঁড়াবেন? এত লোকের টিকেট বিক্রি করবে কে?
মেলা জমে উঠলে যেখানে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পা ফেলা যায় না। সেখানে এই হাজার হাজার মানুষের কাছে টিকেট কে বেচবে, কিভাবে বেচবে?
সবকিছু বিবেচনায়, আমার মনে হচ্ছে অমর একুশে বই মেলায় টিকেট চালু করার সিদ্ধান্তটি বাতিল করা উচিত। এই মেলা পাঠকদের জন্য বই কেনার অনুশীলন কেন্দ্র হিসেবে থাকুক। তাতেও যে ব্যবসা কম হয়েছে তা কিন্তু নয়। টিকেট ছাড়া মেলা করে গত তিন দশকে কোন মেলাটা ব্যর্থ হয়েছে? কোন মেলায় একাডেমি কর্তৃপক্ষ বা প্রকাশকদের পকেটে কম টাকা ঢুকেছে?
১৭টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×