হোসেনপুরে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তার কাজ চলছে
একদিকে কেউ বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কাটছেন। কেউ বাঁশের আইক্কা ছাঁটছেন। কেউ বা বাঁশগুলো হাত-করাতে কেটে কেটে খুঁটি বানাচ্ছেন। অন্যদিকে বেশ কয়েকজন মিলে মাটি কাটছেন। বেশ কয়েকজন সেগুলো রাস্তায় ফেলছেন। কেউ বস্তা ধরছেন। কেউ বস্তায় মাটি ভরছেন। কেউ বা মাটিভর্তি বস্তাগুলোর মুখ সেলাই করছেন। মাটিগুলো যাতে সরে না যায়, পড়ে না যায়, ধসে না যায়- এজন্য আবার বেশ কয়েকজন মিলে ধরাধরি করে মাটিভর্তি বস্তাগুলো রাস্তার পাশে সারি সারি করে রাখছেন। বস্তাগুলো রাখার সঙ্গে সঙ্গেই বেশ কয়েকজন মিলে পায়ে পিষে সমান করছেন।
বস্তাগুলোকে স্থির রাখতে কেউ বা মুগুর দিয়ে ঠাস ঠাস করে বাঁশের খুঁটিগুলো পুঁতছেন। সবমিলিয়ে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। এ কর্মযজ্ঞ চলছে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে।
গ্রামবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গ্রামের অভ্যন্তরীণ প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। গত ৩০ মার্চ বুধবার ২০১১ সকাল ৮টা থেকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয়। গ্রামবাসীর অংশগ্রহণে পূর্বপাড়া মজুমদার বাড়ি থেকে পশ্চিমপাড়া আনা মিঞার বাড়ি পর্যন্ত এবং মধ্যপাড়া মোয়াজ্জেম সরকারের বাড়ি থেকে উত্তরপাড়া হাজি বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার নির্মাণ কাজ চলছে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে চলছে সরকারের তীব্র সমালোচনা। চলছে অবাধ খিস্তি-খেউড়। দেশের ক্ষমতাসীন বড় দুই দলকেই ওরা কথায় কথায় ন্যাংটো করে ছাড়ছে। গালির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না স্থানীয় সংসদ সদস্য, ইউপি মেম্বার-চেয়ারম্যানরা। পাশাপাশি চলছে, নানারকম রসের আলাপ। কার মেয়ে কার ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেছে। কোন মাদ্রাসা-পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে কোন স্ড়্গুল-পড়ুয়া ছেলের প্রেম। কোথায় কোথায় বৈশাখী মেলা হবে- এসব নানামুখি আলাপ। এরই ফাঁকে গ্রামবাসীর প্রশ্ন, সরকার কেন দরকার? সরকার দিয়া মানুষ কী করে? ভোট দেওন ছাড়া সরকারের লগে মানুষের আর কীয়ের সম্পর্ক?
দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের অভ্যন্তরীণ এই রাস্তার অভাবে ভুগছিলেন গ্রামবাসী। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে দৌড়ঝাপ করছেন তারা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলের নেতাদেরকে জানানো সত্ত্বেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারদলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফকে লিখিতভাবে রাস্তা-সংকটের বিষয়টি জানানো হয়। তিনি আশ্বাস দিয়েও কথা রাখেননি।
এলাকাটি ভৌগলিকভাবে জলাভূমিপ্রায় নিচু এবং পুকুরবহুল। ফলে কোনো রাস্তাই বেশিদিন টেকে না। মজুমদার বাড়ি থেকে আনা মিঞার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটিতেও চার চারটি পুকুর পড়েছে। এরমধ্যে একেবারে মজুমদারবাড়ির শুরুতেই পাশাপাশি দুটি পুকুর রয়েছে। ওই দুই পুকুরের মাঝখানের পাড়টিই রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। প্রতিবছর বৃষ্টিতে ভূমিক্ষয়ের ফলে পুকুরের পাড়ও ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায়। কখনো কখনো অতি বৃষ্টির কারণে ধসে যায়। এসব কারণে ইতোমধ্যে প্রায় সব পুকুরের পাড় ধসে গেছে।
রাস্তা নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামবাসীর পক্ষে সোচ্চার অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক প্রফেসর মোবারক হোসেন ভূঁইয়া। তিনি সক্ষোভে জানান, আমি নিজেই রাস্তার দরখাস্তটি এমপি সাহেবকে দিয়েছিলাম। তিনি বিষয়টিকে ‘এক নম্বর’ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং অগ্রাধিকারভিত্তিতে
বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। কিন্তু দরখাস্ত প্রদানের ২ বছর পর, দলীয় নেতাদের ১শ’ নম্বরের কাজ হয়ে গেলেও তার সেই ‘এক নম্বর’-এর কাজ তিনি শুরু করতে পারেননি। আমি এখন মনে করছি, আমাকে বোকা বানিয়ে গ্রামবাসীকে ধোকা দেয়ার জন্যই তিনি আমাকে ‘এক নম্বর’-এর টোপটি দিয়ে বিদায় করেছিলেন।
স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা সফিক মজুমদার বলেন, আমরা স্থানীয় নেতাদের বার বার বলেছি রাস্তাটি আমাদের এত দরকার কেন। বলেছি, গ্রামের শেষপ্রান্তে যে বিশাল ফসলি মাঠ, সেখানে ধান, গম, গোল আলু, সরিষা, টমেটু, ভুট্টার মতো ফসল হয়। এই বিপুল পরিমাণ ফসল মাঠ থেকে ঘরে এবং বাজারে নিয়ে যেতে হলে একটি যানবাহন চলাচল উপযোগী রাস্তার কোনো বিকল্প নেই।
গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা আলী ওসমান খান জানান, গ্রামের ভেতরে ও বাইরে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি ও ধর্মীয় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্যও এ রাস্তাটি খুবই প্রয়োজন। বর্ষাকালে কোমলমতি শিশুরা একপ্রকার ঝুঁকি নিয়েই স্ড়্গুল-মাদ্রাসায় যায়। তাছাড়া এখন গ্রামের তরুণদের উদ্যোগে বেশ কিছু মুরগির খামার হয়েছে। রয়েছে মাছ চাষের বেশ কয়েকটি প্রকল্প। এসব প্রকল্পের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও গ্রামের ব্যাপক উন্নয়নের জন্যই রাস্তাটি গ্রামবাসীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
হোসেনপুর প্রগতি সমাজকল্যাণ সংঘের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মুন্সি বলেন, স্থানীয় এসব রাস্তা-ঘাটের জন্য ইউপি মেম্বার-চেয়ারম্যানরা রয়েছেন। কিন্তু তারা নিজেরা লুটপাট ছাড়া এসবের দিকে ফিরেও তাকান না। মেম্বার চেয়ারম্যানরা তৃণমূল মানুষের জনপ্রতিনিধি। কিন্তু তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার মতো যোগ্য ও দক্ষ নন।
ভুক্তভোগী গ্রামবাসীর প্রশ্ন, সরকার কেন দরকার?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”
একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?
যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই
হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই
আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন
তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন
নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।