অবরোধের একদিন
-মাহফুজ খান
হাসানের ঘুম খুব পাতলা। একটুতেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। কিন্তু গত তিন ঘন্টা যাবত পল্টনের একটি মেসে সে গভীর ঘুমে প্রায় অচেতন। কারন পার্টির নির্দেশে গত রাতে দুটি জায়গায় রেল লাইনের ফিস প্লেট তোলার মিশনে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। পরের দিন সকাল দশটায় আবার পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করতে হবে ঢাকার এই স্হানে। রাতে ঘুমানোর আগে হাসান খুব যত্ন করে দু'টি বোতলে পেট্রল ভরে রেখেছে। পেট্রোলের সাথে আনুপাতিক হারে সাবধানতার সাথে বিশেষ একটি পদার্থও মেশানো হয়েছে যাতে করে মিশন ফেল না হয়। কারন উপর থেকে নির্দেশ এসেছে। খুব নিখুঁত এ্যাটাক করতে হাবে। যে কোন মূল্যে লাশ চাই।
[অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন কল বেজে উঠল]। হাসান তারাহুরো করে মোবাইল কলটি ধরল। তারাতারি মালগুলো নিয়ে নিচে আসো। এখনই এ্যাটাকে আসতে হবে। হাসান প্রায় দৌড়ে নীচে নেমে গেল। ঘুম ঘুম চোখে বোতলগুলো দেখালো। যিনি টিম লিডার তিনি বললেন, "গুড। ভেরি গুড জব"। লিডার হাসানকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে চলে গেলেন। চলে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, চারদিকে কিন্তু পুলিশ। খুব সাবধানে অপারেশনটি চালাতে হবে। আমার ফোন পেলে রেডি হয়ে যাবে। টাইমিংটা যেন পারফেক্ট হয়।
[ফোন কল বেজে উঠল]। হাসান ফোনটি রিসিভ করল। ওপাশ থেকে নির্দেশ আসল, "পাঁচ মিনিটের মধ্যে একটি সিএনজি তোমার সামনে দিয়ে যাবে। ফোন কলটি কেটে গেল। হাসানের বুঝতে অসুবিধা হলনা তার করনীয় সম্পর্কে।
দূরে কিছু পুলিশ অলস সময় কাটাচ্ছে। হাসানের ঘুম ঘুম চোখ দুটি দুহাত দিয়ে ম্যাসেজ করছে। মিশনটি সাকসেস্ করতেই হবে। হাসান ২০০ গজ দুরে একটি সিনজিকে আসতে দেখল। সিএনজিটি খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে। খুব কাছে আসতেই হাসান তার কাছে রক্ষিত একটি বোতল সিএনজির দিকে ছুড়ে মারল। মুহূর্তের মধ্যে সিএনজিটি ভস্মিভূত হয়ে গেল। পুলিশগুলো হাসানের দিকে দৌড়ে আসতে লাগল। হাসান প্রাণপনে দৌড়াতে লাগল।
দু'ঘন্টা পর। আবার একটি পরিচিত ফোন কল বেজে উঠল।
-হ্যালো হাসান।
- মা, আমি বাসায় আসছি।
-[তাড়াহুড়ো করে, কান্নাজড়িত উচ্চ কন্ঠে] বাবা খুব সর্বনাশ হয়ে গেছে। তোর বাবার সিএনজিতে বোমা মেরছে। আমরা এখন ঢাকা হাসপাতালের দিকে যাচ্ছি। তুই যেখানেই থাকিস না কেন তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আয়। আর আসার সময় পারলে কিছু টাকা ম্যানেজ করে নিয়ে আসিস। আমাদের হাত একদম খালি। অতপর ফোনকলটি কেটে গেল।
হাসানের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। হতভম্ব হাসানের মুখে নেমে এল পাতালপুরীর নিস্তব্ধতা।
গল্পটি এখানেই শেষ। হাসান এবং তার বাবার পরবর্তী অবস্হা লেখকের জানা নেই। এই গল্পটি একটি বিশেষ মেসেজ বহন করে। আর তা হলো-
"জ্ঞানী ব্যক্তিরা নিজের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহন করেন, আর বিজ্ঞ ব্যক্তিরা অন্যের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহন করেন।"
[গল্পটির কাহিনী এবং চরিত্রগুলো সম্পূর্ণ কাল্পনিক। যদি কারো চরিত্রের সাথে মিলে যায় তার জন্য লেখক দায়ী নয়।]