ভূগোল যারা বুঝেন বা দেশ বিদেশের খবর রাখেন তারা জানেন যে, চাঁদ প্রথম দিন দেখা যায় পশ্চিমা রাষ্ট্রে। দ্বিতীয় দিন মধ্য পৃথিবীতে এবং তৃতীয় অর্থাৎ, শেষের দিন উপমহাদেশসহ পূর্ব-রাষ্ট্রগুলোতে। প্রতি বছর এমনই দেখে আসছি। আচ্ছা, রাসুলুল্লাহর জমানায় মাসের হিসাব কি পশ্চিমা দেশে চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে শুরু করা হত না আরবের আকাশে চাঁদ দেখে শুরু করত? অবশ্যয়ই আরবের চাঁদ দেখে শুরু করত। অথচ আগের দিনই পশ্চিমে চাঁদ দেখা গেছে! তাহলে প্রথমে যেখানেই চাঁদ দেখা যাক পুরো পৃথিবীতে একসাথে রোজা রাখা বা ঈদ পালন করা হবে কথাটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? নাকি ইসলাম তখন ছিল এক রকম আর এখন যেহেতু তথ্যপ্রযুক্তির যুগ ইসলাম হয়েছে আরেক রকম? তাহলে রাসুলুল্লাহর মৃত্যুর আগে ইসলাম পরিপূর্ণ হয় নি? ১৪০০ বছর পরে এসে প্রযুক্তির কাঁধে ভর দিয়ে ইসলাম পূর্ণতা পেয়েছে? (নাউজুবিল্লা)
যদি প্রশ্ন করা হয়, তখন মাসের হিসাব কীভাবে রাখা হত? উত্তরে বলে, দেশ হিসাবে রাখা হত। যেহেতু এক দেশের খবর আরেক দেশে দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব ছিল না। তৎকালীন ওলামাদের ফতোয়া এমন ছিল, দ্রুতগামী একটি ঘোড়া একদিনে যতটুকু দৌড়াতে পারে ততটুকু জায়গার মানুষ চাঁদের হিসাব একসাথে শুরু করবে। আর বর্তমান তথাকথিত নেট-মুফতিরা ফতোয়া দেয়, এখন যেহেতু মুহূর্তের মধ্যেই পুরো বিশ্বে খবর পৌঁছানো সম্ভব তাই যেকোনো এক জায়গায় চাঁদ দেখা গেলেই বিশ্বের সবাই একসাথে মাসের হিসাব শুরু করবে! এখানেও আগের কথাই বলবো, ইসলাম কি তবে এতোদিন অপূর্ণ ছিল? তাহলে আর কী কী অপূর্ণতা রয়েছে, যা আজ থেকে হাজার বছর পর পূর্ণতা লাভ করবে? (নাউজুবিল্লা)
শবে কদর কবে? অর্থাৎ, কুর'আন কবে নাজিল হয়েছে? কেউ যদি বলে, আমেরিকায় আজ থেকে চাঁদের শেষ দশক শুরু হল, কাল শুরু হবে আরবে এবং পরশু শুরু হবে পূর্ব-রাষ্ট্রগুলোতে। তাহলে শবে কদর কবে? নাকি (প্রথমে একসাথে) কুর'আন তিনবার নাজিল হয়েছে? দেখুন, প্রশ্নে কত মারপ্যাঁচ! আরে ভাই, কুর'আন নাজিল হয়েছে তৎকালে আরবের চাঁদের হিসাবে শেষ দশকের বেজোড় রাতে, জাস্ট সিম্পল।
শবে কদর নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন, আচ্ছা, আল্লাহ তায়ালা প্রতি শেষ রাতে প্রথম আকাশে নেমে আসেন। বান্দাহর চাওয়া পুরা করেন। এদিকে পৃথিবী চলমান এবং পৃথিবীর কোথাও না কোথাও শেষ রাত আছেই। অর্থাৎ, শেষ রাত পৃথিবীর সাথে সব সময় লেগেই আছে। তাহলে আল্লাহ কি পৃথিবীতে প্রথম যে দেশে শেষ রাত হল তখন নামেন না সব দেশের শেষ রাতেই নামেন? এই প্রশ্নটি কি অবান্তর নয়? একই কথা "কেয়ামত কবে হবে? কোন দেশের মহররমের দশ তারিখ শুক্রবারে কেয়ামত হবে; প্রশ্নেও বলব।
আসলে এ বিষয়গুলো হচ্ছে "মুশতাবাহাত" বা অস্পষ্ট যার সঠিক উত্তর কেবল আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। যারা জ্ঞানী তারা এগুলোর উপর ঈমান আনে এবং যারা গোয়ার তারা গোয়ার্তমি করে। আলে ইমরান, আয়াত ৬
আমরা শুধু রাসুলুল্লাহ ও সাহাবাদের অনুসরণ করবো। তাঁরা পুরো পৃথিবীর হিসাব করতেন না, চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন, চাঁদের হিসাবে ই'তেকাফ এ বসতেন ও শবে কদর খুঁজতেন এবং চাঁদ দেখেই ঈদ পালন করতেন।
আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ এবং তাঁর নিকটই আমরা ফিরে যাব।