ক্রসফায়ারে মাদক ব্যবসায়ীদের এখানে ওখানে পড়ে থাকা লাশ দেখে প্রথম প্রথম মনেমনে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলাম। ভেবেছিলাম, যাক এইবার সরকার নেমেছে কঠোর ভাবে মাদকের বিরুদ্ধে! আজ থেকে এক বছর আগেও আমি ব্লগে লিখেছে ইয়াবার ভয়াবহ বিস্তার নিয়ে নিজের অর্জিত অভিশপ্ত অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে। ইউটিউবে আমার ব্যক্তিগত চ্যানেলে ভিডিও আপলোডও করেছিলাম একটু সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে।
যাই হোক কথা বলছিলাম মাদক ব্যাবসায়ীদের লাশ দেখে উৎফুল্ল হওয়া নিয়ে। উৎফুল্ল ভাবটা কেটে সেখানে নানা সংশয় জমা হতে খুব বেশী সময় লাগলোনা। কিছু প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করলো মনে। সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে এবং দুচারজনের মনে সে প্রশ্ন জাগাতেই আমার লেখাটি।
আচ্চা অভিযানে নেমেই, এতো তাড়াতাড়ি ধুমধাড়াক্কা বিভিন্ন জায়গার মাদক সম্রাটদের সন্ধান বের করে ফেললো কিভাবে প্রশাসন? শুধু সন্ধান আবিষ্কার নয় ক্রসফায়ার করে মেরেও ফেলা হলো তাদের ! বাহ, কতো কর্মতৎপর আমাদের প্রশাসন।
তাহলে দেখা যায় প্রশাসন চাইলে অপরাধীদের ধরা কঠিন কিছু না। আমার প্রশ্ন এতোদিন তাহলে প্রশাসন কেন নীরব ছিলো? তারা কেন মাদক বিশেষ করে ইয়াবার ভয়াবহ বিস্তার নীরব দর্শকের মতো বসে প্রত্যক্ষ করছিলো? তাহলে প্রশাসনও কি কোনোভাবে মাদক বাণিজ্যে মুনাফার ভাগীদার ছিলো আর এখন বিশেষ কোনো কারণে ঠাসঠাস করে মাদক সম্রাটদের মারতে শুরু করলো!
আচ্ছা আমরা তো অনেক বড়বড় ব্যক্তিবর্গের নাম শুনেছি মাদক কিংবা ইয়াবার বাংলাদেশি গডফাদার হিসেবে। তারা তো প্রকাশ্যেই বেশ বুক ফুলিয়ে চলছে, ফিরছে, রাজনীতি করছে বা কেউ নিজের ব্যবসা করছে। তারা কি তাহলে বিচারব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনো রক্ষিত স্থানে বাস করে নাকি? যদি তা নাই হবে তাহলে বিষয়টা এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিলো যে, আগে সবগুলা গডফাদারদের ধরে রিমান্ডে নিতো। তাদেরকে স্পেশালি ইন্টারোগেশন করে বের করতো তাদের নেটওয়ার্ক কারা চালায়, কারা দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে মাদক নামক সর্বনাশা বিষ? সাধারণত নেটওয়ার্কের বাইরের ব্যবসায়ীদের দৌড় খুব সীমিত থাকে। গডফাদার নিয়ন্ত্রিত নেটওয়ার্ক থাকে সুবিশাল আর অবাধ বিচরণ। সুতরাং গডফাদারদের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক ধ্বংস করে দেয়ার স্বাভাবিক এবং ফলপ্রসূ প্রক্রিয়া গ্রহন না করে এলোপাতাড়ি কাদের ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলা হচ্ছে? বিষয়টার স্বচ্ছতা কি আদৌ আছে? স্বচ্ছতার প্রশ্ন উঠবে কারণ আমাদের সামনে জলজ্যান্ত উদাহরণ হয়ে আছে র্যাবের সেভেন মার্ডার কিংবা ডিভির ইয়াবা ব্যবসায়ী সাজিয়ে চাঁদাবাজি করার ঘটনাগুলো। প্রশাসনের এমন ঘোলাটে ও বিতর্কিত অতীত তাই সাম্প্রতিক মাদক ব্যবসায়ীদের আচমকা ক্রসফায়ারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যদিও উত্তর পাওয়া যাবেনা নিশ্চিত। আগেও জানিনি আর এখনো জানতে পারবোনা পত্রিকায় পাতায় দেখা লাশগুলো কাদের? তারা আদৌ মাদক বাণিজ্যে জড়িত নাকি না বা আসলেই হেডলাইনের মতো কোনো মাদক সম্রাট সে ছিলো নাকি ছিলো মামুলী সাপ্লায়ার?
আবার এমন তো হতে পারে গডফাদাররাই নিজেদের বাঁচানোর চুক্তিতে তাদেরই নেটওয়ার্কের দুইচারজন ব্যবসায়ীর তথ্য প্রদানের মাধ্যমে অবস্থানটাকে আরো শক্ত করলেন।
এভাবে একের পর এক হাজারটা প্রশ্নের উদয় হচ্ছে মনে। প্রশ্নবৃদ্ধি আর না করে এখানেই সমাপ্তি টেনে দিচ্ছি। আমরা তো সবাইই জানি মাদকের সহজলভ্যতাই এর বিস্তারের প্রধান হাতিয়ার। সবশেষে মনের মাঝে একটা ক্ষীণ প্রত্যাশা নিয়ে শেষ করছি, কঠোর হস্তে বাংলাদেশে ইয়াবা সহ সকল মাদক একদিন দমন হবে। ভয়াবহ নেশার ছোবল থেকে রক্ষা পাবে দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ১২:২৫