সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনের ঝুঁকি
মা-বাবাকে যে কথা চিঠিতে লিখেছিলেন, সে কথা এখন পৃথিবীবাসী জানে- কত শত বার কত সত্যভাবে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন চে। জীবনের একেবারে শেষ প্রশ্বাসের আগমুহূর্ত পর্যন্ত! শেষ নিঃশ্বাস বললাম না এ কারণে যে, আমার বিশ্বাস, শেষ নিঃশ্বাস নয়, চে মানুষের মুক্তির কথা ভেবে শেষ প্রশ্বাস ছেড়েছিলেন!
সগর্বে স-মজায় লোকে বলে, বিপ্লব করেই জন্ম নিয়েছিলেন চে! নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগে পৃথিবীতে চলে এসেছিলেন তিনি! এসেই পড়লেন ভীষণ দুষ্টু রোগ হাঁপানির হাতে! হাঁপানি এমন অসুখ; তিতে হয়ে যায় পৃথিবীর সব সুখ- যার হয় সেই জানে! মুহূর্তের স্বস্তির জন্য, শান্তির জন্য দুঃসহ ছটফটানি- প্রতি মুহূর্তের জন্য চরম কষ্ট-মাশুল দিয়ে দিয়ে বেঁচে থাকা।
শৈশবে হাঁপানি দীর্ঘ হলে মানুষের স্বাভাবিক বৃদ্ধিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে অবিরাম শারীরিক-ঝঞ্ঝার কারণে হাঁপানি রোগীর মানসিক বিকাশ মননমুখি এবং দ্রুত হয়। মানসিক-শক্তিও ওদের বেশি হয়। কেননা, ওই শক্তিই ওদের বাঁচিয়ে রাখে!
চেও পেয়েছিলেন সেই দুরন্ত দুর্বার মানসিক শক্তি। নিজেই নিজের ঈশ্বর হয়ে উঠেছিলেন তিনি- সব মানুষের ঈশ্বর, সত্যের ঈশ্বর, স্বপ্নের ঈশ্বর, সেই সময় এবং এই সময়ের ঈশ্বর। মহান ভালোবাসার সত্যিকারের ঈশ্বর। কোনো কিছুই পরোয়া করেননি তিনি। তার পুরো জীবনই বেপরোয়া-বিপ্লব-বিদ্রোহপূর্ণ।
বর্তমানে চে লোভনীয় আন্তর্জাতিক পণ্য। বিশ্বজুড়ে নানা পণ্যে নানারূপে বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছেন চে। ব্যক্তি চে-কে কেউ যথার্থভাবে চিনুক-জানুক বা না জানুক, তার ছবিকে এখন অনেকে চেনে। চির-নায়কোচিত চেহারার ওই মুখ এখন পৃথিবীর অনেক মানুষের চোখে পড়েছে। আমরা চে’র হরদম বাণিজ্যিকীকরণের বিরম্নদ্ধে ঘৃণা ও দুঃখবোধে তাড়িত হয়ে শুধু এইটুকু সান্ত্বনা খুঁজে পেতে পারি, পণ্য হয়ে পৌঁছালেও চে বসে নেই। চে এখনও হাঁটছেন। নানারূপে নানাভাবে নানা-পথে এখনো হেঁটে চলেছেন চে। সবাই তাকে দেখছে। দেখতে দেখতে তাঁর নাম জানছে। তাঁর গল্প শুনছে। কাজ জানছে। আদর্শ জানছে। আর এরকম জানতে জানতেই একদিন অনেকে চে’কে চিনবে, জানবে। যে-ই চে-কে চিনতে চাইবে, চে তাকেই টানবে। যে যত বেশি আন্তরিকভাবে চে-কে চিনবে, সেই তত চে হয়ে ওঠবে। চে হওয়া মানে সময়ের প্রতিবাদী স্বর হওয়া। চে হওয়া মানে ব্যাপক মানুষের মুক্তির জন্য, সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য পৃথিবীব্যাপী অভিযান।
চে’র মরণোত্তর পৃথিবীতে হয়তো প্রগতিশীল ও মননশীল কবিমাত্রই চে’কে নিয়ে লিখেছেন। চে এমনই এক বিপ্লবী, যার ছবি দেখলেও কবিতা লিখতে হাত উসখুস বা নিশপিশ করে! তাই চে’কে নিয়ে বিশ্বজুড়ে অনেক কবিতা হয়েছে, কবিতা জমেছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় লেখা এরকম ৩৩টি কবিতার অনুবাদ করেছেন কবি পারভেজ চৌধুরী। চে-এর সঙ্গে সময়-মন ও মতি-গতি-সচেতন এই কবির সশ্রদ্ধ প্রেম-ভক্তি অনেক দিনের। তাঁর সহকর্মী-স্বজনরা জানেন এসব। মতাদর্শের পথ ধরে হাঁটতে গিয়েই হয়তো তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল চে গুয়েভারার। তারপর দিন দিন আপন।
আর ওই ভালোবাসা ভালোলাগা থেকেই তিনি তাঁর মতো করে অনুবাদ করেছেন ৩৩টি কবিতা। আর খোদ মাতৃভাষা থেকে নিয়েছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শামসুর রাহমানের দুটি কবিতা। সব মিলিয়ে ৩৫টি কবিতা। এসব কবিতাকে তিনি ‘চে গুয়েভারাকে নিয়ে কবিতা’ শিরোনামে একটি মলাটে বন্দি করেছেন। পাঠকরা একুশে গ্রন্থমেলা ২০১১-তে বইটি পাবেন সময় প্রকাশন-এর সৌজন্যে। দামও বোধহয় বেশি নয়, খুব সম্ভব ১০০ টাকা!
আপনারাও সম্ভব হলে, বইটি কিনবেন। এবং চে-কে কবিদের চোখে চিনবেন!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




