নাটক সিনেমা এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি নিয়ে আমি নতুন কিরে কিছু বলতে চাই না। এগুলো নিত্যকার ঘটনাতে পরিণত হয়েছে। আমি বলতে চাই সাহিত্যে অশ্লীলতার মহামারি নিয়ে। বর্তমান সময়ে আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি কিছু উদীয়মান কিংবা উঠতি লেখক যারা তাদের সাহিত্যচর্চায় দেদারছে অশ্লীলতা প্রয়োগ করছে। নির্বিকার ভাবে এমন কুরুচিকর এবং অশ্লীল শব্দ তাদের সাহিত্যে ব্যবহার করছেন যেগুলো স্বাভাবিকভাবে কোন ভদ্র পরিবেশে উচ্চারণ করাটাও ভীষণ লজ্জাস্কর। তাদের এই অশ্লীলতায় ভরপুর সাহিত্য নিয়ে যদি কেউ প্রতিবাদ করতে যায় তাহলে সেই লেখকেরা অনুতপ্ত না হয় উল্টো প্রতিবাদকারীকে অপমানিত করে, তাও আবার একা নয় তার অনুসারী সহ। তাদের মতে অশ্লীলতা সাহিত্যেরই একটি অংশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখক বা সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত এইসব নোংরা মানুষগুলি নির্লজ্জের মতো তাদের ফেসবুক স্ট্যাটাস পর্যন্ত অত্যন্ত অশ্লীল এবং নোংরা শব্দ ব্যবহার করে লিখে থাকেন। একটিবারও ভাবেন না এই লেখাগুলো ছোট বড় অসংখ্য মানুষের চোখে পড়বে যা কখনোই কাম্য নয়। আরো দুঃখের বিষয় এইসব অশ্লীল এবং কুরুচিকর লেখকেরা হাজার হাজার ফলোয়ার নিয়ে বেশ রমরমা অশ্লীলতা চালিয়ে যাচ্ছেন। সবকিছু মিলিয়ে আমি কিন্তু শুধুমাত্র লেখকদের এককভাবে দায়ী করবো না। কারণ তারা প্রশ্রয় বা সমর্থন পাচ্ছে বলেই অশ্লীলতা করতে পারছে৷ এইসব অশ্লীলতা সহজভাবে গ্রহন করে বিনোদিত হওয়া তাদের হাজার হাজার ফ্যান ফলোয়াররা যদি থাকে সাপোর্ট না করত তাহলে কখনই তাদের অশ্লীলতা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তো না। সুতরাং ভালোমন্দ যাচাই বাছাই করা এবং গ্রহন করার মতো সাধারণ জ্ঞান অথবা বিবেকবোধ আমাদের থাকা উচিৎ।
ট্রেন্ড ফলো করা মানেই যে গোগ্রাসে গিলতে হবে তা কিন্তু নয়। আমাদের অবশ্যই সচেতনতার সাথে গ্রহন এবং বর্জন করা জানতে হবে। আমাদের জানতে হবে আমাদের সমাজের সাথে কিসের সম্পৃক্ততা আছে যা ব্যক্তি বা জাতীয় জীবনের জন্য হানীকর নয়।
আপানাদের অশ্লীতার রস দিয়ে সমগ্র দেশ আচ্ছাদিত করে ফেলছেন জানেন? নতুন প্রজন্ম সাহিত্য সম্পর্কে কি ধারণা পাচ্ছে? তারা ভাবছে সাহিত্য মানেই অশ্লীল গালি, নোংরা বিষয়বস্তু, শারিরীক সম্পর্কের বর্ণনা, মেয়েদের শরীরের গঠন দিয়ে যৌন সুরসুরি দেয়া ইত্যাদি। কিছু মানুষ আছে যারা দেদারছে টয়লেটি শব্দ, টয়লেটি গল্প, টয়লেটি বিষয়বস্তু নিয়ে লিখতে লিখতে বা বলে বলে আশপাশ দুর্ঘন্ধযুক্ত করে ফেলে। আমি ভেবে পাইনা এই সভ্য সময়ে এসব অসভ্য আর ইতরদের রুচিতে বাঁধেনা কেন?
আরো একটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, সেটা হচ্ছে মেয়েদের অবনতির কথা। কিছু কিছু মেয়েদের ভাষা দেখে আজকাল সত্যি আমি নির্বাক হয়ে যাই। দেখা যায়, খুব নোংরা একটা স্টেটাস বা অশ্লীল কন্টেন্ট ও লেখালেখিতে সেসব মেয়েদের অতি সহজেই তাদের পরিচিতজনেরা ম্যানশন করছে এবং তারাও এসে অবলীলায় সেই নোংরামিতে তাল দিচ্ছে। কিছুদিন আগেও যা কল্পনা করা যেতনা। দেখতে কি কম দেখেছি কিংবা শুনেছি কত নোংরা মেয়েদের গল্প। কিন্তু কখনো তাদের পাবলিকলি কোনো নোংরা শব্দ উচ্চারণ বা লিখতে দেখিনি এমনকি নোংরামিতে উপস্থিত থাকতেও না। আধুনিকতার অভিশাপে সে সময় এখন বহু দূরের অতীত। নারীপুরুষের সমান অধিকার তাই যেন মেয়েগুলিও কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে নোংরামির আগেপিছে, ডানেবামে থেকে নেতৃত্ব দেয়। তাদের বলি, অশ্লীলতার মাধ্যমে পরিচিতিটা দ্রুত বাড়ছে কিন্তু খুব কাছের মানুষ যারা তোমাদের অশ্লীলতা প্রশ্রয় দিচ্ছে সেই তারাই কিন্তু তোমাদের মন থেকে প্রচণ্ড ঘৃণা করে এবং অসম্মান করে। মনে রাখবে কোনো ছেলে/পুরুষ মানুষ অশ্লীল ভাষা ব্যবহারকারি বা অশ্লীল কর্মকাণ্ড করে বেড়ানো মেয়েকে নিজের মা,বোন,বউ বা গার্ল্ফ্রেন্ডের জায়গা দিতে পারেনা। নোংরামোটা তারা শুধু উপভোগ করে তাই তোমাদের সবকিছুতেই সমর্থন দিতে থাকে। কারণ তোমরা তাদের কেউ না, তোমরা শুধুই তাদের খেলার পুতুল।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৭