somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহফুজ আলআমিন ( Auspicious Fate )
জীবন একটা কৌতূহলী যাত্রার নাম- স্রষ্টা, সৃষ্টি, উদ্দেশ্য এবং এই সব কিছুর সত্যতা কে ঘিরে... আর আমি সেই পথের একজন সাধারণ যাত্রী। নিজের জায়গা থেকে সব স্থান, কাল, পাত্রে আপন অস্তিত্বকে কল্পনা করতে ভালোবাসি আর সেই অনুযায়ী প্রত্যেকটা কাজ করে যাই...

দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য এবং এর মজা...

২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনি পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ খুঁজে পাবেন না, যার জীবনে কোন সমস্যা নেই। ইন ফ্যাক্ট, অধিকাংশ মানুষ যেনো অসংখ্য সমস্যার বেড়াজালে বন্দী হয়ে নিয়মিত হাপিত্যেশ করতে থাকে, হয়তো আপনিও তাদের একজন। কিন্তু সবার জীবনে এতোসব সমস্যা থাকা সত্বেও কি সেই এমন “বিশেষ বৈশিষ্ট্য” রয়েছে যা মানুষের এই সমস্যাগুলোকে একদিকে যেমন করতে পারে সহজ, গ্রহণযোগ্য এমনকি আনন্দময় আবার অন্যদিকে তীব্র দুঃখ কষ্ট, যন্ত্রণাদায়ক বা হতাশজনক?

সেই বিশেষ বৈশিষ্ট্যটিই হচ্ছে মানুষের “দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য” । ধরুণ দুইজন মানুষ একইসাথে একটি বাসে উঠলো একই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। ২০ কিলোমিটার এর পথ অতিক্রম করতে গিয়ে দেখা গেলো ১০ কিলোমিটার পরেই বাস টি এমন কোন জায়গায় গিয়ে নষ্ট হলো, যেখান থেকে বাকি ১০ কিলোমিটার পথ না হেঁটে গিয়ে উপায় নেই। এখন প্রথম যেই ব্যক্তি তিনি ব্যাপারটা সহজভাবে নিতে পারলেন না। হঠাৎ বাস নষ্ট হয়ে যাওয়ায়, তার মেজাজ গেলো বিগড়ে, তিনি একাধারে ভাগ্য কে দোষারোপ করে গালাগাল দিতে লাগলেন, যার শ্রোতা সে নিজেই। একে তো তাকে ১০ কিলোমিটার হেঁটে পাড়ি দিতে হবে, তার উপর মানসিক চাপ নিয়ে, ভাগ্য কে গালি দিয়ে, মুখের অযথা প্রয়োগ করে শেষমেশ শরীর মন দুটোই বিদ্ধস্ত করে তাকে গন্তব্যে অত্যন্ত অখুশি অবস্থায় পৌঁছাতে হলো!

অন্যদিকে দ্বিতীয় ব্যক্তি ভাবলো, যাই হোক আলহামদুলিল্লাহ। বিপদ তো আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে, এর বিপরীতে আল্লাহ অবশ্যই উত্তম কিছু দান করবেন, কারণ আমার ভালো আল্লাহ আমার চেয়ে বেশি চান। বাস তো ১৫ কি.মি. আগেও নষ্ট হতে পারতো, কিন্তু না ১০। যাক আল্লাহর জিকির করতে করতে সে খুশি মনে গন্তব্যে পৌঁছে গেলো। সামান্য টায়ার্ড হলেও, তার মন অত্যন্ত প্রফুল্ল থাকায় ব্যাপারটা তার কাছে খুব সহজ এবং আনন্দদায়ক মনে হলো।
খেয়াল করুন, উক্ত ক্ষেত্রে উভয় এর সমস্যা কিন্তু একই তবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য জীবনে কত বড় রকমের প্রভাব ফেলেছে তা বুঝতেই পারছেন।

আচ্ছা এইটুকু যদি বুঝে থাকেন তবে আসেন মূল জায়গায় আলোকপাত করি, কিভাবে আপনি আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে সর্বোচ্চ উপায়ে পজিটিভ রাখতে পারবেন এবং জীবনে যাই ঘটুক না কেনো তা অত্যন্ত সহজভাবে নিয়ে তা উপভোগ করতে পারবেন। পৃথিবীতে ইতিবাচক থাকার অনেক থিউরি অনেক গবেষণা অনেক রকম পদ্ধতির এক্সপেরিমেন্ট রয়েছে। কিন্তু সব রকমের তাত্বিকতা ছেড়ে সবচেয়ে বাস্তব এবং একমাত্র যে পদ্ধতি আপনাকে সকল অবস্থায় সকল সমস্যায় ইতিবাচকভাবে জীবন এমনকি মৃত্যুকে পর্যন্ত দেখতে সহায়তা করবে তার নাম ই “ইসলাম”

ইসলামের সবচেয়ে বড় মজাটা আমার কাছে এখন পর্যন্ত ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে তা হলো জীবনের বাস্তবতাকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারার মানসিকতা। আপনি যখন ইসলাম কে জীবনে উপলব্ধি করে মানতে যাবেন তখন আপনার জীবনে যাই ঘটুক না কেনো- অমুক মেরেছে, প্রিয় কিছু চুরি হয়ে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে, হাত/পা কেটে গেছে, অমুক রোগ হয়েছে, পুলিশ জঙ্গি বলে ধরে নিয়ে গেছে :p , রিমান্ডে পিটিয়েছে :v আপন কেউ হঠাৎ মারা গিয়েছে, অমুক প্রাণের মানুষ ছেড়ে চলে গেছে থেকে শুরু করে যেই কোন সমস্যা, যেই কোন ক্ষতি, যেই কোন কষ্ট সব কিছুতেই “ইউ উইল ফিল লাইক, দেটস কুল ম্যান, যাই হইসে আলহামদুলিল্লাহ”। কারণ, আপনি জানেন, আপনার প্রত্যেকটা কষ্টের বিনিময়ে গুনাহ মাফ হচ্ছে, আপনার এর বিনিময়ে অনেক বেশি উত্তম প্রতিদান আপনি এই দুনিয়ায় বা পরকালে পেতে যাচ্ছেন। শুধু তো তাই না, আপনি যত বেশি এবং কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হবেন ততই আপনি বুঝতে পারবেন আল্লাহর তত কাছের আপনি, কষ্ট বেশি, প্রতিদান ও বেশি, রবের কাছের বান্দায় পরিণত হচ্ছেন। তো সব দিক থেকেই আপনার কাছে মনে হবে লাভ আর লাভ।

অন্যদিকে আপনি লক্ষ্য করবেন, সামান্য পরীক্ষায় খারাপ করায়, প্রেমিক/প্রেমিকা ছেড়ে চলে যাওয়ায়, জীবনের কোন ক্ষেত্রে ব্যর্থতার শিকার হওয়ায় অনেকেই ভেঙ্গে পড়ে, হতাশ হয়ে যায়, এমনকি আত্মহত্যা পর্যন্ত করে নিজেকে চিরকালের জন্য আগুনে নিক্ষেপ করে! এতোই সংকীর্ণ করে ফেলে অন্যান্য যত প্রেক্ষাপট রয়েছে জীবনের মাপকাঠির! কিন্তু ইসলামের মজাই হলো সমস্যা আপনার যাই হোক, আল্লাহ হেজ অ্যা বেটার প্ল্যান ফর ইউ, এন্ড ইউ আর নেভার ডিসাপয়েন্টেড। ইসলামে আপনি কখনোই হতাশ হবেন না :D

মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় আতংকের নাম মৃত্যু- সেই মৃত্যুকে আপনি যেই কোন পারস্পেক্টিভ থেকেই দেখেন না কেনো আপনি কখনোই মেনে নিতে চাইবেন না। কিন্তু ইসলাম এর মূল কনসার্ন ই যখন পরকাল ভিত্তিক, তখন মৃত্যু খুব ই কমন এক ইস্যু। আপনি যখন ইসলাম মানবেন তখন আপনার কাছে মৃত্যু হবে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার, যার ফলে সবসময় এর জন্য আপনি নিজেকে প্রস্তুত রাখতে সমর্থ হবেন অন্য যে কোন ক্ষেত্রের তুলনায়, এতে আপনার – জীবনের চাহিদা কমে যাবে, খুব অল্প তে তুষ্ট থাকতে পারবেন, সামান্য ক্ষমতা, টাকার লোভে হানাহানি মারামারি কোন কিছুই আপনাকে আর সহজে টানবেনা, জীবন হবে অত্যন্ত সহজ আর শান্তিময়। এর বাইরে গিয়ে মৃত্যুকে সহজভাবে দেখার আর অন্য কোন মাধ্যম নেই।

তাই ইসলাম হচ্ছে এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি যা ১০০ শতাংশ বাস্তবসম্মত এবং জীবন কে যে কোন সমস্যার দ্বারপ্রান্ত থেকে বলতে বাধ্য করবে- ইটস ইজি এন্ড সিম্পল। ইসলামের এই বাস্তবতাই আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষ্ণ করেছে :D “শায়েখ আহমেদ দিদাত” এর একটা কোটেশন এই ক্ষেত্রে খুব মনে পড়ে- ইসলাম আপনাকে ছাড়া সব সময় ই জয়ী, কিন্তু আপনি ইসলাম ছাড়া হেরে যাবেন”। সত্যি ই হেরে যাবেন।

নিজের জীবন থেকে আপনি কখনোই নিজ ইচ্ছায় সব সমস্যা,দুঃখ কষ্ট দূর করতে পারবেন না, সর্বোচ্চ সেইগুলোকে দৃষ্টিভঙ্গির প্রলেপ দিয়ে সহজ, গ্রহণযোগ্য এবং সুন্দর আনন্দময় করে নিতে পারবেন এবং এই ক্ষেত্রে “ইসলাম” ছাড়া দ্বিতীয় কোন অপশন নেই। এখন চয়েস আপনার, আপনি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির দুঃখে কষ্টে ভরা জীবন চান, নাকি ইসলাম এর বাস্তবতায় যে কোন পরিস্থিতিতে সুখী জীবন চান…! পরকালের কথা আর নাই বা বললাম…

এই দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণেই কোটি টাকার মালিক গিট্টু মিয়া আরেকটা প্রজেক্ট হাত থেকে ছুটে যাওয়ায় " সাত দিন না ঘুমিয়ে অসুস্থ হয়ে মরেন, পিংকি বল্টুর ছেকা খেয়ে আত্মহত্যা করে আর অন্যদিকে জনাব হুজুর নিরপরাধ হয়েও পুলিশের রিমান্ডে মাইর খেয়েও বলে উঠে- আলহামদুলিল্লাহ, নিশ্চই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে" :)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৫৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×